Thursday, March 5, 2020

জালেম শাসকের সামনে নির্ভীক আলেম

জাহির নামের এক সুলতান তখন দামেশকের সিংহাসনে।

বৃষ্টি না হওয়ায় পশুর মড়ক ইত্যাদি কারণে সিরিয়ায় তখন দুর্ভিক্ষাবস্থা। মানুষের দুর্গতির সীমা নেই।

এই সময় যুদ্ধ-প্রস্তুতির কথা বলে শাসক জাহির জনগণের উপর ট্যাক্স বসালেন। দামেশকেই বাস করতেন শেখ মহিউদ্দিন নববী নামের এক বিখ্যাত আলেম। তিনি সুলতান জাহিরের কাছে এক চিঠি লিখে দুর্গত জনগণের উপর ট্যাক্স না বসাবার জন্যে অনুরোধ করলেন।

শেখ মহিউদ্দিনের এই চিঠি পেয়ে সুলতান ক্ষুব্ধ হলেন এবং তার ট্যাক্স বসাবার পক্ষে আলেমদের ফতোয়া জোগাড় করতে লাগলেন।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মাধ্যমে এ ধরনের বহুসংখ্যক ফতোয়া জোগাড় হবার পর জাহির ডাকলেন শেখ মহিউদ্দিনকে তাঁর দরবারে।

শেখ দরবারে এলে সুলতান তাঁকে ফতোয়ায় অন্য আলেমদের দস্তখত দেখিয়ে ট্যাক্স বৃদ্ধির পক্ষে তাঁকেও দস্তখত দিতে বললেন।

সুলতান জাহির-এর এই কৌশল ও তাঁর উপর চাপ প্রয়োগ দেখে শেখ মহিউদ্দিন নববী খুবই অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি সুলতানকে বললেন, “আমি জানি, আপনি একজন কয়েদী ক্রীতদাস ছিলেন। ছিলেন একজন দেউলিয়া। আল্লাহ আপনার উপর অনুগ্রহ করেন এবং আপনাকে বাদশাহর মর্যাদায় উন্নীত করেন। আমি জানি, আপনার কাছে জরিদার কাপড় পরিহিত এক হাজার ক্রীতদাস এবং আপাদমস্তক স্বর্ণালংকারে মণ্ডিত একশো ক্রীতদাসী রয়েছে। এখন আপনি যদি ক্রীতদাসদের এই জরিদার কাপড়গুলো এবং দাসীদের অলংকারসমূহ বিক্রি করে দেন, তাহলে আমি ফতোয়া দেব যে, প্রজাদের নিকট থেকে আপনার ট্যাক্স আদায় বৈধ।

সুলতান জাহির ক্রোধে ফেটে পড়লেন শেখ মহিউদ্দিনের এই কথায়। তৎক্ষণাত তাঁকে বহিষ্কার করলেন দামেশক থেকে।

দেশের সমস্ত আলেম ও ফকিহগণ আহত হলেন এই ঘটনায়। তাঁরা সকলে সুলতান জাহিরকে বললেন, “ইনি আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় ও সবার সেরা আলেম। তাঁকে দামেশকে ফিরিয়ে আনুন।”

বাদশাহ জাহির অনুমতি দিলেন শেখ মহিউদ্দিনকে দামেশকে আসার জন্যে।

কিন্তু শেখ মহিউদ্দিন সুলতানের এই অনুগ্রহ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বললেন, ‘যতদিন জাহির সেখানে থাকবেন, আমি যাব না।’

এই ঘটনার এক মাসের মধ্যে জাহির ইন্তিকাল করলেন।

লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি – তৃতীয় খণ্ড

No comments:

Post a Comment