মুতা যুদ্ধ-যাত্রার একটি মুহূর্ত।
তিন হাজার সৈন্যের মুসলিম বাহিনী
আরব সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়া প্রদেশে প্রবেশের পর জানতে পারলো, খৃস্টান শাসনকর্তা শুরাহবিল এক লাখ সৈন্যের এক সুসজ্জিত
বাহিনী নিয়ে সিরিয়ার মা’আব স্থানে অপেক্ষা করছেন। মুসলিম
বাহিনী আরও জানতে পারলো, রোম সম্রাট স্বয়ং ২ লাখ সৈন্যের
একটা বাহিনী তৈরী করছেন শুরাহবিলের সাহায্যের জন্যে। অর্থাৎ গোটা খৃস্টান
সাম্রাজ্যই যেন এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
এ খবর পাওয়ার পর মুসলিম বাহিনীর
অনেকেই পরিস্থিতি সম্পর্কে পরামর্শ করার প্রয়োজন অনুভব করল।
পরামর্শ সভায় মিলিত হবার জন্যে
মুসলিম বাহিনীর যাত্রাবিরতি হলো।
বসল পরামর্শ সভা।
অনেক কথা হলো।
কিছু লোক পরামর্শ দিলেন, ‘এই নতুন পরিস্থিতি সম্পর্কে মদীনায় খবর পাঠানো হোক। এ
ব্যাপারে মহানবী (সাঃ)-এর পরামর্শ আসার পর সে অনুসারে কাজ করা উচিত।’
যারা এই মত প্রকাশ করলেন, তারা যুক্তি হিসেবে বললেন, ‘তিন হাজার সৈন্য নিয়ে লাখ অথবা
তারও বেশী সুসজ্জিত সৈন্যের সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হওয়া সঙ্গত হবে না।’
যুক্তি খুবই শক্তিশালী। বিশেষ করে
মহানবী (সাঃ)-এর পরামর্শ নেয়ার প্রস্তাব অনেকের কাছে সঙ্গত বলে মনে হলো।
কিন্তু অনেকেই এই দ্বিধাগ্রস্ততাকে
মেনে নিতে পারলেন না। তাদেরই একজন মহামতি আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, যাকে মুতা যুদ্ধের তৃতীয় সেনাপতি হিসেবে মহানবী (সাঃ) নিয়োগ
দিয়েছিলেন, উঠে দাঁড়িয়ে গুরুগম্ভীর আওয়াজে তেজোদীপ্ত কণ্ঠে বললেন, ‘মুসলিম সৈনিকবৃন্দ, তোমরা যে সাফল্য অর্জনের জন্যে বের হয়েছিলে, আল্লাহর কসম এখন সে সাফল্যই যেন তোমাদের কাছে অবাঞ্ছিত বলে
মনে হচ্ছে। তোমরা তো বের হয়েছিলে শাহাদাত হাসিলের উদ্দেশ্যে, সত্যের নামে আত্মোৎসর্গ করার জন্যে। সংখ্যার গণনা মুসলমানরা
কখনই করে না, পার্থিব শক্তির তুলনা করার কাজে কখনই তারা প্রবৃত্ত হয় না, তাদের একমাত্র শক্তি আল্লাহ। সেই আল্লাহর প্রেরিত মহাসত্যকে
বক্ষে ধারণ করে, সত্যের তেজে উদ্দীপ্ত হয়ে কর্তব্যের কোরবান গাহে আল্লাহর
নামে হৃৎপিণ্ডের শোণিত ঢেলে দেয়াই তো আমাদের সাফল্য। বিজয়ী হতে পারি ভাল, আর শাহাদাত যদি হয় আরও ভাল। সুতরাং এ সময় এত আলোচনা আর এই যুক্তি-পরামর্শ কিসের জন্যে?’
রাওয়াহার এই তেজোদীপ্ত কথা
প্রতিটি মুসলিম সৈনিকের দেহে যেন বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি করলো। দুই চারজন যারা দূরদর্শিতা অবলম্বন ও হিসাব-নিকাশের কথা
বলছিলেন, তারাও নতুন চেতনায় জেগে উঠলো। সকলে একবাক্যে বলে উঠল, ‘আল্লাহর কসম, রাওয়াহার পুত্র ঠিক বলেছেন।’
তিন সহস্র মুসলিম সৈনিকের কণ্ঠে
ধ্বনি উঠল, ‘আল্লাহু আকবার।’ সিরিয়ার আকাশে প্রথম উত্থিত এই
সম্মিলিত তাকবির ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল সিরিয়ার পথ-প্রান্তরে।
মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধযাত্রা আবার শুরু হলো।
লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]
No comments:
Post a Comment