Saturday, July 13, 2019

সূরা আল বাকারা

[মদীনায় অবতীর্ণ- আয়াত ২৮৬, রুকু ৪০]

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে-

১. আলিফ লা-ম মী-ম।

২. (এই) সেই (মহা) গ্রন্থ (আল কোরআন), তাতে (কোনো) সন্দেহ নেই, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে (এই কিতাব কেবল) তাদের জন্যেই পথপ্রদর্শক,

৩. যারা গায়েবের ওপর ঈমান আনে, যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, তাদের আমি যা কিছু দান করেছি তারা তা থেকে (আমারই নিদের্শিত পথে) ব্যয় করে,

৪. যারা তােমার ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার ওপর ঈমান আনে- (ঈমান আনে) তােমার আগে (অন্য নবীদের ওপর) যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার ওপর, (সর্বোপরি) তারা পরকালের ওপরও দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।

৫. (সত্যিকার অর্থে) এ লােকগুলােই তাদের মালিকের (দেখানাে) সঠিক পথের ওপর রয়েছে এবং এরাই হচ্ছে সফলকাম,

৬. যারা (এ বিষয়গুলাে) অস্বীকার করে, তাদের তুমি (পরকালের কথা বলে) সাবধান করাে আর না করাে, (কার্যত) উভয়টাই (তাদের জন্যে) সমান (কথা), এরা কখনাে ঈমান আনবে না।

৭. (ক্রমাগত কুফরী করার কারণে) আল্লাহ তায়ালা তাদের মনের ওপর ও শােনার ওপর মােহর মেরে দিয়েছেন, এদের দেখার ওপরও (এক ধরনের) আবরণ পড়ে আছে (মূলত), তাদের জন্যে (পরকালের) কষ্টদায়ক শাস্তি রয়েছে।

৮. মানুষদের মাঝে কিছু লােক এমনও আছে যারা (মুখে) বলে, আমরা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর ঈমান এনেছি, (আসলে) এরা (মােটেই) ঈমানদার নয়।

৯. (মুখে ঈমানের দাবী করে) এরা আল্লাহ তায়ালা ও তার নেক বান্দাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে, (মূলত এ কাজের মাধ্যমে) তারা অন্য কাউকে নয়, নিজেদেরই ধােকা দিয়ে যাচ্ছে, যদিও (এ ব্যাপারে) তারা কোনাে প্রকারের চৈতন্য রাখেনা।

১০. (আসলে) এদের মনের ভেতর রয়েছে মারাত্মক ব্যাধি, (প্রতারণার কারণে) অতপর আল্লাহ তায়ালা (এদের সে) ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব, কেননা, তারা মিথ্যা বলছিলাে।

১১. তাদের যখন বলা হয়, তােমরা (এই শান্তিপূর্ণ), যমীনে অশান্তি (ও বিপর্যয়) সৃষ্টি করাে না, তখন তারা বলে, না, আমরাই তাে হচ্ছি বরং সংশােধনকারী।

১২. জেনে রেখাে এরাই হচ্ছে (যমীনে যাবতীয়) বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, যদিও তারা (এ ব্যাপারে) কোনাে চৈতন্য রাখে না।

১৩. তাদের যখন বলা হয়, অন্য লােকেরা যেমন ঈমান এনেছে তােমরাও তেমনিভাবে ঈমান আনাে, তারা বলে (হে নবী, তুমি কি চাও), আমরাও নির্বোধ লােকদের মতাে ঈমান আনি? (আসলে) নির্বোধ তাে হচ্ছে এরা নিজেরাই, যদিও তারা (এ কথাটা) জানে না!

১৪. (মােনাফেকদের অবস্থা হচ্ছে,) তারা যখন ঈমানদার লােকদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, (আবার) যখন একাকী তাদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তাে তােমাদের সাথেই আছি, (ঈমানের কথা বলে ওদের সাথে) আমরা ঠাট্টা করছিলাম মাত্র!

১৫. (মূলত) আল্লাহ তায়ালাই তাদের সাথে ঠাট্টা করে যাচ্ছেন, আল্লাহ তায়ালা তাদের অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, তারা তাদের বিদ্রোহে উদ্ভ্রন্তের ন্যায়ই ঘুরে বেড়াচ্ছে।

১৬. এরা (জেনে বুঝে) হেদায়াতের বিনিময়ে গােমরাহী কিনে নিয়েছে, তাদের এ ব্যবসাটা (কিন্তু) মােটেই লাভজনক হয়নি এবং এরা সঠিক পথের অনুসারীও নয়।

১৭. এদের উদাহরণ হচ্ছে সে (হতভাগ্য) ব্যক্তির মতাে, যে (অন্ধকারে) আগুন জ্বালাতে চাইলাে, যখন তা তার গােটা পরিবেশটাকে আলােকোজ্জ্বল করে দিলাে, তখন (হঠাৎ করে) আল্লাহ তায়ালা তাদের (কাছ থেকে) আলােটুকু ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদের (এমন) অন্ধকারে ফেলে রাখলেন যে, তারা কিছুই দেখতে পেলাে না।

১৮. (এদের অবস্থা হচ্ছে,) এরা (কানেও) শোনে না, (চোখেও) দেখে না, (মুখ দিয়ে) কথাও বলতে পারে না, অতএব এসব লােক (সঠিক পথের দিকে) ফিরে আসবে না।

১৯. অথবা (এদের উদাহরণ হচ্ছে), আসমান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির মতাে, এর মাঝে রয়েছে (আবার) অন্ধকার, মেঘের গর্জন ও বিদ্যুতের চমক, বিদ্যুতের গর্জন ও মৃত্যুর ভয়ে এরা নিজেদের কানে নিজেদের আংগুল ঢুকিয়ে রাখে (এরা জানে না), আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের (সকল দিক থেকেই) ঘিরে রেখেছেন।

২০. মনে হয় এখনই বিদ্যুত এদের চোখকে নিষ্প্রভ করে দেবে; (এ আতংকজনক অবস্থায়) আল্লাহ তায়ালা যখন এদের জন্যে একটু আলাে জ্বালিয়ে দেন তখন এরা তার মধ্যে চলতে থাকে, আবার যখন তিনি তাদের ওপর অন্ধকার চাপিয়ে দেন তখন এরা (একটু থমকে) দাঁড়ায়; অথচ আল্লাহ তায়ালা চাইলে (সহজেই) তাদের শােনার ও দেখার (ক্ষমতা) ছিনিয়ে নিতে পারতেন; নিশ্চয়ই তিনি সর্বশক্তিমান।

২১. হে মানুষ, তােমরা মহান আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব (স্বীকার) করাে, যিনি তােমাদের এবং তােমাদের আগে যারা ছিলাে তাদের (সবাইকে) পয়দা করেছেন, আশা করা যায় (এর ফলে) তােমরা (যাবতীয় সংকট থেকে) বেঁচে থাকতে পারবে।

২২. তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি যমীনকে তােমাদের জন্যে শয্যা বানালেন, আসমানকে বানালেন ছাদ এবং আসমান থেকে পানি পাঠালেন, তার সাহায্যে তিনি নানা প্রকারের ফলমূল উৎপাদন করে তােমাদের জীবিকার ব্যবস্থা করলেন, অতপর তােমরা জেনে বুঝে (এ সব কাজে) আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে শরীক করাে না।

২৩. আমি আমার বান্দার ওপর যে কিতাব নাযিল করেছি, তার (সত্যতার) ব্যাপারে যদি তােমাদের কোনাে সন্দেহ থাকে তাহলে যাও- তার মতাে (করে) একটি সূরা তােমরাও (রচনা করে) নিয়ে এসাে, এক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তােমাদের আর যেসব বন্ধুবান্ধব রয়েছে তাদেরও (প্রয়ােজনে সহযােগিতার জন্যে) ডাকো, যদি তােমরা তােমাদের দাবীতে সত্যবাদী হও!

২৪. কিন্তু তােমরা যদি তা না করতে পারাে (এবং আমি জানি), তােমরা তা কখনােই করতে পারবে না, তাহলে তােমরা (দোযখের) সেই কঠিন আগুনকে ভয় করাে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, (আল্লাহ তায়ালাকে) যারা অস্বীকার করে তাদের জন্যেই (এটা) প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।

২৫. অতপর যারা (এ কিতাবের ওপর) ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের তুমি (হে নবী) সুসংবাদ দাও এমন এক জান্নাতের, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে; যখনি তাদের (এ জান্নাতের) কোনাে একটি ফল দেয়া হবে তখনি তারা বলবে, এ ধরনের (ফল) তাে ইতিপূর্বেও আমাদের দেয়া হয়েছিলাে, তাদের (মূলত) এ ধরনের জিনিসই সেখানে দেয়া হবে; তাদের জন্যে (আরাে) সেখানে থাকবে পবিত্র সহধর্মী ও সহধর্মিনী এবং তারা সেখানে অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে।

২৬. (সত্য প্রমাণের জন্যে) আল্লাহ তায়ালা মশা কিংবা তার চাইতে ওপরে যা কিছু আছে তার উদাহরণ দিতেও লজ্জাবােধ করেন না; যারা (আল্লাহর বাণীতে) বিশ্বাস স্থাপন করে তারা জানে, এ সত্য তাদের মালিকের পক্ষ থেকেই এসেছে, আর যারা (আগেই) সত্য অস্বীকার করেছে তারা (একে না মানার অজুহাত দিতে গিয়ে) বলে, আল্লাহ তায়ালা এ উদাহরণ দ্বারা কি বুঝাতে চান? (আসলে) একই ঘটনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা অনেক লােককে গােমরাহীতে নিমজ্জিত করলেও বহু লােককে তিনি (আবার) এ দিয়ে হেদায়াতের পথও দেখান, আর কতিপয় পাপাচারী ব্যক্তি ছাড়া তিনি তা দিয়ে অন্য কাউকে গােমরাহীতে নিমজ্জিত করেন না।

২৭. (এরা হচ্ছে সে সব লােক) যারা আল্লাহর ফরমান। মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তা ভংগ করে, (ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে) আল্লাহ তায়ালা যেসব সম্পর্ক (-এর ভিত) মযবুত করতে বলেছেন তা তারা ছিন্ন করে, (সর্বোপরি) যমীনে অহেতুক বিপর্যয় সৃষ্টি করে; এরাই হচ্ছে (আসল) ক্ষতিগ্রস্ত।

২৮. তােমরা আল্লাহকে কিভাবে অস্বীকার করবে? অথচ তােমরা ছিলে মৃত, তিনিই তােমাদের জীবন দিয়েছেন, পুনরায় তিনি তােমাদের মৃত্যু দেবেন, অতপর (সর্বশেষে) তিনিই আবার তােমাদের জীবন দান করবেন এবং (এভাবেই) তােমাদের একদিন তার কাছে ফিরে যেতে হবে।

২৯. তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি এ পৃথিবীর সব কিছু তােমাদের (ব্যবহারের) জন্যে তৈরী করেছেন, অতপর, তিনি আসমানের দিকে মনোেনিবেশ করলেন এবং তাকে সাত আসমানে বিন্যস্ত করলেন, তিনি সবকিছু সম্পর্কেই সম্যক অবগত আছেন।

৩০. (হে নবী, স্মরণ করাে,) যখন তােমার মালিক (তার) ফেরেশতাদের (সম্বােধন করে) বললেন, আমি পৃথিবীতে (আমার) খলীফা বানাতে চাই; তারা বললাে, তুমি কি সেখানে এমন কাউকে (খলীফা) বানাতে চাও যে সেখানে, (বিশৃংখলা ও) বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং (স্বার্থের জন্যে) তারা রক্তপাত করবে, আমরাই তাে তােমার প্রশংসা সহকারে তােমার তাসবীহ পড়ছি এবং (প্রতিনিয়ত) তােমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি; আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমি যা জানি তােমরা তা জানােনা।

৩১. আল্লাহ তায়ালা অতপর (তাঁর খলীফা) আদমকে (প্রয়ােজনীয়) সব জিনিসের নাম শিখিয়ে দিলেন, পরে তিনি সেগুলাে ফেরেশতাদের কাছে পেশ করে বললেন, (তােমাদের আশংকার ব্যাপারে) তােমরা যদি সত্যবাদী হও (তাহলে) তােমরা আমাকে এ নামগুলাে বলাে তাে?

৩২. ফেরেশতারা বললাে (হে আল্লাহ তায়ালা), তুমি পবিত্র, আমাদের তাে (এর বাইরে আর) কিছুই জানা নেই যা তুমি আমাদের শিক্ষা দিয়েছাে; তুমিই একমাত্র জ্ঞানী, একমাত্র কুশলী।

৩৩. আল্লাহ তায়ালা (এবার) আদমকে বললেন, তুমি তাদের কাছে তাদের নামগুলাে বলে দাও, অতএব আদম (আল্লাহর নির্দেশে) তাদের (সামনে) তাদের নামগুলাে যখন (সুন্দরভাবে) বলে দিলাে, তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমি কি তােমাদের বলিনি যে, আমি আসমানসমূহ ও যমীনের যাবতীয় না দেখা বস্তু জানি এবং তােমরা যা কিছু প্রকাশ করাে আর যা কিছু গােপন করাে আমি তাও ভালােভাবে জানি।

৩৪. আল্লাহ তায়ালা যখন ফেরেশতাদের বললেন, তােমরা (সম্মানের প্রতীক হিসেবে) আদমের জন্যে সাজদা করাে, অতপর তারা (আল্লাহর আদেশে) আদমের সামনে সাজদা করলাে- শুধু ইবলীস ছাড়া; সে সাজদা করতে অস্বীকার করলাে এবং অহংকার করলাে এবং সে না-ফরমানদের দলে শামিল থেকে গেলাে।

৩৫. আমি বললাম, হে আদম, তুমি এবং তােমার স্ত্রী (পরম সুখে) এই বেহেশতে বসবাস করতে থাকো এবং এ (নেয়ামত) থেকে যা তােমাদের মন চায় তাই তােমরা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে আহার করাে, তােমরা এ গাছটির পাশেও যেও না, তা (না) হলে তােমরা (দুজনই) সীমালংঘনকারীদের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে।

৩৬. (কিন্তু) শয়তান (শেষ পর্যন্ত) সেখান থেকে তাদের উভয়ের পদস্থলন ঘটালাে, তারা উভয়ে (বেহেশতের) যেখানে ছিলাে সেখান থেকে সে তাদের বের করেই ছাড়লাে, আর আমি তাদের বললাম, তােমরা একজন আরেক জনের দুশমন হিসেবে এখান থেকে নেমে পড়াে, তােমাদের (পরবর্তী) বাসস্থান (হবে) পৃথিবী, সেখানে (একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তােমাদের জন্যে জীবনের (যাবতীয়) উপকরণ থাকবে।

৩৭. অতপর আদম তার মালিকের কাছ থেকে (হেদায়াত সম্বলিত) কিছু বাণী পেলাে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর ক্ষমাপরবশ হলেন, অবশ্যই তিনি বড়াে মেহেরবান ও ক্ষমাশীল।

৩৮. আমি (তাদের) বললাম, তােমরা সবাই (এবার) এখান থেকে নেমে যাও, তবে (যেখানে যাবে অবশ্যই সেখানে আমার পক্ষ থেকে তােমাদের কাছে (জীবন বিধান সম্পর্কিত) হেদায়াত আসবে, অতপর যে আমার (সেই) বিধান মেনে চলবে (তার কিংবা) তাদের কোনাে ভয় নেই, তাদের কোনাে প্রকার উৎকণ্ঠিতও হতে হবে না।

৩৯. আর যারা (আমার বিধান) অস্বীকার করবে এবং আমার আয়াতসমূহ মিথ্যা প্রতিপন্ন করে লাগামহীন জীবন যাপন করবে, তারা জাহান্নামের বাসিন্দা হবে, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে।

৪০. হে বনী ইসরাঈল (জাতি), তােমাদের ওপর আমি যেসব নেয়ামত দিয়েছি তােমরা সেগুলাে স্মরণ করাে, আমার (আনুগত্যের) প্রতিশ্রুতি তােমরা পূর্ণ করাে, আমিও (এর বিনিময়ে) তােমাদের (দুনিয়া ও আখেরাতের পুরস্কারের) প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবো এবং তােমরা একমাত্র আমাকেই ভয় করাে।

৪১. আমি (মােহাম্মদের কাছে) যা (কোরআন) নাযিল করেছি, তােমরা এর ওপর ঈমান আনাে, যা তােমাদের কাছে যা কিছু আছে তার সত্যায়নকারী, তােমরা কিছুতেই এর প্রথম অস্বীকারকারী হয়াে না এবং (বৈষয়িক স্বার্থে) সামান্য মূল্যে আমার আয়াতসমূহকে বিক্রি করাে না এবং তােমরা শুধু আমাকেই ভয় করাে।

৪২. তােমরা মিথ্যা দিয়ে সত্যকে পােশাক পরিয়ে দিয়ো না এবং সত্যকে জেনে বুঝে লুকিয়েও রেখাে না।

৪৩. তােমরা নামায প্রতিষ্ঠা করাে, যাকাত আদায় করাে, যারা আমার সামনে অবনত হয় তাদের সাথে মিলে তােমরাও আমার আনুগত্য স্বীকার করাে।

৪৪. তােমরা কি মানুষদের ভালাে কাজের আদেশ করাে এবং নিজেদের (জীবনে তা বাস্তবায়নের) কথা ভুলে যাও, অথচ তােমরা সবাই আল্লাহর কিতাব পড়াে; কিন্তু (কিতাবের এ কথাটি) তােমরা কি বুঝাে না?

৪৫. (হে ঈমানদার ব্যক্তিরা,) তােমরা সবর ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও; (যাবতীয় হক আদায় করে) নামায প্রতিষ্ঠা করা (অবশ্যই একটা) কঠিন কাজ, কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের কথা আলাদা।

৪৬. যারা জানে, একদিন তাদের সবাইকে তাদের মালিকের সামনাসামনি হতে হবে এবং তাদের (সবাইকে) তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে (তার জন্যে এটা কঠিন কিছু নয়)।

৪৭. হে বনী ইসরাঈল (জাতি), তােমরা আমার সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করাে যা আমি তােমাদের দান করেছি (সেই নেয়ামতের মধ্যে একটি ছিলাে), আমি তােমাদের সৃষ্টিকুলের ওপর প্রাধান্য দিয়েছিলাম।

৪৮. (হে ঈমানদার ব্যক্তিরা,) তােমরা সে দিনটিকে ভয় করাে যেদিন একজন আরেকজনের কোনােই কাজে আসবে না, একজনের কাছ থেকে আরেকজনের (পক্ষে সেদিন) কোনাে সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, (কাউকে ছেড়ে দেয়ার জন্যে) কারাে কাছ থেকে কোনাে মুক্তিপণ নেয়া হবে না- না তাদের (সেদিন) কোনাে রকম সাহায্য করা হবে!

