নাম ফাদল, ডাক নাম আবু মুহাম্মাদ। পিতা প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্বাস
ইবন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) এবং মাতা লুবাবা বিনতুল হারেস আল হিলালিয়্যাহ।
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) চাচাতো ভাই। পিতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। এ কারণে পিতা
আব্বাসকে ডাকা হতো আবুল ফাদলের পিতা বলে এবং মাতা লুবাবাকে বলা হতো উম্মুল
ফাদল বা ফাদলের মা।
বদর যুদ্ধের পূর্বেই পরিবারের অন্যদের সাথে
ইসলাম গ্রহণ করেন; কিন্তু মক্কার কাফিরদের ভয়ে প্রকাশ করেননি। মক্কা বিজয়ের
অল্প কিছুদিন পূর্বে পিতা হযরত আব্বাস ও ছোট ভাই আবদুল্লাহর (রাঃ) সাথে
মদীনায় হিজরত করেন। হিজরতের সময় তার বয়স ছিল তের বছর এবং আবদুল্লাহর বয়স আট
বছর। [হায়াতুস সাহাবা-১/৩৭৩]। তিনি মদীনায় হিজরতের পর সর্ব প্রথম মক্কা
অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন। অতঃপর হুনাইন অভিযানেও যোগদান করেন। আক্রমণের
প্রথম পর্যায়ে মুসলিম বাহিনী যখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়ে পালাতে
শুরু করে তখনও তিনি হযরত রাসূলে কারীমের (সাঃ) সাথে ময়দানে অটল থাকেন।
বিদায় হজ্জে তিনি রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে একই বাহনে বসা ছিলেন। এ কারণে
সেই দিন থেকে তিনি ‘রাদিফুর রাসূল’ উপাধিতে ভূষিত হন। এই সময় খাইসাম
গোত্রের এক যুবক ও এক সুন্দরী যুবতী রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নিকট হজ্জের
বিভিন্ন মাসয়ালা জিজ্ঞেস করতে আসে। হজ্জের সময় মহিলাদের মুখে নেকাব দেওয়া
যেহেতু জায়েয নয়, এ কারণে মহিলাটির মুখ খোলা ছিল। ফাদল ছিলেন সুদর্শন
নওজোয়ান। মহিলাটি তাঁর দিকে আড় চোখে তাকাতে থাকে এবং ফাদলও তাকে দেখতে
থাকেন। হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) কয়েকবার ফাদলের মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন।
রাসূল (সাঃ) বললেনঃ ‘আজ যে ব্যক্তি স্বীয় চোখ, কান ও জিহবা সংযত রাখতে
পারবে তার সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ [ইবন সা’দ-৪/৩৭, আল ইসাবা-৩/২০৮ এবং
বুখারী শরীফে বাবু হজ্জিল মারয়াতে অধ্যায়ে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে]। মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় চাদর উঁচু করে ধরে তিনি রাসূল (সাঃ) কে ছায়াদান
করেন। মদীনায় রাসূল (সাঃ) তাঁকে বিয়ে দেন এবং নিজেই তাঁর দেন মোহর পরিশোধ
করেন।
হযরত ফাদল (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) পার্থিব জীবনের সর্বশেষ
খিদমাতের সুযোগ লাভে ধন্য হন। অন্তিম রোগশয্যায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সর্বশেষ
ভাষণ দান করেন। এ ভাষণ দেওয়ার জন্য যে দু’জন সৌভাগ্যবান ব্যক্তির সাহায্য
নিয়ে তিনি ঘর থেকে বের হন তাঁদের একজন ফাদল। আর রাসূল (সাঃ) যে ভাষণ দেবেন─ এ
কথাটিও ফাদল জনগণের মধ্যে ঘোষণা করেন। [আল ইসাবা-৩/২০৮]। রাসূলুল্লাহর
(সাঃ) ইনতিকালের পর যে ক’জন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি পবিত্র দেহ গোসল দেওয়ার
সুযোগ লাভ করেন ফাদল (রাঃ) তাদের অন্যতম। হযরত আলী (রাঃ) গোসল করান, ফাদল
পানি ঢেলে দেন, রাসূলুল্লাহর (সাঃ) কাপড় ধরে রাখেন এবং আউস ইবন খাওলী নামক
এক আনসারী পানি এগিয়ে দেন। [আল-ইসতীয়াব, হায়াতুস সাহাবা-২/৩৪১]।
ওয়াকিদী বলেনঃ হযরত ফাদল হযরত উমারের খিলাফতকালে আমওয়াসের প্লেগের
মহামারিতে মারা যান। আবার অনেকে বলেছেন, হযরত আবু বকরের খিলাফতকালে আজনাদাইন
অথবা ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, হিজরী
১৫ সনে ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। তাঁর মৃত্যুসন সম্পর্কে বিস্তর
মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ইমাম বুখারী আজনাদাইনের মতটি গ্রহণযোগ্য বলে মনে
করেছেন। [আল ইসাবা-৩/২০৯]।
হযরত ফাদল (রাঃ) হতে ২৪টি হাদীস বর্ণিত
হয়েছে। ইবন আব্বাস ও আবু হুরাইরার মত বিশিষ্ট সাহাবীরাও তাঁর থেকে হাদীস
গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া কুরাইব, কুসাম ইবন আব্বাস, আব্বাস ইবন উবাইদিল্লাহ,
রাবীয়া ইবন হারেস, উমাইর, আবু সাঈদ, সুলাইমান ইবন ইয়াসার, শাবী, আতা ইবন
আবী রিবাহ প্রমুখ তাবেয়ী তাঁর নিকট থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন। [আল
ইসাবা-৩/২০৯]।
লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আবদুল মাবুদ
আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
(বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথা – দ্বিতীয় খন্ড)
No comments:
Post a Comment