Wednesday, November 6, 2019

সূরা আল-মুদ্দাসসির [(কম্বল/চাদর/বস্ত্র) আচ্ছাদিত/আবৃত]

[মক্কায় অবতীর্ণ- আয়াত ৫৬, রুকু ০২] [কোরআনে অবস্থান ৭৪, অবতীর্ণের অনুক্রম ০৪]

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে-

১. হে কম্বল আবৃত (মুহাম্মাদ),

২. (কম্বল ছেড়ে) তুমি ওঠো এবং মানুষদের (পরকালের আযাব সম্পর্কে) সাবধান করো,

৩. তোমার মালিকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো,

৪. তোমার পোশাক আশাক পবিত্র করো-

৫. এবং মলিনতা ও অপবিত্রতা পরিহার করো,

৬. কখনো বেশী পাওয়ার লোভে কাউকে কিছু দান করো না,

৭. তোমার মালিকের (খুশীর) উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণ করো;

৮. যেদিন (সবকিছু ধ্বংস করে দেয়ার জন্যে) শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে,

৯. সেদিনটি (হবে) সত্যিই বড় সাংঘাতিক,

১০. (এ দিনকে) যারা অস্বীকার করেছে তাদের জন্যে এটি মোটেই সহজ (বিষয়) হবে না।

১১. যাকে আমি অনন্য ধরনের (করে) পয়দা করেছি, (তার সাথে বুঝাপড়া করার জন্যে) তুমি আমাকেই ছেড়ে দাও,

১২. তাকে আমি বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ দান করেছি,

১৩. (তাকে আরো দান করেছি) সদা সংগী (এক দল) পুত্র সন্তান,

১৪. আমি তার জন্যে (সচ্ছলতার উপকরণ) সুগম করে দিয়েছি,

১৫. (তারপরও) সে লোভ করে যে, তাকে আমি আরো অধিক দিতে থাকবো,

১৬. না, কখনো নয়; কেননা সে আমার আয়াতসমূহের বিরুদ্ধাচরণে বদ্ধপরিকর ছিলো,

১৭. অচিরেই আমি তাকে (শাস্তির) চূড়ায় আরোহণ করাবো;

১৮. সে তো (সত্য গ্রহণের ব্যাপারে কিছুটা) চিন্তা-ভাবনাও করেছিলো, তারপর সে (নিজের গোঁড়ামিতে থাকার) সিদ্ধান্ত করলো,

১৯. তার ওপর অভিশাপ, (সত্য চেনার পরও) কেমন করে সে (পুনরায় এ) সিদ্ধান্ত করলো!

২০. আবারও তার ওপর অভিশাপ! কিভাবে সে এমন সিদ্ধান্ত করলো,

২১. সে (লোকদের প্রতি) চেয়ে দেখলো,

২২. (দম্ভভরে) সে তার ভ্রুকুঞ্চিত করলো, (অবজ্ঞাভরে) মুখটাকে বিকৃত করে ফেললো,

২৩. অতপর সে পিছিয়ে গেলো এবং অহংকার করলো,

২৪. সে (আরো) বললো, এ তো (আসলে) আগের লোকদের থেকে প্রাপ্ত যাদু (-বিদ্যার খেল) ছাড়া কিছুই নয়,

২৫. এ তো মানুষের কথা ছাড়া (আর কিছুও) নয়;

২৬. অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো

২৭. তুমি কি জানো জাহান্নাম (-এর আগুন) কি ধরনের?

২৮. যা (এর অধিবাসীদের অক্ষত অবস্থায়) ফেলে রাখবে না, আবার (শাস্তি থেকে) রেহাইও দেবে না,

২৯. বরং তা মানুষদের গায়ের চামড়াকে ভীষণভাবে জ্বালিয়ে দেবে,

৩০. তার ওপর (নিয়োজিত আছে) ঊনিশ (সদস্যের ফেরেশতাদল);

