Sunday, March 15, 2020

নতুন ইকরামা

ইকরামা বিন আবু জাহল পালাচ্ছে।

মহানবীর মক্কা বিজয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই সে মনে করল তার আর রক্ষা নেই।

মহানবী (সাঃ) ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার অপরাধ সীমাহীন।

মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে মহানবী (সাঃ) মক্কাবাসীরা অস্ত্র হাতে না নিলে তাদের জন্যে শান্তি ও নিরাপত্তা ঘোষণা করেছিলেন। এ সময় ইকরামা মুসলিম বাহিনীকে আক্রমণ করে। দুজন মুসলিম শহীদ হওয়া ছাড়াও আরও কয়েক ডজন লোক আহত হয় তার কারণে।

এছাড়া বদর, উহুদ, খন্দক ও মুসলমানদের আশ্রিত বনু খোজায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সে চরম বৈরিতা ও নৃশংসতা প্রদর্শন করেছে।

সুতরাং পালাচ্ছে সে।

জেদ্দার উপকূল থেকে নৌকা নিয়ে সে পালাচ্ছে আরব ভূমি থেকেই।

কিন্তু পার হতে পারল না সে লোহিত সাগর। প্রবল বাতাস তার নৌকা আবার ফিরিয়ে আনল জেদ্দা উপকূলে। শত চেষ্টা করেও সে রোধ করতে পারল না নৌকার পেছন গতি।

কূলের কাছাকাছি এসে দেখল তীর থেকে তার স্ত্রী উম্মে হাকিম তাকে কাপড় উড়িয়ে ডাকছে।

ইকরামা তীরে নামলে তার স্ত্রী তাকে বলল, ‘আমি সেই মহানুভবের কাছ থেকে এসেছি যিনি সকল মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে বেশী আত্মীয়তার বন্ধন মজবুতকারী। আমি তার নিকট থেকে তোমার নিরাপত্তা লাভ করেছি। তুমি রাসূলুল্লাহর কাছে চলো।

ইকরামা তার স্ত্রীর সাথে হাজির হলো মহানবী (সাঃ)-এর দরবাবে।

আমৃত্যু বৈরী সেই আবু জাহলের পুত্র ইকরামা। এই ইকরামাও বৈরিতার কোন কিছুই বাদ রাখেনি।

সেই ইকরামা সমীপবর্তী হলেন মহানবীর। বেশ দূরে থাকতেই ইকরামাকে চিনতে পারলেন মহানবী (সাঃ)। উৎসাহ আগ্রহে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

দ্বিধা, সংকোচ, ভয় সব মিলিয়ে পদক্ষেপগুলো জড়িয়ে পড়ছে ইকরামার। এগুতে যেন কষ্ট হচ্ছে তার।

উঠে দাঁড়িয়ে মহানবী (সাঃ) দুহাত বাড়িয়ে ছুটলেন ইকরামার দিকে। দ্রুততার কারণে তাঁর গায়ের চাদর খসে পড়ে গেল গা থেকে।

মহানবী (সাঃ) জড়িয়ে ধরলেন ইকরামাকে। বললেন, ‘খোশ আমদেদ, বিদেশী সওয়ার।

ইকরামা তার স্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘সে জানতে পেরেছে, আপনি আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন।

সে সত্য বলেছে।বললেন মহানবী (সাঃ)। আনন্দে উজ্জল হয়ে উঠল ইকরামার মুখ। লজ্জা-বেদনায় নুয়ে গেল ইকরামার মাথা। ভেজাকণ্ঠে বললেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অবশ্যই আপনি তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। হে আল্লাহর রাসূল, এর আগে আমি ইসলাম-দুশমনির বহু প্রমাণ দিয়েছি। এখন আমার আশা, আজ পর্যন্ত আমি আপনার সাথে যে শত্রুতা করেছি, যত যুদ্ধে আপনার বিরুদ্ধে লড়েছি, হক পথে যত বাধা আরোপ করেছি, সেসব ক্ষমা করে দিন। আমার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করুন।

আল্লাহর রাসূল দুহাত তুললেন। ক্ষমা প্রার্থনা করলেন তিনি আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কাছে ইকরামার জন্যে।

আনন্দাশ্রুতে ভরে গেল ইকরামার দুচোখ।

আরজ করলেন তিনি মহানবীকে, ‘হে আল্লাহর রাসূল, এমন কিছু আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমি সবসময় আমল করতে পারি।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “খালিস অন্তরে (কথা ও কাজে) আল্লাহর ওয়াহদানিয়াত বা একত্ব এবং আমার রিসালাতের সাক্ষ্য দিতে ও আল্লাহর পথে জিহাদ করতে থাকো।

ইকরামা আবেগ-কম্পিত কণ্ঠে বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহর কসম, আমি আজ পর্যন্ত যত সম্পদ দাওয়াতে হকের বাধা দানে ব্যয় করেছি, তার চেয়ে দ্বিগুণ এখন আমি আল্লাহর পথে ব্যয় করবো। যত লড়াই আমি হকের বিরুদ্ধে লড়েছি, এখন আল্লাহ্‌র পথে তার দিগুণ জিহাদ করবো।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আবার দোয়া করলেন ইকরামার জন্যে।

ইকরামা যখন মহানবীর কাছ থেকে ফিরছিলেন, তখন তার দুগণ্ড বেয়ে নামছিল আবিরাম অশ্রুধারা। কি এক স্বর্গীয় নূরের আলোতে তাঁর মুখমণ্ডল দীপ্ত হয়ে উঠেছে। ইকরামার হলো নতুন জন্ম- নতুন এক ইকরামা তিনি।

লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি তৃতীয় খণ্ড

No comments:

Post a Comment