মক্কা বিজয়ের পর মহানবী (সাঃ) তখনও
মক্কায়। এ সময় কুরাইশ গোত্রের একজন সম্মানিতা মহিলা চুরির অপরাধে ধরা পড়ল।
কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত লোকরা
তাকে এই অভিযোগ থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করল। কিন্তু তারা যখন দেখল কোনভাবেই তাকে নিরপরাধী
প্রমাণের উপায় নেই, তখন
তারা একযোগে উসামাকে গিয়ে ধরল।
উসামা হযরতের খুবই প্রিয়পাত্র।
সকলেই দেখেছে, মক্কা
বিজয়ের দিন মহানবী (সাঃ) উসামাকে নিজ উটে নিজের পাশে বসিয়ে মক্কা প্রবেশ করেছিলেন।
সকলে উসামাকে অনুরোধ করল, ‘আপনি
নবীর কাছে সুপারিশ করুন যেন স্ত্রী-লোকটিকে বিনাদণ্ডে মুক্তি দেয়া হয়।’
কুরাইশ সরদারদের অনুরোধে উসামা
সুপারিশ করতে রাজি হলেন।
খুশী হলো কুরাইশরা। তারা নিশ্চিত
যে, এমন প্রিয়জনের
অনুরোধের প্রতি নবী কখনই উপেক্ষা প্রদর্শন করতে পারবেন না।
যথাসময়ে উসামা মহানবী (সাঃ)-এর
দরবারে উপস্থিত হলেন এবং অভিযুক্ত স্ত্রীলোকটির জন্য মহানবীর স্বগোত্রীয়
সম্ভ্রান্তদের অনুরোধের কথা জানালেন।
উসামার কথা শুনামাত্র মহানবী
(সাঃ)-এর চেহারায় ভাবান্তর দেখা দিল। উসামাকে লক্ষ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘উসামা, তুমি কি আল্লাহর
নির্ধারিত দণ্ডের ব্যতিক্রম করার জন্যে আমাকে অনুরোধ করতে এসেছ?’
মহানবী (সাঃ)-এর কথা ও গম্ভীর
কণ্ঠস্বর শুনে উসামা কেঁপে উঠলেন। তার ভুল বুঝতে পারলেন উসামা। নিজের অপরাধের কথা
ভেবে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়লেন। বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে ক্ষমা করুন।’
মহানবীর বিচার-নীতির আর একটি ঘটনা।
উপরোক্ত ঘটনার পরবর্তি অপরাহ্ন।
মহানবী (সাঃ)-কে ঘিরে অনেক লোক
উপস্থিত।
এক সময় মহানবী (সাঃ) তাদেরকে কিছু
বলার জন্য দাঁড়ালেন।
প্রথমে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের
প্রশংসার পর তিনি সকলকে সম্বোধন করে বললেন, “তোমরা নিশ্চিত জেনে রেখ, তোমাদের আগের অনেক জাতি ধ্বংস হয়েছে
বিচার-ক্ষেত্রে তাদের নিরপেক্ষতার অভাবের কারণে। তখন বিচারের সময় জাতি-কুল ও
ধন-সম্পত্তির তারতম্য অনুসারে অপরাধীদের দণ্ড ভিন্ন ভিন্ন রকমের হতো। মানী ও
ধনীদের অপরাধ উপেক্ষা করা হতো এবং দরিদ্র ও দুর্বলদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা
হতো। সকলে জেনে রাখ, এটা
ইসলামের আদর্শ নয়, ইসলাম
এই পক্ষপাত সহ্য করে না। আল্লাহর কসম, আমার কন্যা ফাতিমাও যদি অপরাধে লিপ্ত হতো, তাহলে তাকেও
নির্ধারিত দণ্ডদানে আমি একবিন্দুও কুণ্ঠিত হতাম না।”
লেখকঃ
আবুল আসাদ
বইঃ
আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]
No comments:
Post a Comment