অনেকদিন আগের কথা। তখন খলিফা
মাহমুদ গজনভীর আমল। খলিফা মাহমুদ রাতের বেলায় ঘুরে ঘুরে জনসাধারণের খোজ-খবর নিতে পছন্দ করতেন। আগের দিনে আজকের মতো
এতো সরকারী পাইক-পেয়াদা ও পুলিশ ছিলো
না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজা বাদশাগণ জনসাধারণের অবস্থা সম্পর্কে বেখবর ছিলেন। উজির নাজির, আমীর ওমরাহ ও অন্যান্য রাজ কর্মচারীরা জনগনের
উপর যুলুম অত্যাচার করতো, ঘুষ খেতো এবং মিথ্যা খবর পৌঁছাতো।
এ
কারণেই যেসব রাজা বাদশাহ জনগণের অবস্থা ভালো করে জানতে চাইতেন তারা প্রায়ই রাতের
বেলায় রাজকীয় পোষাক পাল্টিয়ে গরীব-মিসকিন ও ভিক্ষুক দরবেশ কিংবা নৈশ
শ্রমিকের পোষাক পরে বের হয়ে পড়তেন ও ঘুরে ঘুরে শহরের অবস্থা দেখতেন। বাজারে
জিনিসপত্রের দাম জিজ্ঞেস করতেন, যদি
কারো ঘর থেকে কান্নাকাটি ও ফরিয়াদ শুনতে পেতেন তার কারণ তল্লাশী করতেন। যদি
কোথাও জনতার জটলা দেখতে পেতেন ঢুকে পড়তেন সেখানে এবং খোঁজ নিতেন। এছাড়া
মসজিদ-মাদ্রাসা, সভা
সমিতি, ওয়াজ
মাহফিল প্রভৃতি জনসমাবেশে ঢুকে পড়ে জনগণের সুখ-দুঃখ ও অভাব-অভিযোগের খবর
নিতেন। জনগণ কি চায়, কি
বলে, সরকারী কর্মচারীদের
বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আছে কিনা সবই জনগণের মুখ থেকে গোপনে জেনে নিয়ে
যথাবিহিত প্রতিকার করতেন। মোটকথা তারা জনগণের অবস্থা সরাসরি জেনে নিয়ে কর্মচারীদের
সাবধান করতেন। নির্দেশ জারী করতেন ও সুখ-সুবিধার ব্যবস্থা
করতেন। আর এভাবেই
তারা দেশ থেকে অন্যায় অবিচার দূর করে জনগণের কাছে প্রিয় ও
সন্মানিত হতেন।
রাজা
বাদশাহদের রাত্রিকালীন ঘুরাফেরার বহু কিচ্ছা কাহিনী ইতিহাসে বর্ণিত আছে। আমাদের এ
কিচ্ছাটিও তৎকালীন পারস্য ও আফগানিস্তানের খলিফা সুলতান মাহমুদ গজনী
সম্পর্কে। তাহলে এসো কিচ্ছাটি তোমাদের শুনাই।
একরাতে
খলিফা মাহমুদ শ্রমিকের পোষাক পরে একাকী গজনী শহর পরিদর্শনে বের হলেন। শীতের রাত
হওয়ায় রাস্তাঘাট জনশূন্য ছিল। জনসাধারণের ঘরবাড়ির দরজা বন্ধ। রাস্তায়
কদাচিত ফকীর, মিসকিন,
পথচারী বা কুকুর
দেখা গেলো। খলিফা ইচ্ছে করলেন শহরের আশেপাশের এলাকাও একবার ঘুরে দেখবেন
এবং পাহারাদার, দারোগা
ও কতোয়াল ঠিকমতো কাজ করছে কিনা খোঁজ নেবেন।
খলিফা
মাহমুদ এক শূন্য ময়দানে এসে উপস্থিত হলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন চার পাঁচজন
লোক জটলা বেধে ফিসফস করে কথা বলছে। খলিফা মাহমুদ তাদের পাশ দিয়ে চলে যেতে
উদ্যত হলে তারা তার পথরোধ করে দাঁড়ালো এবং বললো দাঁড়াও দেখি, কে তুমি? কোথায় যাচ্ছো?
