সূরার
নামের অর্থঃ
১. পরস্পরকে
ক্ষতিগ্রস্ত করা ও নিজে লাভবান হওয়ার প্রতিযোগীতা/লাভবান ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার
প্রতিযোগীতা।
২. লাভ-লোকসান/জয় পরাজয় (অর্থাৎ, এই দিনটি হবে মুমিনদের জন্যে লাভের, কারণ তারা চূড়ান্তভাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং কাফেরদের জন্যে লোকসানের, কারণ তারা চূড়ান্তভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে)।
২. লাভ-লোকসান/জয় পরাজয় (অর্থাৎ, এই দিনটি হবে মুমিনদের জন্যে লাভের, কারণ তারা চূড়ান্তভাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং কাফেরদের জন্যে লোকসানের, কারণ তারা চূড়ান্তভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে)।
৩.
তাগাবুন শব্দটি এসেছে ‘গাবান’ ধাতু থেকে। গাবান অর্থ লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি। অর্থাৎ,
এই দিনে কাফেররা জাহান্নামে প্রবেশের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং
মুমিনরাও এই দিক দিয়ে লোকসান অনুভব করবে যে, তারা দুনিয়াতে আরো অধিক সৎকর্ম করলে
জান্নাতে আরো অধিক মর্যাদার অধিকারী হতে পারতেন।
৪.
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াওমুত্তাগা-বুন’ হলো কিয়ামতের একটি নাম (ইবনে কাসীর)।
[মদীনায়
অবতীর্ণ- আয়াত ১৮,
রুকু ০২] [কোরআনে অবস্থান ৬৪,
অবতীর্ণের অনুক্রম ১০৮]
পরম
করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্র নামে-
১.
আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, (যাবতীয়) সার্বভৌমত্ব ও প্রশংসা
তাঁর জন্যে, তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
২.
তিনিই আল্লাহ তায়ালা যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, অতপর তোমাদের কিছু লোক (এ কথা বিশ্বাস করে) মোমেন হয়ে
গেলো আবার কিছু লোক (অবিশ্বাস করে) কাফের থেকে গেলো; (আসলে) তোমরা যা কিছু করো
আল্লাহ তায়ালা তা দেখেন।
৩. তিনি
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সঠিকভাবে সৃষ্টি করেছেন,
অতপর তিনি তোমাদের (মানুষের) আকৃতি দিয়েছেন, অতি সুন্দর করে তিনি তোমাদের
আকৃতি দিয়েছেন, তাঁর কাছেই (তোমাদের) প্রত্যাবর্তন।
৪. আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন, তিনি জানেন তোমরা যা কিছু গোপন করো, আর যা কিছু প্রকাশ করো; আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মনের কথা জানেন।
৫. তোমাদের কাছে কি সেসব লোকের খোঁজ খবর কিছুই পৌঁছেনি যারা এর আগে (বিভিন্ন নবীর সময়ে) কুফরী করেছিলো, অতপর তারা (দুনিয়াতেই) নিজেদের কর্মফল ভোগ করে নিয়েছে, তাদের জন্যে (পরকালেও) কঠোর যন্ত্রণাদায়ক আযাব রয়েছে।
৬. (এটা) এ কারণে যে, তাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ নিয়ে যখনি (আল্লাহর) কোনো রসূল আসতো তখনি তারা বলতো, (কতিপয়) মানুষই কি আমাদের পথের সন্ধান দেবে? অতএব তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করলো এবং তারা মুখ ফিরিয়ে নিলো, অবশ্য আল্লাহ তায়ালার (তাদের কাছ থেকে) কিছুই পাওয়ার ছিলো না, আল্লাহ তায়ালা কারোই মুখাপেক্ষী নন, তিনি চির প্রশংসিত।
৭. কাফেররা
ধারণা করে নিয়েছে যে, একবার মরে গেলে কখনো তাদের পুনরুত্থিত করা হবে না; তুমি বলো,
না- তা কখন নয়; আমার মালিকের শপথ, অবশ্যই মৃত্যুর পর তোমাদের সবাইকে কবর থেকে
ওঠানো হবে এবং তোমাদের বলে দেয়া হবে তোমরা কি কাজ করে এসেছো; আর আল্লাহ তায়ালার
