Sunday, August 18, 2019

দয়ালু বাদশাহ

সিরিয়া দেশের এক বাদশাহ ছিলেন।

খুবই দয়ালু, নীতিবান ও ধর্মভীরু এক বাদশাহ। তিনি প্রজাদের খুব ভালোবাসতেন। প্রায় প্রতিদিন ছদ্মবেশে নগরভ্রমণে বেরোতেন তিনি। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রজাদের সুখদুঃখের খবর নিতেন।

একদিন ভোরবেলা।

এক মসজিদের সামনে এসে দেখেন, দুইজন ভিক্ষুক মেঝেতে শুয়ে আছে। নিদারুণ শীতের রাত্রে তারা ভালোমতো ঘুমাতে পারেনি। তাদের না ছিল কম্বল, না ছিল লেপ-তোষক। তাদের একজন অন্যজনকে বলছে—আমাদের দেশের বাদশাহ কতই-না আমোদে-প্রমোদে হাসিখেলায় দিন কাটাচ্ছেন। আমাদের মতো গরিব প্রজাদের খবর কি তিনি রাখেন? আমরা প্রতিদিন কতই-না কষ্ট করছি। রাজা কি তার খবর রাখেন?

আরেকজন বলল—একদিন রাজাকে এইভাবে রাত্রিযাপন করানো উচিত। তাহলে তিনি বুঝতেন, গরিবের কত দুঃখ।

লোক দুজন তারপর বাদশাহকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু করল। ছদ্মবেশে বাদশাহ সব শুনলেন। সমালোচনা একসময় এমন তীব্র হয়ে উঠল যে বাদশাহ আর বেশিক্ষণ সেখানে দাঁড়াতে পারলেন না। তিনি চলে গেলেন।

ক্রমে সকাল হল।

আকাশ রাঙা করে সূর্য উঠল।

মানুষজন জেগে উঠল। শুরু হল সংসারের কাজ। বাদশাহ যথারীতি সিংহাসনে আরোহণ করলেন। তারপর ডেকে পাঠালেন সেই দুই ভিক্ষুককে। তারা ভয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দরবারে এসে হাজির। বাদশাহ তাদেরকে সিংহাসনের পাশে বসতে বললেন। মূল্যবান খানাপিনা করালেন। টাকাকড়ি ও পোশাক-আশাক উপহার দিলেন।

ভিক্ষুক দুজন তো অবাক!

কোন্‌ বাদশাহ’র মুখ দেখে আজ ঘুম ভাঙল আমাদের! কোন্‌ আলো আজ লাগল চোখে। ভিক্ষুক দুজন কাতরভাবে জানতে চাইল—রাজা, হঠাৎ করে আমাদের প্রতি এই অনুগ্রহের কারণ কী?

বাদশাহ হাসতে লাগলেন প্রফুল্ল গোলাপের মতো। বললেন—আমি তেমন বাদশাহ নই যে রাজত্বগৌরবে আমি গর্বিত। আমার প্রজাদের ব্যাপারে আমি উদাসীন নই। সেইজন্যে তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করলাম। আজ থেকে তোমরা আমার বন্ধু। তোমরা গতরাত্রে আমাকে নিয়ে সমালোচনা করছিলে। আমি নাকি দরিদ্র প্রজাদের খোঁজখবর রাখি না।

ভিক্ষুক দুইজন বাদশাহ’র এই কথায় ভারি লজ্জিত ও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। বাদশাহ’র পায়ে লুটিয়ে পড়ে তারা ক্ষমা প্রার্থনা শুরু করল।

বাদশাহ বললেন—না, ক্ষমা প্রার্থনার কিছু নেই। আমি সিংহাসনে বসেছি প্রজাদের স্বার্থরক্ষার জন্যই। আমিও একজন দাস। আমি শুধু আমার কর্তব্য পালন করেছি। এর বেশিকিছু নয়। আমি তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে পেরেছি—এটাই আমার সান্ত্বনা।

অনুবাদকঃ আমীরুল ইসলাম

[শেখ সাদীর গল্প ─ লেখকঃ আবু মুহাম্মদ মুসলিহ আল-দীন বিন আবদাল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি বা সাদি শিরাজি বলেও পরিচিত)। অনুবাদকঃ আমীরুল ইসলাম। প্রকাশনাঃ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। গ্রন্থমালা সম্পাদকঃ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। প্রকাশকঃ মোঃ আলাউদ্দিন সরকার]।

No comments:

Post a Comment