খলিফা
মাহমুদ জবাব দিলেন বাবা, আমিও
তোমাদের মতোই মানুষ। তোমাদের সাথে আমার কোন কাজ নেই। তোমাদের কাজে আমি
নাক গলাবো না, তোমরা
অযথা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করো না। চারজনের একজন বললো, বেশ ভালো কথা। আমাদের কথা বলার সময় নেই। পকেটে
কতো টাকা আছে দেখি?
সুলতান মাহমুদ
হাসলেন ও বললেন, যদি
পকেটে টাকাই থাকতো তাহলে এরাতে শহরে না বেরিয়ে ঘরে বসে শান্তিতে ঘুমাতাম। আমি এখন
টাকার খোঁজে বের হয়েছি। কিন্তু আমার কাজে তোমাদের কি?
ওরা
বললো, বাহবা,
তুইও দেখছি আমাদেরই
মতো। বেশ ভালো কথা। দেখা যাক যদি চালাক চুতুর হয়ে থাকিস তাহলে আমাদের
সঙ্গী হতে পারিস। আমরাও এখন একই ফিকির করছিলাম যে, টাকা কোথায় মিলবে? বুঝতেই পারছিস আমরাও বেকারের দল। রুটিরুজি নেই। কোথায়
চুরি করা যায় এনিয়েই আমাদের শলা পরামর্শ। তবে কাজটি বড়ই কঠিন। দেয়াল
টপকাতে হবে, সিঁদ
কাটতে হবে, দরজা জানালা
কলা কৌশলে খুলতে হবে, সাড়া
শব্দ করা যাবেনা, পালানোর
পথও খোলা রাখতে হবে ইত্যাদি। ঘরের মালিক জেগে যেতে পারে,
তার ডাকে পুলিশ
চৌকিদার ছুটে আসবে। বড়ই বিপদ ও মুশকিলের কাজ এটি। মোটকথা অনেক সাহস ও বুদ্ধি
দরকার। তোর এসব কিছু আছে কি?
সুলতান
মাহমুদ জীবনে আর কখনো এধরনের চোর বাটপারের সঙ্গ পাননি। তাই সখ জাগলো ওদের সঙ্গী
হতে। কারণ এদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা দরকার। তাই জবাব দিলেন,
কি করতে পারবো বলতে
পারছিনা, আগে
কখনো এ কাজ
করিনি, তবে
আমাকে যদি নিতে চাও আমি সঙ্গে থাকতে রাজী, সাহায্য করবো। আর নিতে
রাজী না হলে নিজের পথেই এগিয়ে যাবো। চোরের দল বললো, না, এ হতে পারে না। এখন যেহেতু তুই আমাদের চিনে ফেলেছিস
তোকে ছেড়ে দিতে পারি না। হয়তো বা পুলিশ চৌকিদারদের গিয়ে খবর দিবি আর ওরা
ছুটবে আমাদের পিছু। তোর হাত পা বেধে দূরে কোন এক জায়গায় ফেলে রাখবো যাতে কেউ
তোর খবর না পায়। যদি আমার সাথে যেতে চাস তাহলে এমন কোন কাজ জানা থাকতে
হবে যা আমাদের কাজে লাগবে। তা না হলে এমন নাদুস নুদুস শরীরের শরীক লোক
দরকার নেই আমাদের। অনর্থক ভাগ বসাবি আমাদের মালে।
খলিফা
মাহমুদ বললো, আজব
বিপদেই না পড়লাম। ঠিক আছে, কি কাজ
জানা থাকলে চলবে। তোমাদের তো কারখানা নেই যে দক্ষ কারিগর দরকার হবে। তোমাদের
কাজ হলো দেয়াল টপকানো, সিঁদ
কাটা, বেড়া
কাটা ও মানুষের মাল নিয়ে পালানো। এ কাজে সাহায্য করতে আমার
অসুবিধা হবে না।
চোরের
দল হাসলো এবং বললো, এতো
সহজ মনে করিস না। আমাদের প্রত্যেকেই কোন না কোন ফন্দী ও বুদ্ধি জানি। আর এসবের মাধ্যমেই নিরাপদে
কাজ সেরে আসি।
খলিফা
মাহমুদ জিজ্ঞেস করলেন, সে
আবার কেমন? তাহলে
খুলেই বলো।
একজন
বললো আমার বৈশিষ্ট্য হলো আমার কান দুটি। যখন কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ওঠে তখন
জানি কি বলতে হবে। চোর দেখে কুকুরের ঘেউ ঘেউ আর উপোসে ঘেউ ঘেউয়ের মধ্যে আমি
তফাৎ বুঝতে পারি। সুতরাং অবস্থা বুঝেই ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দোস্তদের জানিয়ে
