Sunday, June 23, 2019

যূ-শিমালাইন উমাইর ইবন আবদি আমর (রাঃ)

আসল নাম উমাইর, ডাক নাম আবু মুহাম্মাদ, লকব বা উপাধি যূ -শিমালাইন। পিতার নাম আবদু আমর। খুযায়া গোত্রের সন্তান। তিনি সকল কাজ দু হাত দিয়ে করতেন বলে যূ-শিমালাইন দুখানি দক্ষিণ হস্তের অধিকারী তার উপাধিতে পরিণত হন। 

তার পিতা আবদু আমর ইবন নাদলা মক্কায় এসে আবদ ইবন হারেস ইবন নাদলা ইবন যাহবার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে থেকে যান। আবদ নিজ কন্যা নুম বিনতু আবদকে তার সাথে বিয়ে দেন। তারই গর্ভে পুত্র যূ-শিমালাইন ও কন্যা রায়তা জন্ম গ্রহণ করেন। (তাবাকাত ইবন সাদ-৩/১৬৭)।

উল্লেখ্য যে, সীরাত গ্রন্থ সমূহে যূ-শিমালাইন অর্থাৎ দুখানি ডান হাতের অধিকারী এবং যুল ইয়াদাইন বা দুখানি হাতের অধিকারী এ দুটি লকব বা উপাধি বিশিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদ্বয়ের কথা পাওয়া যায়। এ দুটি উপাধি কি একই ব্যক্তির না ভিন্ন দু ব্যক্তির এ সম্পর্কে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতের অমিল দেখা যায়। অধিকাংশের মতে উপাধি দুটি একই ব্যক্তির যেমনঃ ইবন সা’দ তার তাবাকাতে শিরোনাম দিয়েছেন- যূল ইয়াদাইন ওয়া ইউকালু যূ-আশ-শিমালাইন অর্থাত যূল-ইয়াদাইন এবং তাকেই যূ-আশ-শিমালাইন বলা হয়। (তাবাকাত-৩/১৬৭)।

কিন্তু তাদের এ মত অনেকের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের মতে মূলতঃ তারা ভিন্ন দু ব্যক্তি। হাদীসের দ্বারাও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। যূল-ইয়াদাইন নামক ব্যক্তির একটি ঘটনা বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) চার রাকয়াতের স্থলে দুই রাকয়াত নামায আদায় করে সালাম ফিরান। সাহাবীরা তো সবাই হতভম্ব। কিন্তু কেউ কোন প্রশ্ন করতে সাহস পেলেন না। যুল ইয়াদাইন ছিলেন অত্যন্ত সাহসী। তিনি জিজ্ঞেস করে বসলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! নামায কি কম করে দেওয়া হয়েছে না কি আপনি ভুল করেছেন? রাসূল (সাঃ) সাহাবীদের নিকট তার কথার সত্যতা যাচাই করলেন। সবাই যূল-ইয়াদাইনকে সমর্থন করে বললেনঃ আপনি দুই রাকয়াতই আদায় করেছেন। সত্যতা যাচাইর পর তিনি বাকী দু' রাকায়াত আদায়ের শেষে সহু সিজদাহ করেন। (বুখারীঃ আযান অধ্যায়, অনুচ্ছেদঃ ইমামের সন্দেহ হলে তিনি কি মুকতাদিদের কথা গ্রহণ করবেন?)

উপরোক্ত হাদীসটির বর্ণনাকারী হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)। তিনি হিজরী সপ্তম সনে খাইবার যুদ্ধের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। অন্যদিকে যূ-শিমালাইন তার পাঁচ বছর পূর্বে বদর যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। সুতরাং যূল-ইয়াদাইন ও যূ-শিমালাইন একই ব্যক্তি হতে পারেন না। তাছাড়া দুজনের নামেও পার্থক্য আছে। একজনের নাম খিরবাক ও অন্যজনের নাম উমাইর। (সিয়ারুস সাহাবা, মুহাজিরিন-২/৩২৭)। আবু উমার বলেনঃ বদরে যূ-শিমালাইন শহীদ হন তিনি যূল-ইয়াদাইন নন। (আল ইসাবা-৩/৩৩)।

হযরত যূ-শিমালাইন কখন এবং কিভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। ইসলাম গ্রহণের পর মদীনায় হিজরাত করে হযরত সাদ ইবন খাইসামার অতিথি হন। রাসূল (সাঃ) ইয়াযীদ ইবন ‍হারেসের সাথে তার মুওয়াখাত বা ভাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্টা করে দেন। 

ইসলাম গ্রহণের পর খুব বেশি দিন তিনি বাঁচেননি। মদীনায় আসার পর তিনি ও তার দ্বীনি ভাই ইয়াযীদ বদর যুদ্ধে যোগদান করেন। এটাই ছিল তার জীবনের প্রথম ও শেষ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে তিনি কাফির আবু উসামা যুহাইর ইবন মুয়াবিয়া আল জুশামীর হাতে শহীদ হন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ত্রিশ বছর। তার দ্বীনী ভাই ইয়াযীদও এ যুদ্ধে শহীদ হন। (তাবাকাতঃ ৩/১৬৮, আনসাবুল আশরাফ-১/২৯৫)।

       লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আবদুল মাবুদ
    আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
(বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথাদ্বিতীয় খন্ড)

No comments:

Post a Comment