অমর কবি শেখ সাদী।
ফার্সিভাযায় কাব্য রচনা করে তিনি পৃথিবীবিখ্যাত।
তার লেখা গুলিস্তা ও বুস্তা বিশ্বসাহিত্যে উজ্জ্বল স্থান অধিকার করে আছে।
গুলিস্তা ও বুস্তা অর্থ ─ ফুলের বাগান ও সৌরভের উদ্যান। বইদুটিতে রয়েছে
মনোরম ছন্দে বাঁধা কতগুলো ছোট ছোট গল্প। এই গল্পগুলোর অধিকাংশই উপদেশমূলক।
গল্পচ্ছলে উপদেশ কিংবা উপদেশচ্ছলে গল্প বলাই ছিল হয়তো সাদীর উদ্দেশ্য।
কিন্তু এগুলো কাব্য হিসেবে অতুলনীয় হয়ে উঠেছে, গল্প হিসেবে তো বটেই।
ফার্সিভাষায় লেখা এই সমস্ত কবিতা শত শত বছর ধরে পাঠকদের মনে আলোড়ন সৃষ্টি
করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় শেখ সাদীর রচনা অনুদিত হয়েছে।
শেখ
সাদী জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইরান দেশে। ধনে-মানে, শিক্ষা-জ্ঞানে,
গৌরবে-ঐতিহ্যে একসময় ইরান ছিল খুব উন্নত দেশ। ইরানের তদানীন্তন রাজধানী
সিরাজী নগরে ১১৯৪ সালে সাদীর জন্ম। সাদীর বাবা ছিলেন সম্ভ্রান্ত
রাজকর্মচারী । শৈশবেই সাদীর বাবা-মা মারা যান। এতে পারিবারিক অবস্থা খুব
খারাপ হয়ে যায়। সাদী অবশ্য ছিলেন সকল কিছুর উর্ধ্বে। জ্ঞানার্জনের জন্য
তিনি ত্যাগ করেছিলেন ভোগবিলাস। জগতের ঐশ্বর্য, রাজার অনুগ্রহ ও সম্মান,
পার্থিব সুখ, যশ ও অর্থকে তুচ্ছ করে প্রকৃত দরবেশের মতো তিনি জীবনযাপন
করেছেন। জীবনের শেষদিনগুলো কাটিয়েছেন সামান্য পর্ণকুটিরে,
সাধনাকেন্দ্রে—একা, নিঃসম্বল অবস্থায়।
তিনি নির্জনে বসে কাব্যচর্চা
করতেন। আর জ্ঞান-সাধনার জন্য তীর্থযাত্রা করতেন। তিনি পায়ে হেঁটে ১৫ বার
মক্কা গিয়েছিলেন। এছাড়া আরব পেরিয়ে আবিসিনিয়া পর্যন্ত আর এধারে
ভারতবর্ষ পর্যন্ত ভ্রমণ করেছিলেন। তাকে টাকা দেবার লোকের অভাব ছিল না,
কিন্তু তিনি কোনোদিনই নিজের জন্য টাকা নেন নি। ভক্তদের দেয়া খাদ্য ও
সামান্য অর্থসাহায্যেই তার দিন চলে যেত।
সাদী ছিলেন মহাপণ্ডিত।
দেশভ্রমণের ফলে বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয় তার। তার ছিল অসামান্য
পর্যবেক্ষণ-ক্ষমতা, জীবনদৃষ্টি এবং মানবপ্রেম। জীবন-অভিজ্ঞতাকেই তিনি
লিপিবদ্ধ করেছেন কবিতা-আকারে। শেখ সাদী পদ্যে লেখা গল্পগুলোর মধ্যে দিয়ে
যে উপদেশ দিয়েছেন তা সকলের কাছেই মূল্যবান। এর মাধ্যমে তিনি মানুষের প্রতি
মানুষের চিরন্তন ভালোবাসার কথাই বলেছেন। ন্যায়নীতি ও মূল্যবোধের মাধ্যমে
মানুষ গড়ে তুলবে সুন্দর জীবন—এই ছিল সাদীর কাম্য।
গুলিস্তাঁ ও
বুস্তাঁ—অসংখ্য গল্প থেকে মাত্র কয়েকটি নিয়ে এই বইটি সাজানো হয়েছে। মূল
কবিতার স্বাদ এই লেখাগুলোতে কিছুই পাওয়া যাবে না। ফার্সি কাব্যভুবনের
সুরেলা ছন্দ, ধ্বনিমাধুর্য ও উপদেশবাণীর ঝংকার এই বইতে নেই। তোমরা বড় হয়ে
শেখ সাদীর মূল লেখা পড়বে। তার বিচিত্র জীবনকাহিনী পড়ে দেখবে। সেখানেও
অনেককিছু শেখার আছে। এই টুকরো টুকরো গল্পগুলো তোমাদের ভালো লাগবে আশা করি।
শেখ সাদীর রচনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় তোমাদের কাছে তুলে ধরাই এই বইয়ের
উদ্দেশ্য।
আমীরুল ইসলাম
৫৫, গোলারটেক, মীরপুর, ঢাকা।
[শেখ সাদীর গল্প ─ লেখকঃ আবু মুহাম্মদ মুসলিহ আল-দীন বিন আবদাল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি বা সাদি শিরাজি বলেও পরিচিত)। অনুবাদকঃ আমীরুল ইসলাম। প্রকাশনাঃ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। গ্রন্থমালা সম্পাদকঃ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। প্রকাশকঃ মোঃ আলাউদ্দিন সরকার]।
[শেখ সাদীর গল্প ─ লেখকঃ আবু মুহাম্মদ মুসলিহ আল-দীন বিন আবদাল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি বা সাদি শিরাজি বলেও পরিচিত)। অনুবাদকঃ আমীরুল ইসলাম। প্রকাশনাঃ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। গ্রন্থমালা সম্পাদকঃ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। প্রকাশকঃ মোঃ আলাউদ্দিন সরকার]।
No comments:
Post a Comment