Sunday, August 18, 2019

কোমলতার জয়

বাদশাহ’র ভৃত্য পলায়ন করেছে।

রাজা হুকুম দিলেন—যে-কোনোভাবে হোক ওকে খুঁজে বের করো।

ভৃত্যকে খুঁজে ধরে নিয়ে আসা হল।

বাদশাহ তার প্রাণদণ্ডের আদেশ দিলেন।

নিয়ে যাওয়া হল তাকে জল্লাদের দরবারে। জল্লাদের খড়গ উদ্যত। এই ঘোর দুঃসময়ে একজন মানুষের করার কী থাকতে পারে! ভৃত্যটি হতাশার ঘন অন্ধকারে নিমজ্জিত। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেচারা কাতরস্বরে প্রার্থনা শুরু করল : হে পরম করুণাময়, আমাকে অহেতুক হত্যা করা হচ্ছে। যারা আমাকে হত্যা করছে তাদের আমি ক্ষমা করেছি। তুমিও তাদের ক্ষমা করো। বাদশাহ আমার প্রাণদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই। কারণ এই রাজাই আমাকে প্রতিপালন করেছেন। তুমি সকলের পাপ ক্ষমা করো।

বাদশাহ ভৃত্যের ফাঁসির মঞ্চের পাশেই ছিলেন। ভৃত্যের মৃত্যুকালীন প্রার্থনা শুনে তার চিত্ত বিচলিত হল। তিনি লজ্জা পেলেন। তার সমস্ত রাগ পানি হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আদেশ দিলেন রাজা : ওকে মুক্ত করে দাও।

ভৃত্যটি মুক্তি পেল তার কোমলতা দিয়ে।

যদি ফাঁসির মঞ্চে তার ক্রোধের আগুন জ্বলত, তবে হিতে বিপরীত হতে পারত। ভৃত্যটি প্রার্থনার সময় নম্রভাবে, কোমলভাবে, বিনীতভাবে সকলের মঙ্গল কামনা করেছে। মনে রাখা দরকার, সকলের মঙ্গল কামনার মধ্যেই নিজের মঙ্গল লুকিয়ে থাকে।

অনুবাদকঃ আমীরুল ইসলাম

[শেখ সাদীর গল্প ─ লেখকঃ আবু মুহাম্মদ মুসলিহ আল-দীন বিন আবদাল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি বা সাদি শিরাজি বলেও পরিচিত)। অনুবাদকঃ আমীরুল ইসলাম। প্রকাশনাঃ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। গ্রন্থমালা সম্পাদকঃ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। প্রকাশকঃ মোঃ আলাউদ্দিন সরকার]।

No comments:

Post a Comment