৪৯. (স্মরণ করাে,) যখন আমি তােমাদের ফেরাউনের লােকদের (গােলামী) থেকে মুক্তি দিয়েছিলাম, তারা নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি দ্বারা তােমাদের যন্ত্রণা দিতাে, তারা তােমাদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করতাে এবং তােমাদের মেয়েদের (তারা) জীবিত রেখে দিতাে; তােমাদের মালিকের পক্ষ থেকে এতে তােমাদের জন্যে বড়াে একটা পরীক্ষা (নিহিত) ছিলাে।

৫০. (আরাে স্মরণ করাে,) যখন আমি তােমাদের জন্যে সমুদ্রকে দ্বিধাবিভক্ত করে দিয়েছিলাম, অতপর আমি তােমাদের (সমূহ মৃত্যুর হাত থেকে) বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি ফেরাউন ও তার দলবলকে (সমুদ্রে) ডুবিয়ে দিয়েছিলাম, আর তােমরা তা তাে (নিজেরাই) প্রত্যক্ষ করছিলে!

৫১. (আরাে স্মরণ করাে,) যখন মূসাকে আমি (বিশেষ একটি কাজের জন্যে) চল্লিশ রাত নির্ধারণ করে দিলাম, তার (যাওয়ার) পর তােমরা একটি বাছুরকে (মাবুদরূপে) গ্রহণ করে নিলে, (আসলে) তােমরা (ছিলে) ভীষণ যালেম!

৫২. অতপর আমি তােমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি এ আশায় যে, তােমরা আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করবে।

৫৩. (সে কথাও স্মরণ করাে,) যখন আমি মূসাকে কিতাব ও ন্যায় অন্যায়ের পরখকারী- (একটি মানদণ্ড) দান করেছি, যাতে করে তােমরা হেদায়াতের পথে চলতে পারাে।

৫৪. (আরাে স্মরণ করাে,) মূসা যখন তার নিজ লােকদের (কাছে এসে) বললাে, হে আমার জাতি, তােমরা (আমার অবর্তমানে) বাছুরকে মাবুদ হিসেবে গ্রহণ করে যে (বড়াে রকমের) যুলুম করেছো, তার জন্যে অবিলম্বে আল্লাহর দরবারে তাওবা করাে এবং তােমরা তােমাদের নিজেদের (শেরেকে অভিশপ্ত) নফসসমূহকে হত্যা করাে, এর মাঝেই আল্লাহর কাছে তােমাদের জন্যে কল্যাণ রয়েছে; অতপর আল্লাহ তায়ালা তােমাদের ওপর ক্ষমাপরবশ হবেন, (কারণ) তিনি বড়ােই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী।

৫৫. তােমরা যখন বলেছিলে, হে মূসা, আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখলে কখনাে তার ওপর ঈমান আনবাে না, তখন (এ ধৃষ্টতার শাস্তি হিসেবে) মুহূর্তের মধ্যেই বজ্র (-সম এক গযব) তােমাদের ওপর নিপতিত হলাে, আর তােমরা তার দিকে চেয়েই থাকলে (কিছুই করতে পারলে না)।

৫৬. অতপর (এই ধ্বংসকর) মৃত্যুর পর তােমাদের আমি পুনরায় জীবন দান করলাম, যাতে করে তােমরা (আমার) কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারাে।

৫৭. আমি তােমাদের ওপর মেঘের ছায়া দান করেছিলাম, 'মান্‌' এবং 'সালওয়া' (নামক খাবারও) তােমাদের জন্যে পাঠিয়েছিলাম; (আমি তােমাদের বলেছিলাম,) সে সব পবিত্র খাবার খাও, যা আমি তােমাদের দিয়েছি, তা তােমরা উপভােগ করাে, (নেয়ামত অবজ্ঞা করে) তারা আমার ওপর কোনাে অবিচার করেনি, (বরং এর দ্বারা) তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে।

৫৮. (স্মরণ করাে,) আমি যখন তােমাদের বলেছিলাম, তােমরা এই জনপদে ঢুকে পড়ো এবং তােমরা তার যেখান থেকেই ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দ্যে আহার করাে, (দম্ভ সহকারে প্রবেশ না করে) মাথানত করে ঢােকো, তােমরা ক্ষমার কথা বলবে, আমিও তােমাদের ভুল ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেবো এবং যারা ভালাে কাজ করে আমি (এভাবেই) তাদের (পাওনার অংক) বাড়িয়ে দেই।

৫৯. (সুস্পষ্ট হেদায়াত সত্ত্বেও) অতপর যালেমরা এমন কিছু ব্যাপার রদবদল করে ফেললাে, যা না করার জন্যেই তাদের বলা হয়েছিলাে, আমিও এরপর যারা যুলুম করলাে তাদের ওপর আসমান থেকে গযব নাযিল করলাম, (মূলত) এটা ছিলাে তাদের গুনাহর ফল।

৬০. (স্মরণ করাে,) যখন মূসা (আমার কাছে) তার জাতির লোকদের জন্যে পানি চাইলাে, আমি (তাকে) বললাম, তােমার হাতের লাঠি দিয়ে তুমি (এই) পাথরে আঘাত করাে, (আঘাত করা মাত্রই) সে পাথর থেকে বারােটি (পানির) নহর উৎপন্ন হয়ে গেলাে; প্রত্যেক গােত্রই নিজেদের (পানি পানের) ঘাট চিনে নিলাে; (আমি বললাম,) আল্লাহর দেয়া রেযেক থেকে তােমরা পানাহার করাে, তবে (কিছুতেই আমার) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িয়াে না।

৬১. (স্মরণ করাে,) তােমরা যখন মূসাকে বলেছিলে, হে মূসা, (প্রতিদিন) একই ধরনের খাবারের ওপর আমরা কিছুতেই (আর) ধৈর্য ধরতে পারবাে না, তুমি তােমার মালিকের কাছে বলাে যেন তিনি কিছু ভূমিজাত দ্রব্য তরিতরকারি, পেয়াজ, রসুন, ভুট্রা, ডাল উৎপাদন করেন, সে বললাে, তােমরা কি (আল্লাহর পাঠানো) এ উৎকৃষ্ট জিনিসের সাথে একটি তুচ্ছ (ধরনের) জিনিসকে বদলে নিতে চাও? (যদি তাই হয়) তাহলে তােমরা অন্য কোনাে শহরে সরে পড়াে, যেখানে তােমাদের এসব জিনিস যা তােমরা চাইবে, তা অবশ্যই পাওয়া যাবে, (আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করার ফলে) শেষ পর্যন্ত অপমান ও দারিদ্র তাদের ওপর ছেয়ে গেলাে; আল্লাহর গযব দ্বারা তারা আক্রান্ত হয়ে গেলাে, এটা এ কারণে (যে), এরা (ক্রমাগত) আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করতে থাকলাে এবং আল্লাহর নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করতে থাকলাে, আর এসব কিছু এজন্যই ছিলাে যে, তারা আল্লাহর সাথে না-ফরমানী ও সীমালংঘন করছিলাে।

৬২. নিসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে, যারা ইহুদী হয়ে গেছে, যারা খৃষ্টান এবং 'সাবী'- এদের যে কেউই আল্লাহর ওপর যথাযথ ঈমান আনবে, ঈমান আনবে পরকালের ওপর এবং ভালাে কাজ করবে, তাদের জন্যে তাদের মালিকের কাছে পুরস্কার রয়েছে এবং এসব লােকের (যেমন) কোনাে ভয় নেই, (তেমনি) তারা চিন্তিতও হবে না।

৬৩. (স্মরণ করাে,) যখন আমি তােমাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম (যে, তােমরা তাওরাত মেনে চলবে) এবং তূর পাহাড়কে আমি তােমাদের ওপর তুলে, ধরে (বলে) ছিলাম; যে কিতাব তােমাদের আমি দান করেছি তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরাে এবং তাতে যা কিছু আছে তা স্মরণ রেখাে, (এ উপায়ে) তােমরা হয়তাে (শয়তান থেকে) নিজেদের বাঁচাতে পারবে।

৬৪. অতপর তােমরা এ (ওয়াদা) থেকে ফিরে গেলে, (কিন্তু তা সত্ত্বেও) আমার অনুদান ও রহমত যদি তােমাদের ওপর না থাকতাে তাহলে তােমরা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যেতে।

৬৫. তােমরা তাে ভালাে করেই তাদের জানাে, যারা তােমাদের মধ্যে শনিবারে (আল্লাহর আদেশের সীমা) লংঘন করেছে, অতপর আমি তাদের (শুধু এটুকুই) বলেছি, যাও- (এবার) তােমরা সবাই অপমানিত বানর (-এ পরিণত) হয়ে যাও।

৬৬. এ (ঘটনা)-কে আমি সে সব মানুষদের- যারা তখন সেখানে (মজুদ) ছিলাে- আরাে যারা পরে আসবে, তাদের (সবার) জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক (ঘটনা) বানিয়ে দিয়েছি, যারা আল্লাহকে ভয় করে এমন লােকদের জন্যেও এ ঘটনা (ছিলাে) একটি উপদেশ।

৬৭. (আরাে স্মরণ করাে,) যখন মূসা তার জাতিকে, বললাে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (তাঁর নামে) তােমাদের একটি গাভী যবাই করার আদেশ দিচ্ছেন; তারা (এ কথা শুনে) বললাে (হে মূসা), তুমি কি আমাদের সাথে তামাশা করছাে? সে বললাে, আমি (তামাশা করে) জাহেলদের দলে শামিল হওয়া থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাই!

৬৮. তারা (মূসাকে) বললাে, তুমি তােমার মালিককে বলাে, আমাদের তিনি যেন সুস্পষ্টভাবে বলে দেন- তা কেমন (হবে)? সে বললাে, অবশ্যই তা হবে এমন যা বৃদ্ধ হবে না, আবার (একেবারে) বাচ্চাও হবে না; (বরং তা হবে) এর মাঝামাঝি বয়সের (যাও, এখন) যা কিছু তােমাদের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে তাই করাে।

৬৯. তারা (মূসাকে) বললাে, তুমি তােমার মালিককে জিজ্ঞেস করে নাও, তিনি আমাদের যেন বলে দেন তার রং কেমন হবে? সে বললাে, তা হবে হলুদ রংয়ের, তার রং এতাে আকর্ষণীয় হবে যে, যারা তাকাবে তা তাদেরই পরিতৃপ্ত করবে।

৭০. তারা বললাে (হে মূসা), তুমি তােমার মালিককে (আবার) জিজ্ঞেস করে নাও, (আসলে) তা কি ধরনের হবে, (আমরা তাে সঠিক গাভী বাছাই করতে পারছি না,) আমাদের কাছে (তাে সব) গাভী দেখতে একই ধরনের মনে হয়; আল্লাহ তায়ালা চাইলে (এবার) অবশ্যই আমরা সঠিক পথে চলতে পারবাে।

৭১. সে বললাে, (তাহলে শুনো, আল্লাহর ঈপ্সিত) সে (গাভী) হবে এমন যে, সেটি কোনাে চাষাবাদের কাজ করে না, যমীনে পানি সেচের কাজও করে না, (অর্থাৎ তা হবে) সম্পূর্ণ নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত, (একথা শুনে) তারা বললাে, এতােক্ষণে তুমি (আমাদের সামনে) সত্য কথাটা নিয়ে এসেছে! অতপর তারা (এ ধরনের একটি গাভী) যবাই করলাে, যদিও (ইতিপূর্বে) মনে হয়নি যে, তারা এ কাজটি আদৌ করতে চায়।

৭২. (স্মরণ করাে,) যখন তােমরা একজন লােককে হত্যা, করেছিলে, অতপর সে ব্যাপারে তােমরা একে অপরের ওপর (হত্যার) অভিযােগ আরােপ করতে শুরু করলে, (অথচ) আল্লাহ তায়ালা সে বিষয়ই (মানুষের সামনে) বের করে আনতে চাইলেন, যা তােমরা লুকোবার চেষ্টা করছিলে।

৭৩. (হত্যাকারীকে খােজার জন্যে) আমি তােমাদের বললাম, (কোরবানী করা) সেই (গাভীর) শরীরের একাংশ দিয়ে তােমরা একে (মৃদু) আঘাত করাে, এভাবেই আল্লাহ তায়ালা মৃত ব্যক্তিকে জীবন দান করবেন এবং (এ ঘটনা দ্বারা) তিনি তােমাদের কাছে তাঁর (জ্ঞানের) নিদর্শনসমূহ তুলে ধরেন, আশা করা যায় তােমরা (সত্য) অনুধাবন করবে।

৭৪. (কিন্তু এতাে বড়াে একটি নিদর্শন সত্ত্বেও) অতপর তােমাদের মন কঠিন হয়ে গেলাে, (এমন কঠিন) যেন তা (শক্ত) পাথর, (বরং মাঝে মাঝে মনে হয়) পাথরের চেয়েও (বুঝি তা) বেশী কঠিন; (কেননা) কিছু পাথর এমন আছে যা থেকে (মাঝে মাঝে) ঝর্ণাধারা নির্গত হয়, আবার কোনাে কোনাে সময় তা বিদীর্ণ হয়ে ফেটেও যায় এবং তা থেকে পানিও বেরিয়ে আসে, (অবশ্য) এর মধ্য থেকে (এমন কিছু পাথর আছে) যা আল্লাহর ভয়ে ধসে পড়ে; আল্লাহ তায়ালা তােমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে মােটেই গাফেল নন।

৭৫. (হে ঈমানদার লােকেরা, এরপরও) তােমরা কি এই আশা পােষণ করো যে, এরা তােমাদের (সাথে তােমাদের দ্বীনের) জন্যে ঈমান আনবে? এদের একাংশ তাে (যুগ যুগ ধরে) আল্লাহর কেতাব শুনে আসছে, অতপর তারা তাকে বিকৃত করছে, অথচ এরা ভালাে করেই তা জানে।

৭৬. (এদের অবস্থা হচ্ছে,) এরা যখন ঈমানদারদের সাথে সাক্ষাত করে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, কিন্তু এরাই (আবার) যখন গােপনে একে অপরের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, তােমরা কি মুসলমানদের কাছে সে সব কথা প্রকাশ করে দাও যা আল্লাহ তায়ালা (মােহাম্মদের নবুওত সম্পর্কে আগেই তাওরাতে) তােমাদের ওপর ব্যক্ত করেছেন; (খবরদার, তােমরা এমনটি কখনাে করাে না), তাহলে তারা (একদিন) তােমাদের মালিকের সামনে এটা দিয়েই তােমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য উত্থাপন করবে, তােমরা কি (এটুকু কথাও) বুঝতে পারাে না?

৭৭. এরা কি জানে না, (আল্লাহর কেতাবের) যা কিছু এরা গােপন করে (আবার নিজেদের স্বার্থে তারা) যা প্রকাশ করে, তা (সবই) আল্লাহ তায়ালা জানেন।

৭৮. এদের আরেকটি দল, যারা (একান্ত) অশিক্ষিত (নিরক্ষর), এরা (আল্লাহর) কেতাব সম্পর্কে কিছুই জানে না, (আল্লাহর কেতাব যেন এদের কাছে) একটি নিছক ধ্যান ধারণা (সর্বস্ব পুস্তক) মাত্র, এরা শুধু অমূলক ধারণাই করে থাকে।

৭৯. সে সব লােকের জন্যে ধ্বংস (অনিবার্য), যারা হাত দিয়ে কিতাব লেখে নেয়, তারপর (দুনিয়ার সামনে) বলে, এগুলাে হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে (অবতীর্ণ শরীয়তের বিধান), তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেন তা দিয়ে (দুনিয়ার) কিছু (স্বার্থ) তারা কিনে নিতে পারে; অতপর তাদের হাত যা কিছু রচনা করেছে তার জন্যে তাদের ধ্বংস ও দুর্ভোগ, যা কিছু তারা উপার্জন করেছে তার জন্যেও তাদের দুর্ভোগ।

৮০. এ সব (নির্বোধ) লােকে বলে, জাহান্নামের আগুন কখনােই আমাদের স্পর্শ করবে না, একান্ত (যদি করেও) তা হবে নির্দিষ্ট কয়েকটা দিনের (জন্যে) মাত্র, (হে নবী,) তুমি তাদের বলাে, তােমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে (এমন) কোনাে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছাে? আল্লাহ তায়ালা তাে কখনাে তার প্রতিশ্রুতি ভংগ করেন না, না তােমরা জেনে বুঝেই আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে এমন সব কথা বলে বেড়াচ্ছাে যা তােমরা নিজেরাই জানাে না।

৮১. হ্যাঁঁ, যে কোনাে ব্যক্তি পাপ কামিয়েছে এবং যাকে তার পাপ ঘিরে রেখেছে, এমন লােকেরাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী এবং সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে।

৮২. (আবার) যারাই (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান আনবে এবং ভালাে কাজ করবে, তারা বেহেশতবাসী হবে, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে।

৮৩. যখন আমি বনী ইসরাঈলদের কাছ থেকে (এ মর্মে) প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম যে, তােমরা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারাে এবাদাত করবে না এবং মাতা পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে, আত্মীয় স্বজন, এতীম-মেসকীনদের সাথে ভালাে ব্যবহার করবে, মানুষদের সুন্দর কথা বলবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে; (কিন্তু এ সত্ত্বেও) তােমাদের মধ্যে সামান্য কিছুসংখ্যক লােক ছাড়া অধিকাংশই অতপর ফিরে গেছে, এভাবেই তােমরা (প্রতিশ্রুতি থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে।

৮৪. তােমাদের (কাছ থেকে) আমি এ প্রতিশ্রুতিও নিয়েছিলাম যে, তােমরা কেউ কারাে রক্তপাত করবে না এবং নিজেদের লোকদের তাদের ঘর বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করবে না, অতপর তােমরা তা স্বীকার করে নিয়েছিলে, তােমরা তাে নিজেরাই (এ) সাক্ষ্য দিচ্ছাে!

