Saturday, March 14, 2020

একটি বক্তৃতা ও কাব্য প্রতিযোগিতা

মক্কা বিজয় ও হুনাইন যুদ্ধের পর আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মদীনায় প্রতিনিধিদল আসার হিড়িক পড়ে গেল। কেউ এল ইসলাম গ্রহণের জন্যে, কেউ এল মহানবীর সাথে দেখা করে সব বিষয় অবহিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেবার লক্ষ্যে। আরবের একটি বড় ও প্রভাবশালী গোত্র বনু তামিম। সে গোত্র থেকে প্রায় ৮০ জনের একটি প্রতিনিধিদল এল মদীনায়।

বনু তামিমের যেমন অর্থ-বিত্ত আছে, তেমনি ভাষা ও কবিত্বের প্রতিভা নিয়ে তারা দারুণ অহংকারী। এ ব্যাপারে গোটা আরবের কাউকেই তারা পাত্তা দেয় না। তারা মনে করে ভাষা ও কবিত্বের প্রতিযোগিতায় তাদের কোন প্রতিদ্বন্দী নেই।

মহানবীর (সাঃ) সাথে আলোচনায় বসার পর তারা মহানবীর (সাঃ) কাছে প্রস্তাব করল, আপনাদের সাথে প্রথমে আমাদের কীর্তিগাথা নিয়ে কাব্য প্রতিযোগিতা হবে। যদি তাতে আপনারা জিতে যান, তাহলে ইসলাম নিয়ে কথা বলব।

উত্তরে মহানবী (সাঃ) বললেন, গর্ব-অহংকার প্রদর্শন এবং কবিতাবাজির জন্যে আমি প্রেরিত হইনি। তবে তোমরা যদি পীড়াপীড়ি কর, তাহলে শুন, এক্ষেত্রেও আমরা দুর্বল ও অসমর্থ নই।

শুরু হলো বক্তৃতা ও কাব্য প্রতিযোগিতা। বনু তামিমের পক্ষ থেকে দাঁড়ালেন তাদের শ্রেষ্ঠ ভাষাশিল্পী ও বাগ্মী আতারফ বিন হাজিব। তিনি তার স্বগোত্রের মান-মর্যাদা, ক্ষমতা-প্রভাব, বংশ-গৌরব, বিত্ত-বৈভব, বীরত্ব ও মেহমানদারী নিয়ে অলঙ্কৃত ভাষায় ওজস্বী বক্তৃতা দিয়ে বিজয়ের গর্ব নিয়ে বসে পড়লেন।

তিনি বসলে মহানবী (সাঃ) তাঁর সাহাবী সাবিত বিন কায়েসকে আতারফের জবাব দিতে নির্দেশ দিলেন।

সাবিত বিন কায়েস দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা কীর্তন, রিসালাত ও দাওয়াতে হকের বর্ণনা, আল-কুরআনের অবতীর্ণ হওয়া এবং মুহাজির ও আনসারদের চরিত্র ও কাজ এমন অলংকারপূর্ণ ভাষায় বাগ্মিতার সাথে বর্ণনা করলেন যে, গোটা মজলিস মন্ত্রমুগ্ধের মত নিশ্চুপ হয়ে গেল।

বক্তৃতা প্রতিযোগিতার পর শুরু হলো কাব্য প্রতিযোগিতা।

বনু তামিমের পক্ষ থেকে দাঁড়ালেন তাদের শ্রেষ্ঠ কবি যবরকান বিন বদর। তিনি তাঁর গোত্রের আকাশস্পর্শী প্রশংসা-সম্বলিত কবিতা পাঠ করলেন।

যবরকান বসলে মহানবী (সাঃ) সাহাবী কবি হাসসান বিন সাবিতকে জবাব দেয়ার জন্যে উঠে দাঁড়াতে বললেন।

হাসসান বিন সাবিত উঠে দাঁড়িয়ে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং দাওয়াতে হক-এর উপর এমন ছন্দোবদ্ধ এবং মাধুর্যপূর্ণ ও প্রভাবশালী কবিতা পাঠ করলেন যে, যবরকানের কবিতা ম্লান হয়ে গেল।

শেষ হলো প্রতিযোগিতা।

গোটা মজলিস তখন নীরব-নিস্তব্ধ।

উঠে দাঁড়াল বনু তামিম-এর একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। উচ্চকণ্ঠে বললেন তিনি, “পিতার কসম! মুহাম্মাদের (সাঃ) খতিব আমাদের খতিব থেকে আফজাল এবং তাঁর কবি আমাদের কবি থেকে উত্তম। তাঁদের কণ্ঠস্বর আমাদের কণ্ঠস্বর থেকে চিত্তাকর্ষক ও মিষ্টি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ ইবাদাতের যোগ্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।

এই ব্যক্তি কিরাসুল আকরা তামিমী। তিনি বনু তামিম-এর নেতা।

কিরাসুল আকরা থামতেই বনু তামিম প্রতিনিধি দলের সকল সদস্য একবাক্যে বলে উঠলেন, “আপনি সত্য বলেছেন, আপনি সত্য কথা বলেছেন।

অতঃপর বনু তামিমের সকলে মহানবীর হাতে হাত রেখে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলেন।

লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি তৃতীয় খণ্ড

No comments:

Post a Comment