Tuesday, December 31, 2019

সূরা আল-মুলক [সার্বভৌম কর্তৃত্ব/সর্বময় কর্তৃত্ব/সার্বভৌমত্ব/প্রভুত্ব]

[মক্কায় অবতীর্ণ- আয়াত ৩০, রুকু ০২] [কোরআনে অবস্থান ৬৭, অবতীর্ণের অনুক্রম ৭৭]

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে-

. (কতো) মহান সেই পুণ্যময় সত্তা, যাঁর হাতে (রয়েছে আসমান যমীনের যাবতীয়) সার্বভৌমত্ব, (সৃষ্টি জগতের) সব কিছুর ওপর তিনি একক ক্ষমতাবান,

. যিনি মৃত্যু ও জন্ম সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তিনি তোমাদের যাচাই করে নিতে পারেন যে, কর্মক্ষেত্রে কে তোমাদের মধ্যে উত্তম। তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি অসীম ক্ষমাশীল,

. যিনি সাত আসমান বানিয়েছেন, একটার ওপর আরেকটা (স্থাপন করেছেন); অসীম দয়ালু আল্লাহ তায়ালার (নিপুণ) সৃষ্টির কোথাও তুমি কোনো খুঁত দেখবে না; আবার (তাকিয়ে) দেখো তো, (এর) কোথাও কি তুমি কোনো রকম ফাটল দেখতে পাও?

. অতপর (তোমার) দৃষ্টি ফেরাও (নভোমন্ডলের প্রতি), আরেকবার (তোমার দৃষ্টি ফেরাও দেখবে, তোমার) দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে।

. নিকটবর্তী আকাশটিকে (দেখো, কিভাবে) প্রদীপমালা দিয়ে আমি তাকে সাজিয়ে রেখেছি, (ঊর্ধ্বলোকের দিকে গমনকারী) শয়তানদের তাড়িয়ে বেড়ানোর জন্যে এ (প্রদীপ)-গুলোকে আমি (ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে) সংস্থাপন করে রেখেছি, (চূড়ান্ত বিচারের দিন) এদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডলীর ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থাও আমি (যথাযথভাবে) প্রস্তুত করে রেখেছি।

. (এতো নিদর্শন সত্ত্বেও) যারা তাদের মালিককে অস্বীকার করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের (কঠোরতম) শাস্তি; জাহান্নাম কতোই না নিকৃষ্টতম স্থান!

. এর মধ্যে যখন তাদের ছুঁড়ে ফেলা হবে তখন (নিক্ষিপ্ত হবার আগেই) তারা শুনতে পাবে, তা ক্ষিপ্ত হয়ে বিকট গর্জন করছে,

. (মনে হবে) তা যেন প্রচন্ড ক্রোধের কারণে ফেটে দীৰ্ণ বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে; যখনই একদল (নতুন পাপী)-কে সেখানে নিক্ষেপ করা হবে তখনই তার প্রহরীরা তাদের জিজ্ঞেস করবে, (এ আযাবের কথা বলার জন্যে) তোমাদের কাছে কোনো সাবধানকারী কি আসেনি?

. তারা বলবে, হ্যাঁ, আমাদের কাছে (আযাবের) সাবধানকারী (নবী রসূল) এসেছিলো, কিন্তু আমরা তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছি, আমরা (তাদের) বলেছি, (এ দিন সংক্রান্ত) কোনো কিছুই আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেননি; বরং তোমরা নিজেরাই চরম বিভ্রান্তিতে ডুবে আছো।

১০. তারা বলবে, কতো ভালো হতো (যদি সেদিন) আমরা (নবী রসূলদের কথা) শুনতাম এবং (তা) অনুধাবন করতাম! (তাহলে আজ) আমরা জ্বলন্ত আগুনের বাসিন্দাদের মধ্যে গণ্য হতাম না।

১১. অতপর তারা নিজেরাই নিজেদের (যাবতীয়) অপরাধ স্বীকার করে নেবে, ধিক্কার জাহান্নামের অধিবাসীদের ওপর!

১২. (অপর দিকে) সেসব (সৌভাগ্যবান) মানুষ, যারা নিজেরা গায়ব থেকে তাদের রবকে ভয় করেছে, নিসন্দেহে তাদের জন্যে রয়েছে (আল্লাহ তায়ালার) ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।

১৩. তোমরা তোমাদের কথা লুকিয়ে রাখো কিংবা (তা) প্রকাশ করো (আল্লাহর কাছে এর উভয়টাই সমান); অবশ্যই তিনি মনের ভেতর লুকিয়ে রাখা বিষয় সম্পর্কেও সম্যক ওয়াকেফহাল।

১৪. তিনি কি (সৃষ্টি সম্পর্কিত বিষয়ে) জানবেন না- যিনি (এগুলো) বানিয়েছেন, তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্ণদর্শী এবং সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।

১৫. তিনিই মহান সত্তা যিনি ভূমিকে তোমাদের অধীন করে বানিয়েছেন, তোমরা (যেভাবে চাও) এর অলিগলির মধ্য দিয়ে চলাচল করো এবং এর থেকে (উদগত) রেযেক তোমরা উপভোগ করো; (অবশেষে) তার দিকেই (হবে সবার) প্রত্যাবর্তন।

১৬. তোমরা কি তাঁর কাছ থেকে নিরাপদ যিনি আকাশে (সব কিছুর মালিক)? তিনি কি তোমাদেরসহ ভূমন্ডলকে গেড়ে দেবেন না? (এমন অবস্থা যখন হবে) তখন তা (ভীষণভাবে) কম্পমান হবে,

১৭. অথবা তোমরা কি আকাশের অধিপতি আল্লাহ তায়ালা থেকে নিরাপদ যে, তিনি তোমাদের ওপর (প্রস্তর নিক্ষেপকারী) প্রচন্ড বায়ু প্রবাহিত করবেন না? তোমরা অচিরেই জানতে পারবে কেমন (ভয়াবহ হতে পারে) আমার সাবধানবাণী!