৮৫. তারপর এই তাে হচ্ছো তােমরা! একে অপরকে তােমরা হত্যা করতে লাগলে, তােমাদের এক দলকে তােমরা তাদের ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত করে দিতে লাগলে, অন্যায় এবং যুলুম দ্বারা যালেমদের তােমরা তাদের ওপর পৃষ্ঠপােষকতা করতে থাকলে (শুধু তাই নয়), কোনাে লােক (যুদ্ধ) বন্দী হয়ে তােমাদের কাছে এলে তােমরা তাদের জন্যে মুক্তিপণ দাবী করো, (অথচ) তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করাটাই ছিলাে তােমাদের ওপর অবৈধ কাজ (এবং আল্লাহ তায়ালাকে দেয়া প্রতিশ্রুতির সুস্পষ্ট লংঘন); তােমরা কি (তাহলে) আল্লাহর কিতাবের একাংশ বিশ্বাস করাে এবং আরেক অংশ অবিশ্বাস করাে? (সাবধান!) কখনাে যদি কোনাে (জাতি কিংবা) ব্যক্তি (দ্বীনের অংশবিশেষের ওপর ঈমান আনয়নের) এ আচরণ করে, তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হবে যে, পার্থিব জীবনে তাদের লাঞ্ছনা ভােগ করতে হবে, তাদের পরকালেও কঠিনতম আযাবের দিকে নিক্ষেপ করা হবে; তােমরা (প্রতিনিয়ত) যা করছো, আল্লাহ তায়ালা সে সব কিছু থেকে মােটেও উদাসীন নন।

৮৬. (বস্তুত) এ লােকেরা আখেরাতের (স্থায়ী জীবনের) বিনিময়ে দুনিয়ার (অস্থায়ী) জীবন খরিদ করে নিয়েছে (এরা যেহেতু আযাব বিশ্বাসই করেনি), তাই (আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে) তাদের আযাব কিঞ্চিৎ পরিমাণও হালকা করা হবে না, আর না তাদের (কোনােদিক থেকে কোনাে রকম) সাহায্য করা হবে!

৮৭. আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি, তারপর একে একে আমি আরো অনেক নবীই পাঠিয়েছি এবং (বাপ ছাড়া সন্তান পয়দা করার মতাে) সুস্পষ্ট নিদর্শন দিয়ে আমি মারইয়াম পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি এবং (আমার বাণী ও) পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাকে আমি সাহায্য করেছি; (অথচ) যখনি তােমাদের কাছে আল্লাহর কোনাে নবী আসতাে, তােমাদের মনােপূত না হলে তােমরা অহংকারের বশবর্তী হয়ে তাদের অস্বীকার করেছো, তাদের কাউকে তােমরা মিথ্যাবাদী বলেছো, (আবার) তাদের একদলকে তােমরা হত্যাও করেছো।

৮৮. তারা বলে, (হেদায়াতের জন্যে) আমাদের মন (ও তার দরজা) বন্ধ হয়ে আছে, (আসলে) আল্লাহ তায়ালাকে তাদের (ক্রমাগত) অস্বীকার করার কারণে তিনি তাদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন, অতপর তাদের সামান্য পরিমাণ লােকই আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে।

৮৯. যখনি তাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে কিতাব নাযিল হলাে যা তাদের কাছে মজুদ কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে, (তা ছাড়া) এর আগে তারা নিজেরাই (সমাজের) অন্যান্য কাফেরদের ওপর বিজয়ী হওয়ার জন্যে (এ কিতাব ও তার বাহকের আগমন) কামনা করছিলাে, কিন্তু আজ যখন তা তাদের কাছে এলাে এবং যা তারা যথাযথ চিনতেও পারলাে- তাই তারা অস্বীকার করলাে, যারা (আল্লাহর কিতাব) অস্বীকার করে তাদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত নাযিল হােক।

৯০. কতাে নিকৃষ্ট (বস্তু) সেটি, যার বিনিময়ে তারা তাদের নিজেদের মন প্রাণ বিক্রয় করে দিয়েছে, শুধু গোঁড়ামির বশবর্তী হয়েই তারা আল্লাহর নাযিল করা বিধান অস্বীকার করেছে (শুধু এ কারণে যে), আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান তাকেই নবুওত দিয়ে অনুগ্রহ করেন, (তাদের এ কুফরীর ফলে) তারা ক্রোধের ওপর ক্রোধে আক্রান্ত হলাে; আর এ কাফেরদের জন্যে তাে (এমনিই) অপমানজনক শাস্তি রয়েছে।

৯১. যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ তায়ালা যা কিছু নাযিল করেছেন তার ওপর ঈমান আনাে, তারা বলে, আমরা তাে শুধু সেসব কিছুর ওপরই ঈমান আনি যা আমাদের (বনী ইসরাঈল জাতির) ওপর নাযিল করা হয়েছে, এর বাইরে যা- তা তারা অস্বীকার করে, (অথচ) তা একান্ত সত্য, তা তাদের কাছে নাযিল করা আল্লাহর কথাগুলােকেও সত্য বলে স্বীকার করে; (হে নবী,) তুমি বলো, তােমরা যদি বিশ্বাসীই হও তাহলে আল্লাহর নবীদের ইতিপূর্বে তােমরা কেন হত্যা করেছিলে?

৯২. তােমাদের কাছে তাে (এক সময়) সুস্পষ্ট নিদর্শন সহকারে মূসাও (নবী হয়ে) এসেছিলাে, অতপর তার (সামান্য কয়দিনের অনুপস্থিতির) পরই তােমরা একটি বাছুরকে (মাবুদ হিসেবে) গ্রহণ করে নিলে! কতাে (বড়াে) যালেম ছিলে তোমরা!

৯৩. (আরাে স্মরণ করাে,) যখন আমি তােমাদের কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিলাম তােমাদের মাথার ওপর তূর পাহাড় তুলে ধরে (আমি বলেছিলাম), যা কিছু বিধি বিধান আমি তােমাদের দিয়েছি তা শক্ত করে আঁকড়ে ধরাে এবং (আমার কথাগুলাে) শুনো, (এর জবাবে) তারা (মুখে তাে) বললাে হ্যাঁ, আমরা (তােমার কথা) শুনেছি, কিন্তু বাস্তব জীবনে তা অস্বীকার করে বললাে, আমরা তা অমান্য করলাম, (আসলে) আল্লাহ তায়ালাকে তাদের অস্বীকার করার কারণে সেই বাছুরকে মাবুদ বানানাে (-এর নেশা দ্বারা তখনাে) তাদের মনকে আকৃষ্ট করে রাখা হয়েছিলাে, তুমি (তাদের) বলো, যদি তােমরা সত্যিই মােমেন হও তাহলে বলতে পারাে, এটা কতাে খারাপ ঈমান- যা একজন ব্যক্তিকে এ ধরনের কাজের আদেশ দেয়?

৯৪. যদি (তােমরা মনে করাে,) অন্যদের বদলে পরকালের নিবাস আল্লাহর কাছে শুধু তােমাদের জন্যেই নির্দিষ্ট- তাহলে (যাও- তা পাওয়ার জন্যে) তােমরা মৃত্যু কামনা করাে, যদি তােমরা সত্যবাদী হও!

৯৫. (হে নবী, তুমি জেনে রাখাে,) তা (আল্লাহর সাথে নিকৃষ্ট আচরণ করে) নিজেদের হাত দিয়ে এরা যা কিছু অর্জন করেছে (তার পরিণাম) জানার পর এরা কখনাে তা কামনা করবে না, আল্লাহ তায়ালা যালেমদের ভালাে করেই জানেন।

৯৬. (সত্যি কথা হচ্ছে,) তাদেরকেই বরং তুমি দেখতে পাবে বেঁচে থাকার ব্যাপারে বেশী লােভী, আল্লাহ তায়ালার সাথে যারা শেরেক করে- এ (বনী ইসরাঈলের) লােকেরা তাদের চেয়েও (এক কদম) অগ্রসর, এদের প্রত্যেক ব্যক্তিই হাজার বছর জীবিত থাকতে চায়, কিন্তু যতাে দীর্ঘ জীবনই এদের দেয়া হােক না কেন, তা কখনাে (এদের) তার (অবশ্যম্ভাবী) আযাব থেকে বাঁচাতে পারবে না; আল্লাহ তায়ালা এদের (যাবতীয়) কাজকর্ম (পুংখানুপুংখ) পর্যবেক্ষণ করেন।

৯৭. (হে নবী,) তুমি বলাে, কে সে ব্যক্তি যে জিবরাঈলের শত্রু হতে পারে? (অথচ) সে তাে আল্লাহর আদেশে (আল্লাহর) বাণীসমূহ তােমার অন্তকরণে নাযিল করে দেয়, (তাও এমন এক বাণী) যা তাদের কাছে মজুদ বিষয়সমূহের সত্যতা স্বীকার করে, সর্বোপরি এ হচ্ছে মোমেনদের জন্যে সুসংবাদ (-বাহী গ্রন্থ)।

৯৮. যারা আল্লাহর শত্রু, শত্রু তাঁর (বাণীবাহক) ফেরেশতার ও নবী রসূলের- (শত্রু) জিবরাঈলের মীকাঈলের, (তারা একদিন একথাটা বুঝতে পারবে,) স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন কাফেরদের (বড়) শত্রু।

৯৯. অবশ্যই আমি তােমার কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন পাঠিয়েছি; পাপী ব্যক্তিরা ছাড়া এসব কিছু কেউই অস্বীকার করতে পারে না।

১০০. কিংবা যখনি তারা আল্লাহর সাথে কোনাে ওয়াদা করেছে তখনই তাদের এক দল তা ভংগ করেছে; (আসলে) তাদের অধিকাংশই ঈমানদার ছিলাে না।

১০১. যখনি তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনাে নবী আসে এবং যে তাদের কাছে (আগের কিতাবে) যেসব কথা মজুদ রয়েছে তার সত্যতা স্বীকার করে, তখনি সেই আগের কিতাবের ধারকদের একটি দল (পূর্ববর্তী কেতাবের) কথাগুলাে এমনভাবে তাদের পেছনের দিকে ফেলে দিলাে, যেন তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।

১০২. (আল্লাহর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেই এরা ক্ষান্ত হয়নি, যাদুমন্ত্রের) এমন কিছু জিনিসও এরা অনুসরণ করতে শুরু করলাে, (যা) শয়তান কর্তৃক সােলায়মান (নবী)-এর রাজত্বের সময় (সমাজে) চালু করা হয়েছিলাে, (সত্যি কথা হচ্ছে) সােলায়মান কখনাে (যাদুকে আল্লাহবিরােধী কাজে ব্যবহার করে) আল্লাহকে অস্বীকার করেনি, আল্লাহকে তাে অস্বীকার করেছে সে সব অভিশপ্ত শয়তান, যারা মানুষকে যাদুমন্ত্র শিক্ষা দিয়েছে; (যাদুপাগল কিছু মানুষদের পরীক্ষার উদ্দেশে) আল্লাহ তায়ালা হারূত মারূত (নামে যে দু'জন) ফেরেশতাকে ব্যাবিলনে পাঠিয়েছেন, (আল্লাহর) সেই দু’জন ফেরেশতা (কাউকে) যখনই এ বিষয়ের শিক্ষা দিতাে, (প্রথমেই) তারা (একথাটা) তাদের বলে দিতাে, আমরা তাে হচ্ছি (আল্লাহর) পরীক্ষামাত্র, অতএব (কোনাে অবস্থায়ই) তুমি (এ বিদ্যা দিয়ে আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করাে না, (এ সত্ত্বেও) তারা তাদের কাছ থেকে এমন কিছু বিদ্যা শিখে নিয়েছিলাে, যা দিয়ে এরা স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদের সৃষ্টি করতাে, (যদিও) আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোনাে দিনই কেউ কারাে সামান্যতম ক্ষতিও সাধন করতে পারবে না; তারা (মূলত) এমন কিছু শিখে যা তাদের কোনাে উপকার যেমন করতে পারে না, তেমনি তা তাদের কোনাে ক্ষতিও করতে পারে না; তারা যদি জানতাে, (শ্রম ও অর্থ দিয়ে) যা তারা কিনে নিয়েছে পরকালে তার কোনাে মূল্য নেই; তারা নিজেদের জীবনের পরিবর্তে যা ক্রয় করে নিয়েছে তা সত্যিই নিকৃষ্ট, (কতাে ভালাে হতাে) যদি তারা (কথাটা) জানতাে!

১০৩. তারা যদি (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনতো এবং (তাঁকেই) ভয় করতাে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা উৎকৃষ্টতম পুরস্কার পেতো; (কতাে ভালাে হতাে) যদি তারা (এটা) অনুধাবন করতাে!

১০৪. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, (ধৃষ্টতার সাথে কখনো) বলাে না (হে নবী), 'তুমি আমাদের কথা শােনাে', বরং (তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে) বলাে (হে নবী), 'আমাদের প্রতি লক্ষ্য করাে'। তােমরা সর্বদা তার কথা শুনবে (মনে রাখবে), যারা (তার কথা) অমান্য করে তাদের জন্যে অত্যন্ত বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।

১০৫. (আসলে) এই আহলে কিতাব কিংবা যারা আল্লাহর সাথে প্রকাশ্য শেরেক করে তারা কেউই এটা পছন্দ করে না যে, তােমার কাছে তােমার মালিকের পক্ষ থেকে (নবুওতের মতাে) কোনাে ভালাে কিছু নাযিল হােক, কিন্তু তারা জানে না, আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকেই তাঁর অনুগ্রহে বিশেষভাবে বেছে নেন; আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত অনুগ্রহশীল।

১০৬. আমি যখন কোনাে আয়াত বাতিল করে দেই বা (বিশেষ কারণে মানুষদের) তা ভুলিয়ে দিতে চাই, তখন তার জায়গায় তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কিংবা তারই মতাে কোনাে আয়াত এনে হাযির করি, তুমি কি জানাে না, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

১০৭. তুমি কি জানাে না, আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যেই নির্দিষ্ট; তিনি ছাড়া তােমাদের কোনাে বন্ধু নেই, নেই কোনাে সাহায্যকারীও।

১০৮. তােমরা কি তােমাদের নবীর কাছে সে ধরনের (উদ্ভট) প্রশ্ন করতে চাও- যেমনি তােমাদের আগে মূসাকে করা হয়েছিলাে; কেউ যদি ঈমানকে কুফরীর সাথে বদল করে নেয়, অবশ্যই সে ব্যক্তি সােজা পথ থেকে গােমরাহ হয়ে যাবে।

১০৯. আহলে কিতাবদের অনেকেই বিদ্বেষের কারণে চাইবে তােমাদের ঈমানের বদলে আবার সেই কুফরীতে ফিরিয়ে নিতে, (এমনকি) সত্য তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও (তারা এপথ থেকে বিরত হবে না), অতএব তাদের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত তােমরা ক্ষমার নীতি অবলম্বন করাে এবং তাদের সাথে, ভালাে ব্যবহার করাে; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর ক্ষমতাশালী।

১১০. তােমরা নামায প্রতিষ্ঠা করাে এবং যাকাত আদায় করাে; (এর মাধ্যমে) যে সব নেকী তােমরা আল্লাহর কাছে অগ্রিম পাঠাবে তাঁর কাছে (এর সবই) তােমরা (মজুদ) পাবে; তােমরা যা কিছুই করাে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই এর সব কিছু দেখতে পান।

১১১. তারা বলে, ইহুদী ও খৃষ্টান ছাড়া আর কেউই বেহেশতে যাবে না, (আসলে) এটা হচ্ছে তাদের একটা মিথ্যা কল্পনা; তুমি (হে নবী,) বলাে, যদি তােমরা সত্যবাদী হও (তাহলে) তােমাদের দলিল প্রমাণ নিয়ে এসাে!

১১২. (তবে হ্যাঁ,) যে কোনাে ব্যক্তিই (আল্লাহর সামনে) নিজের সত্তাকে সমর্পণ করে দেবে এবং সে হবে অবশ্যই একজন নেককার মানুষ, তার জন্যে তার মালিকের কাছে (এর) বিনিময় রয়েছে, তাদের কোনাে ভয় ভীতি নেই, আর না তারা (সেদিন) চিন্তান্বিতও হবে!

