পরম
করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্র নামে-
১.
(হে নবী,) তুমি বলো,
আমার কাছে এ মর্মে ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জ্বীনদের
একটি দল (কোরআন) শুনেছে, অতপর তারা (নিজেদের লোকদের) বলেছে, আমরা আজ এক বিস্ময়কর কোরআন শুনে এসেছি,
২. যা
সঠিক (ও নির্ভুল) পথ প্রদর্শন করে, তাই আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি এবং আমরা আর কখনো আমাদের মালিকের সাথে কাউকে
শরীক করবো না,
৩.
(আমরা বিশ্বাস করি,) আমাদের
মালিকের মর্যাদা সকল কিছুর ঊর্ধ্বে, তিনি কাউকে স্ত্রী কিংবা
পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেননি,
৪.
(আমরা এও জানি,) আমাদের
(কতিপয়) নির্বোধ আল্লাহ তায়ালার ওপর অসত্য ও বাড়াবাড়িমূলক কথাবার্তা আরোপ করে,
৫.
আমরা মনে করেছিলাম, মানুষ
ও জ্বীন (এ দুই জাতি তো) আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করতেই পারে না,
৬.
মানুষদের মাঝে কতিপয় (মূর্খ) লোক (বিপদে আপদে) জ্বীনদের কিছু সদস্যের কাছে আশ্রয়
চাইতো, (এতে করে) মানুষরা তাদের গুনাহকে আরো বাড়িয়ে দিতো,
৭.
জ্বীনরা মনে করতো- যেমনি মনে করতে তোমরা (মানুষরা)- যে, (মৃত্যুর পর)
আল্লাহ তায়ালা কখনো কাউকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না,
৮.
(জ্বীনরা আরো বললো,) আমরা
আকাশমন্ডল ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি, আমরা একে কঠোর প্রহরী
ও উল্কাপিন্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত পেয়েছি,
৯. আমরা
আগে তার বিভিন্ন ঘাটিতে কিছু শোনার প্রত্যাশায় বসে থাকতাম; কিন্তু এখন আমাদের কেউ যদি (এসব ঘাটিতে
বসে) কিছু শোনার চেষ্টা করে, তাহলে সে প্রতিটি জায়গায় তার
জন্যে (পেতে রাখা এক) একটি জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড (দেখতে) পায়,
১০.
আমরা বুঝতে পারছিলাম না, পৃথিবীর মানুষদের কোনো অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশেই কি এসব (উল্কাপিন্ড বসিয়ে
রাখা) হয়েছে?- না (এর মাধ্যমে) তাদের মালিক তাদের সঠিক পথ
দেখাতে চান,
১১.
(মানুষদের মতো) আমাদের মধ্যেও কিছু আছে সৎকর্মশীল, আর কিছু আছে এর ব্যতিক্রম; (পাপ
পুণ্যের দিক থেকে) আমরা ছিলাম দ্বিধাবিভক্ত,
১২.
আমরা বুঝে নিয়েছি, এ
ধরার বুকে আমরা আল্লাহ তায়ালাকে কখনো অক্ষম করতে পারবো না- না আমরা (কখনো তার
থেকে) পালিয়ে গিয়ে তাঁকে পরাভূত করতে পারবো,
১৩.
আমরা যখন হেদায়াতের বাণী (সম্বলিত কোরআন) শুনলাম, তখন আমরা তার ওপর ঈমান আনলাম; (কেননা)
যে ব্যক্তি তার মালিকের ওপর ঈমান আনে, তার কোনো কিছু কম
পাওয়ার আশংকা থাকে না, (পরকালেও) তার
লাঞ্ছনা থাকবে না,
১৪.
আমাদের মধ্যে কিছু আছে যারা (আল্লাহর অনুগত) মুসলিম, আবার কিছু আছে যারা সত্যবিমুখ (কাফের); যারা (আল্লাহর) আনুগত্যের পথ বেছে নিয়েছে তারাই হচ্ছে সেসব (ভাগ্যবান)
মানুষ যারা মুক্তি ও সৎপথই বাছাই করে নিয়েছে,
১৫.
