Saturday, June 15, 2019

উকাশা ইবন মিহসান (রাঃ)

নাম উকাশা বা উক্‌কাশা, কুনিয়াত বা ডাক নাম আবু মিহসান। পিতা মিহসান ইবন হুরসান। জাহিলী যুগে বনী আবদে শামসের হালীফ বা চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। হিজরতের পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং অন্যদের সাথে মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে যান। [উসুদুল গাবা-৪/২]।

বদর যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য দারুণ নাম করেন। এ যুদ্ধে তাঁর হাতের তরবারিটি ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। রাসূল (সাঃ) তাকে একটি খেজুরের ছড়ি দান করেন এবং তা দিয়েই তিনি সূচালো ছুরির মত শত্রুর ওপর আক্রমণ চালান। যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তিনি এ ছড়ি দিয়েই লড়ে যান। [ইসতীয়াব]। ইবন সাদ যায়িদ ইবন আসলাম ও অন্যদের থেকে বর্ণনা করছেনঃ বদরের দিন উকাশা ইবন মিহসানের অসিটি ভেঙ্গে যায়। রাসূল (সাঃ) তাঁকে একটি কাঠের লাঠি দেন। সেটি তাঁর হাতে স্বচ্ছ ঝকমকে কঠিন লোহার তীক্ষ অসিতে পরিণত হয়। [হায়াতুস সাহাবা-৩/৬৫৮]।

উহুদ, খন্দকসহ সকল প্রসিদ্ধ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে তিনি চরম বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। হিজরী সপ্তম সনের রবীউল আউয়াল মাসে বনী আসাদের মূলোৎপাটনের জন্য তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মদীনার পথে ‘গামার’ কূপের আশে পাশে ছিল এই বনী আসাদের বসতি। তিনি চল্লিশ জনের একটি বাহিনী নিয়ে দ্রুত সেখানে গিয়ে ‍হাজির হন। কিন্তু বনী আসাদের লোকেরা ভয়ে আগে ভাগেই সে স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়ে যায়। উকাশা কাউকে না পেয়ে তাদের পরিত্যক্ত দুশো উট ও কিছু ছাগল বকরী হাঁকিয়ে নিয়ে মদীনায় ফিরে ‍আসেন।

হিজরী ১২ সনে প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত খালিদ ইবনুল ওয়ালীদকে ভন্ডনবী তুলাইহা আসাদীর বিদ্রোহ নির্মূলের নির্দেশ দেন। হযরত উকাশা ও হযরত সাবিত ইবন আরকাম ছিলেন হযরত খালিদের বাহিনীর দু’জন অগ্র সৈনিক। তারা বাহিনীর আগে আগে চলছিলেন। হঠাৎ শত্রু সৈন্যের সাথে ‍তাদের সংঘর্ষ ঘটে। এই শত্রু সৈনিকদের মধ্যে তুলাইহা নিজে ও তাঁর ভাই সালামাও ছিল। তুলাইহা আক্রমণ করে উকাশাকে, আর সালামা ঝাঁপিয়ে পড়ে সাবিতের ওপর। সাবিত শাহাদাত বরণ করেন। এমন সময় তুলাইহা চেঁচিয়ে ওঠে সালামা শিগগির আমাকে সাহায্য কর। আমাকে মেরে ফেললো। সালামার কাজ তখন শেষ হয়ে গিয়েছিল। সে তুলাইহার সাহায্যে এগিয়ে যায় এবং দুই ভাই এক সাথে উকাশাকে আক্রমণ করে ধরাশায়ী করে ফেলে। এভাবে উকাশা শহীদ হন।

ইসলামী ফৌজ এই দুই শহীদের লাশের কাছে পৌঁছে ভীষণ শোকাতুর হয়ে পড়ে। হযরত উকাশার দেহে মারাত্মক যখমের চিহ্ন ছিল। তাঁর সারা দেহ ক্ষত বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। বাহিনী প্রধান হযরত খালিদ ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে বাহিনীর যাত্রা বিরতির নির্দেশ দেন। অতঃপর শহীদ দু’য়ের রক্তভেজা কাপড়েই কাফন দিয়ে সেই মরুভূমির বালুতে দাফন করেন।

মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তিনি নেতৃস্থানীয় সাহাবীদের মধ্যে শামিল ছিলেন। [উসুদুল গাবা-৪/৩]।

হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) একবার বলেন, সত্তর হাজার মানুষ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। উকাশা প্রশ্ন করেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি? বললেন, তুমিও তাদের মধ্যে। অতঃপর দ্বিতীয় এক ব্যক্তি নিজের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, উকাশা তোমার থেকে এগিয়ে গেছে। এই ঘটনার পর রাসূলুল্লাহর (সাঃ) এই বাক্যটি প্রবাদে পরিণত হয়। কেউ কোন ব্যাপারে কাউকে ছাড়িয়ে গেলে বলা হয়, অমুক উকাশার মত এগিয়ে গেছে।

      লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আবদুল মাবুদ
   আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
(বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথাদ্বিতীয় খন্ড)

No comments:

Post a Comment