১১৩. ইহুদীরা বলে, খৃষ্টানরা (সত্য জাতির) কোনাে কিছুর ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, খৃষ্টানরা বলে ইহুদীরা কোনাে কিছুর ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, অথচ এরা (উভয়েই আল্লাহর) কিতাব পাঠ করে, আদৌ আল্লাহর কেতাবের কোনাে কিছুই জানে না এমন লােকেরা (আবার এদের উভয়ের সম্পর্কে) তাদের কথার মতাে একই ধরনের কথা বলে, তারা যে বিষয়ে মতবিরােধ করছে আল্লাহ তায়ালা শেষ বিচারের দিনে সে বিষয়ে তাদের মাঝে মীমাংসা করে দেবেন।

১১৪. সে ব্যক্তির চেয়ে বড়াে যালেম আর কে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর (ঘর) মাসজিদে তার নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং তার ধ্বংস সাধনে সচেষ্ট হয়, এ ধরনের লােকদের (বস্তুত) তাতে ঢােকার কোনাে যােগ্যতাই নেই, তবে একান্ত ভীত সন্ত্রস্তভাবে (ঢুকলে তা ভিন্ন কথা), তাদের জন্যে পৃথিবীতে যেমন অপমান লাঞ্ছনা রয়েছে, তেমনি রয়েছে পরকালে কঠিনতম শাস্তি।

১১৫. (এরা কেবলা বদলের ব্যাপারেও মতবিরােধ করেছিলাে, অথচ) পূর্ব পশ্চিম সবই তাে আল্লাহ তায়ালার, (তাছাড়া) তােমরা যে দিকেই মুখ ফেরাবে সেদিকেই তাে আল্লাহ তায়ালা রয়েছেন; আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী এবং জ্ঞানী।

১১৬. (খৃস্টান) লােকেরা বলে, আল্লাহ তায়ালা (অমুককে), নিজের সন্তান (-রূপে) গ্রহণ করেছেন, পবিত্রতা একান্তভাবে তাঁর, (তিনি এসব কিছুর অনেক উর্ধ্বে); আসমানসমূহ ও যমীনের সব কিছুই তার জন্যে, এর প্রতিটি বস্তুই তার একান্ত অনুগত।

১১৭. আসমানসমূহ ও যমীনের তিনিই স্রষ্টা, যখন তিনি কোনাে একটি বিষয়ের সিদ্ধান্ত করেন, সে ব্যাপারে শুধু (এটুকুই) বলেন 'হও', আর সাথে সাথেই তা হয়ে যায়।

১১৮. যারা (সঠিক কথা) জানে না তারা বলে, আল্লাহ তায়ালা নিজে আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন, অথবা এমন কোনাে নিদর্শন আমাদের কাছে কেন পাঠান না (যার মাধ্যমে আমরা তাকে দেখতে পারবাে); এদের আগের লােকেরাও এদের মতাে করেই কথা বলতাে; এদের সবার মন (আসলে) একই ধরনের; (আল্লাহকে) যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে আমি তাদের জন্যে আমার নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্ট করে পেশ করে দিয়েছি।

১১৯. অবশ্যই আমি তােমাকে সত্য (দ্বীন)-সহ পাঠিয়েছি, পাঠিয়েছি আযাবের ভীতি প্রদর্শনকারী ও (জান্নাতের) সুসংবাদবাহী হিসেবে। (জেনে রেখাে), তােমাকে জাহান্নামের অধিবাসীদের (দায় দায়িত্বের) ব্যাপারে কোনোরকম প্রশ্ন করা হবে না।

১২০. ইহুদী ও খৃস্টানরা কখনাে তােমার ওপর খুশী হবে না, হাঁ, তুমি যদি (কখনো) তাদের দলের অনুসরণ করতে শুরু করাে (তখনই এরা খুশী হবে), তুমি তাদের বলে দাও, আল্লাহ তায়ালার হেদায়াতই হচ্ছে একমাত্র পথ; (সাবধান,) তােমার কাছে সঠিক জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের ইচ্ছানুসারে চলতে থাকো, তাহলে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তুমি কোনাে বন্ধু ও সাহায্যকারী পাবে না।

১২১. যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি তাদের মাঝে এমন কিছু লােক আছে যারা এ (কোরআন)-কে যেভাবে (নিষ্ঠার সাথে) পড়া দরকার সেভাবেই পড়ে; তারা তার ওপর ঈমানও আনে; যারা (একে) অস্বীকার করে তারাই হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত লােক।

১২২. হে বনী ইসরাঈল (জাতি), তােমরা আমার সে নেয়ামত স্মরণ করাে যা আমি তােমাদের দান করেছি, (সে নেয়ামতের অংশ হিসেবে) আমি তােমাদের দুনিয়ার অন্যান্য জাতির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।

১২৩. তােমরা সে দিনটিকে ভয় করাে, যেদিন একজন মানুষ আরেকজনের কোনােই কাজে আসবে না, (সেদিন) তার কাছ থেকে কোনােরকম বিনিময়ও নেয়া হবে না, আবার (একের পক্ষে অন্যের) সুপারিশও সেদিন কোনাে উপকারে আসবে না, (সেদিন) এসব লােকেরা কোনােরকম সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।

১২৪. (আরাে স্মরণ করাে,) যখন ইবরাহীমকে তার 'রব' কতিপয় বিষয়ে (তার আনুগত্যের) পরীক্ষা নিলেন, অতপর তা পুরােপুরি সে পুরন করলাে, আল্লাহ তায়ালা বললেন, (এবার) আমি তােমাকে মানব জাতির জন্যে নেতা বানাতে চাই; সে বললাে, আমার ভবিষ্যত বংশধররাও (কি নেতা হিসেবে বিবেচিত হবে)? আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার এ প্রতিশ্রুতি যালেমদের কাছে পৌঁছবে না।

১২৫. (স্মরণ করাে,) আমি যখন মানুষদের মিলনস্থল ও নিরাপত্তার কেন্দ্র হিসেবে (এ কাবা) ঘরটি নির্মাণ করেছিলাম; (আমি তাদের আদেশ দিয়েছিলাম,) তােমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানাের স্থানটিকে নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ করাে; আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ দিয়েছিলাম যেন তারা আমার ঘর (কাবা)-কে (হজ্জ ও ওমরার) তাওয়াফকারীদের জন্যে, আল্লাহর এবাদাতে আত্মনিয়ােগকারীদের জন্যে, (সর্বোপরি তাঁর নামে) রুকু সাজদাকারীদের জন্যে পবিত্র করে রাখে।

১২৬. ইবরাহীম যখন বলেছিলাে, হে মালিক, এ শহরকে তুমি (শান্তি ও) নিরাপত্তার শহর বানিয়ে দাও এবং এখানকার অধিবাসীদের মাঝে যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা এবং পরকালে বিশ্বাস করে, তুমি তাদের ফলমূল দিয়ে আহারের যােগান দাও; আল্লাহ তায়ালা বললেন (হ্যাঁ), যে ব্যক্তি (আমাকে) অস্বীকার করবে তাকেও আমি অল্প কয়েকদিন জীবনের উপায় উপকরণ সরবরাহ করতে থাকবাে, অতপর অচিরেই আমি তাদের আগুনের আযাব ভােগ করতে বাধ্য করবাে, যা সত্যিই বড়াে নিকৃষ্টতম স্থান।

১২৭. ইবরাহীম ও ইসমাঈল যখন এই ঘরের ভিত্তি উঠাচ্ছিলাে (তখন তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করলাে), হে আমাদের মালিক, (আমরা যে উদ্দেশ্যে এ ঘর নির্মাণ করেছি, তা) তুমি আমাদের কাছ থেকে কবুল করাে, একমাত্র তুমিই সব কিছু জানাে এবং সব কিছু শােনো।

১২৮. (তারা আরাে বললাে,) হে আমাদের মালিক, আমাদের উভয়কে তুমি তােমার (অনুগত) মুসলিম বান্দা বানাও এবং আমাদের (পরবর্তী) বংশধরদের মাঝ থেকেও তুমি তােমার একদল অনুগত (বান্দা) বানিয়ে দাও, (হে মালিক,) তুমি আমাদের (তােমার এবাদাতের) আনুষ্ঠানিকতাসমূহ দেখিয়ে দাও এবং তুমি আমাদের ওপর দয়াপরবশ হও, কারণ অবশ্যই তুমি তাওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু।

১২৯. হে আমাদের মালিক, তাদের (বংশের) মধ্যে তাদের নিজেদের মাঝ থেকে তুমি (এমন) একজন রসূল পাঠাও, যে তাদের কাছে তােমার আয়াতসমূহ পড়ে শােনাবে, তাদের তােমার কেতাবের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে, উপরন্তু সে তাদের পবিত্র করে দেবে (হে আল্লাহ, তুমি আমাদের এই দোয়া কবুল করাে); কারণ তুমিই মহাপরাক্রমশালী ও পরম কুশলী।

১৩০. (জেনে বুঝে) যে নিজেকে মূর্খ বানিয়ে রেখেছে সে ব্যক্তি ছাড়া আর কে এমন হবে, যে ইবরাহীমের (আনীত) জীবন বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে? (অথচ তাকে আমি দুনিয়ায় নবুওতের জন্যে) বাছাই করে নিয়েছি, শেষ বিচারের দিনেও সে (আমার) নেক লােকদের মধ্যে শামিল হবে।

১৩১. যখন আমি তাকে বললাম, তুমি (আমার অনুগত) মুসলিম হয়ে যাও, সে বললাে, আমি সৃষ্টিকুলের মালিক (আল্লাহ তায়ালা)-এর পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করে নিলাম।

১৩২. (যে পথ ইবরাহীম নিজের জন্যে বেছে নিলাে,) সে পথে চলার জন্যে সে তার সন্তান সন্ততিকেও ওসিয়ত করে গেলাে, ইয়াকুবও (তার সন্তানদের ওসিয়ত করে বললাে); হে আমার সন্তানরা, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তােমাদের জন্যে এই দ্বীন (ইসলাম) মনােনীত করে দিয়েছেন, অতএব কোনাে অবস্থায়ই এ (জীবন) বিধানের আনুগত্য স্বীকার ব্যতিরেকে তােমরা মৃত্যুবরণ করাে না।

১৩৩. (হে ইহুদী জাতি,) তােমরা কি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলে যখন ইয়াকুবের সামনে (তার) মৃত্যু এসে হাযির হলাে এবং সে যখন তার ছেলেমেয়েদের বললাে (বলো), আমার মৃত্যুর পর তােমরা কার এবাদাত করবে? তারা বললাে, আমরা (অবশ্যই) তােমার মাবুদ- (তােমার পূর্বপুরুষ) ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মাবুদের এবাদাত করবাে, (এ) মাবুদ হচ্ছেন একক, আমরা তাঁর আত্মসমর্পণকারী বান্দা হয়েই থাকবাে।

১৩৪. এরা ছিলাে এক (ধরনের) জাতি, যারা (আজ) গত হয়ে গেছে, তারা যা করে গেছে তা তাদের নিজেদের জন্যে, (আবার) তােমরা যা করবে তা হবে তােমাদের নিজেদের জন্যে, তারা যা কিছু করছিলাে সে ব্যাপারে তােমাদের (কিছু) জিজ্ঞেস করা হবে না।

১৩৫. এরা বলে, তােমরা ইহুদী কিংবা খৃষ্টান হয়ে যাও, তাহলে তােমরা সঠিক পথে পরিচালিত হবে; (হে নবী,) তুমি বলাে, (আমাদের কাছে তাে) বরং ইবরাহীমের একনিষ্ঠ মতাদর্শই রয়েছে; আর সে কখনাে মােশরেকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাে না।

১৩৬. তােমরা বলো, আমরা তাে আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি এবং ঈমান এনেছি আল্লাহ তায়ালা আমাদের কাছে যা কিছু নাযিল করেছেন তার ওপর, (আমাদের আগে) ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের (পরবর্তী) সন্তানদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তাও (আমরা মানি, তাছাড়া), মূসা, ঈসা সহ সব নবীকে তাদের মালিকের পক্ষ থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তার ওপরও আমরা ঈমান এনেছি, আমরা এদের কারাে মধ্যেই কোনাে তারতম্য করি না, আমরা তাে হচ্ছি আল্লাহরই অনুগত (বান্দা)।

১৩৭. আর এরা যদি তােমাদের মতােই আল্লাহর ওপর ঈমান আনতাে তাহলে তারাও সঠিক পথ পেতাে, তারা যদি (সে পথ থেকে) ফিরে আসে তাহলে তারা অবশ্যই (উপদলীয়) অনৈক্যের মাঝে পড়ে যাবে, আল্লাহ তায়ালাই তােমার জন্যে যথেষ্ট (প্রমানিত) হবেন, তিনিই শােনেন, তিনিই জানেন।

১৩৮. (হে নবী, তাদের তুমি) বলাে, আসল রং হচ্ছে আল্লাহ তায়ালারই, এমন কে আছে যার রং তাঁর রঙের চেয়ে উৎকৃষ্ট হতে পারে? (আমরা ঘােষণা করছি,) আমরা তারই এবাদাত করি।

১৩৯. (হে নবী,) তুমি তাদের বলো, তােমরা কি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারেই আমাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও? অথচ তিনি (যেমন) আমাদের মালিক, (তেমনি) তিনি তােমাদেরও মালিক, আমাদের কাজ আমাদের জন্যে আর তােমাদের কাজ তােমাদের জন্যে, আমরা সবাই তার আনুগত্যের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান।

১৪০. অথবা তােমরা কি একথা বলতে চাও যে, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের বংশধররা সবাই ছিলাে ইহুদী কিংবা খৃষ্টান? (হে নবী,) তুমি বলে দাও, এ ব্যাপারে তােমরা বেশী জানাে না আল্লাহ তায়ালা বেশী জানেন? যদি কোনাে ব্যক্তি তার কাছে মজুদ আল্লাহর কাছ থেকে (আগত) সাক্ষ্য প্রমাণ গােপন করে, তাহলে তার চেয়ে বড়াে যালেম আর কে হতে পারে? আল্লাহ তায়ালা তােমাদের কাজকর্মের ব্যাপারে মােটেই গাফেল নন।

১৪১. এরাও ছিলাে এক (ধরনের) সম্প্রদায়, যারা (আজ) গত হয়ে গেছে, তারা যা করে গেছে তা তাদের জন্যে, আর তােমাদের কর্মফল হবে তােমাদের জন্যে, তারা যা কিছু করছিলাে সে ব্যাপারে তােমাদের কিছু জিজ্ঞেস করা হবে না।

১৪২. (কেবলা বদলের ব্যাপারে) মানুষদের ভেতর থেকে কিছু মূর্খ লােক অচিরেই বলতে শুরু করবে (এ কি হলাে), এতােদিন যে কেবলার ওপর তারা প্রতিষ্ঠিত ছিলাে, (আজ) কিসে তাদের সে দিক থেকে ফিরিয়ে দিলাে? (হে নবী,) তুমি (তাদের) বলে দাও, পূর্ব পশ্চিম (সবই) আল্লাহ তায়ালার জন্যে; আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন।

১৪৩. এভাবেই আমি তােমাদের এক মধ্যপন্থী মানব দলে পরিণত করেছি, যেন তােমরা দুনিয়ার অন্যান্য মানুষদের ওপর (হেদায়াতের) সাক্ষী হয়ে থাকতে পারাে (এবং একইভাবে) রসূলও তােমাদের ওপর সাক্ষী হয়ে থাকতে পারে, যে কেবলার ওপর তােমরা (এতােদিন) প্রতিষ্ঠিত ছিলে, আমি তা এ উদ্দেশ্যেই নির্ধারণ করেছিলাম, যাতে করে আমি এ কথাটা জেনে নিতে পারি যে, তােমাদের মধ্যে কে রসূলের অনুসরণ করে আর কে তার কথা থেকে ফিরে যায়, তাদের ওপর এটা ছিলাে কঠিন (পরীক্ষা), অবশ্য আল্লাহ তায়ালা যাদের হেদায়াত দান করেছেন তাদের কথা আলাদা; আল্লাহ তায়ালা কখনাে তােমাদের ঈমান বিনষ্ট করবেন না; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা মানুষদের সাথে বড়াে দয়ালু ও একান্ত মেহেরবান।

১৪৪. (কেবলা পরিবর্তনের জন্যে) তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে (যেভাবে আমার আদেশের অপেক্ষায়) থাকতে, তা আমি অবশ্যই দেখতে পেয়েছি, তাই আমি তােমার পছন্দমতাে (দিককেই) কেবলা বানিয়ে দিচ্ছি, (এখন থেকে) তােমরা এই মর্যাদাসম্পন্ন মাসজিদের দিকে ফিরে (নামায আদায় করতে) থাকবে; তােমরা যেখানেই থাকো না কেন তােমাদের মুখমন্ডল সে দিকেই ফিরিয়ে দেবে; এসব লােক- যাদের কাছে আগেই কেতাব নাযিল করা হয়েছিলাে, তারা ভালাে করেই জানে; এ ব্যাপারটা তােমার মালিকের পক্ষ থেকে আসা সম্পূর্ণ একটি সত্য (ঘটনা, এ সত্ত্বেও) তারা (এর সাথে) যে আচরণ করে যাচ্ছে আল্লাহ তায়ালা তা থেকে মােটেই অনবহিত নন।

১৪৫. যাদের ইতিপূর্বে কেতাব দেয়া হয়েছে তাদের সামনে যদি তুমি (দুনিয়ার) সব কয়টি প্রমাণও এনে হাযির করাে, (তারপরও) এরা তােমার কেবলার অনুসরণ করবে না, আর (এর পর) তুমিও তাদের কেবলার অনুসরণকারী হতে পারাে না, (তাছাড়া) এদের এক দলও তাে আরেক দলের কেবলার অনুসরণ করে না; আমার পক্ষ থেকে এ জ্ঞান তােমাদের কাছে পৌঁছার পর তুমি যদি তাদের ইচ্ছা আকাংখার অনুসরণ করাে, তাহলে অবশ্যই তুমি যালেমদের দলে শামিল হয়ে যাবে।

১৪৬. যাদের আমি কেতাব দান করেছি এরা তাকে এতাে ভালাে করে চেনে, যেমনি এরা চেনে আপন ছেলেদের; এদের একদল সত্য গােপন করার চেষ্টা করছে, অথচ এরা তাে সব কিছুই জানে।

১৪৭. (হে নবী, তুমি তাদের বলো,) তােমার মালিকের পক্ষ থেকে (এ হচ্ছে) একমাত্র সত্য, সুতরাং কোনাে অবস্থায়ই তােমরা সন্দেহ পােষণকারীদের দলে শামিল হয়াে না।

১৪৮. প্রত্যেক (জাতির) জন্যে (এবাদাতের) একটা দিক (নির্দিষ্ট) থাকে, যে দিকে সে (জাতি) মুখ করে (দাঁড়ায়), অতএব তােমরা (আসল) কল্যাণের দিকে অগ্রসর হবার কাজে একে অপরের সাথে প্রতিযােগিতা করাে; তােমরা যেখানেই থাকে না কেন তিনি তােমাদের সবাইকে (একই স্থানে) এনে হাযির করবেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

১৪৯. তুমি যে কোনাে স্থান থেকেই বেরিয়ে আসাে না কেন, (নামাযের জন্যে) মাসজিদে হারামের দিকে মুখ ফেরাও, কেননা এটাই হচ্ছে তােমার মালিকের কাছ থেকে (কেবলা সংক্রান্ত) সঠিক (সিদ্ধান্ত); আর আল্লাহ তায়ালা তােমাদের কার্যাবলী সম্পর্কে মােটেই উদাসীন নন।

১৫০. (হে নবী,) যে দিক থেকেই তুমি বেরিয়ে আসবে, (নামাযের জন্যে সেখান থেকেই) মাসজিদে হারামের দিকে মুখ ফিরিয়ে (দাঁড়িয়ে) যেও; (এ সময়) যেখানেই তুমি থাকো না কেন সে (কাবার) দিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তাহলে (প্রতিপক্ষের) লােকদের কাছে তােমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানাের মতাে কোনাে যুক্তি অবশিষ্ট থাকবে না, তাদের মধ্য থেকে যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের কথা অবশ্য আলাদা, তােমরা এসব ব্যক্তিদের ভয় করাে না, তােমরা বরং ভয় করাে আমাকে, যাতে করে আমি তােমাদের ওপর আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিতে পারি, এর ফলে তােমরাও সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারাে,

