সূরার
নামের অর্থঃ
তালাক/বিবাহবিচ্ছেদ/বন্ধনমুক্তি
তালাক/বিবাহবিচ্ছেদ/বন্ধনমুক্তি
[মদীনায় অবতীর্ণ- আয়াত ১২, রুকু ০২] [কোরআনে অবস্থান ৬৫, অবতীর্ণের অনুক্রম ৯৯]
পরম
করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্র নামে-
১. হে
নবী, (সাথীদের বলো),
যখন তোমরা (তোমাদের) স্ত্রীদের তালাক দাও (বা দিতে ইচ্ছা করো),
তখন তাদের ইদ্দতের (অপেক্ষার সময়ের) প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিয়ো,
ইদ্দতের যথার্থ হিসাব রেখো, তোমরা আল্লাহ
তায়ালাকে ভয় করো, যিনি তোমাদের রব, ইদ্দতের
সময় (কোনো অবস্থায়ই) তাদের নিজেদের বসতবাড়ি থেকে বের করে দিয়ো না, তারা নিজেরাও যেন (এ সময়) তাদের ঘর থেকে বের হয়ে না যায়, তবে যদি তারা কোনো জঘন্য অশ্লীলতা (জনিত অপরাধে অপরাধী) হয়ে আসে (তাহলে
সেটা ভিন্ন কথা।) এগুলো হচ্ছে আল্লাহর সীমারেখা; যে ব্যক্তি আল্লাহর
এ সীমারেখা অতিক্রম করে সে (মূলত এর দ্বারা) নিজের ওপর নিজেই যুলুম করে। তুমি তো
জানো না এর পর আল্লাহ তায়ালা হয়তো (পুনরায় তোমাদের মাঝে সহৃদয়তার কোনো) একটা
পথ বের করে দেবেন।
২.
অতপর যখন তারা তাদের (ইদ্দতের) সে নির্ধারিত সময়ে (-র শেষ প্রান্তে) উপনীত হয়, তখন তাদের হয় সম্মানজনক পন্থায়
(বিয়ে বন্ধনে) রেখে দেবে, না হয় সম্মানের সাথে তাদের আলাদা
করে দেবে এবং (উভয় অবস্থায়ই) তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে তোমরা
সাক্ষী বানিয়ে রাখবে, (সাক্ষীদেরও বলো) তোমরা শুধু আল্লাহর
জন্যেই (এ) সাক্ষ্য দান করবে; যারা আল্লাহ তায়ালা ও শেষ বিচার
দিনের ওপর ঈমান আনে, তাদের সবাইকে এর দ্বারা উপদেশ দেয়া
হচ্ছে; যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, তিনি তার জন্যে (সংকট উত্তরণের) একটা পথ তৈরী করে দেন-
৩.
এবং তিনি তাকে এমন জায়গা থেকে রেযেক দান করেন যার (উৎস) সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই
নেই; যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্যে যথেষ্ট; (কেননা) আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের
কাজ পূর্ণ করেই নেন; আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি জিনিসের জন্যেই একটি পরিমাণ ঠিক করে
রেখেছেন।
৪.
