Saturday, November 9, 2019

সূরা নূহ [(নবী) নূহ]

[মক্কায় অবতীর্ণ- আয়াত ২৮, রুকু ০২] [কোরআনে অবস্থান ৭১, অবতীর্ণের অনুক্রম ৭১]

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে-

১. অবশ্যই আমি নূহকে তার জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম, (তাকে বলেছিলাম, হে নূহ), তোমার জাতির ওপর এক ভয়াবহ আযাব আসার আগেই তুমি তাদের সাবধান করে দাও।

২. (নূহ তার জাতিকে বললো,) হে আমার জাতি, আমি হচ্ছি তোমাদের জন্যে একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী ব্যক্তি,

৩. তোমরা আল্লাহর এবাদাত করো, তাঁকেই ভয় করো, তোমরা আমার আনুগত্য করো,

৪. (এতে করে) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন এবং (এ দুনিয়ায়) তিনি তোমাদের এক সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেবেন; হ্যাঁ, আল্লাহর সেই নির্দিষ্ট সময় যখন এসে যাবে তখন তাকে পিছিয়ে দেয়া যাবে না। কত ভালো হতো যদি তোমরা বুঝতে পারতে!

৫. (নিরাশ হয়ে) সে বললো, হে আমার রব, আমি আমার জাতিকে দিবানিশি (ঈমানের) দাওয়াতই দিয়েছি,

৬. (কিন্তু) আমার এ (দিবানিশি) দাওয়াত তাদের (সত্য থেকে) পালানো ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করেনি।

৭. যতোবার আমি তাদের (তোমার পথে) ডেকেছি- (ডেকেছি) যেন তুমি (তাদের অতীত কৃতকর্ম) ক্ষমা করে দাও, তারা (ততোবারই) কানে আংগুল ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং (অজ্ঞতার) আবরণ দিয়ে নিজেদের ঢেকে দিয়েছে, (শুধু তাই নয়), তারা জেদ ও অহমিকাও প্রদর্শন করেছে, (হেদায়াতকে অবজ্ঞা করার) ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে,

৮. তারপর আমি আবারও তাদের কাছে প্রকাশ্যভাবে (দ্বীনের) দাওয়াত পেশ করেছি,

৯. তাদের জন্যে আমি (দ্বীনের) প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছি, আমি চুপে চুপেও তাদের কাছে (দ্বীনের দাওয়াত) পেশ করেছি,

১০. পরন্তু আমি তাদের বলেছি, তোমরা তোমাদের মালিকের দুয়ারে (নিজেদের অপরাধের জন্যে) ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিসন্দেহে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল,

১১. (তদুপরি) তিনি তোমাদের ওপর আকাশ থেকে অঝোর বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন,

১২. ধনসম্পদ ও সন্তান সন্ততি দিয়ে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন, তিনি তোমাদের জন্যে বাগবাগিচা ও উদ্যানমালা স্থাপন করবেন, (বিরান ভূমিতে) তিনি নদীনালা প্রবাহিত করবেন;

১৩. এ কি হলো তোমাদের! তোমরা কি আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে মানমর্যাদা পাওয়ার আশা করো না?

১৪. অথচ তিনিই পর্যায়ক্রমে তোমাদের (মানুষ) বানিয়েছেন।

১৫. তোমরা কি দেখতে পাও না, কিভাবে আল্লাহ তায়ালা সাত আসমান বানিয়ে স্তরে স্তরে (তাকে সাজিয়ে) রেখেছেন-

১৬. এবং কিভাবে এর মাঝে তিনি চাঁদকে আলো ও সূর্যকে প্রদীপ বানিয়েছেন।

১৭. আল্লাহ তায়ালাই তোমাদের (একটি বিশেষ পদ্ধতিতে) মাটি থেকে উদগত করেছেন,

১৮. আবার তিনি তোমাদের তার মাঝেই ফিরিয়ে নেবেন এবং তা থেকেই একদিন তিনি তোমাদের বের করে আনবেন।

১৯. আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্যে যমীনকে বিছানার মতো (সমতল করে) বানিয়েছেন,

২০. যাতে করে তোমরা এর উন্মুক্ত (ও প্রশস্ত) পথ ধরে চলাফেরা করতে পারো

২১. নূহ বললো, হে আমার রব, আমার জাতির লোকেরা আমার বিরুদ্ধাচরণ করেছে, তারা এমন কিছু লোকের অনুসরণ করেছে যাদের ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি তাদের বিনাশ ছাড়া অন্য কিছুই বৃদ্ধি করেনি,

২২. তারা (সত্যের বিরুদ্ধে) সাংঘাতিক ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে,

২৩. তারা বলে, তোমরা তোমাদের দেবতাদের কোনো অবস্থায়ই পরিত্যাগ করো না- ‘ওয়াদ’ ‘সূয়া’ (নামক দেবতাদের) উপাসনা কিছুতেই ছেড়ে দিয়ো না, ‘ইয়াগুস’ ‘ইয়াউক’ ও ‘নাছর’ নামের দেব দেবীকেও (ছাড়বে) না,

২৪. (হে মালিক,) এরা অনেককেই পথভ্রষ্ট করেছে, তুমিও আজ এ যালেমদের জন্যে পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে দিয়ো না।

২৫. (অতপর) তাদের নিজেদের অপরাধের জন্যেই তাদের (মহাপ্লাবনে) ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে, (পরকালেও) তাদের জাহান্নামের কঠিন অনলে প্রবেশ করানো হবে, (অবস্থায়) তারা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কাউকেই সাহায্যকারী হিসেবে পাবে না।

২৬. নূহ বললো, হে আমার রব, এ যমীনের অধিবাসী একজন (যালেম)-কেও তুমি (আজ শাস্তি থেকে) রেহাই দিয়ো না,

২৭. (আজ) যদি তুমি এদের (শাস্তি থেকে) রেহাই দাও, তাহলে এরা (পুনরায়) তোমার বান্দাদের পথভ্রষ্ট করবে, (শুধু তাই নয়), এরা (ভবিষ্যতেও) দুরাচার পাপী কাফের ছাড়া কাউকেই জন্ম দেবে না।

২৮. হে আমার রব, তুমি আমাকে, আমার পিতামাতাকে- তোমার ওপর ঈমান এনে যারা আমার (সাথে ঈমানের এই) ঘরে আশ্রয় নিয়েছে, এমন সব ঈমানদার পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষমা করে দাও, যালেমদের জন্যে চূড়ান্ত ধ্বংস ছাড়া কিছুই তুমি বৃদ্ধি করো না।

অনুবাদকঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ।
প্রকাশনাঃ আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।

No comments:

Post a Comment