Monday, June 15, 2020

ইবনে জাহাশের কাফেলা

মহানবীর (সাঃ) শিশু রাষ্ট্র মদীনা তখন উত্তাল সাগর ঘেরা এক দ্বীপের মত। মক্কা থেকে হিজরত করার পর তখন এক বছর গত হয়েছে। কদিন আগে মক্কা থেকে প্রেরিত কাফের কুরাইশদের একটা বাহিনী কুর্জ ইবনে জাবেরের নেতৃত্বে গোপনে এসে অতর্কিতে মদীনার এক প্রান্তরে চড়াও হয়ে মুসলমানদের একটা পশুপাল ধরে নিয়ে গেল।

এমন ধরনের আরও আক্রমণের আশংকা মদীনার মুসলিমদের চিন্তিত করে তুলল। খবর এল, বড় একটা আয়োজন করেছে মক্কার কাফেররা। মদীনায় তারা বড় কিছু ঘটাতে চায়।

একটা কাফেলা সাজালেন মহানবী (সাঃ)। কাফেলার যাত্রী ৮ জন মুসলামন চারটি উটে। কাফেলার অধিনায়ক আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ।

কাফেলা কোথায় যাবে, কি করবে কেউ জানে না। কাফেলার অধিনায়ক আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশও নয়।

যাত্রার মুহূর্তে মহানবী (সাঃ) একটি চিঠি আবদুল্লাহর হাতে তুলে দিয়ে বললেন, মক্কার পথে দুদিন এগুবার পর এই চিঠি খুলবে। চিঠির নির্দেশ অনুসারে কাজ করবে। তবে কাউকে তা করতে বাধ্য করবে না।

দুদিন চলার পর চিঠি খুলল আবদুল্লাহ। দেখল চিঠিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী নাখলা নামক স্থানে অবস্থান করে গোপনে মক্কার কাফেরদের গতিবিধির উপর নিয়মিত খবর পাঠাতে হবে মদীনায়।

অত্যন্ত বিপজ্জনক কাজ। বন্দী ও মৃত্যু অবধারিত, এমন এক বিপজ্জনক শত্রু-পুরীতে বসে তাদের কাজ করতে হবে।

বিষয়টি কাফেলার সবাইকে জানিয়ে আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ ঘোষণা করলেন, ভাইসব, কোন জোর নেই, কোন জবরদস্তি নেই। যার ইচ্ছা হয় দেশে ফিরে যান। আর ইসলামের জন্য, আল্লাহর জন্য শহীদের গৌরবজনক মৃত্যু যাদের অভিপ্রেত, তারা আমার সাথে আসুন।

বলে আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ কারো দিকে না তাকিয়ে নবীর (সাঃ) আদেশ পালনের জন্য নাখলার দিকে পা বাড়ালেন।

দেখা গেল, আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশের পেছনে সমান তালে পা ফেলে এগিয়ে চলল অবশিষ্ট সাতজন।

কারো দৃষ্টিই ফেলে আসা পেছনের দিকে নয়। শহীদি মৃত্যুর হাতছানিতে তারা যেন ভুলে গেছে পেছনের সব।

লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]

No comments:

Post a Comment