উহুদের যুদ্ধে
রাসূলের (সাঃ)
বহু প্রিয় সাথী নিহত হলেন। সত্যের জন্য অকুন্ঠিত চিত্তে তাঁরা প্রাণ দিয়েছেন।
সত্যের আহবান তাঁদের উদ্বুদ্ধ করেছে অম্লান বদনে সকল দুঃখ কষ্ট সহ্য
করে প্রাণের শিখা অনির্বাণ জ্বালিয়ে রাখতে। মৃত্যু তাঁদের অমর লোকের সঙ্গীত
শুনায়। এ সঙ্গীতে সত্যের পরম আনন্দ তাঁরা লাভ করে। শত বিপদ আপদ শত মৃত্যু
পার হয়ে তাঁরা লাভ করেন জীবনের পূর্ণতা। উহুদের যুদ্ধ নবীন মুসলিমদের
এই সুযোগ দান করেছিল, মৃত্যুকে
বরণ করে অমৃতকে তাঁরা লাভ করেছিলেন। সে
এক চরম পরীক্ষার দিন। সংবাদ রটে গেল, এই যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শহীদ হয়েছেন। কিন্তু তাঁকে সেদিন তাঁর প্রিয়
সাথীগণ মানব প্রাচীর তুলে রক্ষা করেছিলেন।
রাসূলের (সাঃ) মিথ্যা
মৃত্যু সংবাদে একজন আনসার মহিলা ছুটে চললো মাঠের দিকে। এক জন লোককে দেখে
সে জিজ্ঞেস করলো, “রাসূল
কি অবস্থায় আছেন?”
লোকটি জানে রাসূল নিরাপদে
আছেন, তাই
প্রশ্নের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সে বলল “তোমার পিতা শহীদ হয়েছেন।”
মুহূর্তে বিবর্ণ হয়ে
উঠলো তাঁর মুখ। নিজেকে সংযত করে মহিলাটি জিজ্ঞাসা করল, “রাসূল কেমন আছেন, তিনি কি জীবিত?”
“তোমার ভাইও নিহত
হয়েছে।”
মহিলা আবার সেই একই
প্রশ্ন ব্যাকুল কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল। তখন সে আবার বলল, “তোমার স্বামীও শহীদ হয়েছেন।”
সকল শক্তি একত্র করে
মহিলা তিক্ত স্বরে বলল, “আমার
কোন পরমাত্মীয় মারা গেছে তা আমি জিজ্ঞেস করছিনে, আমাকে শুধু বল আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ
(সাঃ) কেমন
আছেন?” লোকটি
উত্তর দিলেন,“তিনি
নিরাপদেই আছেন।” মুহূর্তে
মহিলাটির বিবর্ণ মুখে আনন্দের আভাস দেখা দিল। উল্লসিত হয়ে সে বললো,
“আত্মীয় বন্ধুদের প্রাণদান
তবে ব্যর্থ হয়নি।”
ব্যর্থ হয় না। কোন
দিনই ব্যর্থ হয় না। একটি প্রাণের একটি পবিত্র জীবনের
আত্মহুতি সত্যের আলোক শিখা, সত্যের উদাত্তবাণীকে
আরও তীব্রতর আরও জ্যোতির্ময় করে তোলে।
মৃত্যু ভয় যাদের নেই,
সাহস ও অটল বিশ্বাস
যাদের বুকে, তাদের
জয় সুনিশ্চিত। ইসলামের প্রাথমিক যুগে একদল বিশ্বাসী ও নির্ভীক
মুসলমান সকল বাধা-বিপত্তি ও মৃত্যু ভয়কে তুচ্ছ করেছিল বলেই ইসলামের
প্রতিষ্ঠা সুদৃঢ় হয়েছে। আশার বাণী, শান্তির বাণী প্রচারিত হয়েছে।
আটলান্টিক থেকে
প্রশান্ত মহাসাগরের বক্ষদেশ পর্যন্ত ইসলামি শাষন ব্যবস্থা (খিলাফত)
প্রতিষ্ঠার বুনিয়াদ গড়ে উঠেছে শহীদী রক্তের পুণ্য স্রোতধারার উপর। ইসলাম
একটি অজেয় শক্তি। অন্যায়, অন্ধকার
ও অন্ধ
বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ।
লেখকঃ আবুল আসাদ
(আমরা সেই সে জাতি-প্রথম খন্ড)
No comments:
Post a Comment