হযরত উমার (রাঃ) তখন
খলীফা। খলীফা
উমার (রাঃ) এর বাড়ী থেকে বেশ কিছু দূরে একটি পানির কূপ। খলীফার সাক্ষাৎপ্রার্থী
একজন লোক দেখলেন, খলীফা
কূপ থেকে পানি তুলছেন। শুধু পানি তোলা নয়, আগন্তুক বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলেন,
পৃথিবীর শাসক উমার,
পারস্য ও রোম
সাম্রাজ্য পদানতকারী উমার (রাঃ) সেই পানি ভরা কলসি কাঁধে তুলে নিলেন। আগন্তুক
আর স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি দ্রুত খলীফার নিকটে গেলেন। একজন অপরিচিত
লোককে দেখে হযরত উমার (রাঃ) বললেন, “ভাই, আপনার
কি কোন কথা আছে, বলবেন আমাকে?”
লোকটি বললেন,
“হে আমীরুল মুমিনীন,
যদি কলসটি দয়া করে
আমার কাঁধে দিতেন।”
হযরত উমার (রাঃ) যেতে
যেতেই বললেন, “আমার
ছেলে-মেয়ের খাদ্য পানীয় সংগ্রহের মাধ্যমে পুণ্য সঞ্চয় করা কি আমার উচিত
নয়? আচ্ছা, এ ছাড়া কি আপনি আর কিছু বলবেন?”
আগন্তুক লোকটি বললেন,
“আপনার এই অবস্থায়
বলার মত কোন কথা আমার মনে আসছেনা। আগে বাড়ী চলুন। তারপর বলব। আমি আপনাকে
অপেক্ষা করতে বলব, আপনি
কাঁধে বোঝা নিয়ে আমার কথা শুনবেন, এটা
হতে পারে না।”
আগন্তুকের কথা
শুনে হযরত উমার থমকে দাঁড়ালেন। বোধ হয় ভাবলেন, ‘আমি আমার নিজের কাজ করছি,
এ কাজের অজুহাতে
আগন্তুককে দাঁড় করিয়ে রাখা ঠিক হবে না।’ তিনি কাঁধ থেকে কলসি নামিয়ে জানুর উপর রাখলেন।
তারপর বললেন, “বলুন,
আপনার কথা।”
আগন্তুক ভীষণ বিব্রত
বোধ করলেন। তার কথা শুনার জন্য আমীরুল মুমিনীন এ ভাবে কষ্ট করবেন। কলসটি মাটিতে নামিয়ে রাখলে
তবু কিছুটা কষ্টের লাঘব হয় তাঁর। তিনি খলীফাকে নিবেদন করলেন, “জানুর উপর কলস রেখে কথা শুনতে আপনার
কষ্ট হবে। কলসটি
দয়া করে মাটিতে রাখুন।”
খলীফা বললেন,
“তা কি করে হয় ভাই?
কলসির তলা ভিজা। এ
জমিটি আমার নয়। ভিজা কলসির তলায় লেগে অন্যের জমি আমার বাড়িতে চলে গেলে, আকি কি জওয়াবদিহি করব?”
লোকটি বলল, “আমার জিজ্ঞাসার জবাব আমি পেয়ে গেছি,
আপনি দয়া করে যান।”
উমার (রাঃ) বললেন,
“বুঝলাম না, বুঝিয়ে বলুন।”
লোকটি বলল, “ইয়া আমীরুল মুমিনীন, আমি জিজ্ঞাসা করতে এসেছিলাম বর্তমান জরীপে
অন্যের জমির কতকাংশ আমার জমির সাথে উঠে এসেছে। তা আমার জন্য হালাল কিনা?”
লেখকঃ আবুল আসাদ (আমরা সেই সে জাতি-প্রথম খন্ড)
No comments:
Post a Comment