পক্ষে এটা অত্যন্ত সহজ।
৮. অতএব
তোমরা আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রসূল এবং আমি (কোরআনের আকারে) যে আলো (তোমাদের জন্যে)
নাযিল করেছি তার ওপর ঈমান আনো; (জেনে রেখো) তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তায়ালা তা ভালো করেই জানেন।
৯. যেদিন
তোমাদের (সবাইকে) মহাসমাবেশের দিনটির জন্যে একত্র করা হবে, (সেদিন বলা হবে), আজকের
দিনটিই হচ্ছে (আসল) লাভ লোকসানের দিন; (লাভের দিন তার জন্যে) যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে,
তিনি (আজ) তার গুনাহ মোচন করে দেবেন এবং তাকে তিনি এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,
যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, তারা সেখানে অনন্তকাল অবস্থান করবে; (আর)
এটাই হচ্ছে (সেদিনের) পরম সাফল্য।
১০. (লোকসানের
দিন তাদের জন্যে,) যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে
মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, এরা হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল
অবস্থান করবে; কতো নিকৃষ্ট সে আবাসস্থল!
১১.
আল্লাহ তায়ালার অনুমতি ব্যতীত (কারো ওপর) কোনো বিপদই আসে না; যে ব্যক্তি আল্লাহ
তায়ালাকে বিশ্বাস করে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন; আর আল্লাহ তায়ালা
সব বিষয়েই সম্যক অবগত রয়েছেন।
১২. তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, আনুগত্য করো (তাঁর) রসূলের, তোমরা যদি (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে (জেনে রেখো), আমার রসূলের ওপর দায়িত্ব (হচ্ছে আমার কথাগুলো) সুস্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।
১৩.
আল্লাহ তায়ালা (মহান), তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, অতএব ঈমানদার বান্দাদের উচিত
সকল বিষয়ে আল্লাহর ওপরই নির্ভর করা।
১৪.
হে ঈমানদাররা, অবশ্যই তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান সন্ততিদের মাঝে তোমাদের (কিছু)
দুশমন রয়েছে, অতএব তাদের ব্যাপারে তোমরা সতর্ক থেকো, অবশ্য তোমরা যদি (তাদের)
অপরাধ ক্ষমা করে দাও, তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করো এবং তাদের মাফ করার নীতি
অবলম্বন করো, তবে আল্লাহ তায়ালা পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
১৫. তোমাদের
ধন সম্পদ ও তোমাদের সন্তান সন্ততি (তোমাদের জন্যে) পরীক্ষা মাত্র; (পরীক্ষায় সফল
হতে পারলে) অবশ্যই (এর জন্যে) আল্লাহ তায়ালার কাছে মহাপুরস্কার রয়েছে।
১৬.
অতএব তোমরা সাধ্য মোতাবেক আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, তোমরা (রসূলের আদেশ) শোনো এবং
(তাঁর) কথামতো চলো, আল্লাহর দেয়া ধন সম্পদ থেকে (তাঁরই উদ্দেশ্যে) খরচ করো, এটি
তোমাদের নিজেদের জন্যেই কল্যাণকর; যে ব্যক্তিকে তার মনের লোভ লালসা থেকে রেহাই
দেয়া হয়েহে (সে এবং তার মতো) লোকেরাই হচ্ছে সফলকাম।
১৭. যদি
তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ঋণ দাও- উত্তম ঋণ, তাহলে তিনি তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন
এবং তিনি তোমাদের (গুনাহ খাতা) মাফ করে দেবেন; আল্লাহ তায়ালা বড়োই গুণগ্রাহী ও
পরম ধৈর্যশীল,
১৮. তিনি
জানেন দেখা-অদেখা (সব কিছুই), তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
অনুবাদকঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ।
No comments:
Post a Comment