৩১. আমি দোযখের প্রহরী হিসেবে ফেরেশতাদের, ছাড়া (অন্য কাউকেই) নিযুক্ত করিনি এবং তাদের (এই ঊনিশ) সংখ্যাকে আমি অবিশ্বাসীদের জন্যে একটি পরীক্ষার মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছি, যেন এর মাধ্যমে যাদের ওপর আমার কিতাব নাযিল হয়েছে তারা (আমার কথায়) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে এবং যারা (আগে থেকেই আমার ওপর) ঈমান এনেছে তাদের ঈমানও এতে করে বৃদ্ধি পেতে পারে, (সর্বোপরি) এর ফলে আহলে কিতাব এবং মোমেনরাও যেন কোনোরকম সন্দেহে নিমজ্জিত না হতে পারে, (অবশ্য) যাদের মনে সন্দেহের ব্যাধি রয়েছে এর ফলে তারা এবং সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ব্যক্তিরা বলবে, এ (অভিনব) উক্তি দ্বারা আল্লাহ তায়ালা কী বুঝাতে চান? (মূলত) এভাবেই আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে গোমরাহ করেন, (আবার) তিনি যাকে চান তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন; তোমার মালিকের (বিশাল) বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কেউই জানে না, (আর দোযখের বর্ণনা-) এ তো শুধু মানুষদের উপদেশের জন্যেই-

৩২. না, তা কখনো নয়, (আমি) চাঁদের শপথ (করে বলছি),

৩৩. (আরো) শপথ (করছি) রাতের, যখন তা অবসান হতে থাকে,

৩৪. শপথ (করছি) প্রভাতকালের যখন তা (দিনের) আলোয় উদ্ভাসিত হয়,

৩৫. নিসন্দেহে (মানুষের জন্যে) তা হবে কঠিনতম বিপদসমূহের মধ্যে একটি,

৩৬. মানুষের জন্যে (তা হবে) ভয় প্রদর্শনকারী,

৩৭. তোমাদের সে ব্যক্তির জন্যে, যে (কল্যাণের পথে) অগ্রসর হতে চায় এবং (অকল্যাণের পথ থেকে) পিছু হটতে মনস্থ করে;

৩৮. (মূলত) প্রত্যেক মানুষই নিজের কর্মফলের হাতে বন্দী হয়ে আছে,

৩৯. অবশ্য ডান দিকে অবস্থানকারী (নেককার) লোকগুলো ছাড়া;

৪০. তারা অবস্থান করবে (চিরস্থায়ী) জান্নাতে। (সেদিন) তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করবে-

৪১. (জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত) পাপিষ্ঠদের সম্পর্কে,

৪২. (হে জাহান্নামের অধিবাসীরা,) তোমাদের আজ কিসে এ আযাবে উপনীত করেছে?

৪৩. তারা বলবে, আমরা নামাযীদের দলে শামিল ছিলাম না,

৪৪. অভাবী (ক্ষুধার্ত) ব্যক্তিদের আমরা খাবার দিতাম না,

৪৫. (সত্যের বিরুদ্ধে) যারা অন্যায় অমূলক আলোচনায় উদ্যত হতো আমরা তাদের সাথে যোগ দিতাম,

৪৬. (সর্বোপরি) আমরা আখেরাতকেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম,

৪৭. এমনি (করতে করতে একদিন) চূড়ান্ত সত্য (হিসেবে মৃত্যু) আমাদের কাছে হাযির হয়ে গেলো

৪৮. কোনো সুপারিশকারীর সুপারিশই (আজ) তাদের কোনো উপকারে আসবে না;

৪৯. এদের কি হয়েছে, এরা (সত্য) বাণী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কেন?

৫০. এরা যেন (বনের) কতিপয় পলায়নপর (ভীত সন্ত্রস্ত) গাধা,

৫১. যারা সিংহের আক্রমণ থেকে পালাতে ব্যস্ত;

৫২. কিন্তু তাদের প্রতিটি ব্যক্তিই চায়, তাকে (আলাদা করে) উন্মুক্ত গ্রন্থ দেয়া হোক,

৫৩. এটা (কখনো) সম্ভব নয়, (আসলে) এ লোকেরা শেষ বিচারের দিনকেই ভয় করে না;

৫৪. না, কখনো নয়, এটি একটি নসীহত মাত্র,

৫৫. অতএব (এক্ষণে) যার ইচ্ছা সে যেন (এ থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করে;

৫৬. (সত্যি কথা হচ্ছে,)  আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ব্যতিরেকে তারা কখনো (এ থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করবে না; একমাত্র তিনিই ভয় করার যোগ্য এবং একমাত্র তিনিই হচ্ছেন ক্ষমার মালিক।

অনুবাদকঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ।
প্রকাশনাঃ আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।

No comments:

Post a Comment