মদীনায়
ইসলামের আলো প্রবেশের পর মহানবীর পক্ষ থেকে সেখানে মুসআব ইবনে উমায়েরকে পাঠানো হলো
ইসলামের শিক্ষক হিসেবে।
মুসআব
শিক্ষাদান ও ইসলামের দাওয়াতের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করলেন।
একদিন
তিনি মদীনার বনি জাফর ও বনি আশহাল-এর পল্লীতে গেলেন। তার সাথে ছিলেন বিখ্যাত
খাজরাজ গোত্রের বনু নাজ্জারের বিখ্যাত ব্যক্তি আসয়াদ ইবনে যুরারাহ।
তারা
দু’জন বনু জাফরের একটা
কূপের উপর গিয়ে বসলেন।
বনু
আশহালের সর্দার সা’আদ
বিন মুয়াজকে কেউ গিয়ে কথাটা লাগিয়ে দিলো যে, মুসলমানরা
মহল্লায় এসে মানুষকে প্ররোচিত করছে।
কথাটা
শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন তিনি। অস্ত্র-সজ্জিত হয়ে যাত্রা করলেন সেই কূপের দিকে।
পথিমধ্যে
তিনি খবর পেলেন, মুসআবের
সাথে তার খালাতো ভাই আসয়াদ ইবনে যুরারাহ রয়েছেন। থমকে গেলেন তিনি। তাঁর চাচাতো ভাই
উসায়েদ বিন হুজায়েরকে বললেন, আসয়াদ না থাকলে আমিই যেতাম।
তুমি গিয়ে ওদের বলে এসো, মানুষকে নষ্ট করার জন্যে ওরা আমাদের
মহল্লায় যেন আর না আসে।
উসায়েদ
দুরন্ত এক সাহসী যুবক।
ভয়াবহ
এক বর্শা নিয়ে ছুটলেন বনু জাফরের সেই কূপের উদ্দেশ্যে।
উসায়েদকে
এইভাবে আসতে দেখে আসয়াদ ইবনে যুরারাহ মুসআবকে বললেন, ‘এই উসায়েদ আওস গোত্রের দুই প্রধানের একজন। তার কাছে
আপনাকে উপযুক্ত দাওয়াত পৌঁছাতে হবে।’
‘তাকে একটু বসতে দাও, আমি কথা বলবো।’ বললেন মুসআব।
উসায়েদ
এসেই ক্রুদ্ধ কণ্ঠে মুসআবকে বলতে শুরু করলো,
‘তুমি এসেছো দুর্বল লোকদের বোকা বানাবার জন্যে। জীবনের মায়া থাকলে
এখনি চলে যাও। আর এদিকে আসবে না।’
মুসআব
উসায়েদের কর্কশ ও দ্রুতকণ্ঠের জবাবে নরম ও মমতাভরা কণ্ঠে বললেন, ‘প্রিয় ভাই, আমার
কথা শুনুন। পছন্দ হলে গ্রহণ করবেন, না হয় বর্জন করবেন।’
মুসআবের
নরম ও মমতাভরা কণ্ঠে উসায়েদের রাগ অকেনখানি পড়ে গেলো। বললো, ‘তুমি যুক্তির কথা বলেছো। কি বলতে
চাও বলো।’
মুসআব
অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী কণ্ঠে ইসলামের মূল শিক্ষা তুলে ধরলেন এবং পাঠ করলেন আল-কুরআনের
কিছু আয়াত।
উসায়েদের
রাগ তখন পড়ে গেছে।
শান্ত
হয়েছে সে।
মুসআব
থামতেই উসায়েদের মুগ্ধ কণ্ঠ বলে উঠলো,
“এসব কতই না ভালো জীবনের কথা। কতই না সুন্দর কালাম ওগুলো। তোমাদের
ধর্মে প্রবেশের জন্যে কি করতে হয়?”
