Saturday, December 14, 2019

সূরা আল-ক্বলাম অথবা সূরা নূন [কলম অথবা এই বর্ণগুলি (নুন, ইত্যাদি) কুরআনের অলৌকিকতার অন্যতম পরিচায়ক এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউই এ বর্ণগুলির অর্থ জানেন না (ড. মুহাম্মাদ মহসিন খান ও ড. এম. তাকি উদ্দীন আল-হিলালী)]

[মক্কায় অবতীর্ণ- আয়াত ৫২, রুকু ০২] [কোরআনে অবস্থান ৬৮, অবতীর্ণের অনুক্রম ০২]

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে-

১. নূ-ন-, শপথ কলমের, (আরো শপথ এ কলম দিয়ে) তারা যা লিখে রাখছে- তার,

২. তোমার মালিকের দয়ায় তুমি কোনো পাগল নও,

৩. তোমার জন্যে অবশ্যই এমন পুরস্কার রয়েছে যা কোনোদিনই নিশেষ হবে না,

৪. নিসন্দেহে তুমি মহান চরিত্রের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) রয়েছো।

৫. অচিরেই তুমি ও (তোমাকে যারা পাগল বলে) তারা সবাই দেখতে পাবে-

৬. তোমাদের মধ্যে কে ছিলো বিকারগ্রস্ত (পাগল)!

৭. অবশ্যই তোমার রব ভালো করেই জানেন (তোমাদের মধ্যে) কোন্ ব্যক্তি তাঁর পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, (আবার) যারা সঠিক পথের ওপর রয়েছে তিনি তাদের সম্পর্কেও সম্যক ওয়াকেফহাল রয়েছেন।

৮. অতএব তুমি মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের অনুসরণ করো না।

৯. তারা (তো তোমার এ নমনীয়তাটুকুই) চায়, তুমি যদি (তাদের কিছু) গ্রহণ করো অতপর তারাও (তোমার কিছু) গ্রহণ করবে।

১০. যারা বেশী বেশী কসম করে (পদে পদে) লাঞ্ছিত হয়, এমন সব মানুষদের তুমি কখনো অনুসরণ করো না,

১১. যে (বেহুদা) গালমন্দ করে, (খামাখা) অভিশাপ দেয় এবং চোগলখোরী করে-

১২. যে ভালো কাজে বাধা সৃষ্টি করে, (অন্যায়ভাবে) সীমালংঘন করে, (সর্বোপরি) যে পাপিষ্ঠ-

১৩. যে কঠোর স্বভাবের অধিকারী, এরপর যে (জন্ম পরিচয়ের দিক থেকেও) জারজ,

১৪. যেহেতু সে (বিপুল) ধনরাশি ও (অনেকগুলো) সন্তান সন্ততির অধিকারী-

১৫. এ লোককে যখন আমার আয়াতসমূহ পড়ে শোনানো হয় তখন সে বলে, এগুলো তো হচ্ছে আগের দিনের গল্প কাহিনী মাত্র!

১৬. অচিরেই আমি তার শুড়ে দাগ দিয়ে (তাকে চিহ্নিত করে) দেবো।

১৭. অবশ্যই আমি এদের পরীক্ষা করেছি, যেমনি (অতীতে) আমি একটি ফলের বাগানের কতিপয় মালিককে পরীক্ষা করেছিলাম, (তা ছিলো এমন যে, একদিন) তারা সবাই শপথ করে বলেছিলো, অবশ্যই তারা সকাল বেলায় গিয়ে (বাগানের) ফল পাড়বে,

১৮. তারা (তাদের শপথে) আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা অভিপ্রায় (সম্বলিত) কিছুই যোগ করেনি।

১৯. (ভোর হতে না হতেই) তোমার মালিকের পক্ষ থেকে তার ওপর এক বিপর্যয় এসে পড়লো (তখনো) তারা ছিলো নিদ্রামগ্ন।

২০. অতপর সকাল বেলায়ই তা মধ্যরাতের কৃষ্ণ বর্ণের মতো কালো হয়ে গেলো। 

২১. (এদিকে) সকাল হতেই তারা একে অপরকে ডাকাডাকি করতে লাগলো-

২২. তোমরা যদি (সত্যিই) ফল আহরণ করতে চাও তাহলে সকাল সকাল নিজেদের বাগানের দিকে চলো।

২৩. (অতপর) তারা সেদিকে রওনা দিলো, (পথের মধ্যে) তারা ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো,

২৪. কোনো অবস্থায়ই আজ যেন কোনো (দুস্থ) মেসকীন ব্যক্তি তোমাদের ওপর (টেক্কা) দিয়ে বাগানে এসে প্রবেশ করতে না পারে,

২৫. তারা সকাল বেলায়ই সংকল্পবদ্ধ হয়ে এসে হাযির হলো, (যেন) তারা নিজেরাই (আজ সব ফসল তুলতে) সক্ষম হবে।

২৬. অতপর যখন তারা সে (বাগানের) দিকে তাকিয়ে দেখলো, তখন বলতে লাগলো (একি!), আমরা নিশ্চয়ই পথভ্রষ্ট (হয়ে পড়েছি)।

২৭. (না, আসলেই) আমরা (আজ সবকিছু থেকে) বঞ্চিত হয়ে গেছি।

২৮. (এ সময়) তাদের মধ্যকার একজন ভালো মানুষ বললো, আমি কি তোমাদের বলিনি যে, (সব কাজে আল্লাহর ওপর ভরসা করবে), কতো ভালো হতো যদি তোমরা (আল্লাহ তায়ালার নামের) ‘তাসবীহ’ করতে! 

