হুদায়বিয়া সন্ধির পর দেশের
ভেতরে-বাইরে ইসলামের দ্রুত বিস্তারে দিশেহারা হয়ে পড়ল কুরাইশ এবং আরবের প্রধান
পৌত্তলিক গোত্রগুলো।
মক্কায় কুরাইশ, তায়েফের সাকিফ এবং হোনায়েনের হাওয়াজেন ছিল আরবের প্রধান
পৌত্তলিক গোত্র। তারা একযোগে চেষ্টা করে সমগ্র দক্ষিণ আরবের সব পৌত্তলিক গোত্রকে
সংঘবদ্ধ করল মহানবীর মদীনার উপর শেষ আঘাত হানার জন্যে।
অসুবিধাটা হয়ে দাঁড়াল মক্কার
পার্শ্ববর্তী খোজাআ গোত্র। গোত্রটি মুসলমানদের মিত্র এবং আশ্রিত। হুদায়বিয়ার
সন্ধিতে একটা শর্ত ছিল যে আরবের অন্যান্য গোত্র তাদের ইচ্ছা অনুসারে কুরাইশ অথবা
মুসলমান যে কোন পক্ষের মিত্র হতে পারে। সেই অনুসারে খোজাআর চিরশত্রু বনি বকর
কুরাইশদের সাথে যোগ দিলে বনি খোজাআ মুসলমানদের সাথে সন্ধি করে। তাছাড়া এই খোজাআ
পূর্ব থেকে বরাবরই মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল।
কুরাইশ, হাওয়াজেন ও সাকিফ গোত্রত্রয় পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিল, মুখের সামনে থেকে খোজাআদের সরাতে হবে, নির্মূল করতে হবে। এতে হবে দুইটা কাজ। এক, গোটা দক্ষিণ আরব একমুখী হবে এবং হুদায়বিয়া সন্ধি ভঙ্গ হওয়ার
ফলে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধের সুযোগ পাওয়া যাবে।
বনি খোজাআদের প্রতিবেশী এবং
চিরশত্রু বনি বকর গোত্রকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করল কুরাইশরা এবং উত্তেজিত
করে তুলল তাদেরকে খোজাআদের বিরুদ্ধে।
একদিন রাতে ঘুমন্ত খোজাআ গোত্রের
উপর আপতিত হলো বনি বকরের লোকরা। তাদের সাহায্য করতে এলো কুরাইশদেরও কিছু লোক।
সেদিন রাতে অমানুষিক হত্যাকাণ্ড
অনুষ্ঠিত হলো খোজাআ পল্লীতে। বাঁচার জন্যে কিছু পুরুষ-নারী-শিশু আশ্রয় নিয়েছিল কা’বা ঘরে, যেখানে সকল মানুষ অবধ্য। কিন্তু কা’বায় আশ্রয় নিয়েও বাঁচল না তারা। আক্রমণকারীদের একজন চিৎকার
করে বলল, আজ আর ঈশ্বর বলে কেউ নেই, আজ মনের সাধ মিটিয়ে শত্রু বিনাশ
কর।
বনি খোজাআর এই মর্মান্তিক খবর
মদীনায় গিয়ে পৌঁছল। শোকাভিভূত হয়ে পড়লেন মহানবী (সাঃ)। একদিকে খোজাআদের
হত্যাকাণ্ড, অন্যদিকে কুরাইশদের জঘন্য অপরাধ দুই-ই তাকে প্রচণ্ডভাবে
আঘাত করল। খোজাআরা তার মিত্র, আশ্রিত আর কুরাইশরা তার স্বজন।
কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন
মহানবী (সাঃ)। কুরাইশদেরকে তাদের সন্ধি ভঙ্গ ও হত্যাকাণ্ডের শাস্তি অবশ্যই ভোগ
করতে হবে।
তিনি কুরাইশদেরকে একটা সুযোগ দেয়ার
জন্য দূত পাঠালেন মক্কায়। তিনি বলে পাঠালেন, অর্থ দ্বারা অন্যায় হত্যাকাণ্ডের
ক্ষতিপূরণ করতে হবে, অথবা বনি বকর গোত্রের সাথে মিত্রতা
পরিত্যাগ করতে হবে। কোন একটিকে তাঁদের গ্রহণ করতে হবে।
কুরাইশরা সন্ধি ভঙ্গই চাচ্ছিলো।
সুতরাং মহানবীর শর্ত পাবার সাথে সাথেই তারা হুদায়বিয়ার সন্ধি ভেঙ্গে গেছে বলে
ঘোষণা দিলো।
কুরাইশদের আচরণ মহানবী (সাঃ)-কে
খুবই ব্যথিত করলো। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মক্কা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিলেন।
সন্ধি বাতিল করার পর কুরাইশরা
বুঝতে পারলো ঝোঁকের মাথায় তারা যে কাজ করেছে, তা ঠিক হয়নি। স্বয়ং আবু সুফিয়ান
ছুটলেন মদীনায় বুঝিয়ে মহানবীকে নিবৃত্ত করার জন্যে। আবু সুফিয়ান আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ), আলী (রাঃ) সহ সকলের দ্বারস্থ হলেন
সুপারিশ করার জন্য যে, হুদায়বিয়ার সন্ধি ঠিক আছে, ভেঙ্গে যায়নি। কিন্তু মহানবী (সাঃ) কোন কথার প্রতিই কর্ণপাত
করলেন না। স্বজনের চেয়ে চুক্তি বড়, ওয়াদা বড়, খোজাআদের প্রতি কৃত অন্যায়ের অবশ্যই প্রতিবিধান করতে হবে।
৮ম হিজরী ১৮ই রমযান দশ হাজার
মুসলিম মুজাহিদ নিয়ে মক্কার পথে যাত্রা করলেন মহানবী (সাঃ)।
লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]
No comments:
Post a Comment