মক্কার আশে-পাশের অনেক বেদুইন
গোত্র আগে থেকেই কুরাইশদের বাড়াবাড়ির কারণে তাদের উপর বিক্ষুব্ধ ছিল এবং
সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেছিল মুসলমানদের প্রতি। মুসলমানদের মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে
কুরাইশদের দর্প চূর্ণ হবার পর এই বেদুইন গোত্রগুলো ইসলামের আরও কাছাকাছি হয়ে
পড়েছিল।
মক্কা বিজয় পরবর্তী তাৎক্ষনিক
কাজগুলো সম্পন্ন হবার পর মহানবী (সাঃ) তার সাহাবীদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে
পাঠালেন বেদুইন গোত্রগুলোর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাবার জন্যে। অস্ত্র ব্যবহার ও
যুদ্ধ করার অনুমতি এই দলগুলোর প্রতি ছিল না।
হঠাৎ মহানবী (সাঃ)-এর কাছে খবর এল
যে, বনি যাজিমা গোত্রের
কয়েকজনকে খালিদ বিন ওয়ালিদের দল হত্যা করে ফেলেছে।
এই খবর শোনামাত্র মহানবী (সাঃ)
ব্যাকুলভাবে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি জান, খালিদের এই কাজের সাথে আমার বিন্দুমাত্রও সম্পর্ক নেই।’
সংগে সংগেই মহানবী (সাঃ) বিষয়টার
তদন্ত করলেন। তদন্তে পরিষ্কার হলো যে, আবদুল্লাহ ইবনে হুজাইফার বলার দোষে হোক, অথবা নিজের শুনার
ভুলের কারণে হোক, খালিদ
একটা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে ঐ অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়েছিলেন।
বনি যাজিমার লোকরাও জেনে আনন্দিত
হলো যে, খালিদের কাজের সাথে
মহানবীর (সাঃ) কোন প্রকার সম্বন্ধ বা সহানুভূতি নেই। তারা আরও বুঝতে
পারলো যে, খালিদ ভুলক্রমেই
যুদ্ধাদেশ প্রদান করেছিলেন।
এসব জেনে বনি যাজিমার লোকরা
আশ্বস্ত হলো এবং তাদের মনের বিরূপতাও মিটে গেল।
ওদিকে তদন্ত শেষে মহানবী (সাঃ)
হযরত আলী (রাঃ)-কে প্রচুর অর্থসহ বনি যাজিমার কাছে প্রেরণ করলেন তাদের ক্ষতিপূরণ
দেয়ার জন্যে।
বনি যাজিমার লোকেরা দারুণ বিস্মিত
হলো ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্যে হযরত আলীকে আসতে দেখে। যেহেতু হত্যাকাণ্ড ইচ্ছাকৃত
নয়, ভুলক্রমে তা সংঘটিত
হয়েছে, তাই ক্ষতিপূরণ
নেবার কোন চিন্তাও তাদের মনে উদয় হয়নি।
হযরত আলী (রাঃ) মহানবী (সাঃ)-এর
প্রতিনিধি হিসেবে বনি যাজিমার ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করলেন। নিয়ম অনু্যায়ী রক্তপণ বাবদ
যে অর্থ বনি যাজিমা’র
প্রাপ্য হতে পারে, তার
চেয়ে অনেক বেশী অর্থ হযরত আলী তাদের দিলেন।
বনি যাজিমা’র কাছে এ এক অকল্পনীয় দৃশ্য, অভাবনীয় এক ঘটনা।
যারা আজ বিজয়ী সেই শক্তি তাদের মত এক ক্ষুদ্র গোত্রের কাছে অপরাধ না হওয়া সত্ত্বেও
অপরাধ স্বীকার করে এভাবে তার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।
বনি যাজিমা পল্লীতে তখন জয়-জয়কার
পড়ে গেল মহানবী (সাঃ) এবং ইসলামের নামে।
ওদিকে মহানবীর কাছে হযরত আলী যখন
ফিরে গেলেন ক্ষতিপূরণ শেষে এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ওদের যা প্রাপ্য তার চেয়ে ওদের বেশী দিয়ে ফেলেছি।
মহানবী আনন্দিত কণ্ঠে বললেন, ‘ভাল করেছ, বেশ করেছ।’
তারপর মহানবী (সাঃ) তার দুই হাত
উপরে তুলে উচ্চকণ্ঠে আবার বললেন, ‘আল্লাহ, তুমি জান। খালিদের কাজের সাথে আমার কোন সম্বন্ধ নেই, আমি নিরপরাধ।’
লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]
No comments:
Post a Comment