১৫১. (এই সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্যেই) আমি এভাবে তােমাদের কাছে তােমাদের মাঝ থেকেই একজনকে রসূল করে পাঠিয়েছি, যে ব্যক্তি (প্রথমত) তােমাদের কাছে আমার 'আয়াত' পড়ে শােনাবে, (দ্বিতীয়ত) সে তােমাদের (জীবন) পরিশুদ্ধ করে দেবে এবং (তৃতীয়ত) সে তােমাদের আমার কেতাব ও (তার অন্তর্নিহিত) জ্ঞান শিক্ষা দেবে, (সর্বোপরি) সে তােমাদের এমন বিষয়সমূহের জ্ঞানও শেখাবে, যা তােমরা কখনাে জানতে না।

১৫২. অতএব (এসব অনুগ্রহের জন্যে) তােমরা আমাকেই স্মরণ করাে, (তাহলে) আমিও তােমাদের স্মরণ করবাে, তােমরা আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করাে এবং কখনাে তােমরা আমার অকৃতজ্ঞ হয়াে না।

১৫৩. হে (মানুষ,) তােমরা যারা ঈমান এনেছাে, (পরম) ধৈর্য ও (খালেস) নামাযের মাধ্যমে তােমরা (আমার কাছে) সাহায্য প্রার্থনা করাে; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীল মানুষদের সাথে আছেন।

১৫৪. যারা আল্লাহ তায়ালার পথে নিহত হয়েছে তাদের তােমরা (কখনো) মৃত বলাে না; বরং তারাই হচ্ছে (আসল) জীবিত (মানুষ), কিন্তু (এ বিষয়টির) কিছুই তােমরা জানাে না।

১৫৫. আমি অবশ্যই (ঈমানের দাবীতে) তােমাদের পরীক্ষা করবাে, (কখনাে) ভয়-ভীতি, (কখনো) ক্ষুধা-অনাহার, (কখনো) তােমাদের জান মাল ও ফসলাদির ক্ষতি সাধন করে (তােমাদের পরীক্ষা করা হবে। যারা ধৈর্যের সাথে এর মােকাবেলা করে); তুমি (সে) ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করাে,

১৫৬. যখনি তাদের সামনে (কোনাে) পরীক্ষা এসে হাযির হয় তখনি তারা বলে, আমরা তাে আল্লাহর জন্যেই, আমাদের তাে (একদিন) আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে।

১৫৭. (বস্তুত) এরা হচ্ছে সে সব ব্যক্তি, যাদের ওপর রয়েছে তাদের মালিকের পক্ষ থেকে অবারিত রহমত ও অপার করুণা; আর এরাই সঠিক পথপ্রাপ্ত।

১৫৮. অবশ্যই 'সাফা' এবং 'মারওয়া' (পাহাড় দুটো) আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনসমূহের অন্যতম, অতএব যদি তােমাদের মধ্যে কোনাে লোক হজ্জ কিংবা ওমরা আদায় (করার এরাদা) করে, তার জন্যে এই উভয় (পাহাড়ের) মাঝে তাওয়াফ করাতে দোষের কিছু নেই; (কেননা) যদি কোনাে ব্যক্তি (অন্তরের) নিষ্ঠার সাথে কোনাে ভালাে কাজ করে তাহলে (তারা যেন জেনে রাখে), নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা কৃতজ্ঞতাপরায়ণ ও প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী।

১৫৯. মানুষের জন্যে যেসব (বিধান) আমি আমার, কেতাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, তারপর যারা আমার নাযিল করা (সেসব) সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও পরিষ্কার পথনির্দেশ গােপন করে, এরাই হচ্ছে সেসব লােক যাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা অভিসম্পাত করেন, অভিশাপ বর্ষণ করে অন্যান্য অভিশাপকারীরাও,

১৬০, তবে যারা এ কাজ থেকে ফিরে আসবে এবং নিজেদের সংশােধন করে নেবে, খােলাখুলিভাবে তারা (সেসব সত্য) কথা প্রকাশ করবে (যা এতােদিন আহলে কেতাবরা গােপন করে আসছিলাে), এরাই হবে সেসব লােক যাদের ওপর আমি দয়াপরবশ হবাে, আমি পরম ক্ষমাকারী, দয়ালু।

১৬১. যারা কুফরী করেছে এবং এই কাফের অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেছে, তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, ফেরেশতাদের অভিশাপ, (সর্বোপরি) অভিশাপ সমগ্র মানবকুলের,

১৬২. (এই অভিশপ্ত অবস্থা নিয়েই) এরা সেখানে চিরদিন থাকবে, শাস্তির মাত্রা এদের ওপর থেকে (বিন্দুমাত্রও) কম করা হবে না, তাদের কোনাে রকম অবকাশও দেয়া হবে না।

১৬৩. তােমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন, তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনাে মাবুদ নেই, তিনি দয়ালু, তিনি মেহেরবান।

১৬৪. নিসন্দেহে আসমান যমীনের সৃষ্টির মাঝে, রাত দিনের এই আবর্তনের মাঝে, সাগরে ভাসমান জাহাজসমূহে- যা মানুষের জন্যে কল্যাণকর দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, (এর সব কয়টিতে) আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন মজুদ রয়েছে, (আরাে রয়েছে) আল্লাহ তায়ালা আকাশ থেকে (বৃষ্টি আকারে) যা কিছু নাযিল করেন (সেই বৃষ্টির) পানির মাঝে, ভূমির নির্জীব হওয়ার পর তিনি এ পানি দ্বারা তাতে নতুন জীবন দান করেন, অতপর এই ভূখন্ডে সব ধরনের প্রাণীর তিনি আবির্ভাব ঘটান, অবশ্যই বাতাসের প্রবাহ সৃষ্টি করার মাঝে এবং সে মেঘমালা-যা আসমান যমীনের মাঝে বশীভূত করে রাখা হয়েছে, তার মাঝে সুস্থ বিবেকবান সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।

১৬৫. মানুষদের মাঝে কিছু সংখ্যক এমনও রয়েছে, যে আল্লাহর বদলে অন্য কিছুকে তাঁর সমকক্ষ মনে করে, তারা তাদের তেমনি ভালােবাসে যেমনটি শুধু আল্লাহ তায়ালাকেই তাদের ভালােবাসা উচিত; আর যারা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে তারা তাে তাঁকেই সর্বাধিক পরিমাণে ভালােবাসবে; যারা (আল্লাহর আনুগত্য না করে) বাড়াবাড়ি করছে তারা যদি আযাব স্বচক্ষে দেখতে পেতাে (তাহলে এরা বুঝতে পারতাে), আসমান যমীনের সমুদয় শক্তি একমাত্র আল্লাহর জন্যেই, শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কঠোর।

১৬৬. (সেদিন) ভয়াবহ শাস্তি দেখে (হতভাগ্য) লােকেরা (দুনিয়ায়) যাদের তারা মেনে চলতাে, তাদের অনুসারীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলবে (বলবে, আমরা তাে এদের চিনিই না), এদের উভয়ের মধ্যকার (ভংগুর) সব সম্পর্ক সেদিন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

১৬৭. এ (হতাশাগ্রস্ত) অনুসারীরা সেদিন বলবে, আবার যদি একবার আমাদের জন্যে (পৃথিবীতে) ফিরে যাবার (সুযােগ) থাকতাে, তাহলে আজ যেমনি করে (তারা) আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, আমরা (সেখানে গিয়ে) তাদের সাথে (যাবতীয়) সম্পর্কচ্ছেদ করে আসতাম, এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাদের সমগ্র জীবনের এ কর্মকান্ডগুলাে তাদের সামনে একরাশ (লজা ও) আক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরবেন; তাদের জন্যে যে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে আছে, এরা (কখনাে সেই) জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।

১৬৮. হে মানুষ, তােমরা (আল্লাহর) যমীনে যা কিছু হালাল ও পবিত্র জিনিস আছে তা খাও এবং (হালাল হারামের ব্যাপারে) শয়তানের পদাংক অনুসরণ করাে না; অবশ্যই সে তােমাদের প্রকাশ্য দুশমন।

১৬৯. (শয়তানের কাজ হচ্ছে,) সে তােমাদের (সব সময়) পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়, যাতে করে আল্লাহ তায়ালার নামে তােমরা এমন সব কথা বলতে শুরু করো যা সম্পর্কে তােমরা কিছুই জানো না।

১৭০. তাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ তায়ালা যা কিছু নাযিল করেছেন তােমরা তা মেনে চলাে, তারা বলে, আমরা তাে শুধু সে পথেরই অনুসরণ করবো যে পথের ওপর আমরা আমাদের বাপ দাদাদের পেয়েছি; তাদের বাপ-দাদারা যদি (এ ব্যাপারে) কোনাে জ্ঞান বুদ্ধির পরিচয় নাও দিয়ে থাকে, কিংবা তারা যদি হেদায়াত নাও পেয়ে থাকে (তবুও কি তারা তাদের অনুসরণ করবে)?

১৭১. এভাবে যারা (হেদায়াত) অস্বীকার করে, তাদের উদাহরণ হচ্ছে এমন (জন্তুর মতাে), যে (তার পালের আরেকটি জন্তুকে) যখন ডাক দেয়, তখন (পেছনের সেই জন্তুটি তার) চীৎকার ও কান্নার আওয়ায ছাড়া আর কিছুই শুনতে পায় না; (মূলত) এরা (কানেও) শােনে না, (কথাও) বলতে পারে না, (চোখেও) দেখে না, (এ কারণে হেদায়াতের কথাও) এরা বুঝে না।

১৭২. হে মানুষ, তােমরা যারা ঈমান এনেছাে, আমি যেসব পাক পবিত্র জিনিস তােমাদের দান করেছি (নিসংকোচে) তা তােমরা খাও এবং (এ নেয়ামতের জন্যে) আল্লাহ তায়ালার শােকর আদায় করাে, (অবশ্য) যদি তােমরা (হালাল হারামের ব্যাপারে) একান্তভাবে শুধু তারই দাসত্ব করাে।

১৭৩. অবশ্যই তিনি মৃত (জন্তুর গােশত), সব ধরনের রক্ত ও শূকরের গােশত হারাম (ঘােষণা) করেছেন এবং (এমন সব জন্তুও হারাম করছেন) যা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারাে নামে যবাই (কিংবা উৎসর্গ) করা হয়েছে, তবে (সে ব্যক্তির কথা আলাদা) যাকে (এজন্যে) বাধ্য করা হয়েছে, যদি সে ব্যক্তি এমন হয় যে, সে (আল্লাহর আইনের) সীমালংঘনকারী হয় না, অথবা (যেটুকু হলে জীবনটা বাঁচে তার চাইতে বেশী ভােগ করে) অভ্যস্ত হয়ে পড়ে না, তাহলে (এই অপারগতার সময়ে হারাম খেলে) তার ওপর কোনাে গুনাহ নেই; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল, তিনি অনেক মেহেরবান।

১৭৪. (এ সত্ত্বেও) যারা আল্লাহর নাযিল করা (তাঁর) কেতাবের অংশবিশেষ গােপন করে রাখে এবং সামান্য (বৈষয়িক) মূল্যে তা বিক্রি করে দেয়, তারা এটা দিয়ে যা হাসিল করে এবং যা দিয়ে তারা নিজেদের পেট ভর্তি করে রাখে তা (মূলত) আগুন ছাড়া আর কিছুই নয়, (শেষ বিচারের দিনে) আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে কথা বলবেন না, তিনি তাদের (সেদিন) পবিত্রও করবেন না, ভয়াবহ আযাব এদের জন্যেই নির্দিষ্ট।

১৭৫. এরা হেদায়াতের বদলে গােমরাহীর পথ কিনে নিয়েছে, ক্ষমার বদলে তারা আযাব (বেছে) নিয়েছে, এরা ধৈর্যের সাথে (ধীরে ধীরে) জাহান্নামের আগুনের ওপর গিয়ে পড়েছে।

১৭৬. এটা এই জন্যে, আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির জন্যে আগে থেকেই সত্য (দ্বীন) সহকারে কেতাব নাযিল করে দিয়েছেন; যারা এই কেতাবে মতবিরােধে লিপ্ত হয়েছে, তারা সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে অনেক দূরে নিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে।

১৭৭. তােমরা তােমাদের মুখ পূর্ব দিকে ফেরাও বা পশ্চিম দিকে ফেরাও, এতেই কিন্তু সব নেকী নিহিত নেই, তবে আসল কল্যাণ হচ্ছে একজন মানুষ ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, পরকালের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর, (আল্লাহর) কেতাবের ওপর, (কেতাবের বাহক) নবী রসূলদের ওপর এবং আল্লাহর দেয়া মাল সম্পদ তাঁরই ভালােবাসা পাবার মানসে আত্মীয় স্বজন, এতীম মেসকীন ও পথিক মােসাফেরের জন্যে ব্যয় করবে, সাহায্যপ্রার্থী (দুস্থ মানুষ, সর্বোপরি) মানুষদের (কয়েদ ও দাসত্বের) বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার কাজে অর্থ ব্যয় করবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, (দারিদ্র বিমােচনের জন্যে) যাকাত আদায় করবে- (তাছাড়াও রয়েছে সেসব পূণ্যবান মানুষ); যারা প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করে, ক্ষুধা দারিদ্রের সময় ও দুর্দিনে ধৈর্য ধারণ করে, (মূলত) এরাই হচ্ছে সত্যবাদী এবং এরাই হচ্ছে প্রকৃত আল্লাহভীরু মানুষ।

১৭৮. হে মানুষ, যারা ঈমান এনেছাে, তােমাদের জন্যে নরহত্যার 'কেসাস' (তথা প্রতিশােধের নীতি) নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে (এবং তা এই, মৃত) স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি (দণ্ডাজ্ঞা পাবে), দাসের বদলে (পাবে) দাস, নারীর বদলে নারীর ওপর (দন্ড প্রযোজ্য হবে), অবশ্য যে হত্যাকারীকে (-যাকে হত্যা করা হয়েছে তার পরিবারের লােকেরা কিংবা) তার ভাইর পক্ষ থেকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, তার ক্ষেত্রে কোনাে ন্যায়ানুগ পন্থা অনুসরণ (করে তা সম্পন্ন) করতে হবে, এটা তােমাদের মালিকের পক্ষ থেকে দন্ড হ্রাস (করার উপায়) ও তাঁর একটি অনুগ্রহ মাত্র; যদি কেউ এরপরও বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তার জন্যে কঠোর শাস্তি রয়েছে।

১৭৯. হে বিবেকবান লােকেরা, (আল্লাহর নির্ধারিত) এই 'কেসাস'-এর মাঝেই (সত্যিকার অর্থে) তােমাদের (সমাজ ও জাতির) জীবন (নিহিত) রয়েছে, আশা করা যায় (অতপর) তােমরা সতর্ক হয়ে চলবে।

১৮০. (হে ঈমানদার লােকেরা,) তােমাদের জন্যে এই আদেশ জারি করা হয়েছে যে, যদি তােমাদের মাঝে কোনাে লােকের মৃত্যু এসে হাযির হয় এবং সে যদি কিছু সম্পদ রেখে যায়, (তাহলে) ন্যায়ানুগ পন্থায় (তা বন্টনের কাজে) তার পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের জন্যে ওসিয়তের ব্যবস্থা রয়েছে, এটা পরহেযগার লােকদের ওপর (একান্ত) করণীয়।

১৮১. যারা তার (এই) ওসিয়ত শুনে নেয়ার পর (নিজেদের স্বার্থে) তা পাল্টে নিলাে (তাদের জানা উচিত); এটা বদলানাের অপরাধের দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুই শােনেন এবং সব কিছুই তাঁর জানা।

১৮২. (অবশ্য) কারাে যদি অসিয়তকারীর কাছ থেকে (এ ধরনের) আশংকা থাকে যে, (সে পক্ষপাতিত্ব করে) কারাে প্রতি অবিচার করে গেছে, কিংবা (কারাে সাথে এর ফলে) না-ইনসাফী করা হয়েছে, তাহলে (যদি সদিচ্ছা নিয়ে) মূল বিষয়টির সংশােধন করে দেয়, এতে তার কোনাে দোষ হবে না; আল্লাহ তায়ালা বড়ােই ক্ষমাশীল, মেহেরবান।

১৮৩. হে মানুষ, তােমরা যারা ঈমান এনেছে, তােমাদের ওপর রােযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেমনি করে ফরয করা হয়েছিলাে তােমাদের পূর্ববর্তী লােকদের ওপর, যেন তােমরা (এর মাধ্যমে আল্লাহকে) ভয় করতে পারাে;

১৮৪, (রােযা ফরয করা হয়েছে) কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনের জন্যে; (তারপরও) কেউ যদি সে (দিনগুলােতে) অসুস্থ হয়ে যায় কিংবা কেউ যদি (তখন) সফরে থাকে, সে ব্যক্তি সমপরিমাণ দিনের রােযা (সুস্থ হয়ে অথবা সফর থেকে ফিরে এসে) আদায় করে নেবে; (এরপরও) যাদের ওপর (রােযা) একান্ত কষ্টকর হবে, তাদের জন্যে এর বিনিময়ে ফেদিয়া থাকবে (এবং তা) হচ্ছে একজন গরীব ব্যক্তিকে (তৃপ্তিভরে) খাবার দেয়া; অবশ্য যদি কোনাে ব্যক্তি (এর চাইতে বেশী দিয়ে) ভালাে কাজ করতে চায়, তাহলে এ (অতিরিক্ত) কাজ তার জন্যে হবে একান্ত কল্যাণকর; তবে (এ সময়) তােমরা যদি রােযা রাখতে পারাে তাই তােমাদের জন্যে ভালো; তােমরা যদি রােযার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে (যে, এতে কি পরিমাণ কল্যাণ রয়েছে!)

