Monday, June 15, 2020

অজেয় যে বাহিনী

বদর যুদ্ধের প্রারম্ভ।

যুদ্ধ তখনও শুরু হয়নি।

মক্কার কুরাইশদের মুশরিক (কাফের) বাহিনী এবং মহানবী (সাঃ)-এর নেতৃত্বে মদীনার মুসলিম বাহিনী মুখোমুখি দণ্ডায়মান।

কুরাইশদের সহস্রাধিক সৈন্য বিপুল যুদ্ধ-সাজে সজ্জিত। কুরাইশ বাহিনীর শুধু সামনের কাতারেই আপাদমস্তক লৌহ বর্মে আচ্ছাদিত শতাধিক ঘোড়সওয়ার দেখা যাচ্ছে।

মহানবীর (সাঃ) বাহিনীতে একটি মাত্র ঘোড়া। তলোয়ার ও তীর ছাড়া আর কোন অস্ত্র নেই তাদের।

যে কোন মুহূর্তে যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠবে।

চারদিকে শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা।

মহানবী (সাঃ) মুসলিম বাহিনীর প্রতিটি ব্যুহ, প্রতিটি ছত্র পরিদর্শন শেষে সবার সামনে এসে দাঁড়ালেন। সকলের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে আদেশ করলেন, সকলে সাবধান! তোমরা আগে আক্রমণ করবে না। বিপক্ষরা আক্রমণ করলে তীর নিক্ষেপ করে বাধা দেবে। সাবধান! আমি আদেশ না দেয়া পর্যন্ত আক্রমণ করবে না।

তারপর মহানবী (সাঃ) প্রবেশ করলেন তাঁর জন্যে তৈরী কাপড়-ঘেরা বিশ্রাম স্থানে।

এ সময় কুরাইশ সৈন্যের পক্ষ থেকে তীর বর্ষণ শুরু হলো। একটি তীর এসে মুসলিম বাহিনীর মেহজা নামক সাহাবীর বক্ষ বিদীর্ণ করল। ঢলে পড়ল তার রক্তাক্ত দেহ মাটিতে। শাহাদাৎ বরণ করলেন তিনি।

মুসলিম সৈন্যের সকলের তীর তখনও তুনিরে আবদ্ধ। আক্রমণের হুকুম নেই মহানবীর। নীরবে তারা সকলে দেখল সাথীর মৃত্যু।

মহানবী (সাঃ)-এর আরেকজন সাহাবী হারেছা ইবনে সুরাকা পানি পান করতে যাচ্ছিলেন। বিপক্ষের একটা তীর তাঁর কণ্ঠনালি বিদ্ধ করল। তিনিও শাহাদাৎ বরণ করলেন।

কিন্তু মুসলিম বাহিনী পাথরের মত স্থির, নিশ্চলভাবে দণ্ডায়মান। শান্ত, অচঞ্চল চোখে তাঁরা দেখলো আরেক সাথীর মৃত্যু। মহানবীর আদেশ নেই তাই একটা তীরও তুনির থেকে বেরুলো না, একটা তরবারিও কোষমুক্ত হলো না। কারও চোখে প্রতিশোধের একটা স্ফুলিঙ্গও জ্বলল না।

কুরাইশ বাহিনীর ওমের ইবনে আহর ঘোড়ায় চড়ে বেরিয়েছিল ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীর অবস্থা, সংখ্যা, রণসজ্জা দেখার জন্যে। মুসলিম বাহিনীর চারদিকে ঘুরে দেখার পর ফিরে গিয়ে সে বলল, মুসলমানদের সংখ্যা তিনশর বেশী হবে না। ওদের পেছনে সাহায্যকারী কেউ নেই এবং আত্মরক্ষার জন্যে তরবারি ছাড়া কোন অস্ত্র নেই তাদের। কিন্তু তাদের দেখে মনে হলো, একটি প্রাণের বিনিময় না দিয়ে তাদের একটি প্রাণনাশ করতে আমরা পারবো না। এমন বাহিনীকে জয় করা কঠিন।

লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]

No comments:

Post a Comment