দেই।
দ্বিতীয়
চোর বললো, আমার
কাজ হলো চোখে। রাতের অন্ধকারেও যদি কাউকে দেখি তাহলে দিনের আলোতে সে যে
কোন পোষাকেই থাকুক না কেনো তাকে চিনতে পারবো। চুরির মাল বিক্রি করতে
গেলে এ জ্ঞানটি কাজে লাগাই, ধরা
পড়ার ভয়
থাকে না। মালিক চিনেই গা ঢাকা দেয়া যায়।
তৃতীয়
চোর বললো, আমার কলাকৌশল
আমার হাতে। অনায়াসে আমি দেয়াল, বেড়া
ও দালান ছিদ্র করতে পারি। দরজা জানালা খোলা আমার জন্য কিছুই না। কোন
আওয়াজই হয় না।
চতুর্থ
চোর জানালো,
আমার গুন হলো নাকে।
মাটির গন্ধ নিয়েই বুঝতে পারি কোথাকার মাটি। সোনার দোকানের মাটি, কাপড়ের দোকানের মাটি বা গৃহস্তের ঘরের
মাটি-সবই ঘ্রাণ শুকে চিনতে পারি।
এবার
পঞ্চম চোর বললো আমার গুন আমার হাতের পাঞ্জা। এ দিয়ে দেয়াল টপকানো বা ছাদে ওঠার জন্য
আমি এমনভাবে রশির হুক নিক্ষেপ করতে পারি যে, রশির কাঁটা শক্তভাবে বিঁধে যায়। তখন
সবাই রশি বেয়ে সহজে উঠে যেতে পারি।
এরপর
চোরের দল খলিফা মাহমুদ কে জিজ্ঞেস করলো, এখন তোকে যদি আমাদের সাথে নেই আমাদের কি ফায়দা হবে?
তোর এমন কি গুন আছে
যে, আমাদের
কাজে আসবে?
সুলতান
মাহমুদ একটু ভেবে বললেন, তোমাদের
গুন ও কলাকৌশল বেশ কাজের নিঃসন্দেহ। কিন্তু আমি যা জানি
এগুলোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। তোমরা যা জানো তা চুরিতে ধরা না পড়া পর্যন্তই
কাজে লাগে। যদি পুলিশ চৌকিদার কিংবা বাড়ির মালিকের হাতে ধরা পড়ো তখন এসবের
একটিও তোমাদের উপকারে আসবে না। কিন্তু আমি যা জানি তা খুবই তাজ্জবের
বিষয়। আমার গুন আমার দাড়ির মধ্যে। যদি কোন অপরাধী, গোনাহগার পুলিশ চৌকিদার, এমনকি জল্লাদের হাতেও পড়ে আমার দাড়িতে
নাড়া দিলেই সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি ও মাফ।
সুলতান
মাহমুদের কথা শুনামাত্রই চোরের দল খুশিতে লাফিয়ে উঠলো এবং বললো, মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ। আসলেই
তোর গুন আমাদের সবার সেরা। তোর দাড়ির হাযার প্রসংশা। এমন দাড়ি আমাদের দরকার।
তুই’ই
আমাদের রইস, আমাদের
সর্দার ও নেতা হওয়ার উপর্যুক্ত। বরং আমরা তোকে সবচেয়ে বেশী অংশ দিতেও রাজী। তুই
আমাদের সর্দার হলে নিশ্চিন্তে চুরি-ডাকাতি করতে পারবো। আর দেরী নয়,
চলো সবাই।
এই
বলেই সবাই মিলে ডান পাশের রাস্তা ধরে চললো সামনের দিকে।
সামান্য পথ চলতেই এক কুকুর দেখা গেলো। চোরদের দেখে কুকুর ঘেউ ঘেউ শুরু
করলো।
কানের
গুণবিশিষ্ট চোর কুকুরের আওয়াজ শুনে জানালো, কুকুর বলছে, আমাদের দলে একজন মহান ব্যাক্তি রয়েছে।
চোরেরা
সমস্বরে বললো, আমাদের
নয়া দোস্তের কথাই বলছে- তার দাড়ি যে মুক্তির দুত! চোরের দল অবশেষে একটি বাড়ির সামনে
গিয়ে দাঁড়ালো। বাড়িটির দেয়াল বেশ ছোট। দলের একজন বললো, এ দেয়াল ডিঙ্গানো খুবই সহজ। তার কথায়
নাকের গুনবিশিষ্ট
চোর বাড়ির মাটির ঘ্রাণ নিলো এবং বললো, কোন ফায়দা নেই। এবাড়ী এক গরীব বিধবার। কিছুই নেই বুড়ির।
এরপর