১৮৫. রােযার মাস (এমন একটি মাস)- যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে, আর এই কোরআন (হচ্ছে) মানব জাতির জন্যে পথের দিশা, সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন, (মানুষদের জন্যে হক বাতিলের) পার্থক্যকারী, অতএব তােমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে এতে রােযা রাখবে; (তবে) যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, সে পরবর্তী (কোনাে সময়ে) গুনে গুনে সেই পরিমাণ দিন পূরণ করে নেবে; (এ সুযােগ দিয়ে) আল্লাহ তায়ালা তােমাদের (জীবন) আসান করে দিতে চান, আল্লাহ তায়ালা কখনােই তােমাদের (জীবন) কঠোর করে দিতে চান না। আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তােমরা যেন গুনে গুনে (রােযার) সংখ্যাগুলাে পূরণ করতে পারো, আল্লাহ তায়ালা তােমাদের (কোরআনের মাধ্যমে জীবন যাপনের) যে পদ্ধতি শিখিয়েছেন তার জন্যে তােমরা তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারাে।

১৮৬. (হে নবী,) আমার কোনাে বান্দা যখন তােমাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে (তাকে তুমি বলে দিয়াে), আমি (তার একান্ত) কাছেই আছি; আমি আহ্‌বানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে, তাই তাদেরও উচিত আমার আহ্‌বানে সাড়া দেয়া এবং (সম্পূর্ণভাবে) আমার ওপরই ঈমান আনা, আশা করা যায় এতে করে তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে।

১৮৭. রােযার (মাসের) রাতের বেলায় তােমাদের স্ত্রীদের কাছে যৌন মিলনের জন্যে যাওয়া তােমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে; (কারণ, তােমাদের) নারীরা (যেমনি) তােমাদের জন্যে পােশাক (স্বরূপ, ঠিক) তােমরাও তাদের জন্যে পােশাক (স্বরূপ); আল্লাহ তায়ালা এটা জেনেছেন যে, (রােযার মাসে রাতের বেলায় স্ত্রী সহবাসের ব্যাপারে) তােমরা নিজেদের সাথে খেয়ানত করছিলে, অতপর তিনি (কড়াকড়ি শিথিল করে) তােমাদের ওপর দয়াপরবশ হলেন এবং তােমাদের মাফ করে দিলেন, এখন (তােমরা চাইলে) তাদের সাথে সহবাস করতে পারাে এবং (এ ব্যাপারে) আল্লাহ তায়ালা তােমাদের জন্যে যা লিখে রেখেছেন তা সন্ধান করাে। (রােযায়), তােমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পারাে যতক্ষণ পর্যন্ত রাতের অন্ধকার রেখার ভেতর থেকে ভােরের শুভ্র আলােক রেখা তােমাদের জন্যে পরিষ্কার প্রতিভাত না হয়, অতপর তােমরা রাতের আগমন পর্যন্ত রােযা পূর্ণ করে নাও, মাসজিদে যখন তােমরা এতেকাফ অবস্থায় থাকবে তখন নারী সম্ভোগ থেকে বিরত থেকো; (রােযার ব্যাপারে) এগুলােই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত সীমারেখা, অতপর তােমরা এ (সীমা রেখা)-র কাছেও যেয়াে না; এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তার আয়াতসমূহ মানুষদের জন্যে বর্ণনা করেন, আশা করা যায় তারা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।

১৮৮. তােমরা একে অন্যের অর্থ সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাত করাে না, (আবার) জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে অন্য (মানুষ)-দের সম্পদের কোনাে অংশ ভােগ করার জন্যে (তাকে) বিচারকদের সামনে ঘুষ (কিংবা উপঢৌকন) হিসেবেও পেশ করাে না।

১৮৯. (হে নবী,) তারা তােমাকে নতুন চাদগুলাে (ও তাদের বাড়া কমা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, তুমি তাদের বলে দাও, (মূলত) এগুলাে হচ্ছে মানব জাতির জন্যে (একটি স্থায়ী) সময় নির্ঘন্ট (-যার মাধ্যমে মানুষরা দিন তারিখ জানতে পারে) এবং (জেনে নিতে পারে) হজ্জের সময়সূচীও। (এহরাম বাঁধার পর) পেছন দরজা দিয়ে (ঘরে) প্রবেশ করার মাঝে কোনাে সওয়াব নেই, আসল সওয়াব হচ্ছে- কে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করলাে (সেটা দেখা, এখন থেকে) ঘরে ঢােকার সময় (সামনের) দুয়ার দিয়েই তােমরা এসাে, তােমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে, আশা করা যায় তােমরা সফল হতে পারবে।

১৯০. তােমরা আল্লাহ তায়ালার পথে সেসব লােকের সাথে লড়াই করাে যারা তােমাদের সাথে লড়াই করে, তােমরা (কোনাে অবস্থায়ই) সীমালংঘন করাে না; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।

১৯১. (যুদ্ধের ময়দানে) যেখানেই তােমরা তাদের পাও সেখানেই তােমরা তাদের হত্যা করাে, যে সব স্থান থেকে তারা তােমাদের বের করে দিয়েছে তােমরাও তাদের সেসব স্থান থেকে বের করে দাও (জেনে রেখাে), ফেতনা ফাসাদ নরহত্যার চাইতেও বড়াে অপরাধ, তােমরা কাবা ঘরের পাশে কখনাে তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়াে না- যতােক্ষণ পর্যন্ত তারা সেখানে তােমাদের সাথে যুদ্ধ না করে, তারা যদি তােমাদের সাথে যুদ্ধ করে তাহলে তােমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করাে; (মূলত) এভাবেই কাফেরদের শাস্তি (নির্ধারণ করা হয়েছে)।

১৯২. অতপর তারা যদি (যুদ্ধ থেকে) ফিরে আসে তাহলে (মনে রেখাে), আল্লাহ তায়ালা বড়ােই ক্ষমাশীল ও দয়ার আধার।

১৯৩. তােমরা তাদের সাথে লড়াই করতে থাকো, যতক্ষণ না (যমীনে শেরেকের) ফেতনা অবশিষ্ট থাকে এবং (আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দেয়া) জীবন, বিধান (পুরােপুরি) আল্লাহর জন্যে নির্দিষ্ট হয়ে যায়; যদি তারা (যুদ্ধ থেকে) ফিরে আসে তবে তাদের সাথে আর কোনাে বাড়াবাড়ি নয়, (অবশ্য) যারা যালেম তাদের কথা আলাদা।

১৯৪. একটি সম্মানিত মাসের বদলেই একটি সম্মানিত মাস (আশা করা যায়, কিন্তু) এ সম্মানিত মাসসমূহেও প্রতিশােধ (বৈধ) হবে; (এ সময়) যদি কেউ তােমাদের ওপর বাড়াবাড়ি করে তাহলে তােমরাও তার ওপর তেমনি হস্ত প্রসারিত করাে, যেমনি করে তারা তােমাদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছে, তবে (সর্বদাই) তাকওয়া অবলম্বন করতে থাকো, জেনে রেখাে, যারা (সীমালংঘন থেকে) বেঁচে থাকে আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথেই রয়েছেন।

১৯৫. তােমরা আল্লাহর পথে অর্থ (সম্পদ) ব্যয় করাে, (সম্পদ আঁকড়ে ধরে) নিজেদের হাতেই নিজেদের ধ্বংসের (অতলে) নিক্ষেপ করাে না এবং তােমরা (মানুষদের সাথে) অনুগ্রহ করো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহকারী ব্যক্তিদের ভালােবাসেন।

১৯৬. তােমরা আল্লাহ তায়ালার (সন্তুষ্টির) জন্যে হজ্জ ও ওমরা পালন করাে; (পথে) যদি তােমাদের কোথাও আটকে দেয়া হয় তাহলে সে স্থানে কোরবানীর জন্যে যা কিছু সহজভাবে (হাতের কাছে) পাওয়া যায় তা দিয়েই কোরবানী আদায় করে নাও, (তবে) কোরবানীর পশু তার নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছার আগ পর্যন্ত তােমরা তােমাদের মাথা মুন্ডন করাে না; যদি তােমাদের মধ্যে কোনাে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে, অথবা যদি তার মাথায় কোনাে রােগ থাকে (যে কারণে আগেই তার মাথা মুন্ডন করা প্রয়ােজন হয়), তাহলে সে যেন এর বিনিময় (ফিদিয়া আদায় করে এবং তা) হচ্ছে কিছু রােযা (রাখা) অথবা অর্থ দান করা, কিংবা কোরবানী আদায় করা, অতপর তােমরা যখন নিরাপদ হয়ে যাবে তখন তােমাদের কেউ যদি এক সাথে হজ্জ ও ওমরা আদায় করতে চায়, তার উচিত (তার জন্যে) যা সহজলভ্য তা দিয়ে কোরবানী আদায় করা, যদি কোরবানী করার মতো কোনো পশু সে না পায় (তাহলে) সে যেন হজ্জের সময়কালে তিনটি এবং তােমরা যখন বাড়ি ফিরে আসবে তখন সাতটি- (সর্বমােট) পূর্ণ দশটি রােযা রাখে, এই (সুবিধা)-টুকু শুধু তার জন্যে, যার পরিবার পরিজন আল্লাহর ঘরের আশেপাশে বর্তমান নেই; তােমরা আল্লাহকেই ভয় করাে, জেনে রাখাে, আল্লাহ তায়ালা কঠোর আযাব প্রদানকারী বটে!

১৯৭. হজ্জের মাসসমূহ (সুপরিচিত ও) সুনির্দিষ্ট, অতপর সে সময়গুলাের মধ্যে যে ব্যক্তি হজ্জ (আদায়) করার মনস্থ করবে (সে যেন জেনে রাখে), হজ্জের ভেতর (কোনো) যৌনসম্ভোগ নেই, নেই কোনাে অশ্লীল গালিগালাজ ও ঝগড়াঝাটি। তােমরা যা ভালাে কাজ করাে আল্লাহ তায়ালা তা জানেন; (হজ্জের নিয়ত করলে) এর জন্যে তােমরা পাথেয় যােগাড় করে নেবে, নিসন্দেহে তাকওয়া হচ্ছে (মানুষের) সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয়, অতএব হে বুদ্ধিমান মানুষরা, তােমরা আমাকেই ভয় করাে।

১৯৮. (হজ্জের এ সময়গুলােতে) যদি তােমরা আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করতে (গিয়ে কোনাে অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে) চাও তাতে তােমাদের কোনােই দোষ নেই, অতপর তােমরা যখন আরাফাতের ময়দান থেকে ফিরে আসবে তখন (মােযদালাফায়) 'মাশয়ারে হারাম'-এর কাছে এসে আল্লাহকে স্মরণ করবে, (ঠিক) যেমনি করে আল্লাহ তায়ালা তােমাদের (তাঁকে ডাকার) পথ বলে দিয়েছেন, তেমনি করে তাকে স্মরণ করবে, ইতিপূর্বে তােমরা (আসলেই) পথভ্রষ্টদের দলে শামিল ছিলে।

১৯৯. তারপর তােমরা সে স্থান থেকে ফিরে এসাে, যেখান থেকে অন্য (হজ্জ পালনকারী) ব্যক্তিরা ফিরে আসে, (নিজেদের ভুল ভ্রান্তির জন্যে) আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাে, নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা (গুনাহ খাতা) মাফ করে দেন, তিনি বড়ােই দয়ালু!

২০০, যখন তােমরা তােমাদের (হজ্জের যাবতীয়) আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নেবে তখন (এখানে বসে আগের দিনে) যেভাবে তােমরা তােমাদের পূর্বপুরুষদের (গৌরবের কথা), স্মরণ করতে, তেমনি করে বরং তার চাইতে বেশী পরিমাণে (এখন) আল্লাহকে স্মরণ করাে; অতপর মানুষদের ভেতর থেকে একদল লােক বলে, হে আমাদের মালিক, (সব) ভালাে জিনিস তুমি আমাদের এ দুনিয়াতেই দিয়ে দাও, বস্তৃত (যারা এ ধরনের কথা বলে) তাদের জন্যে পরকালে আর কোনাে পাওনাই (বাকী) থাকে না।

২০১. (আবার) এ মানুষদেরই আরেক দল বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, এ দুনিয়ায়ও তুমি আমাদের কল্যাণ দান করাে, পরকালেও তুমি আমাদের কল্যাণ দান করাে; (সর্বোপরি) তুমি আমাদের আগুনের আযাব থেকে নিষ্কৃতি দাও।

২০২. এ ধরনের লােকদের তাদের নিজ নিজ উপার্জন মােতাবেক তাদের যথার্থ হিস্যা রয়েছে, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।

২০৩. হাতেগনা (হজ্জের) এ কয়টি দিনে (বেশী পরিমাণে) আল্লাহকে স্মরণ করাে; (হজ্জের পর) যদি কেউ তাড়াহুড়াে করে দু'দিনের মধ্যে (মিনা থেকে মক্কায় ফিরে আসে) তাতে (যেমন) কোনাে দোষ নেই, (তেমনি) যদি কোনাে ব্যক্তি সেখানে আরাে বেশী অপেক্ষা করতে চায় তাতেও কোনাে দোষ নেই, (এ নিয়ম হচ্ছে) তার জন্যে, যে আল্লাহকে ভয় করেছে, তােমরা শুধু আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করাে এবং জেনে রাখো, একদিন তােমাদের তার কাছেই জড়াে করা হবে।

২০৪. মানুষদের মাঝে এমন লােকও আছে, পার্থিব জীবনে যার কথা তােমাকে খুবই উৎফুল্ল করবে, তার মনে যা কিছু আছে তার ওপর সে আল্লাহ তায়ালাকে সাক্ষী বানায়, কিন্তু (এর প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে) সে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি।

২০৫. সে যখন (আল্লাহর যমীনের কোথাও) ক্ষমতার আসনে বসতে পারে, তখন সে নানা প্রকারে অশান্তি সৃষ্টি করতে শুরু করে, (যমীনের) শস্য ক্ষেত্র বিনাশ করে, (জীবজন্তুর) বংশ নির্মূল করে; (মূলত) আল্লাহ তায়ালা কখনাে বিপর্যয় (সৃষ্টিকারী মানুষদের) পছন্দ করেন না।

২০৬. যখন তাকে বলা হয়, (ফেতনা ফাসাদ সৃষ্টি না করে) তুমি আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করাে, তখন তাকে (মিথ্যা) অহংকারে পেয়ে বসে যা গুনাহের সাথে (মেশানাে থাকে, মূলত) এ (চরিত্রের) লােকের জন্যে জাহান্নামই যথেষ্ট; আর তা হচ্ছে একান্ত নিকৃষ্টতম ঠিকানা!

২০৭. এ মানুষদের ভেতর (আবার) এমন কিছু লােকও রয়েছে, যারা আল্লাহ তায়ালার (এতােটুকু) সন্তুষ্টি লাভের জন্যে নিজের জীবন (পর্যন্ত) বিক্রি করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা (এ ধরনের) বান্দাদের প্রতি সত্যিই অনুগ্রহশীল!

২০৮. হে ঈমানদার লােকেরা, তােমরা পুরােপুরিই ইসলামে (-র ছায়াতলে) এসে যাও এবং কোনাে অবস্থায়ই (অভিশপ্ত) শয়তানের পদাংক অনুসরণ করাে না; কেননা শয়তান হচ্ছে তােমাদের প্রকাশ্যতম দুশমন!

২০৯. আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন তােমাদের কাছে এসে যাওয়ার পরও যদি তােমাদের পদস্থলন হয়, তাহলে নিশ্চিত জেনে রাখো, আল্লাহ তায়ালা মহা বিজ্ঞ ও পরাক্রমশালী।

২১০. তারা কি (সেদিনের) অপেক্ষা করছে, যখন আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তার ফেরেশতাসহ মেঘের ছায়া দিয়ে (এখানে) আসবেন এবং (তখন তাদের ভাগ্যের চূড়ান্ত) ফয়সালা হয়ে যাবে; (তাছাড়া) সব কয়টি ব্যাপার তাে (সর্বশেষে) তার কাছেই উপনীত হবে।

২১১. তুমি বনী ইসরাঈলদের জিজ্ঞেস করাে, কি পরিমাণ সুস্পষ্ট নিদর্শন আমি তাদের দান করেছি; (আমি তাদের বলেছি,) যার কাছে (হেদায়াতের) নেয়ামত আসার পর সে নিজে তা বদলে ফেলে, (তার জন্যে) আল্লাহ তায়ালা (কিন্তু) কঠোর শাস্তিদানকারী।

২১২. যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করেছে, তাদের জন্যে তাদের এ পার্থিব জীবনটা খুব লােভনীয় করে (সাজিয়ে) রাখা হয়েছে, এরা ঈমানদার ব্যক্তিদের বিদ্রূপ করে, (অথচ) এ ঈমানদার ব্যক্তি- যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করেছে, শেষ বিচারের দিন তাদের মর্যাদা (এদের তুলনায়) অনেক বেশী হবে; আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে অপরিমিত রেযেক দান করেন।

২১৩. (এক সময়) সব মানুষ একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত ছিলাে (পরে এরা নানা দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে তাদের স্রষ্টাকেই ভুলে গেলাে)। তখন আল্লাহ তায়ালা (সঠিক পথের অনুসারীদের) সুসংবাদবাহী আর গুনাহগারদের জন্যে আযাবের সতর্ককারী হিসেবে নবীদের পাঠালেন, তিনি সত্যসহ গ্রন্থও নাযিল করলেন, যেন তা মানুষদের এমন পারস্পরিক বিরােধসমূহের চূড়ান্ত ফয়সালা করতে পারে, যে ব্যাপারে তারা মতবিরােধ করে; তাদের কাছে সুস্পষ্ট হেদায়াত পাঠানাে সত্ত্বেও তারা পারস্পরিক (বিদ্রোহ ও) বিদ্বেষ সৃষ্টির জন্যে মতবিরােধ করেছে, অতপর আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে স্বীয় ইচ্ছায় সেই সঠিক পথ দেখালেন, যার ব্যাপারে ইতিপূর্বে তাদের মধ্যে মতবিরােধ সৃষ্টি হয়েছিলাে; আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে সঠিক পথ দেখান।

২১৪. তােমরা কি মনে করে নিয়েছো যে, তােমরা (এমনি এমনিই) বেহেশতে চলে যাবে? (অথচ) পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের (বিপদের) মতাে কিছুই তােমাদের ওপর এখনাে নাযিল হয়নি, তাদের ওপর (বহু ধরনের) বিপর্যয় ও সংকট এসেছে, কঠোর নির্যাতনে তারা নির্যাতিত হয়েছে, (কঠিন) নিপীড়নে তারা শিহরিত হয়ে ওঠেছে, এমন কি স্বয়ং আল্লাহর নবী ও তার সংগী সাথীরা (অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে) এই বলে (আর্তনাদ করে) উঠেছে, আল্লাহ তায়ালার সাহায্য কবে (আসবে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয়জনদের সান্ত্বনা দিয়ে বললেন), অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার সাহায্য অতি নিকটে।

২১৫. তারা তােমার কাছে জানতে চাইবে তারা কি (কি খাতে) খরচ করবে, তুমি (তাদের) বলে দাও, যা কিছুই তােমরা তােমাদের পিতামাতার জন্যে, আত্মীয় স্বজনদের জন্যে, এতীম অসহায় মেসকীনদের জন্যে এবং মােসাফেরের জন্যে খরচ করবে (তাই আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করবেন); যা ভালাে কাজ তােমরা করবে আল্লাহ তায়ালা তা অবশ্যই জানতে পারবেন।

২১৬. (ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় নিমূল করার জন্যে) যুদ্ধ তােমাদের ওপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, আর এটাই তােমাদের ভালাে লাগে না, কিন্তু (তােমাদের জেনে রাখা উচিত,) এমনও তাে হতে পারে যা তােমাদের ভালাে লাগে না, তাই তােমাদের জন্যে কল্যাণকর, আবার (একইভাবে) এমন কোনাে জিনিস, যা তােমাদের খুবই ভালাে লাগবে, কিন্তু (পরিণামে) তা হবে তােমাদের জন্যে (খুবই) ক্ষতিকর; আল্লাহ তায়ালাই সবচাইতে ভালাে জানেন, তােমরা কিছুই জানাে না।

২১৭. সম্মানিত মাস ও তাতে যুদ্ধ করা সম্পর্কে তারা তােমাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি তাদের বলে দাও, এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ করা অনেক বড় গুনাহর কথা; (কিন্তু আল্লাহর কাছে এর চাইতেও বড়াে গুনাহ হচ্ছে), আল্লাহর পথ থেকে মানুষদের ফিরিয়ে রাখা, আল্লাহকে অস্বীকার করা, খানায়ে কাবার দিকে যাওয়ার পথ রােধ করা ও সেখানকার অধিবাসীদের সেখান থেকে বের করে দেয়া, আর (আল্লাহদ্রোহিতার) ফেতনা ফাসাদ হত্যাকান্ডের চাইতেও অনেক বড়াে (অন্যায়; এ কারণেই) এরা তােমাদের সাথে (এ মাসসমূহে) লড়াই বন্ধ করে দেবে বলে (তুমি) ভেবাে না, তারা তাে পারলে (বরং) তােমাদের সবাইকে তােমাদের (ইসলামী) জীবন বিধান থেকেও ফিরিয়ে নিতে চাইবে; যদি তােমাদের কোনাে ব্যক্তি তার দ্বীন থেকে ফিরে যায়, অতপর সে মৃত্যুমুখে পতিত হয় এমন অবস্থায় যে, সে (সুস্পষ্ট) কাফের ছিলাে, তাহলে তারাই হবে সে লােক যাদের যাবতীয় কর্মকান্ড, দুনিয়া আখেরাতে বিফলে যাবে, আর এরাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।

২১৮. যারা ঈমান এনেছে, যারা হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জেহাদ করেছে, তারাই আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ লাভের আশা করতে পারে; আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু!

