আয়াত ২২ — মদীনায় অবতীর্ণ — রুকু ৩
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১. যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং অভিযোগ পেশ করছে
আল্লাহর দরবারে, আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ
আপনাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন।
২. তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন
কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।
৩. যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, অতঃপর নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার
করে, তাদের কাফফারা এই একে অপরকে স্পর্শ
করার পূর্বে একটি দাসকে মুক্তি দিবে। এটা তোমাদের জন্যে উপদেশ হবে। আল্লাহ খবর
রাখেন তোমরা যা কর।
৪. যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে
একাদিক্রমে দুই মাস রোযা রাখবে। যে এতেও অক্ষম হয় সে ষাট জন মিসকীনকে আহার করাবে।
এটা এজন্যে, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি। আর কাফেরদের জন্যে
রয়েছে যন্ত্রণা দায়ক আযাব।
৫. যারা আল্লাহর তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা
অপদস্থ হয়েছে, যেমন অপদস্থ হয়েছে তাদের
পূর্ববর্তীরা। আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে
অপমানজনক শাস্তি।
৬. সেদিন স্মরণীয়; যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে
পুনরুত্থিত করবেন, অতঃপর তাদেরকে জানিয়ে দিবেন যা
তারা করত। আল্লাহ তার হিসাব রেখেছেন, আর তারা তা ভুলে গেছে। আল্লাহর
সামনে উপস্থিত আছে সব বস্তুই।
৭. আপনি কি ভেবে দেখেননি যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, আল্লাহ তা জানেন। তিন ব্যক্তির এমন কোন পরামর্শ হয় না যাতে
তিনি চতুর্থ না থাকেন এবং পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে তিনি ষষ্ঠ না থাকেন তারা
এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন তিনি তাদের সাথে আছেন, তারা যা করে, তিনি কেয়ামতের দিন তা তাদেরকে
জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
৮. আপনি কি ভেবে দেখেননি, যাদেরকে কানাঘুষা করতে নিষেধ করা
হয়েছিল অতঃপর তারা নিষিদ্ধ কাজেরই পুনরাবৃত্তি করে এবং পাপাচার, সীমালংঘন এবং রসূলের অবাধ্যতার বিষয়েই কানাঘুষা করে। তারা
যখন আপনার কাছে আসে, তখন আপনাকে এমন ভাষায় সালাম করে, যদ্দ্বারা আল্লাহ আপনাকে সালাম করেননি। তারা মনে মনে বলেঃ
আমরা যা বলি, তজ্জন্যে আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি
দেন না কেন? জাহান্নামই তাদের জন্যে যথেষ্ট।
তারা তাতে প্রবেশ করবে। কতই না নিকৃষ্ট সেই জায়গা।
৯. মুমিনগণ, তোমরা যখন কানাকানি কর, তখন পাপাচার, সীমালংঘন ও রসূলের অবাধ্যতার বিষয়ে
কানাকানি করো না বরং অনুগ্রহ ও খোদাভীতির ব্যাপারে কানাকানি করো। আল্লাহকে ভয়
কর, যাঁর কাছে তোমরা একত্রিত হবে।
১০. এই কানাঘুষা তো শয়তানের কাজ; মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার দেয়ার
জন্যে। তবে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সে তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। মুমিনদের
উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা।
১১. মুমিনগণ, যখন তোমাদেরকে বলা হয়ঃ মজলিসে
স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান প্রশস্ত করে দিও।
আল্লাহর জন্যে তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দিবেন। যখন বলা হয়ঃ উঠে যাও, তখন উঠে যেয়ো। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা
জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে
দিবেন। আল্লাহ খবর রাখেন যা কিছু তোমরা কর।
১২. মুমিনগণ, তোমরা রসূলের কাছে কানকথা বলতে
চাইলে তৎপূর্বে সদকা প্রদান করবে। এটা তোমাদের জন্যে শ্রেয়ঃ ও পবিত্র হওয়ার ভাল
উপায়। যদি তাতে সক্ষম না হও, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১৩. তোমরা কি কানকথা বলার পূর্বে সদকা প্রদান করতে ভীত হয়ে গেলে? অতঃপর তোমরা যখন সদকা দিতে পারলে না এবং আল্লাহ তোমাদেরকে
মাফ করে দিলেন তখন তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও
রসূলের আনুগত্য কর। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর।
১৪. আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি, যারা আল্লাহর গযবে নিপতিত
সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব করে? তারা মুসলমানদের দলভুক্ত নয় এবং
তাদেরও দলভূক্ত নয়। তারা জেনেশুনে মিথ্যা বিষয়ে শপথ করে।
১৫. আল্লাহ তাদের জন্যে কঠোর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। নিশ্চয় তারা যা করে, খুবই মন্দ।
১৬. তারা তাদের শপথকে ঢাল করে রেখেছেন, অতঃপর তারা আল্লাহর পথ থেকে
মানুষকে বাধা প্রদান করে। অতএব, তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
১৭. আল্লাহর কবল থেকে তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদেরকে মোটেই বাঁচাতে
পারবেনা। তারাই জাহান্নামের অধিবাসী তথায় তারা চিরকাল থাকবে।
১৮. যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনরুত্থিত করবেন। অতঃপর তারা আল্লাহর সামনে শপথ
করবে, যেমন তোমাদের সামনে শপথ করে। তারা
মনে করবে যে, তারা কিছু সৎপথে আছে। সাবধান, তারাই তো আসল মিথ্যাবাদী।
১৯. শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভূলিয়ে
দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত।
২০. নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তারাই লাঞ্ছিতদের দলভূক্ত।
২১. আল্লাহ লিখে দিয়েছেনঃ আমি এবং আমার রসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হব। নিশ্চয় আল্লাহ
শক্তিধর, পরাক্রমশালী।
২২. যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও
তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান
লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি
তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা
তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।
তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।
পবিত্র কোরআনুল
করীম
অনুবাদঃ মাওলানা
মুহিউদ্দীন খান
No comments:
Post a Comment