Monday, December 31, 2018

জিহাদ থেকে বিরত রাখার জন্য আয়াত নাযিল করতে হলো

৬৩৫ সাল। নভেম্বর মাস। আরবে তখন ভীষণ দুর্ভিক্ষ। তার উপরে অবিশ্বাস্য রকমের গরম। বালুময় দেশ আরব। এই বালুর উপরই নামছে আগুনঝরা রৌদ্র। মরুভূমি-প্রান্তের শীর্ণ গাছগুলো ঝলসে যাচ্ছে। একদিকে দুর্ভিক্ষ, অন্যদিকে অসহ্য গরম, এই দুইয়ে মিলে গোটা আরবে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। এমনি সময়ে এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ এল মদীনায়। মারাত্মক সংবাদ। সিরিয়া থেকে সদ্য ফিরে আসা একদল ব্যাবসায়ী মহানবীকে (সাঃ) এসে জানাল, রোম সম্রাটের এক বিরাট বাহিনী জমায়েত হয়েছে সিরিয়া সীমান্তে। আরবের বিখ্যাত যোদ্ধা গোত্র গাসসান, লখম ও জুযাম গিয়ে মিশেছে ওদের সাথে। রোমান সম্রাটের ৪০ হাজার সৈন্য এদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে ছুটে আসছে। তাদের অগ্রবাহিনী আরব সীমান্তের 'বলকা' পর্যন্ত এসে গেছে। 

রোম সম্রাটের এমন একটা মতিগতি যে আছে এবং আরবের কিছু গোত্রও যে তাদের উস্কানি দিয়ে চলেছে এ খবর মদীনায় ইতোপূর্বেও এসেছে। সুতরাং এ খবর পেয়েই মদীনায় সাজ সাজ রব পড়ে গেল। কিন্তু এ যুদ্ধযাত্রা ছিল বিরাট ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। অথচ অধিকাংশেরই সংগতি ছিল তখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। ‍যুদ্ধযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় ঘোড়া, সাজ-সরঞ্জাম ইত্যাদিও তাদের ছিল না। মহানবী (সাঃ) যুদ্ধ ফান্ডে যথা সাধ্য দান করার জন্য সকলের প্রতি আহ্‌বান জানালেন। এ আহ্‌বানে সাড়া দিয়ে হযরত উসমান (রাঃ) ৩শউট দান করলেন, হযরত উমার ফারূক (রাঃ) দান করলেন তাঁর সম্পদের অর্ধেক। আর হযরত আবুবকর (রাঃ) দান করলেন তাঁর সব কিছু। এভাবে যাদের সাধ্য ছিল সবাই দান করলেন। কিন্তু সব প্রয়োজন তাতে পূরণ হলো না। অনেকের যুদ্ধযাত্রার সর্বনিম্ন প্রয়োজনও পূরণ হলো না। সুতরাং তাদেরকে তাবুক অভিযান থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত হলো। 

যারা যুদ্ধযাত্রা থেকে বাদ পড়ল তাদের খুশী হবারই কথা। বিশেষ করে মুনাফিক ও ইহুদীরা অসহ্য গরমে অকল্পনীয় পথ চলার কষ্টের কথা বলে মুসলমানদের বিভ্রান্ত ও ‍দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলার গোপন প্রচেষ্টায় রত ছিল। সুতরাং আর্থিক অনটন ও অসহ্য গরমের মধ্যে পথ চলার কষ্টের কথা স্মরণ করে যুদ্ধে যোগ দানের দায় থেকে অব্যহতি লাভ করায় তারা আনন্দিত হবে, এটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু মুসলমানদের প্রকৃতিই আলাদা। তাই উল্টোটাই ঘটল। যারা যুদ্ধ যাত্রার লিষ্ট থেকে বাদ পড়ল, তারা এসে মহানবীর (সাঃ) কাছে কেঁদে পড়ল। জিহাদে অংশ গ্রহণের সৌভাগ্য থেকে তারা কিছুতেই বঞ্চিত থাকতে চায় না। তাদেরই অন্যান্য ভাই যখন খোদাদ্রোহীদের সাথে মরণপণ সংগ্রামে রত থাকবে, তখন তারা গৃহকোণে নারীর মত বসে বসে সময় কাটাবে তা কিছুতেই হতে পারে না। তাদের জিহাদের ব্যাকুলতা দেখে স্বয়ং মহানবী (সাঃ) অভিভূত হয়ে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত কুরআনী আয়াত নাযিল হল তাদের সান্ত্বনা দেয়ার জন্য। কুরআনে ঘোষণা হল, “আর সেই লোকদের কোন গুণাহ নেই, যখন তারা তোমার কাছে এই উদ্দেশ্যে আসে যে, তুমি তাদেরকে বাহন দান করবে, আর তুমি বলছ, “আমার কাছে তো কিছুই নেই, যার উপর তোমাদের আরোহন করাই,” তখন তারা এমন অবস্থায় ফিরে যায় তাদের চোখ থেকে অশ্রুর ধারা বইতে থাকে এই অনুতাপে যে, তাদের ব্যয় করার কোন সম্বল নেই 

আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয়ার জন্য সদাপ্রস্তুত এমন মুসলমানরাই পূর্ব আটলান্টিকের নীল জলরাশি থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত ইসলামের ঝান্ডা উড্ডীন করেছিল। 

লেখকঃ আবুল আসাদ (আমরা সেই সে জাতি-প্রথম খন্ড)

No comments:

Post a Comment