ঘুরতে ঘুরতে এক উঁচু দেয়াল বিশিষ্ট বাড়ির সামনে তারা উপস্থিত হলো।
হাতের কঠিন পাঞ্জার অধিকারী চোরটি তখন দেয়াল টপকানোর রশি সুকৌশলে দেয়ালের
মাথায় আটকে দিলে সবাই দেয়াল টপকিয়ে বাগানে ঢুকে পড়লো। তারা দালানের কাছে
যেতেই নাকের গুণী মাটির গন্ধ শুঁকে বললোঃ বেশ ভাল জায়গাই খুঁজে পেয়েছি।
এখানে অলঙ্কার, সোনা-রুপা
ও মণি-মাণিক্যের
ভাণ্ডাড় রয়েছে।
এরপর
বাহুগুণের চোর একটি অন্ধকার ও নিরাপদ স্থান বেছে নিয়ে দেয়াল খুড়ে সিঁদ
কাটলো। সিঁধ বেয়ে পৌছে গেলো অলংকারাদির স্থানে। এরপর যতো পারলো
সোনা-রুপা, মণি-মাণিক্য
ও মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। এরপর সবাই দলবেঁধে
নিরাপদ ও নিঃশব্দে চলে এলো শহরের বাইরে দূরবর্তী এক পরিত্যক্ত বাড়ীতে।
ঐখানে চুরির যাবতীয় মাল গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দিলো। রাত তখন প্রায় শেষ হয়ে
আসছে। সবাই ঠিক করলো, এখন
সবাই যার যার আবাসে চলে যাবে এবং আগামী রাতে এসে ফুরসতমতো
ভাগ বাটোয়ারা করবো।
তবে একজনকে দিনের বেলায় এখানে ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে পাহারা দিতে হবে। তারা সুলতান মাহমুদকে
বললো এপর্যন্ত আমাদের কাজ নিরাপদেই সম্পন্ন হলো। যাহোক তুই কাল রাতে এখানে
আসবি তোর ভাগও দেয়া হবে।
খলিফা
মাহমুদ স্থানটি চিহ্নিত করলেন এবং চোরদের যাবতীয় গোপন তথ্য ও রহস্য জেনে
নিলেন। তিনি চোরদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে এলেন শাহী প্রাসাদে। সকাল
বেলা সংশ্লিষ্ট উজিরকে ডেকে রাতের সব ঘটনা খুলে বললেন। পরের সন্ধ্যায় সুলতানের
নির্দেশে কয়েকজন রাজকর্মচারী ও সৈন্য যথাস্থানে সময়মতো হাযির হয়ে চুরির
ধনসম্পদসহ চোরদের হাতে নাতে ধরে নিয়ে এলো ও আদালতে সোপর্দ করলো।
চোরের
দল অবস্থা বেগতিক দেখে জানের ভয়ে কম্পমান। যথাসময়ে অন্যান্য অপরাধীদের
সাথে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো। কাজী সভাসদদের উদ্দেশ্যে
বললেন, জনগণ
এই নিশাচোরদের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এখন অন্যান্য চোরদের শিক্ষার জন্য এদের এমন শাস্তির
নির্দেশ দেবো যা স্মরনীয় হয়ে থাকবে। কাজী জল্লাদ ডাকার হুকুম করলেন।
জল্লাদ
তখনো এসে উপস্থিত হননি। খলিফা মাহমুদ গজনভী তার শাহী পোষাক
পরিধান করে এজলাসে উপস্থিত হলেন এবং স্বীয় আসনে উপবেশন করলেন। খলিফা
মাহমুদকে দেখেই চোখের গুণসম্পন্ন চোরের টনক নড়লো। গতরাতে তাদের সঙ্গী চোরই যে দিনের
বেলায় খলিফা মাহমুদ সে বুঝে ফেললো। তখন বন্ধুদের বললো, গতরাতে যিনি আমাদের সাথে ছিলেন এবং যার
দাড়ি খুব গুনের সেই লোকই হচ্ছেন এই সুলতান মাহমুদ।
কানের
বিশেষ গুনবিশিষ্ট চোরও তখন একথার সত্যতা স্বীকার করে বললো,
কুকুর ঘেউ ঘেউ করে যে
মহান ব্যক্তির
খবর দিয়েছিল তিনি আসলে এই লোকই ছিলেন।
এমন
সময় জল্লাদ এসে উপস্থিত। কাজী চোরদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি তোমাদের গুনাহখাতার
কথা স্বীকার করছো?
