ওহোদ যুদ্ধের দিবাগত রাত।
রাত তখন গভীর।
বনি খোজায়া গোত্রের প্রধান মা’বাদ এলেন মদীনায়। বনি খোজায়া
মুসলমানদের মিত্র গোত্র। ওহোদ যুদ্ধে মুসলমানদের অসুবিধার খবর পেয়ে মুসলমানদের
সমবেদনা জানাবার জন্যে রাতেই মা’বাদ মদীনা যাত্রা করেছিলেন। আসার পথে হামরাউল আসাদ স্থানে এসে দেখলেন, মক্কার আবু
সুফিয়ানের বাহিনী মক্কার পথ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার মদীনা আক্রমণের জন্যে অগ্রসর
হচ্ছে। শুনলেন তিনি, মুসলমানদের
অনেক নিহত, আহত
অধিকাংশ সাহাবী রাসূলুল্লাহসহ। এই সুযোগে মদীনার মুসলমানদের ধ্বংস না করে ফিরে
গেলে এই সুবর্ণ সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। এই চিন্তা করেই তারা মদীনা ধ্বংসের জন্যে
অগ্রসর হচ্ছে। মা’বাদ
এই খবর নিয়ে দ্রুত মদীনা এসেছেন মুসলমানদের সাবধান করার জন্যে।
মহানবী (সাঃ) মা’বাদের কাছ থেকে সব শুনলেন।
ডাকলেন তিনি হযরত আবু বকর ও হযরত
ওমর (রাঃ)-কে পরামর্শের জন্যে। পরামর্শে ঠিক হলো, ফজরেই যুদ্ধযাত্রা করতে হবে। বেলাল
(রাঃ)-কে মহানবী (সাঃ) নির্দেশ দিলেন ফজরের আযানের সময় যুদ্ধযাত্রার ঘোষণা ও
অন্যান্য আদেশ সকলকে জানিয়ে দেবার জন্যে।
বেলাল (রাঃ) ফজরের আযান দিলেন এবং
সেই সাথে ঘোষণা দিলেনঃ ‘মুসলিম
বীরবৃন্দ প্রস্তুত হও, এখনই
যুদ্ধযাত্রা করতে হবে। কুরাইশ বাহিনী মদীনা আক্রমণের জন্যে অগ্রসর হচ্ছে।’ এই সাথে বেলাল
মহানবীর (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে আরও ঘোষণা করলেন, “গতকালের যুদ্ধে যারা উপস্থিত হয়েছিলেন, অদ্য কেবল তারাই
যুদ্ধে যেতে পারবেন।”
মদীনার ঘরগুলো তখন বিপর্যস্ত। অধিকাংশ
আহত সাহাবীর আহত স্থানের রক্ত তখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ৭০ জন শহীদের শোকসন্তপ্ত
পরিবারের কান্না তখনও প্রশমিত হয়নি। ক্লান্তি ও অবসাদে ভেঙ্গে পড়া সকলের দেহ।
স্বয়ং মহানবী (সাঃ) আহত। তাঁর কপালে গভীর দু’টি ক্ষত। তাঁর সামনের চারটি দাঁত পাথরের আঘাতে নড়ে
যাওয়া।
কিন্তু বেলালের আহ্বান যখন তাদের
সকলের কানে গেল, মুহূর্তেই
আহত স্থানের বেদনা-যন্ত্রণা কোথায় চলে গেল, শরীরের ক্লান্তি-অবসাদ কোথায় যেন ভেসে গেল। নতুন জীবন
নিয়ে মদীনার গোটা মুসলিম পল্লী জেগে উঠলো। চারদিকের শত কণ্ঠের আল্লাহু আকবার
ধ্বনিতে উৎসবের জোয়ার জাগলো মদীনায়।
আগের দিনের রক্ত-রঞ্জিত পোশাক ও
রক্তে গোসল করা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছুটলো সকলে মদীনার মসজিদে নববীর দিকে।
নামায শেষে মহানবী (সাঃ) যুদ্ধ
সাজে সজ্জিত হয়ে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সকলের আগে যাত্রা করলেন। তাঁর পেছনে পায়েহাঁটা ছ’শ’ মুসলমানের বাহিনী। মুসলমানদের এই
যুদ্ধ-যাত্রার খবর মদীনামুখী কুরাইশ সৈন্যের প্রধান আবু সুফিয়ান পেলে স্তম্ভিত হলো
সে। তার মনে হলো মুসলমানরাই যেন কুরাইশদের ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে আসছে। ভয় পেয়ে গেল
আবু সুফিয়ান। আহত সিংহ আরও ভয়াবহ হয়ে থাকে।
সঙ্গে সঙ্গেই আবু সুফিয়ান তার
বাহিনীর গতি মদীনার দিক থেকে মক্কার দিকে ঘুরিয়ে দিলেন।
মক্কার মুশরিক বাহিনীর পলায়নের খবর
মহানবী (সাঃ) পেলেন। তবু তিনি হামরাউল আসাদ প্রান্তরে ক’দিন অপেক্ষা করে ফিরে গেলেন
মদীনায়।
লেখকঃ
আবুল আসাদ
বইঃ
আমরা সেই সে জাতি [তৃতীয় খণ্ড]
No comments:
Post a Comment