তোমাদের স্ত্রীদের মাঝে যারা ঋতুবতী হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে, তাদের
(ইদ্দতের) ব্যাপারে তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকলে (তোমরা জেনে রেখো,) তাদের ইদ্দত হচ্ছে তিন মাস, (এ তিন
মাসের বিধান) তাদের জন্যেও, যাদের এখনও ঋতুকাল শুরুই হয়নি; গর্ভবতী
নারীর ইদ্দতকাল হচ্ছে তার সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত; (বস্তুত) কেউ যদি আল্লাহকেই ভয় করে, তাহলে
(নানাভাবে) তিনি তার জন্যে তার কাজকে সহজ করে দেন।
৫. (তালাক ও ইদ্দতের ব্যাপারে) এ হচ্ছে
আল্লাহ তায়ালার আদেশ, যা তিনি তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয়
করে, তিনি তার গুনাহখাতা মুছে দেবেন এবং তিনি তার পুরস্কারকেও বড়ো করে দেবেন।
৬. (ইদ্দতের সময়ে) তোমরা নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী তাদের সে ধরনের
বাড়িতে থাকতে দিয়ো- যে ধরনের বাড়িতে তোমরা নিজেরা থাকো, কোনো অবস্থায়ই সংকট সৃষ্টি
করার মতলবে তাদের কষ্ট দিয়ো না; আর যদি তারা সন্তানসম্ভবা হয়, তাহলে (ইদ্দতের নিয়ম অনুযায়ী) তারা সন্তান প্রসব না করা পর্যন্ত তাদের
খোরপোষ দিতে থাকো, (সন্তান জন্মদানের পর) যদি তারা তোমাদের
সন্তানদের (নিজেদের) বুকের দুধ খাওয়ায়, তাহলে তোমরা (সে জন্যে) তাদের পারিশ্রমিক
আদায় করে দেবে এবং (এ ব্যাপারটা) তোমরা ভালোভাবে নিজেদের মধ্যে ন্যায়সংগত পন্থায়
সমাধান করে নেবে, যদি তোমরা একে অন্যের সাথে জেদ করো, তাহলে
অন্য একজন (মহিলা) এ সন্তানকে দুধ খাওয়াবে;
৭. বিত্তশালী
ব্যক্তি তার সংগতি অনুযায়ী (স্ত্রীদের) খোরপোষ দেবে; আবার যে ব্যক্তির অর্থনৈতিক সংগতি
সীমিত করে দেয়া হয়েছে সে ব্যক্তি ততোটুকু পরিমাণই খোরপোষ দেবে যতোটুকু আল্লাহ
তায়ালা তাকে দান করেছেন; আল্লাহ তায়ালা যাকে যে পরিমাণ সামর্থ দান করেছেন তার বাইরে
কখনো (কোনো) বোঝা তার ওপর তিনি চাপান না;
(আল্লাহর ওপর নির্ভর করলে) আল্লাহ তায়ালা (তাকে) অচিরেই অভাব
অনটনের পর সচ্ছলতা দান করবেন।
৮.
কতো জনপদের মানুষই তো নিজেদের রব ও তাঁর রসূলের নির্দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
করেছিলো, অতপর আমি তাদের কাছ থেকে (সে জন্যে) কঠিন হিসাব আদায় করে নিয়েছি এবং
আমি ওদের কঠোর শাস্তি দিয়েছি।
৯. এরপর
তারা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করলো, (মূলত) তাদের (এ) কাজের পরিণাম ফল (ছিলো) চরম ক্ষতি।
১০. আল্লাহ
তায়ালা (পরকালে) তাদের জন্যে এক কঠিন আযাব প্রস্তুত করে রেখেছেন, অতএব (হে মানুষ), তোমরা যারা জ্ঞানসম্পন্ন,
তোমরা যারা (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান এনেছো- তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহ
তায়ালা তোমাদের কাছে অবশ্যই (তাঁর) উপদেশবাণী নাযিল করেছেন,
১১. (তিনি)
রসূল (পাঠিয়েছেন), যে (রসূল) তোমাদের আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পড়ে শোনায়, যাতে
করে সে তোমাদের- যারা ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে তাদের (জাহেলিয়াতের) অন্ধকার
থেকে (হেদায়াতের) আলোতে নিয়ে আসতে পারে; তোমাদের যে কেউই আল্লাহর ওপর ঈমান আনে
এবং ভালো কাজ করে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন- (এমন এক জান্নাত)-যার তলদেশ
দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে; এমন লোকের
জন্যে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা উত্তম রেযেকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
১২. আল্লাহ
তায়ালা- যিনি সাত আসমান ও তাদের অনুরূপ সংখ্যক যমীন সৃষ্টি করেছেন; (আবার) উভয়ের মাঝখানে (যা আছে
তাদের জন্যে) তাঁর নির্দেশ জারি হয়, যাতে করে তোমরা একথা অনুধাবন করতে পারো যে, (আকাশ পাতালের) সকল কিছুর ওপর আল্লাহ তায়ালাই (একক)
ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞান (এ সৃষ্টিলোকের) প্রতিটি বস্তুকেই পরিবেষ্টন করে
রেখেছে।
অনুবাদকঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ।
অনুবাদকঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ।
প্রকাশনাঃ
আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।
No comments:
Post a Comment