চোরেরা
বললো জী হাঁ, মান্যবর
কাজী। আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি। তবে যদি ন্যায় বিচার করতে চান তাহলে আমাদের
সবাইকে শাস্তি দিন। গতরাতে আমরা ছয়জন ছিলাম। সবাই মিলে ঐ রত্নভাণ্ডার
চুরি করেছি। এখন আমরা পাঁচজন মাত্র।
কাজী
বললেন, ঐ
লোকের পরিচয় বলো।
তারা
বললো, একটু
সময় দিন, আমাদের
একেক জন একেক বিশেষ গুনের ও দক্ষতার অধিকারী এবং সবাই নিজ নিজ দক্ষতা ও
কলাকৌশল কাজে লাগিয়েছি। এখন আরেকটি গুন ও দক্ষতা কাজে লাগানোর অপেক্ষা করছি।
নিশ্চয়ই কেউ রয়েছেন যিনি আমাদের নাযাত দিতে পারেন।
কাজী
বললেন, এসব
বুঝিনে, আমি
শাস্তিদানের জন্য জল্লাদকে হুকুম দিতে বাধ্য। খলিফা ছাড়া আর কারো ক্ষমতা নেই ক্ষমা
করার।
খলিফা
মাহমুদ তখন মুচকি হাসছিলেন। সবাই নিরবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। চোরের
দল যে গোপন কথা জানতো তা মুখে আনার সাহস পাচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত চোরদের
একজন নিরুপায় হয়ে জোর গলায় এ পংতিটি আবৃতি করলোঃ
“আমরা
সবাই করলাম উজাড় যতো গুণের হাঁড়ি
ওগো মহান, দিননা নাড়া আপনার গুনের দাড়ি।”
ওগো মহান, দিননা নাড়া আপনার গুনের দাড়ি।”
খলিফা
মাহমুদ এ কবিতা শুনে হেসে উঠলেন। তারপর বললেন, যেহেতু চোরের দল অপরাধ
স্বীকার করেছে এবং চুরির মালমাত্তাও পাওয়া গেছে, এবারের মতো ওদের মাফ করে
দাও। তবে ওদের তওবা করতে হবে যে আর চুরি ডাকাতি করবে না। চোরের দল তওবা
করলো। এরপর খলিফার নির্দেশে তাদের যারযার গুন ও দক্ষতা অনুসারে বিশেষ দায়িত্বে নিয়োগ
করা হলো। খলিফা মাহমুদ তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, একবার যেহেতু কথা দিয়েছিলাম সেহেতু মাফ করে
দিলাম। কিন্তু এরপর থেকে যেমন অপরাধ তেমন শাস্তি অবশ্যই দেয়া হবে।
লেখকঃ
মোঃ ফরিদ উদ্দিন খান (সুলতান মাহমুদের দাড়ি)
গল্পটি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির “মসনবী” কাব্যগ্রন্থ থেকে অনুবাদ কৃত।
গল্পটি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির “মসনবী” কাব্যগ্রন্থ থেকে অনুবাদ কৃত।
No comments:
Post a Comment