পারস্য সম্রাট খসরু
তখন সিংহাসনে সমাসীন। তাঁর প্রতাপে চারদিক প্রকম্পিত। ভান্ডারে তাঁর অফুরন্ত হীরা,
জহরত, মনিমুক্তা।
গর্বিত সম্রাট ভাবেন,
তাঁর সাম্রাজ্য যেমন
অজয় অক্ষয়, তেমনি
তাঁর সম্পদের কোন
শেষ নেই। এই সম্রাট খসরুর কাছেই গেলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দূত। রাসূল (সাঃ) এর একটি পত্র ছিল তার সাথে। পত্রে
রাসূল (সাঃ) সম্রাট খসরুকে আহ্বান জানিয়েছিলেন সত্যের দিকে।
সম্রাট খসরু মহানবীর সে চিঠি পাঠ করলেন। পাঠ করে ক্রোধে ফেটে পড়লেন। বললেন, “তোমাদের এত বড় স্পর্ধা। পারস্যের
একচ্ছত্র অধিপতি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্রাট খসরুর
দরবারে ধর্ম কথা নিয়ে আসতে সাহস করেছো? তোমরা
তো অত্যন্ত ঘৃণিত ও নীচ
লোক”।”
দূত সহাস্যে বললেন,
“নিশ্চয়ই আমরা অত্যন্ত
নীচ ও ঘৃণিত ছিলাম। অতঃপর আমাদের মাঝে এলেন একজন মহামানব মহানবী। তিন আমাদের সত্যের
সন্ধান দিলেন। আমরা উন্নত হয়ে উঠলাম। আপনি যদি তাঁর শিক্ষা, তাঁর ধর্মমত গ্রহণ করেন, তবে আমরা ভাই ভাই।
নচেৎ অসত্যের সাথে
সত্যের দ্বন্দ্ব অনিবার্য।”
গর্বিত সম্রাট খসরু মহানবীর
দূতের এই কথা শুনে বারুদের ন্যায় জ্বলে উঠলেন। বললেন, “ওহে কে আছ, এর মাথায় পারস্যের এক টুকরি মাটি উঠিয়ে
দাও। সম্রাট খসরুর দরবারে এসে এমন ভালো লোক খালি হাতে ফিরে যাবে, তা বড়ই অশোভন।”
অবিলম্বে এক টুকরি মাটি
এনে পারসিকেরা মহানবীর দূতের মাথায় চাপিয়ে দিল। সকৌতুকে সম্রাট খসরু বললেন,
“যাও, এ ভাবেই তোমরা পারসিকদের দাসত্ব করবে।”
সাহাবা সে মাটির
টুকরি আর মাথা থেকে নামালেন না। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পারস্য থেকে হিজাযে
উপস্থিত হলেন। মাথায় টুকরি, পরিশ্রান্ত
দেহ। কিন্তু মুখে প্রসন্ন হাসি। তিনি হাজির হলেন মহানবীর নিকট।
বললেন, “ইয়া
রাসূলাল্লাহ (সাঃ), আমি পারসিকদের
নিজ হাতে দেয়া মাটি মাথায় তুলে নিয়ে এসেছি।”
শুনে মহানবীর মুখমন্ডল
স্বর্গীয় হাসিতে দীপ্ত হয়ে উঠল। বললেন তিনি, “উত্তম, ইনশাআল্লাহ এটাই হবে। অচিরেই সে দেশের মাটি ইসলামের
সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেবে।”
মহানবীর এ
ভবিষ্যতবাণী অতি অল্প দিনেই অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবরূপ লাভ করলো। বিশাল
পারস্য সাম্রাজ্য নিঃশেষে মুসলমানদের করতলগত হলো। আর সম্রাট খসরুর বংশের
সর্বশেষ্ঠ প্রতাপশালী সম্রাট ইয়াজদগির্দ কপর্দকশূন্য কাংগাল সেজে রাজ-প্রাসাদ
থেকে পথে গিয়ে দাঁড়ালেন।
লেখকঃ আবুল আসাদ (আমরা সেই সে জাতি-প্রথম খন্ড)
No comments:
Post a Comment