হাতেম তাইকে নিয়ে অনেক গল্প আছে।
দানশীল, মহৎপ্রাণ এই ব্যক্তিটি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য।
হাতেম তাইয়ের একটা ঘোড়া ছিল, খুবই প্রিয় ঘোড়া। ঘোড়াটা নিয়েই এই
গল্প। ঘোড়াটা ছুটত ঝড়ের মতো। ফুলে ফুলে উঠত কেশর। চিঁহি চিঁহি ধ্বনি
ছড়িয়ে পড়ত আকাশে বাতাসে। ঘোড়াটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ল দূর দূর দেশে।
রোমের বাদশাহর কানে গিয়ে পৌঁছাল এই ঘোড়ার কথা।
বাদশাহ’র ঘোড়া
সংগ্রহ করার বাতিক ছিল। তিনি জানতেন হাতেম তাই একজন দানশীল ব্যক্তি। তিনি
একদল দূত পাঠালেন হাতেম তাইয়ের কাছে। ঘোড়াটি তার দরকার। হাতেম তাই যদি
ঘোড়াটি উপহার দেয় তাতেই বোঝা যাবে তার হৃদয় কত মহৎ।
বহুদিন ধরে,
বহু পথ পেরিয়ে দূতেরা এল হাতেম তাইয়ের বাসভবনে। পরম সমাদরে হাতেম তাই
অতিথিদের বরণ করলেন। তাদের থাকার ব্যবস্থা করলেন। খাবার আয়োজন করলেন। অতিথি
আপ্যায়ন হচ্ছে মানুষের প্রধান কর্তব্য।
পরদিন দূতেরা রোমের
বাদশাহ’র প্রস্তাব জানাল হাতেম তাইকে। লোকমুখে বাদশাহ শুনেছেন, হাতেম
তাইয়ের একটা সুন্দর ঘোড়া আছে। উপহার হিসেবে বাদশাহ ঘোড়াটা সংগ্রহ করতে
চান। এই-না শুনে হাতেম তাই খুব দুঃখিত হয়ে উঠলেন।
হায়, হায়, এই
কথা তোমরা গতকাল আমাকে বলোনি কেন? গতরাতে তোমাদের আপ্যায়ন করানোর জন্যে
সেই ঘোড়াটিকে জবাই করা হয়েছে। কারণ তোমাদের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভালো
খাবার আমার ঘরে ছিল না। আমার পশুপাখি সংগ্রহশালাটি বাড়ি থেকে অনেক দূরে।
তোমরা পথশ্রমে খুব পরিশ্রান্ত ছিলে। দেরি হয়ে যাবে ভেবে ঐ ঘোড়াটিকেই জবাই
করেছি। এখন কী হবে?
দূতেরা হাতেম তাইয়ের মহৎ গুণে অবাক হয়ে
গেলেন। হাতেম তাই অন্য অনেক ঘোড়া ও প্রচুর ধনরত্ন উপহার দিলেন রোমের
বাদশাহকে। অতিথিদেরও উপহার দিলেন প্রচুর পরিমাণে।
রোমের বাদশাহ সব ঘটনা শুনে বিস্মিত হলেন। হাতেম তাইয়ের নামে ধন্য ধন্য রব পড়ে গেল চারদিকে।
অনুবাদকঃ আমীরুল ইসলাম
[শেখ সাদীর গল্প ─ লেখকঃ আবু মুহাম্মদ মুসলিহ আল-দীন বিন আবদাল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি বা সাদি শিরাজি বলেও পরিচিত)। অনুবাদকঃ আমীরুল ইসলাম। প্রকাশনাঃ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। গ্রন্থমালা সম্পাদকঃ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। প্রকাশকঃ মোঃ আলাউদ্দিন সরকার]।
No comments:
Post a Comment