১৮. তাদের আগেও যারা (আমার সাবধানবাণী) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, দেখো, কেমন (ছিলো তাদের প্রতি) আমার আচরণ!

১৯. এ সব লোকেরা কি তাদের মাথার ওপর (দিয়ে উড়ে যাওয়া) পাখীগুলোকে দেখে না (কিভাবে এরা) নিজেদের পাখা মেলে রাখে, (আবার) এক সময় (তা) গুটিয়েও নেয়, পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কে এদের (মহাশূন্যে) স্থির করে রাখেন, অবশ্যই তিনি (তাঁর সৃষ্টির ছোটো বড়ো) সব কিছুই দেখেন।

২০. (বলো তো,) তোমাদের মধ্যে এমন কে এখানে আছে যার কাছে (এমন) একটি সৈন্যবাহিনী আছে, (যা দিয়ে) তারা অসীম দয়ালু আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করবে? (আসলে) এ অস্বীকারকারী ব্যক্তিরা (সব সময়ই) বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত থাকে,

২১. যদি তিনি তোমাদের রেযেক বন্ধ করে দেন, তাহলে এখানে এমন আর কে আছে যে তোমাদের (পুনরায়) রেযেক সরবরাহ করতে পারবে? (আসলে) এরা (আল্লাহ তায়ালার) বিদ্রোহ এবং গোঁড়ামিতেই (নিমজ্জিত) রয়েছে।

২২. যে ব্যক্তি যমীনে উপুড় হয়ে মুখে ভর দিয়ে চলে সে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে হেদায়াতপ্রাপ্ত, না যে (ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে) সঠিক পথ ধরে চলে সে (বেশী হেদায়াতপ্রাপ্ত)?

২৩. (হে নবী,) তুমি বলো, (হ্যাঁ), তিনিই তোমাদের পয়দা করেছেন, তিনি তোমাদের (শোনার ও দেখার জন্যে) কান এবং চোখ দিয়েছেন, আরো দিয়েছেন (চিন্তা করার মতো) একটি অন্তর; কিন্তু তোমরা খুব কমই (এসব দানের) কৃতজ্ঞতা আদায় করো।

২৪. তুমি বলো, তিনি এ ভূখন্ডে তোমাদের (সর্বত্র) ছড়িয়ে রেখেছেন, আবার (একদিন চারদিক থেকে) তাঁরই সম্মুখে তোমাদের সবাইকে জড়ো করা হবে।

২৫. তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে (বলো) কবে এটা (সংঘটিত) হবে?

২৬. তুমি বলো, () তথ্য তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে, আমি তো একজন সুস্পষ্ট সাবধানকারী মাত্র!

২৭. যখন (সত্যি সত্যিই) (প্রতিশ্রুতি)-টি তারা (সংঘটিত হতে) দেখবে- যারা (দুনিয়ায় একে) অস্বীকার করেছিলো, তখন তাদের সবার মুখমন্ডল বিকৃত হয়ে যাবে এবং (তাদের তখন) বলা হবে, এ হচ্ছে সেই (মহাধ্বংস), যাকে তোমরা পেতে চাইতে!

২৮. তুমি বলো, তোমরা কি এ কথা ভেবে দেখেছো যে, আল্লাহ তায়ালা যদি আমাকে এবং আমার সংগী সাথীদের ধ্বংস করে দেন, কিংবা (ধ্বংস না করে) তিনি যদি আমাদের ওপর দয়া প্রদর্শন করেন (এ উভয় অবস্থায়), কিন্তু (আল্লাহ তায়ালাকে) যারা অস্বীকার করেছে তাদের এ ভয়াবহ আযাব থেকে কে বাঁচাবে। 

২৯. তুমি বলো (হ্যাঁ, সেদিন বাঁচাতে পারেন একমাত্র) দয়াময় (আল্লাহ তায়ালা)-, তাঁর ওপর আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা তাঁর ওপরই নির্ভর করেছি, অচিরেই তোমরা জানতে পারবে (আমাদের মধ্যে) কে সুস্পষ্ট গোমরাহীর মাঝে নিমজ্জিত ছিলো?

৩০. (হে নবী,) তুমি বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছো, তোমাদের (এই) পানি যদি কখনো উধাও হয়ে যায়, তাহলে কে তোমাদের জন্যে এ (পানির) প্রবাহধারা (পুনরায়) বের করে আনবে?

অনুবাদকঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ।
প্রকাশনাঃ আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।

No comments:

Post a Comment