আমর ইবনে আস ছুটছেন মরু পথ ধরে মদীনার দিকে। আমর মক্কার একজন প্রথিতযশা যোদ্ধা এবং দূরদর্শী একজন রাজনীতিবিশারদ পণ্ডিত। আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাসীর দরবার থেকে হিজরতকারী মুসলমানদের ধরে আনার কঠিন কূটনৈতিক কর্মে কুরাইশরা তাকেই পাঠিয়েছিল আবিসিনিয়ায়।
এই আমর আজ তাঁর বাড়ী-ঘর, সহায়-সম্পত্তি, আত্মীয়-স্বজন সব মক্কায় ফেলে দেহের পোশাকটুকু মাত্র সম্বল করে ছুটছেন মদীনায়।
অনেকটা পথ এগুবার পর এক জায়গায় হঠাৎ তাঁর সাক্ষাত ঘটলো খালিদ ইবনে ওয়ালিদ ও ওসমান ইবনে তালহার সাথে। চমকে উঠলেন আমর, চমকে উঠলেন খালিদ এবং ওসমানও। উভয়পক্ষের কাছে তাদের এই সাক্ষাত যেন অকল্পনীয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।
খালিদ ইবনে ওয়ালিদ এবং ওসমান ইবনে তালহা দু’জনেই আমরের মতই মক্কার বিখ্যাত ব্যক্তি। খালিদ অদ্বিতীয় বীর এবং অজেয় সেনাপতি হিসেবে আরবে পরিচিত। আর ওসমান ইবনে তালহা মক্কার মহাসম্মানিত ব্যক্তি। তিনি কা’বার প্রধান মুহাফেজ এবং বায়তুল্লাহর সকল চাবি তাঁরই জিম্মায় থাকে।
এঁদের মুখোমুখি হয়ে আমর নিজের বিস্ময় কিছুটা সামলে নেবার পর খালিদকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘খালিদ! কতদূর?’
খালিদ একজন নির্ভীক যোদ্ধা। কিন্তু তিনিও চমকে উঠেছিলেন আমরের অপ্রত্যাশিত দর্শনে। খালিদ জানেন না, আমরের কি মতলব, কোথায় যাচ্ছে। সে যাই হোক খালিদের বীর হৃদয় সায় দিলো না সত্য গোপন করতে। খালিদ অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বললেন, ‘যাচ্ছি মদীনায়। জেদের বশবর্তী হয়ে অসত্যের পূজা করতে করতে মন হাঁপিয়ে উঠেছে। আর সহ্য করতে পারছি না। তাই মদীনায় চলেছি প্রকাশ্যে সত্যকে স্বীকার করতে, আগের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে।’
বলে একটু দম নিলেন খালিদ। তারপর আমরকে লক্ষ্য করে উদাত্ত কণ্ঠে বললেন, ‘আমর, আর কতদিন, নিশ্চয় জেনো এই ব্যক্তি (মহানবী) সত্যবাদী। তিনি নিশ্চয় আল্লাহর নবী। আমি ও আমার সঙ্গী ওসমান এই উদ্দেশ্যেই মদীনা যাত্রা করেছি।’
আমরের মুখ আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। উৎসাহ-উদ্দীপনায় নেচে উঠলো মুখমণ্ডল। বললেন আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে, আমিও তো একই উদ্দেশ্যে মদীনা যাত্রা করেছি।
দুই কাফেলা এক হয়ে এক মহানন্দে ছুটলো মদীনার দিকে।
ফাতহুম্ মুবিন-এর জ্বলন্ত চিত্র যেন এটা।
লেখকঃ আবুল আসাদ
বইঃ আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]
No comments:
Post a Comment