Monday, June 15, 2020

তিমির অন্ধকারে সূর্যোদয়ের কোরাস

কুরাইশদের নেতৃত্বে ইহুদি এবং গোটা পৌত্তলিক আরব একজোট হয়ে আসছে মদীনা আক্রমণের জন্যে।

মহানবী (সাঃ) সকলের সাথে পরামর্শ করে ঠিক করলেন, এবার মদীনায় অবস্থান করেই মদীনার প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

পারস্যের সাহাবী সালমান ফারসির পরামর্শে পরিখা খনন করে মদীনার উপকণ্ঠে শত্রু বাহিনীর গতিরোধ করার সিদ্ধান্ত হলো।

শুরু হলো পরিখা খনন।

মহানবী (সাঃ) তাঁর ৩০০০ সাহাবীকে ১০ জনের এক এক গ্রুপে বিভক্ত করে প্রতি গ্রুপকে দশ গজ গভীর দশ গজ চওড়া পরিখা খননের নির্দেশ দিলেন।

সময় বেশী নেই। দিন রাত অবিরাম পরিখা খনন শুরু হলো। এই খনন কাজে সবাই শ্রমিকে পরিণত হলো। স্বয়ং মহানবী (সাঃ) দশ জনের একটা গ্রুপের সদস্য হলেন।

একদিকে প্রচন্ড দৈহিক পরিশ্রম, অন্যদিকে প্রকট খাদ্যাভাব। অবস্থা এক সময় এমন দাঁড়াল যে, পরপর কয়েক সন্ধ্যা কারোরই খাবার জুটল না। কোমর সোজা করে দাঁড়ানোও কঠিন হয়ে দাঁড়াল অনেকের। কিন্তু কাজের বিরাম নেই। কোমরকে সোজা ও শক্ত রাখার জন্য আরবীয় রীতি অনুসারে পেটে পাথর বাঁধা হলো।

মহানবীর পেটেও বাঁধা একই পাথর। তাঁর গ্রুপের কয়েকজন মাটি কাটছেন, আর কয়েকজন সে মাটি বহন করছেন। মহানবী (সাঃ) এই বহনকারী দলের একজন হয়ে মাথায় করে মাটি বয়ে নিচ্ছেন।

মহানবীর (সাঃ) এই অবস্থা দর্শনে সংকোচ জরজর, বেদনা-কাতর কোন সাহাবী সাহায্য করতে এলে তিনি হাসি মুখে বিদায় দিচ্ছেন। যার ভার তারই বহন করা দরকার।

দশ গজ গভীর ছয় হাজার হাত দীর্ঘ পরিখা খননের কাজে প্রতিটি সাহাবী তাঁর সর্ব শক্তি, সব আন্তরিকতা ঢেলে দিয়েছেন যেন। কঠোর পরিশ্রমে ভেঙ্গে পড়া তাঁদের দেহ, ক্ষুধার জ্বালায় সকলে অস্থির, পিঠের সাথে লেগে থাকা পেটে পাথর বাঁধা তাঁদের। কিন্তু তাঁদের মুখে ক্লান্তি বা কষ্টের কোন ছাপ নেই। তার জায়গায় তাদের মুখে ধ্বনিত হচ্ছে সুন্দর এক কোরাসঃ

আমরা সেই তারা, যারা
মুহাম্মাদের হাতে জিহাদের
বাইয়াত করেছি।

সমস্বর কণ্ঠের এই কোরাস সৃষ্টি করেছে সেখানে উৎসবের এক আমেজ।

লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]

No comments:

Post a Comment