২৯. তারা বললো, আমাদের মালিক অনেক পবিত্র, (তাঁর নাম না নিয়ে) আমরা (সত্যিই) যালেম হয়ে পড়েছিলাম।

৩০. তারা পরস্পরকে তিরস্কার করে একে অপরের ওপর দোষারোপ করতে লাগলো।

৩১. তারা বললো, দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা তো (আসলেই) সীমালংঘনকারী।

৩২. আশা করা যায় আমাদের রব (এর) বদলে (আখেরাতে) এর চাইতে উৎকৃষ্ট (কিছু আমাদের) দান করবেন, আমরা আমাদের মালিকের দিকেই ফিরে যাচ্ছি।

৩৩. আযাব এভাবেই (নাযিল) হয়, আর পরকালের আযাব, তা তো অনেক গুরুতর। কতো ভালো হতো যদি তারা তা জানতো!

৩৪. (অপরদিকে) যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্যে অবশ্যই তাদের মালিকের কাছে নেয়ামতে ভরপুর জান্নাত রয়েছে।

৩৫. যারা আমার আনুগত্য করে তাদের সাথে আমি কি অপরাধীদের মতো আচরণ করবো?

৩৬. এ কি হলো তোমাদের! (আমার ইনসাফ সম্পর্কে) কি সিদ্ধান্ত করছো তোমরা?

৩৭. তোমাদের কাছে কি এমন কোনো কিতাব আছে যাতে তোমরা (এটি) পড়েছো।

৩৮. সেখানে তোমাদের জন্যে সে ধরনের সব কিছুই সরবরাহ করা হবে, যা তোমরা তোমাদের জন্যে পছন্দ করবে,

৩৯. না আমি তোমাদের সাথে কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি- এমন চুক্তি, যা কেয়ামত পর্যন্ত মানা বাধ্যতামূলক হবে, (এবং) তোমরা যা কিছু দাবী করো তাই তোমরা পাবে,

৪০. তুমি এদের জিজ্ঞেস করো, তোমাদের মধ্যে কে এ দায়িত্ব নিতে পারে,

৪১. তাদের কি (অন্য কোনো) অংশীদার আছে? যদি তারা সত্যবাদী হয় তাহলে তারা তাদের অংশীদারদের সবাইকে নিয়ে আসুক!

৪২. যেদিন (যাবতীয়) রহস্য উদঘাটিত হয়ে পড়বে, তখন তাদের সাজদাবনত হওয়ার আহ্‌বান জানানো হবে, এসব (হতভাগ্য) ব্যক্তিরা (কিন্তু সেদিন সাজদা করতে) সক্ষম হবে না,

৪৩. (সেদিন) তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী হবে, অপমান তাদের ভারাক্রান্ত করে রাখবে; (দুনিয়ায়) যখন তাদের (আল্লাহর সম্মুখে) সাজদা করতে ডাকা হয়েছিলো, (তখন) তারা সুস্থ (সক্ষম) ছিলো।

৪৪. অতপর তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, যে আমার এ (কিতাব)কে অস্বীকার করে (আমি তার থেকে প্রতিশোধ নেবো), আমি ধীরে ধীরে এদের (ধ্বংসের) দিকে ঠেলে নিয়ে যাবো যে, এরা তার কিছুই টের পাবে না,

৪৫. আমি এদের অবকাশ দিয়ে রাখি, (অপরাধীদের ধরার) আমার এ কৌশল অত্যন্ত কার্যকর।

৪৬. তুমি কি এদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক দাবী করছো যে, তারা জরিমানার বোঝায় ভারী হয়ে পড়েছে।

৪৭. না তাদের কাছে অজানা জগতের কোনো খবর রয়েছে যা তারা লিখে রাখে!

৪৮. (হে নবী) তুমি (বরং) তোমার মালিকের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসার জন্যে ধৈর্য ধারণ করো এবং (এ ব্যাপারে) মাছের ঘটনার সাথী (নবী ইউনুস)-এর মতো হয়ো না। যখন সে দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে (আল্লাহ তায়ালাকে) ডেকেছিলো;

৪৯. তখন যদি তার মালিকের অনুগ্রহ তার ওপর না থাকতো তাহলে তাকে নিন্দিত অবস্থায় সাগরের খোলা তীরে ফেলে রাখা হতো।

৫০. অতপর তার রব তাকে বাছাই করলেন এবং তিনি তাকে (তাঁর) নেক বান্দাদের (কাতারে) শামিল করে নিলেন।

৫১. কাফেররা যখন (আল্লাহর) কিতাব শোনে তখন এমনভাবে তাকায়, এক্ষুণি বুঝি এরা নিজেদের দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়ে ঘায়েল করে দেবে, তারা (একথাও) বলে, (এই কিতাবের বাহক) সে একজন পাগল।

৫২. (আসলে) এ কিতাব তো মানবমন্ডলীর জন্যে একটি উপদেশ বৈ কিছুই নয়।

অনুবাদকঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ।
প্রকাশনাঃ আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।

No comments:

Post a Comment