২১৯. (হে নবী,) এরা তােমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে; তুমি (তাদের) বলে দাও, এ দুটো জিনিসের মধ্যে অনেক বড় ধরনের পাপ রয়েছে, (যদিও) মানুষের জন্যে (এতে) কিছু (ব্যবসায়িক) উপকারিতাও রয়েছে; কিন্তু এ উভয়ের (ধ্বংসকারী) গুনাহ তার (ব্যবসায়িক) উপকারিতার চাইতে অনেক বেশী; তারা তােমাকে (এও) জিজ্ঞেস করে, তারা (নেক কাজে) কি কি খরচ করবে; তুমি তাদের বলাে, (দৈনন্দিন প্রয়ােজন পূরণের পর) যা অতিরিক্ত (তাই); আল্লাহ তায়ালা এভাবে তােমাদের জন্যে (তাঁর) আয়াতসমূহ খুলে খুলে বলে দেন, যাতে করে তােমরা এ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে পারাে,

২২০. (এ নির্দেশ তােমাদের) ইহকাল ও পরকালের (কল্যাণের) জন্যেই; তােমাকে তারা এতীমদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে; তুমি বলাে, তাদের জন্যে (গৃহীত সব পন্থাই) উত্তম; যদি তােমরা (তােমাদের ধন সম্পদ) তাদের সাথে মিশিয়ে ফেলো (তাতে কোনাে দোষ নেই, কারণ), তারা তাে তােমাদেরই ভাই; আর আল্লাহ তায়ালা - (এটা) ভালাে করেই জানেন, (কে) ন্যায়ানুগ (পন্থায় আছে আর কে) ফাসাদী (স্বভাবের লােক), আল্লাহ তায়ালা চাইলে (এ ব্যাপারে) আরাে অধিক কড়াকড়ি আরােপ করতে পারতেন; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মহান ক্ষমতাবান কুশলী।

২২১. তােমরা (কখনো) কোনাে মােশরেক নারীকে বিয়ে করাে না, যতোক্ষণ না তারা ঈমান আনে, মনে রেখাে, একজন মুসলমান দাসীও একজন (ঐতিহ্যবাহী) মােশরেক নারীর চাইতে উত্তম, যদিও এ (মােশরেক) নারীটি তােমাদের বেশী ভালাে লাগে, (হে মুসলিম মহিলারা), তােমরা কখনাে কোনাে মােশরেক পুরুষদের বিয়ে করাে না যতােক্ষণ না তারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে; (কেননা) একজন ঈমানদার দাসও (একজন উঁচু খান্দানের) মােশরেক ব্যক্তির চাইতে ভালাে, যদিও এ মােশরেক ব্যক্তিটি তােমাদের ভালাে লাগে; (আসলে), এরা তােমাদের জাহান্নামের (আগুনের) দিকেই ডাকবে, আর আল্লাহ তায়ালা হামেশাই তার মােমেন বান্দাদের তাঁর আদেশবলে জান্নাত ও ক্ষমার দিকেই আহ্‌বান জানান এবং (এ জন্যে) তিনি তার আয়াতসমূহ মানুষদের কাছে স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন, যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।

২২২. (হে নবী,) তারা তােমার কাছ থেকে (মহিলাদের মাসিক) ঋতুকাল (ও এ সময় তাদের সাথে দৈহিক মিলন) সম্পর্কে জানতে চাইবে; তুমি (তাদের) বলো, (আসলে মহিলাদের) এ (সময়টা) হচ্ছে একটা (অপবিত্র ও) কষ্টকর অবস্থা, কাজেই ঋতুস্রাবকালে তাদের সংগ বর্জন করবে এবং তােমরা (দৈহিক মিলনের জন্যে) তাদের কাছে যেও না, যতক্ষণ না তারা (পুনরায়) পবিত্র হয়, অতপর তারা যখন পুরাে পাক সাফ হয়ে যায় তখন তােমরা তাদের কাছে যাও- (দৈহিক মিলনের) যে পদ্ধতি আল্লাহ তায়ালা শিখিয়ে দিয়েছেন সেভাবে; আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সেসব লােকদের ভালােবাসেন যারা আল্লাহর দিকেই ফিরে আসে এবং যারা পাক পবিত্রতা অবলম্বন করে।

২২৩. তােমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তােমাদের জন্যে (সন্তান উৎপাদনের) ফসল ক্ষেত্র, তােমরা তােমাদের এই ফসল ক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই গমন করাে, তােমরা (সময় থাকতে) নিজেদের জন্যে কিছু অগ্রিম নেক আমল পাঠিয়ে দাও; তােমরা আল্লাহকে ভয় করাে, জেনে রেখাে, একদিন অবশ্যই তােমাদের সবাইকে তাঁর সামনাসামনি হতে হবে। মােমেনদের তুমি (পুরস্কারের) সুসংবাদ দান করাে।

২২৪. তােমরা তােমাদের (এমন) শপথের জন্যে আল্লাহর নামকে কখনাে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে না, (যার মাধ্যমে) ভালাে কাজ করা, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা এবং মানুষদের মাঝে শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করার কাজ থেকে তােমরা দূরে থাকবে, কারণ আল্লাহ তায়ালা তােমাদের সব কিছুই শােনেন এবং সব কথাই তিনি জানেন।

২২৫. আল্লাহ তায়ালা তােমাদের নিরর্থক শপথের জন্যে কখনাে পাকড়াও করবেন না, তবে তিনি অবশ্যই সে সব শপথের ব্যাপারে তােমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, যা তােমরা মনের সংকল্পের সাথে সম্পন্ন করাে; (বস্তুত) আল্লাহ তায়ালা বড়াে ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল।

২২৬. যেসব লােক নিজ স্ত্রীদের কাছে যাবে না বলে কসম করেছে, তাদের (এ ব্যাপারে মনস্থির করার জন্যে) চার মাসের অবকাশ রয়েছে, (এ সময়ের ভেতর) যদি তারা (তাদের কসম থেকে) ফিরে আসে (তাহলে জেনে রেখাে), আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়াবান!

২২৭, (আর) তারা যদি, (এ সময়ের ভেতর) তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত করে, তাহলে (তারা যেন জেনে রাখে) আল্লাহ তায়ালা সব শােনেন জানেন।

২২৮. তালাকপ্রাপ্তা মহিলারা যেন তিনটি মাসিক ঋতু (অথবা ঋতু থেকে পবিত্র থাকার তিনটি মুদ্দত) পর্যন্ত নিজেদের (পুনরায় বিয়ের বন্ধন) থেকে দূরে রাখে; তাদের গর্ভাশয়ে আল্লাহ তায়ালা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা গােপন করা কোনাে অবস্থায়ই তাদের পক্ষে ন্যায়সংগত হবে না, যদি তারা আল্লাহর ওপর এবং পরকালের ওপর ঈমান আনে; এ সময়ের ভেতর তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তাদের স্বামীরা অবশ্য বেশী অধিকারী, যদি তারা উভয়ে পরস্পর মিলে মিশে চলতে চায়; পুরুষদের ওপর নারীদের যেমন ন্যায়ানুগ অধিকার রয়েছে, তেমনি রয়েছে নারীদের ওপর পুরুষের অধিকার, (পারিবারিক ভরণ পােষণের দায়িত্বের কারণে) তাদের ওপর পুরুষের মর্যাদা এক মাত্রা বেশী রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বিপুল ক্ষমতার মালিক, (তিনি পরম) কুশলী।

২২৯. তালাক দু’বার (মাত্র উচ্চারণ করা যেতে পারে, তৃতীয় বারের আগেই) হয় সম্মান মর্যাদার সাথে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, অথবা সহৃদয়তার সাথে তাকে চলে যেতে দেবে; তােমাদের জন্যে এটা কোনাে অবস্থায়ই ন্যায়সংগত নয় যে, (বিয়ের আগে) যা কিছু তােমরা তাদের দিয়েছাে তা তাদের থেকে ফিরিয়ে নেবে, তবে আল্লাহর নির্দিষ্ট সীমারেখার ভেতরে থেকে স্বামী স্ত্রী একত্রে জীবন কাটাতে পারবে না- এমন আশংকা যদি দেখা দেয় (তখন আলাদা হয়ে যাওয়াটাই উত্তম, এমন অবস্থায়) যদি তােমাদের ভয় হয় যে, এরা আল্লাহর বিধানের গন্ডির ভেতর থাকতে পারবে না; তাহলে স্ত্রী যদি স্বামীকে কিছু বিনিময় দেয় (এবং তা দিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নেয়), তাহলে তাদের উভয়ের ওপর এটা কোন দূষণীয় (বিষয়) হবে না, (জেনে রাখাে) এটা হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা, তা কখনাে অতিক্রম করাে না, আর যারা আল্লাহর দেয়া সীমারেখা লংঘন করে, তারা হচ্ছে সুস্পষ্ট যালেম।

২৩০. যদি সে তাকে তালাক দিয়েই দেয়, তাহলে তারপর (এ) স্ত্রী তার জন্যে (আর) বৈধ হবে না, (হাঁ) যদি তাকে অপর কোনাে স্বামী বিয়ে করে এবং (নিয়মমাফিক তাকে) তালাক দেয় এবং (পরবর্তী পর্যায়ে) তারা যদি (সত্যিই) মনে করে, তারা (এখন স্বামী স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে) আল্লাহর সীমারেখা মেনে চলতে পারবে, তাহলে পুনরায় (বিয়ে বন্ধনে) ফিরে আসাতে তাদের ওপর কোন দোষ নেই; এটা হচ্ছে আল্লাহর (বেঁধে দেয়া) সীমারেখা, যারা (এ সম্পর্কে) অবগত আছে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যে এ নির্দেশ সুস্পষ্ট করে পেশ করেন।

২৩১. যখন তােমরা স্ত্রীদের তালাক দাও এবং তারা যখন তাদের অপেক্ষার সময় (ইদ্দত) পূর্ণ করে নেয়, তখন (হয়) মর্যাদার সাথে তাদের ফিরিয়ে আনাে, নতুবা ভালােভাবে তাদের বিদায় করে দাও, শুধু কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে কখনাে তাদের আটকে রেখাে না, এতে তােমরা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখাই লংঘন করবে, আর যে ব্যক্তি এমন কাজ করে সে (প্রকারান্তরে) নিজের ওপরই যুলুম করে; (সাবধান) আল্লাহর নির্দেশসমূহকে কখনো হাসি তামাশার বস্তু মনে করাে না, স্মরণ করাে (তােমরা ছিলে অজ্ঞ), আল্লাহ তায়ালা তােমাদের ওপর (হেদায়াতের বাণী পাঠিয়ে) নেয়ামত দান করেছেন, (শুধু তাই নয়) তিনি তােমাদের জন্যে জ্ঞান ও যুক্তিপূর্ণ কেতাব নাযিল করেছেন, যা তােমাদের (দৈনন্দিন জীবনের) নিয়ম (কানুন) বাতলে দেয়; (অতএব) তােমরা আল্লাহকে ভয় করাে এবং জেনে রাখাে, তিনি তােমাদের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকেফহাল রয়েছেন।

২৩২. যখন তােমরা তােমাদের স্ত্রীদের তালাক দিয়ে দাও, অতপর (তালাকপ্রাপ্ত) স্ত্রীরাও তাদের নির্ধারিত অপেক্ষার সময় (ইদ্দত পালন) শেষ করে নেয়, তখন তােমরা তাদের (পছন্দমতাে) স্বামীদের সাথে বিয়ের ব্যাপারে বাধা দিয়াে না, যদি তারা (বিয়ের জন্যে) সম্মানজনকভাবে কোনাে ঐকমত্যে পৌছে থাকে; তােমাদের ভেতর যারা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালীন জীবনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের এ আদেশই দেয়া যাচ্ছে; (মূলত) এটা তােমাদের জন্যে অধিক সম্মানের এবং অনেক পবিত্র (কর্মধারা, কারণ); আল্লাহ তায়ালা জানেন, তােমরা কিছুই জানাে না।

২৩৩. মায়েরা পুরাে দুটো বছরই (সন্তানকে) বুকের দুধ খাওয়াবে (এ নিয়ম তার জন্যে), যে ব্যক্তি চায় (সন্তানের) দুধ খাওয়ানােটা পুরােপুরি আদায় করুক; সন্তানের পিতা (দুধ খাওয়ানাের) জন্যে মায়েদের (সম্মানজনক) ভরণ পােষণ (সুনিশ্চিত) করবে; কোনাে ব্যক্তির ওপর তার সাধ্যাতীত বােঝা চাপিয়ে দেয়া যাবে না, (পিতার সংগতির কথা ভাবতে গিয়ে দেখতে হবে,) মায়েরাও যেন (আবার) নিজ সন্তান নিয়ে (বেশী) কষ্টে না পড়ে যায় এবং পিতাকেও যেন সন্তান (জন্ম দেয়ার) কারণে (অযথা) কষ্টে পড়ে যেতে না হয়, (সেটাও খেয়াল রাখতে হবে, সন্তানের পিতার অবর্তমানে) তার উত্তরাধিকারীদের ওপর সন্তানের জন্মদাত্রী মায়ের অধিকার এভাবেই বহাল থাকবে, (তবে কোনাে পর্যায়ে) পিতামাতা যদি পারস্পরিক সম্মতি ও পরামর্শের ভিত্তিতে আগে ভাগেই সন্তানের দুধ ছাড়িয়ে নিতে চায় তাতেও তাদের ওপর কোনাে দোষের কিছু নেই; তােমরা যদি নিজেদের বদলে অন্য কাউকে সন্তানের দুধ খাওয়ানাের জন্যে নিয়ােগ করতে চাও এবং যদি দুগ্ধদাত্রীর পাওনা যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়, তাতেও কোনাে গুনাহ নেই; (সর্বাবস্থায়) আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করাে এবং জেনে রেখাে, তােমরা যা কিছুই করাে আল্লাহ তায়ালা তার সব কিছুই দেখতে পান।

২৩৪. তােমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তারা (যদি তাদের) স্ত্রীদের (জীবিত) রেখে যায় (সে অবস্থায় স্ত্রীরা যদি বিয়ে করতে চায় তাহলে), তারা তাদের নিজেদের চার মাস দশ দিন পর্যন্ত সময় বিয়ে থেকে বিরত রাখবে, (অপেক্ষার) এ সময়টুকু যখন তারা পূরণ করে নেবে, তখন নিজেদের বিয়ের ব্যাপারে তারা ন্যায়ানুগ পন্থায় (যা ইচ্ছা তাই) করতে পারবে এবং এ বিষয়টিতে তাদের ওপর কোনাে গুনাহ নেই; (মূলত) তােমরা যে যাই করাে না কেন, আল্লাহ তায়ালা (তার পুরােপুরি) খবর রাখেন।

২৩৫. (এমন কি সে অপেক্ষার সময় শেষ হওয়ার আগেও) তােমরা কেউ যদি তাকে বিয়ে করার (জন্যে) পয়গাম পাঠাও, কিংবা তেমন কোনাে ইচ্ছা যদি তােমরা নিজেদের মনের ভেতর লুকিয়েও রাখাে, (তাতেও) তােমাদের ওপর কোনাে দোষ নেই; কেননা আল্লাহ তায়ালা এটা ভালাে করেই জানেন, তাদের কথা অবশ্যই তােমরা বার বার মনে করবে, কিন্তু (সাবধান আড়ালে আবড়ালে থেকে) গােপনে তাদের বিয়ের কোনাে প্রতিশ্রুতি দিয়াে না, তাদের সাথে কখনাে তােমাদের কথা বলতে হলে তা বলবে সম্মানজনক পন্থায়; তার ইদ্দত (অপেক্ষার শরীয়তসম্মত সময়) শেষ হবার আগে কখনাে তার সাথে বিয়ের সংকল্প করাে না; জেনে রেখাে, তােমাদের মনের সব (ইচ্ছা অভিসন্ধির) কথা কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ভালাে করেই জানেন, অতএব তােমরা একমাত্র তাঁর থেকেই সতর্ক হও (এবং একথাও জেনে রেখাে), আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ধৈর্যশীল, মহান ক্ষমাশীল!

