[মদীনায় অবতীর্ণ- আয়াত ৩১, রুকু ০২] [কোরআনে অবস্থান ৭৬, অবতীর্ণের অনুক্রম ৯৮]
পরম
করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্র নামে-
১.
কালের (পরিক্রমায়) কোনো একটি সময় মানুষের ওপর দিয়ে এসেছে কি- যখন সে (এবং তার
অস্তিত্ব) উল্লেখ করার মতো কিছুই ছিলো না!
২.
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি (নারী পুরুষের) মিশ্রিত শুক্র থেকে, যেন আমি তাকে (তার ভালো মন্দের
ব্যাপারে) পরীক্ষা করতে পারি, অতপর (পরীক্ষার উপযোগী করে তোলার
জন্যে) তাকে আমি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন করে পয়দা করেছি।
৩.
আমি তাকে (চলার) পথ দেখিয়ে দিয়েছি, সে চাইলে (আল্লাহর) কৃতজ্ঞ হবে, না হয় (অকৃতজ্ঞ)
কাফের হয়ে যাবে।
৪.
কাফেরদের জন্যে আমি শেকল, বেড়ি ও আগুনের লেলিহান শিখার ব্যবস্থা করে রেখেছি।
৫.
নিসন্দেহে যারা সৎকর্মশীল তারা (জান্নাতে) এমন সুরা পান করবে যার সাথে
(সুগন্ধযুক্ত) কর্পূর মেশানো থাকবে,
৬. এ
পানি হবে প্রবাহমান (এক) ঝর্ণা, যার (প্রবাহ) থেকে আল্লাহর নেক বান্দারা সদা পানীয় গ্রহণ করবে, তারা (যেদিকে যখন ইচ্ছা) এ (ঝর্ণাধারা)-টা প্রবাহিত করে নেবে।
৭.
(এরা হচ্ছে সেসব লোক) যারা ‘মানত’ পূরণ করে এবং এমন এক দিনকে ভয় করে, যে দিনের ধ্বংসলীলা হবে
সুদূরপ্রসারী।
৮.
এরা শুধু আল্লাহর ভালোবাসায় (উদ্বুদ্ধ হয়েই ফকীর) মেসকীন, এতীম ও কয়েদীদের খাবার দেয়।
৯.
(এরা বলে,) আমরা শুধু
আল্লাহ তায়ালারর সন্তুষ্টির জন্যেই তোমাদের খাবার দিচ্ছি, (বিনিময়ে)
আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোনো রকম প্রতিদান চাই না- না (চাই) কোনো রকম কৃতজ্ঞতা
জ্ঞাপন।
১০.
আমরা সে দিনটির ব্যাপারে আমাদের মালিককে ভয় করি, যে দিনটি হবে অতীব ভয়ংকর।
১১.
আল্লাহ তায়ালা আজ তাদের সেদিনের (ভয়ংকর আযাব ও) অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন, তিনি তাদের সজীবতা ও আনন্দ দান
করবেন,
১২.
এরা যে ধৈর্য প্রদর্শন করেছে (তার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তায়ালা) তাদের জান্নাত
ও রেশমী বস্ত্র দান করবেন,
১৩.
(সেখানে) তারা (সুসজ্জিত) আসনে হেলান দিয়ে বসবে, সেখানে সূর্যের (তাপ) যেমন তারা
দেখবে না, তেমনি দেখবে না কোনোরকম শীত (-এর প্রকোপও),
১৪.
তাদের ওপর (জান্নাতে) তার গাছের ছায়া ঝুঁকে থাকবে, তার ফল-পাকড়া তাদের আয়ত্তাধীন করে দেয়া হবে।
১৫.
তাদের (সামনে খাবার) পরিবেশন করা হবে রৌপ্য নির্মিত পাত্রে ও কাঁচের পেয়ালায়, তা হবে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ,
১৬.
রূপালী স্ফটিক পাত্র, (যার
সবটুকুই) পরিবেশনকারীরা যথাযথভাবে পূর্ণ করে রাখবে।
১৭.
সেখানে তাদের এমন এক (অপূর্ব) সুরা পান করানো হবে, যার সাথে মেশানো হবে ‘যানজাবীল’ (নামের মূল্যবান সুগন্ধ),
১৮.
তাতে রয়েছে (জান্নাতের) এক (অমিয়) ঝর্ণা,
যার নাম রাখা হয়েছে ‘সালসাবীল’।
১৯.
তাদের চারদিকে ঘোরাঘুরি করবে একদল কিশোর বালক, যারা চিরকাল কিশোরই থাকবে, যখনি
তুমি তাদের দিকে তাকাবে মনে হবে এরা কতিপয় ছড়ানো ছিটানো মুক্তা।
২০.
সেখানে যখন যেদিকে তুমি তাকাবে, দেখবে শুধু নেয়ামতেরই সমারোহ, দেখবে (নেয়ামত
উপচেপড়া) এক বিশাল সাম্রাজ্য।
২১.
বেহেশতবাসীদের পরনের কাপড় হবে অতি সূক্ষ্ণ সবুজ রেশম ও মোটা মখমল, তাদের পরানো হবে রূপার কংকণ,
তাদের মালিক সেদিন তাদের ‘শরাবান তহুরা’ (পবিত্র
ও উৎকৃষ্ট পানীয়) পান করাবেন।
২২.
(আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে আমার বান্দারা,) এ হচ্ছে তোমাদের জন্যে (আমার) পুরস্কার
এবং তোমাদের (যাবতীয়) চেষ্টা সাধনার স্বীকৃতি!
২৩.
(হে নবী,) আমি অবশ্যই
(এ মহাগ্রন্থ) কোরআনকে তোমার ওপর ধীরে ধীরে নাযিল করেছি,
২৪.
সুতরাং তুমি ধৈর্যের সাথে তোমার মালিকের নির্দেশের অপেক্ষা করো, আর এদের মধ্যে যারা পাপী ও সত্যের
পথ প্রত্যাখ্যানকারী, কখনো তাদের আনুগত্য করবে না,
২৫.
তুমি সকাল সন্ধ্যা শুধু তোমার মালিকের নাম স্মরণ করতে থাকো,
২৬.
রাতের একাংশ তাঁর সামনে সাজদাবনত থাকো এবং রাতের দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর মহিমা ও
পবিত্রতা ঘোষণা করতে থাকো।
২৭.
এরা বৈষয়িক স্বার্থের পার্থিব জগতকেই বেশী ভালোবাসে এবং পরে যে তাদের ওপর একটা
কঠিন দিন আসছে তা উপেক্ষা করে!
২৮.
আমিই এদের সৃষ্টি করেছি এবং এদের জোড়াগুলো ও তার বাঁধন আমিই মযবুত করেছি, আবার আমি যখন ইচ্ছা করবো তখন এদের
(এ বাঁধন শিথিল করে তাদের) আকৃতি বদলে দেবো।
২৯.
অবশ্যই এটি হচ্ছে একটি উপদেশ, অতএব যার ইচ্ছা সে (একে আঁকড়ে ধরে) নিজের মালিকের কাছে যাওয়ার পথ করে
নিতে পারে।
৩০.
আর আল্লাহ তায়ালা যা চান সেটা ছাড়া তোমরা তো কিছুই চাইতেও পারো না; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সব কিছু
জানেন, তিনি প্রজ্ঞাময়।
৩১.
তিনি যাকে চান তাকে তাঁর রহমতের মাঝে প্রবেশ করান; যালেমদের জন্যে তিনি কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন।
প্রকাশনাঃ আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।
No comments:
Post a Comment