আর যারা সত্যবিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামের ইন্ধন (হবে),
১৬. লোকেরা
যদি সত্য (ও নির্ভুল) পথের ওপর সুদৃঢ় থাকতো,
তাহলে আমি তাদের (আসমান থেকে) প্রচুর পানি পান করাতাম,
১৭.
যেন আমি এর দ্বারা তাদের (ঈমানের) পরীক্ষা নিতে পারি; যদি কোনো মানুষ তার মালিকের স্মরণ
থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তিনি তাকে কঠোর আযাবে প্রবেশ করাবেন,
১৮.
মাসজিদসমূহ আল্লাহ তায়ালার এবাদাতের জন্যে (নির্দিষ্ট), অতএব তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য
কাউকে ডেকো না,
১৯.
যখন আল্লাহর এক বান্দা তাকে ডাকার জন্যে দাঁড়ালো, তখন (মানুষ কিংবা জ্বীনের) অনেকেই তার পাশে ভীড় জমাতে
লাগলো;
২০.
(এদের) তুমি বলো, আমি
শুধু আমার রবকেই ডাকি, আর আমি (কখনো) তাঁর সাথে কাউকে শরীক
করি না।
২১.
তুমি বলো, আমি তোমাদের
ক্ষতিসাধনের যেমন ক্ষমতা রাখি না, তেমনি আমি তোমাদের ভালো
করার ক্ষমতাও রাখি না।
২২.
তুমি বলো, আমাকে
আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। আমি কখনো তিনি ছাড়া আর কোনো
আশ্রয়স্থল (খুঁজে) পাবো না,
২৩.
(আমার কাজ) এ ছাড়া আর কি (আছে) যে, আমি আল্লাহর কাছ থেকে তাঁর বাণী ও হেদায়াত পৌঁছে দেবো, কেউ যদি আল্লাহ তায়ালা এবং তার রসূলকে অমান্য করে, তার
জন্যে রয়েছে জাহান্নামের (কঠিন) আগুন, যেখানে তারা চিরকাল
অবস্থান করবে;
২৪.
এভাবে (সত্যি সত্যিই) যখন তারা (সে দিনটি),
দেখতে পাবে যার প্রতিশ্রুতি তাদের দেয়া হচ্ছে, তখন তারা অবশ্যই জানতে পারবে কার সাহায্যকারী কতো দুর্বল এবং কার বাহিনী
কতো কম!
২৫.
তুমি বলো, আমি (নিজেই)
জানি না, তোমাদের (কেয়ামতের) যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে তা
কি (আসলেই) সন্নিকটে, না আমার মালিক তার জন্যে কোনো মেয়াদ
ঠিক করে রেখেছেন।
২৬.
তিনি (সমগ্র) গায়বের (একক) জ্ঞানী, তাঁর (সে) অদৃশ্য জগতের কোনো কিছুই তিনি কারো কাছে প্রকাশ করেন না,
২৭.
অবশ্য তাঁর রসূল ছাড়া- যাকে তিনি বাছাই করে নিয়েছেন, কিন্তু তারও আগে-পিছে তিনি
(অতন্দ্র) প্রহরী নিযুক্ত করে রেখেছেন,
২৮. এ
(প্রহরা) দিয়ে তিনি এ কথাটা জেনে নিতে চান,
তাঁর নবী রসূলরা (মানুষের কাছে) তাদের মালিকের
পক্ষ থেকে হেদায়াতের বাণী (ঠিক ঠিক) পৌঁছে দিয়েছে কিনা, তিনি
তো এমনিই তাদের সব কিছু পরিবেষ্টন করে রয়েছেন এবং (এ সৃষ্টি জগতের) সবকিছুকেই
তিনি গুনে রেখেছেন।
প্রকাশনাঃ আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।
No comments:
Post a Comment