Saturday, June 6, 2020

প্রথম দিগ্বিজয়ী বাহিনীর প্রতি মহানবী

বসরার রাজার কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে দূত উমাইর ইবনে হারেসকে প্রেরণ করেন মহানবী (সাঃ)।

পথে মুতানামক স্থানে একজন খৃস্টান আঞ্চলিক শাসনকর্তা শুরাহবিল উমাইরকে বন্দী করে তাকে হাত-পা কেটে অশেষ কষ্ট দিয়ে হত্যা করল।

শুধু দূতহত্যাই নয়, সে লক্ষাধিক সৈন্য যোগাড় করে মদীনা আক্রমণের দুরভিসন্ধি আাঁটতে লাগল। রোম সম্রাটের কাছ থেকেও আশু সাহায্যের ঘোষণা সে পেয়ে গেল।

দূতহত্যার খবর এবং খৃস্টানদের সমরায়োজনের কথা মহানবীর কাছে পৌঁছলে মহানবী (সাঃ) সঙ্গে সঙ্গেই তিন হাজার সৈন্যের একটা বাহিনী মুতায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।

এই বাহিনীর সেনাপতির দায়িত্ব দিলেন যায়েদ ইবনে হারেসাকে। তিনি বলে দিলেন, যায়েদ নিহত হলে আলীর ভাই বীরবর জাফর সেনাপতি হবেন। আর জাফর নিহত হলে সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা। মহানবীর আশংকা শুধু আশংকা নয়, এক দেদীপ্যমান সত্য। সুতরাং বাহিনীটি যে কি ভয়াবহ এক যুদ্ধের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে তা আঁচ করা বাকী রইল না মহানবীর কথা থেকে।

তাই বোধ হয় মদীনার অধিবাসীরা এই যুদ্ধযাত্রাকে খুবই গুরুত্ব দিল। সেনাদলের যাত্রার সময় মহানবী (সাঃ) স্বয়ং এবং মদীনার অধিবাসী মুসলমানরা মদীনার বাইরে বিদা উপত্যকাপর্যন্ত বাহিনীটির সাথে হেঁটে এল।

বিদায়ের প্রাক্কালে মহানবী (সাঃ) মুসলিম বাহিনী যাতে কোন অবস্থাতেই নীতিভ্রষ্ট না হয়, কোন বাড়াবাড়ির আশ্রয় যাতে না নেয়, আল্লাহর উপর ভয় ও ভরসাকেই যাতে সর্বাবস্থায় পাথেয় মনে করে, সে জন্যে বিদায়ী উপদেশ হিসেবে বললেনঃ

আমি তোমাদেরকে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে চলবার উপদেশ দিচ্ছি। প্রত্যেক সহচর মুসলমানের সাথে সদ্ব্যবহার করার উপদেশ দান করছি। আল্লাহর নামে যুদ্ধযাত্রা কর এবং সিরিয়ায় তোমাদের ও আল্লাহর শত্রুদের মুকাবিলা কর। তোমরা যে দেশে যাচ্ছ সেখানকার মাঠে সাধু-সন্ন্যাসীদেরকে নিভৃত সাধনায় মগ্ন থাকতে দেখবে। সাবধান! তাদের কাজে কোন প্রকার বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না। সাবধান! একটি স্ত্রীলোক, একটি বালক বা বালিকা, একজন বৃদ্ধও যেন কোনক্রমে তোমাদের হাতে নিহত না হয়। সাবধান! শত্রুপক্ষের একটি বৃক্ষও ছেদন করবে না, একটি বাড়ীও নষ্ট করবে না।

এই প্রথমবারের মত মুসলিমরা আরব ভূখণ্ডের বাইরে যুদ্ধযাত্রা করছে। যাদের বিরুদ্ধে তাদের এই যুদ্ধযাত্রা তারা সংখ্যা ও সজ্জায় অনেক বড়। কিন্তু তবু সৈনিকরা বুঝল, যথেচ্ছা চলার এক ইঞ্চি সুযোগও তাদের থাকল না। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাহায্য লাভের এই তো উপায়!

লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]

No comments:

Post a Comment