Wednesday, May 13, 2020

বন্দী মুক্তির এমন দৃশ্য দুনিয়া আর দেখেনি

হুনাইন যুদ্ধে হাওয়াজিনরা তাদের সমুদয় ধন-সম্পদ এবং স্ত্রী-পুত্র পরিজন ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল।

এই মালে গণিমতও বন্দীদের উপর ছিল যুদ্ধে যোগদানকারী প্রতিটি মুসলমানের হক। সর্বসম্মত যুদ্ধ-আইন অনুসারে তাঁদের মধ্যেই এসব বণ্টন করে দেবার কথা। কিন্তু মহানবী (সাঃ) ধন-সম্পদ ও যুদ্ধবন্দী সবকিছুই মক্কার জিরানা নামক স্থানে সযত্নে রক্ষা করলেন। তার ইচ্ছা ছিল সর্বস্বান্ত হয়ে পড়া হাওয়াজিনরা এসে এসব ফিরে পাবার প্রার্থনা করলে তাদের এসব ফেরত দেবার ব্যবস্থা করবেন।

কিন্তু সপ্তাহকাল অপেক্ষার পরেও যখন তারা এল না, তখন মহানবী (সাঃ) ধন-সম্পদগুলো মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন।

দুসপ্তাহ পরে হাওয়াজিনরা এল।

হাওয়াজিনদের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মহানবীর (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে কাতর কণ্ঠে আরজ করল, “মুহাম্মাদ! আজ আমরা আপনার করুণা ভিক্ষা করতে এসেছি। আমাদের আপরাধ ও অত্যাচারের দিকে আপনি তাকাবেন না। হে আরবের সাধু, নিজ গুণে আমাদের প্রতি দয়া করুন।

মহানবী (সাঃ) দয়ার সাগর। মানুষের দুঃখ-বেদনা মোচন করে আলোর পথে নেয়ার জন্যেই তো তাঁর আগমন।

হাওয়াজিনদের করুণ অবস্থায় অভিভূত হয়ে পড়লেন মহানবী (সাঃ)। কিন্তু কি করবেন তিনি! হাওয়াজিনরা দেরী করায় তাদের যুদ্ধক্ষেত্রের ধন-সম্পদ সমুদয় বণ্টন হয়ে গেছে। বাকি আছে ছয় হাজার যুদ্ধবন্দী নর-নারী। কিন্তু মুক্তিপণ ছাড়া তাদের ছেড়ে দিতে কেউ রাজী হবে না। সবদিকে ভেবে মহানবী (সাঃ) ওদের বললেন, “তোমাদের জন্যে অনেক অপেক্ষা করেছি। ধন-সম্পদ ফিরে পাবার কোন উপায় তোমাদের আর নেই। বন্দীদের মুক্তির ব্যাপারটা নিয়ে আমি ভাবছি। আমার ও আমার স্বগোত্রীয়দের প্রাপ্য বন্দীদের বিনাপণে মুক্তি দেবার ভার আমি নিতে পারি। অন্যান্য মুসলমান ও অমুসমানদের অংশ সম্বন্ধে আমি এখন জোর করে কোন কথা বলতে পারছি না। তোমরা নামাযের সময় এসো এবং নামায শেষে সকলের কাছে প্রার্থনা জানাও। আমি যা বলার তখন বলব।

নামাযের সময়।

নামাজ শেষ হতেই হাওয়াজিন প্রতিনিধিরা উঠে দাঁড়িয়ে সকলের সামনে কাতর কণ্ঠে তাদের বন্দীদের মুক্তি প্রার্থনা করল।

হাওয়াজিনদের কথা শেষ হবার সাথে সাথে মহানবী (সাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, “তোমাদের এই ভাইয়েরা অনুতপ্ত হৃদয়ে তোমাদের কাছে তাদের বন্দী স্বজনদের মুক্তি প্রার্থনা করছে। আমি এ ব্যাপারে তোমাদের সকলের মতামত জানতে চাই। তবে তার আগে আমার মতটা তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি যে, আবদুল মুত্তালেব গোত্রের প্রাপ্য সমস্ত বন্দীকেই আমি বিনা পণে মুক্তি দিয়েছি।

মহানবীর (সাঃ) মত জানার পর একে একে মুহাজির ও আনসার দলপতিরা আনন্দের সাথে তাঁদের নিজ নিজ গোত্রের প্রাপ্য অংশের দাবী পরিত্যাগ করলেন। দুএকজন গোত্রপতি শত্রু হাওয়াজিনদের বন্দীদের বিনাপণে মুক্তি দিতে অমত প্রকাশ করলেন। তাদের কোন প্রকার চাপ না দিয়ে মহানাবী (সাঃ) তাদের উদ্দেশ্যে বললনে, “তোমাদের প্রাপ্য ক্ষতি পূরণের জন্যে আমি দায়ী রইলাম। প্রথম সুযোগেই এই ঋণ আমি পরিশোধ করে দেব।

হাওয়াজিনদের ছয় হাজার বন্দীর সবাই মুক্তি পেল। এক কপর্দক মুক্তিপণও হাওয়াজিনদের উপর চাপানো হলো না।

বিদায় দেবার সময় মহানবী (সাঃ) ছয় হাজার বন্দীর সকলকে নতুন কাপড় পরিয়ে দিলেন।

বন্দী মুক্তির এমন দৃশ্য দুনিয়া আর কখনও দেখেনি, দেখবেও না কোনদিন।

লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]

No comments:

Post a Comment