বদর যুদ্ধের জোর
প্রস্তুতি চলছিল তখন মদীনায়। মক্কার দিক থেকে অহরহ খবর আসছে, বিপুল সজ্জা আর বিরাট বাহিনী
ছুটে আসছে মদীনার দিকে। কিন্তু সে তুলনায় মদীনায় যুদ্ধ প্রস্তুতি কিছুমাত্র
নেই। যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম যেমন স্বল্প, তেমনি মুসলিম যোদ্ধা সংখ্যাও নগণ্য। প্রতিটি সাহায্য প্রতিটি
সহায়তাকারীকেই তখন সাদরে স্বাগত জানানো হচ্ছে সেখানে। এমন সময়ে হুযায়ফা
মরুভূমির দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় মহানবীর (সাঃ) দরবারে গিয়ে হাজির হলেন।
তিনি গাতফান গোত্রের আবস খান্দানের লোক।
মুসলিম তিনি। কুফরের সাথে ইসলামের শক্তি পরীক্ষার প্রথম মহাসাগরে অংশ নেয়ার আকুল বাসনা নিয়ে তিনি মদীনায়
এসেছেন। পথের কত বিপদ মাড়িয়ে, বাধার কত দুর্লঘ্য
দেয়াল পেরিয়ে তিনি এসে পৌঁছেছেন মদীনায়। মদীনায় যুদ্ধ আয়োজন দেখে তাঁর চোখ মন জুড়িয়ে গেল।
শ্রান্ত-ক্লান্ত দেহে
পরম প্রশান্তি নিয়ে হুযাইফা দরবারে নববীতে গিয়ে বসলেন। কুশল বার্তা দিতে গিয়ে মহানবীকে
(সাঃ) তিনি পথের বিপদ আপদ ও অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। তিনি বললেন,
“পথিমধ্যে কুরাইশরা
আমাকে আটক করে বলে মুহাম্মাদের কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই।”
আমি বললাম, “মুহাম্মাদের কাছে নয়, মদীনায় যাচ্ছি।” অবশেষে তারা বলল, “ঠিক আছে, তোমাকে ছাড়তে পারি। কিন্তু তোমাকে
কথা দিতে হবে যে, মদীনায়
গিয়ে মুহাম্মাদের পক্ষে আমাদের বিরুদ্ধে তুমি যুদ্ধে যোগ দেবে না।”
“আমি তাদের এ শর্তে
রাজী হয়েই তাদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে মদীনায় এসেছি।”
হুযাইফার শেষ কথাটি
শুনেই মহানবী (সাঃ) চোখ তুলে তাঁর দিকে চাইলেন। বললেন, “তুমি কথা দিয়েছ তাদের যে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেবে না তুমি?”
হুযাইফা স্বীকার
করলেন। মহানবী (সাঃ) তখন তাঁকে বললেন, “তুমি তোমার প্রতিশ্রুতি পালন কর। গৃহে ফিরে যাও।
সাহায্য ও বিজয় আল্লাহর হাতে। আমরা তাঁর কাছেই তা চাইব।”
হুযাইফার চোখে নেমে
এল আঁধার। আশা ভংগের দুঃখ, জিহাদে
যোগ দিতে না পারার বেদনায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। কিন্তু উপায় নেই। মহানবীর
(সাঃ) কাছে প্রতিশ্রুতি ভংগের প্রশ্রয় পাবার নেই কোন সামন্য উপায়। হুযাইফার
চোখের সামনেই মদীনা থেকে যুদ্ধযাত্র হলো বদরের দিকে। আর মহানবীর (সাঃ) নির্দেশ শিরে নিয়ে হুযাইফা পা
বাড়ালেন বাড়ীর পথে।
লেখকঃ আবুল আসাদ (আমরা সেই সে জাতি-প্রথম খন্ড)
No comments:
Post a Comment