মুসআব
ও আসয়াদ খুশী হয়ে তাকে জানালেন ইসলাম গ্রহণের জন্যে কি করতে হয়।
গোসল
করে পবিত্র কাপড় পরে কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করলো উসায়েদ।
ফিরে
যাবার সময় উসায়েদ মুসআবকে বললেন, আমি গিয়ে কৌশলে সা’আদ বিন মুয়াজকে পাঠাচ্ছি।
উসায়েদকে
পাঠিয়ে তার ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সা’দ বিন মুয়াজ। উসায়েদ ফিরলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে সা’আদ বললেন, ‘তোমাকে অন্য রকমের দেখাচ্ছে। বল কি করে
এলে?’
উসায়েদ
বললেন, তাদের কথা
শুনলাম, ভয়ের কিছুই পেলাম না।
বলে
একটু থেমে আবার শুরু করলেন, ‘একটা কথা শুনে এলাম, বনি হারেছার লোকেরা নাকি আসয়াদ
ইবনে যুরারাকে হত্যা করার জন্যে বের হয়েছে। আপনার খালাত ভাইকে হত্যা করে আপনার
বেইজ্জতি করাই তাদের লক্ষ্য।’
শুনে
সা’আদ রেগে আগুন হয়ে
গেল। বর্শা হাতে ছুটলেন বনি জাফরের সেই কূপের দিকে।
কূপের
নিকটবর্তী হয়ে আসয়াদ বিন যুরারাহ মুসআবকে জানালেন, ‘যিনি আসছেন সেই সা’আদ বিন মুয়াজ
তার গোত্রের শীর্ষ ব্যক্তি। তিনি ইসলামে দাখিল হলে গোটা গোত্র তাকে অনুসরণ করবে।’
সা’আদ ইবনে মুয়াজ কূপের ধারে এলেন। বনি
হারেছার কাউকে কোথাও দেখলেন না। আর নিশ্চিন্তে বসে থাকতে দেখলেন আসয়াদকে। উসায়েদের
কথাকে এখন তাঁর এক চাল বলে মনে হলো। ক্রুদ্ধ হলেন তিনি। বললেন তিনি আসয়াদকে, “আবু উসামা, আল্লাহর কসম, তোমার
মাঝে আমার আত্মীয়ের সম্পর্ক না থাকলে তুমি কিছুতেই আমার মহল্লায় খারাপ কথা ছড়াবার
সাহস পেতে না।”
আসয়াদ
(রাঃ) সা’আদ বিন
মুয়াজের মত ক্রুদ্ধ হলেন না। মিষ্টি হাসলেন শুধু। কোন কথা বললেন না। কথা বললেন
মুসআব। মধুর কণ্ঠে সা’আদকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘প্রিয় ভাই, আপনি আমাদের কথা একটু শুনুন। আপনার খারাপ
মনে হবে এমন কথা বলবো না। পছন্দ না হলে আমরা চলে যাব।’
সা’আদ বিন মুয়াজ বললেন, ‘বড় কায়দা করে কথাগুলো বললে।’
বলে
সা’আদ বর্শা মাটিতে
গেড়ে বসে পড়লেন। বুঝা গেল শুনতে চান তিনি।
মুসআব
হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ইসলামের শিক্ষা ও সৌন্দর্যের বর্ণনা দিলেন এবং সূরা যুখরুফ বা
হামিম থেকে কিছু আয়াত পড়ে শোনালেন।
পবিত্র
কুরআনের পাঠ শুরু হতেই সা’আদ এর কঠিন মুখ সহজ হয়ে এল, ভরে গেল হাসি-খুশীতে।
মুসআব
কুরআন তেলাওয়াত শেষ করতেই উসায়েদ যা বলেছিল,
সা’আদও তাই বললেন। জানতে চাইলেন ইসলাম গ্রহণের
নিয়ম-কানুন।
ঠিক
উসায়েদের মতই সা’আদ
ইবনে মুয়াজ গোসল করে পবিত্র কাপড় পরে কালেমা পাঠ করে ইসলামে দাখিল হয়ে গেলেন।
সা’আদ বিন মুয়াজ ইসলাম গ্রহণের সাথে
গোটা বনু আশহাল গোত্র ইসলাম গ্রহণ করল।
বইঃ আমরা সেই সে জাতি – তৃতীয় খণ্ড
No comments:
Post a Comment