Sunday, August 18, 2019

যুদ্ধ দেখে পলায়ন

আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগে। সিরিয়ার ধু-ধু মরুভূমি দিয়ে একদল যাত্রী চলেছে তাদের গন্তব্যস্থানে। তখন পথে চলাচল করা খুব কষ্টের ব্যাপার ছিল। কারণ যেখানে-সেখানে দস্যুদল ওৎ পেতে থাকত। যে-কোনো সময় তারা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে এবং সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যেতে পারে। যাত্রীদলে সবাই খুব ভালো মানুষ। স্বাভাবিকভাবে ভয়টাও তাদের বেশি।

এমন সময় তাদের সঙ্গে এসে জুটল এক যুবক। ভাবভঙ্গিতে মনে হল, দুর্দান্ত সাহসী সে। হাতে তীর-ধনুক। কথা বলে চটপট। হুংকার দেয় মাঝে মাঝে। যেন সে একাই দশজন ডাকাতকে পরাস্ত করতে পারবে।

এরকম একজন সাহসী যুবককে সঙ্গে পেয়ে যাত্রীদল বেশ নিশ্চিন্ত হল। পথে দস্যুর ভয় অন্তত আর নেই।

ছেলেটি শক্তিশালী বটে কিন্তু তার যুদ্ধের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। সে কখনও সামনাসামনি লড়াই করেনি। সে জানে না, আক্রান্ত হলে কেমন করে যুদ্ধ করতে হয়। জীবন কেটেছে তার আরাম-আয়েশে। যাত্রীদল তবু আশ্বস্ত। এরকম একজন বীর সঙ্গে থাকতে আবার ভয় কী!

যাত্রীদল চলছে।

মরুভূমির দুর্গম পথ পেরিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করে একদিন দস্যুদলের মুখোমুখি হল তারা। দলে মাত্র দুইজন দস্যু। একজনের হাতে একটা লাঠি। সে লাঠিটা বনবন করে ঘোরাতে লাগল। আরেকজন বড় বড় পাথর ছুড়ে মারতে লাগল।

দস্যু দেখে যাত্রীদলের মাথা খারাপ। বীরপুরুষের হাত-পা কাঁপতে লাগল। এতক্ষণ তীর-ধনুক নিয়ে তার আস্ফালন ছিল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাত থেকে তীর-ধনুক পড়ে গেল।

দস্যু দু’জন খুব সহজেই যাত্রীদলের কাছ থেকে টাকাপয়সা, সোনাদানা সব কেড়ে নিল। যাত্রীদলের মাথায় হাত। সর্বস্ব খুইয়ে এখন তারা নিঃস্ব। কিছুক্ষণ পর টের পাওয়া গেল, বীর যুবকটি পালিয়ে গেছে।

মনে রাখতে হবে যার কোনো অভিজ্ঞতা নেই তাকে দিয়ে কোনো কাজ হয় না। যে অসময়ে দম্ভ দেখায় এবং কথা বেশি বলে তার ওপরে আস্থা রাখতে নেই। কথায় বলে, অভিজ্ঞ শিকারি কৌশলে বাঘ ধরতে পারে কিন্তু অনভিজ্ঞ শক্তিমান বীর বাঘের পেটে যায়।

অনুবাদকঃ আমীরুল ইসলাম

[শেখ সাদীর গল্প ─ লেখকঃ আবু মুহাম্মদ মুসলিহ আল-দীন বিন আবদাল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি বা সাদি শিরাজি বলেও পরিচিত)। অনুবাদকঃ আমীরুল ইসলাম। প্রকাশনাঃ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। গ্রন্থমালা সম্পাদকঃ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। প্রকাশকঃ মোঃ আলাউদ্দিন সরকার]।

No comments:

Post a Comment