২৩৬. স্ত্রীদের (শারীরিকভাবে) স্পর্শ করা কিংবা তাদের জন্যে মােহরের কোনাে অংক নির্ধারণের আগেই যদি তােমরা তাদের তালাক দাও, তাতে (শরীয়তের দৃষ্টিতে) তােমাদের ওপর কোনাে গুনাহ নেই, (এ পরিস্থিতিতে মােহরের কোনাে অংক নির্ধারিত না হলেও) তাদের ন্যায়ানুগ পন্থায় কিছু পরিমাণ (অর্থ) আদায় করে দেবে, ধনী ব্যক্তির ওপর (এটা হবে তার) নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী এবং গরীব ব্যক্তির ওপর (হবে) তার সংগতি অনুযায়ী, (এটা) নেককার লােকদের ওপর (আরােপিত) স্ত্রীদের একটি অধিকার বটে।

২৩৭. যদি (এমন হয়,) তােমরা তাদের (শারীরিকভাবে) স্পর্শ করােনি, কিন্তু মােহরের অংক নির্ধারিত করে নিয়েছো, এমতাবস্থায় যদি তােমরা তাদের তালাক দাও, তাহলে তাদের জন্যে (থাকবে) নির্ধারিত মােহরের অর্ধেক পরিমাণ, (যা) আদায় করে দিতে হবে, (হ্যাঁ) তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী নিজের থেকে যদি তােমাদের তা মাফ করে দেয় কিংবা যে (স্বামীর) হাতে বিয়ের বন্ধন রয়েছে সে যদি (স্ত্রীকে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশী দিয়ে) অনুগ্রহ দেখাতে চায় (সেটা ভিন্ন কথা)। (তবে) তােমরা যদি অনুগ্রহ করাে (তাহলে) তা হবে আল্লাহভীতির একান্ত কাছাকাছি! কখনাে একে অপরের প্রতি দয়া ও সহৃদয়তা দেখাতে ভুলাে না; কারণ তােমরা (কে) কি কাজ করাে, তার সব কিছুই আল্লাহ তায়ালা পর্যবেক্ষণ করছেন।

২৩৮. তােমরা নামাযসমূহের ওপর (গভীরভাবে) যত্নবান হও, (বিশেষ করে) মধ্যবর্তী নামায এবং তােমরা আল্লাহর জন্যে বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে যেও।

২৩৯. অতপর যদি তােমরা ভীতিপ্রদ কোনাে অবস্থার সম্মুখীন হও (তখন প্রয়ােজনে তােমরা নামায পড়বে) পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে কিংবা সওয়ারীর ওপর থাকা অবস্থায়, তারপর তােমরা যখন নিরাপদ হয়ে যাবে (স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে), তখন আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করাে, যেভাবে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে স্মরণ করার (নিয়ম) শিখিয়েছেন, যার কিছুই তােমরা ইতিপূর্বে জানতে না।

২৪০. তােমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং সে বিধবা স্ত্রীদের রেখে যায়, (তার উত্তরসুরিদের জন্যে তার) ওসিয়ত থাকবে যেন তারা এক বছর পর্যন্ত তাদের স্ত্রীদের ব্যয়ভার বহন করে, (কোনাে অবস্থায় যেন তার ভিটেমাটি থেকে) তাকে বের করে না দেয়, (এ সময় পূরণ হবার আগে) যদি তারা নিজেরাই বের হয়ে যায় এবং তারা নিজেদের ব্যাপারে কোনাে ভিন্ন সিদ্ধান্ত করে কোনাে সম্মানজনক ব্যবস্থা করে নেয়; তাহলে এ জন্যে তােমাদের ওপর কোনাে দোষ পড়বে না; আল্লাহ তায়ালা (সবার ওপর) পরাক্রমশালী, তিনি বিজ্ঞ কুশলীও!

২৪১. (স্বামীদের ওপর) তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের জন্যে ন্যায়সংগত ভরণ পােষণ পাবার অধিকার থাকবে; আল্লাহ তায়ালাকে যারা ভয় করে এটা তাদের ওপর (আরােপিত) (মহিলাদের) অধিকার।

২৪২. এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর আয়াতগুলাে তােমাদের জন্যে সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, যাতে করে তােমরা বুঝতে পারাে।

২৪৩. তুমি কি (তাদের পরিণতি) দেখােনি যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাে, অথচ তারা (সংখ্যায়) ছিলাে হাজার হাজার, তাদের (এ কাপুরুষােচিত আচরণে রুষ্ট হয়ে) আল্লাহ তায়ালা তাদের বললেন, তােমরা নিপাত হয়ে যাও, (এক সময় তাদের বংশধররা সাহসিকতার সাথে যালেমের মােকাবেলা করলাে)। আল্লাহ তায়ালাও এর পর তাদের (সামাজিক ও রাজনৈতিক) জীবন দান করলেন; আল্লাহ তায়ালা (এ ধরনের সাহসী) মানুষদের ওপর (সর্বদাই) অনুগ্রহশীল; কিন্তু মানুষদের অধিকাংশই (এ জন্যে) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।

২৪৪. (অতএব হে মুসলমানরা, কাপুরুষতা না দেখিয়ে) তােমরা আল্লাহর পথে লড়াই করাে এবং (এ কথা) ভালাে করে জেনে রাখাে, আল্লাহ তায়ালা (যেমন সব) শােনেন, (তেমনি) তিনি সব কিছু জানেনও।

২৪৫. (তােমাদের মধ্য থেকে) কে (এমন) হবে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, (যে কেউই আল্লাহকে ঋণ দেবে সে যেন জেনে রাখে), আল্লাহ তায়ালা (ঋণের সে অংক) তার জন্যে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন; আল্লাহ তায়ালা কাউকে ধনী আবার কাউকে গরীব করেন, (আর সব শেষে) তােমাদের (ধনী গরীব) সবাইকে তাে একদিন তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।

২৪৬. তুমি কি বনী ইসরাঈল দলের কতিপয় নেতা সম্পর্কে চিন্তা করােনি? যখন তারা মূসার আগমনের পর নবীর কাছে বলেছিলাে, আমাদের জন্যে একজন বাদশাহ ঠিক করে দাও, যেন (তার সাথে) আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করতে পারি; (আল্লাহর) সে নবী (তাদের) বললাে, তােমাদের অবস্থা আগের লােকদের মতাে এমন হবে না তাে যে, আল্লাহ তায়ালা তােমাদের লড়াইয়ের আদেশ দেবেন এবং তােমরা লড়াই করবে না, তারা বললাে, আমরা কেন আল্লাহর পথে লড়বাে না, (বিশেষ করে যখন) আমাদের নিজেদের বাড়ি ঘর থেকে আমাদের বের করে দেয়া হয়েছে, (বের করে দেয়া হয়েছে) আমাদের ছেলে মেয়েদেরও, অতপর যখন (সত্যি সত্যিই) তাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হলাে তখন তাদের মধ্য থেকে কতিপয় (সাহসী) বান্দা ছাড়া অধিকাংশই ময়দান ছেড়ে পালিয়ে গেলো; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যালেমদের ভালাে করেই জানেন।

২৪৭. তাদের নবী তাদের বললাে, আল্লাহ তায়ালা, তালুতকে তােমাদের ওপর বাদশাহ (নিযুক্ত) করে পাঠিয়েছেন; (এ কথা শুনে) তারা বললাে, তার কি অধিকার আছে আমাদের ওপর রাজত্ব করার? বাদশাহীর অধিকার (বরং) তার চাইতে আমাদেরই বেশী রয়েছে, (তাছাড়া) অর্থ প্রাচুর্যও তাে তার বেশী নেই; আল্লাহর নবী বললাে, (শাসন ক্ষমতার জন্যে) আল্লাহ তায়ালা তাকেই বাছাই করেছেন এবং (এ কাজের জন্যে) তার শারীরিক যােগ্যতা ও জ্ঞান (প্রতিভা) আল্লাহ তায়ালা বাড়িয়ে দিয়েছেন; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকেই তাঁর রাজক্ষমতা দান করেন; তাঁর ভান্ডার অনেক প্রশস্ত, আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকেই রাজত্ব দেন, আল্লাহ তায়ালা প্রাচুর্যময় ও মহাবিজ্ঞ।

২৪৮. তাদের নবী তাদের (আরাে) বললাে, (আল্লাহ তায়ালা যাকে পাঠাচ্ছেন) তার বাদশাহীর অবশ্যই একটা চিহ্ন থাকবে এবং তা হচ্ছে, সে তােমাদের সামনে (হারানাে) সিন্দুকটি এনে হাযির করবে, এতে তােমাদের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে (সান্ত্বনা ও) প্রশান্তির বিষয় থাকবে, (তাছাড়া) এ (অমূল্য) সিন্দুকে মূসা ও হারূনের পরিবার পরিজনের কিছু রেখে যাওয়া (জিনিসপত্রও) থাকবে, (আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে) তাঁর ফেরেশতারা এ সিন্দুক তােমাদের জন্যে বহন করে আনবে, যদি তােমরা বিশ্বাস স্থাপন করাে তাহলে (তােমরা দেখবে), এসব কিছুতে তােমাদের জন্যে (এক ধরনের) নিদর্শন রয়েছে।

২৪৯. (রাজত্ব পেয়ে) তালুত যখন নিজ বাহিনী নিয়ে এগিয়ে গেলাে, তখন সে (তার লােকদের) বললাে, আল্লাহ তায়ালা একটি নদী (-র পানি) দিয়ে তােমাদের পরীক্ষা করবেন, যদি তােমাদের মধ্যে কেউ এর পানি পান করে তাহলে সে আর আমার দলভুক্ত থাকবে না, আর যে ব্যক্তি তা খাবে না সে অবশ্যই আমার দলভুক্ত থাকবে, তবে কেউ যদি তার হাত দিয়ে সামান্য এক আঁজলা (পানি খেয়ে) নেয় তা ভিন্ন কথা, অতপর (সেখানে গিয়ে) হাতেগােনা কয়জন লােক ছাড়া আর সবাই তৃপ্তিভরে পানি পান করে নিলাে; এ কয়জন লােক- যারা তার কথায় তার সাথে ঈমান এনেছিলাে, তারা এবং তালুত যখন নদী পার হয়ে এগিয়ে গেলাে, তখন তারা (নিজেদের দীনতা দেখে) বলে উঠলাে, হে আল্লাহ, আজ জালুত এবং তার বিশাল বাহিনীর মােকাবেলা করার শক্তি আমাদের নেই; (এ সময় তাদেরই সাথী বন্ধুরা) যারা জানতাে তাদের আল্লাহর সামনে হাযির হতে হবে, তারা বললাে, (ইতিহাসে এমন) অনেকবারই দেখা গেছে, আল্লাহর সাহায্য নিয়ে একটি ক্ষুদ্র দলও বিশাল বাহিনীর ওপর জয়ী হয়েছে; (কেননা) আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন।

২৫০. তারপর (যখন) সে তার সৈন্য নিয়ে (মােকাবেলা করার জন্যে) দাঁড়ালাে, তখন তারা (আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে) বললো, হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের সবরের তাওফীক দান করাে, দুশমনের মােকাবেলায় আমাদের কদম অটল রাখো এবং অবিশ্বাসী কাফেরদের মােকাবেলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো;

২৫১. লড়াইয়ের ময়দানে তারা তাদের পর্যুদস্ত (লাঞ্ছিত) করে দিলাে এবং দাউদ আল্লাহর সাহায্য নিয়ে জালুতকে হত্যা করলাে, আল্লাহ তায়ালা তাকে দুনিয়ার রাজত্ব দান করলেন এবং তাকে (রাজক্ষমতা চালানাের) কৌশলও শিক্ষা দিলেন, আল্লাহ তায়ালা তাকে নিজ ইচ্ছামতাে আরাে (বহু) বিষয়ের জ্ঞান দান করেন; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যদি (যুগে যুগে) একদল লোককে দিয়ে আরেকদল লােককে শায়েস্তা না করতেন, তাহলে এই ভূখন্ড ফেতনা ফাসাদে ভরে যেতাে, কিন্তু (আল্লাহ তায়ালা তা চাননি, কেননা) আল্লাহ তায়ালা এ সৃষ্টিকুলের ওপর বড়ই অনুগ্রহশীল!

২৫২. (এ কেতাবে বর্ণিত) এসব ঘটনা হচ্ছে আল্লাহর এক একটা নিদর্শন (মাত্র), যা যথাযথভাবে আমি তােমাকে শুনিয়েছি (এর কোনাে ঘটনাই তাে তুমি জানতে না); তুমি অবশ্যই আমার পাঠানাে (নবী) রসূলদের একজন!

২৫৩. এই (যে) নবী রসূলরা (রয়েছে)- এদের কাউকে কারাে ওপর আমি বেশী মর্যাদা দান করেছি। এদের মধ্যে এমনও (কেউ) ছিলাে যার সাথে আল্লাহ তায়ালা কথা বলেছেন এবং এর মাধ্যমে কারাে মর্যাদা তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন; আমি মারইয়ামের ছেলে ঈসাকে (কতিপয়) উজ্জ্বল নিদর্শন দিয়েছিলাম, অতপর পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে আমি সাহায্য করেছি; আল্লাহ তায়ালা চাইলে তাদের (আগমনের) পর যাদের কাছে এসব উজ্জ্বল নিদর্শন এসেছে তারা কখনাে মারামারিতে লিপ্ত হতাে না, কিন্তু (রসূলদের পর) তারা (দলে উপদলে) বিভক্ত হয়ে গেলাে, অতপর তাদের মধ্যে কিছু লােক ঈমান আনলাে আবার তাদের কিছু লোক (আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর নবীকে) অস্বীকার করলাে, (অথচ) আল্লাহ পাক চাইলে এরা কেউই যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতাে না, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাই করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন।

২৫৪. হে ঈমানদাররা, তােমরা যারা ঈমান এনেছাে, আমার দেয়া ধন সম্পদ থেকে (আমার পথে) ব্যয় করাে- সে দিনটি আসার আগে, যেদিন কোনাে রকম বেচাকেনা, বন্ধুত্ব ভালােবাসা থাকবেনা- থাকবেনা কোনাে রকমের সুপারিশ। (এ দিনের) অস্বীকারকারীরাই হচ্ছে যালেম।

২৫৫. মহান আল্লাহ তায়ালা, তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনাে ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, তিনি অনাদি এক সত্তা, ঘুম (তাে দূরের কথা, সামান্য) তন্দ্রাও তাঁকে আচ্ছন্ন করে না; আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তার সব কিছুরই একচ্ছত্র মালিকানা তাঁর; কে এমন আছে যে তাঁর দরবারে বিনা অনুমতিতে কিছু সুপারিশ পেশ করবে? তাদের বর্তমান ভবিষ্যতের সব কিছুই তিনি জানেন, তাঁর জানা বিষয়সমূহের কোনাে কিছুই (তাঁর সৃষ্টির) কারাে জ্ঞানের সীমা পরিসীমার আয়ত্তাধীন হতে পারে না, তবে কিছু জ্ঞান যদি তিনি কাউকে দান করেন (তবে তা ভিন্ন কথা), তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য আসমান যমীনের সব কিছুই পরিবেষ্টন করে আছে, এ উভয়টির হেফাযত করার কাজ কখনাে তাঁকে পরিশ্রান্ত করে না, তিনি পরাক্রমশালী ও অসীম মর্যাদাবান।

২৫৬. (আল্লাহর) দ্বীনের ব্যাপারে কোনাে জোর জবরদস্তি নেই, (কারণ) সত্য (এখানে) মিথ্যা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে, তােমাদের মধ্যে যদি কোনাে ব্যক্তি বাতিল (মতাদর্শ)-কে অস্বীকার করে, আল্লাহর (দেয়া জীবনাদর্শের) ওপর ঈমান আনে, সে যেন এর মাধ্যমে এমন এক শক্তিশালী রশি ধরলাে, যা কোনােদিনই ছিঁড়ে যাবার নয়; আল্লাহ তায়ালা (সব কিছুই শােনেন) এবং (সবকিছুই) জানেন।

২৫৭. যারা (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন তাদের সাহায্যকারী (বন্ধু), তিনি (জাহেলিয়াতের) অন্ধকার থেকে তাদের (ঈমানের) আলােতে বের করে নিয়ে আসেন, (অপরদিকে) যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, বাতিল (শক্তিসমূহ)-ই হয়ে থাকে তাদের সাহায্যকারী, তা তাদের (দ্বীনের) আলোক থেকে (কুফরীর) অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়; এরাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।

২৫৮. তুমি কি সে ব্যক্তির অবস্থা দেখােনি যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা (দুনিয়ার) রাষ্ট্র ক্ষমতা দেয়ার পর সে ইবরাহীমের সাথে স্বয়ং মালিকের ব্যাপারেই বিতর্কে লিপ্ত হলাে, (বিতর্কের এক পর্যায়ে) ইবরাহীম বললাে, আমার মালিক তিনি, যিনি (সৃষ্টিকুলকে) জীবন দান করেন, মৃত্যু দান করেন, সে বললাে, জীবন মৃত্যু তাে আমিও দিয়ে থাকি, ইবরাহীম বললাে, (আমার) আল্লাহ তায়ালা পূর্ব দিক থেকে (প্রতিদিন) সূর্যের উদয়ন ঘটান, (একবার) তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে বের করে দেখাও তাে! (এতে সত্য) অস্বীকারকারী ব্যক্তিটি হতভম্ব হয়ে গেলাে, (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যালেম জাতিকে কখনাে পথের দিশা দেন না।

২৫৯, অথবা (ঘটনাটি) কি সেই ব্যক্তির মতাে যে একটি বস্তির পাশ দিয়ে যাবার সময় যখন দেখলাে, তা (বিধ্বস্ত হয়ে) আপন অস্তিত্বের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, (তখন) সে ব্যক্তি বললাে, এ মৃত জনপদকে কিভাবে আল্লাহ তায়ালা আবার পুনর্জীবন দান করবেন, এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা (সত্যি সত্যিই) তাকে মৃত্যু দান করলেন এবং (এভাবেই তাকে) একশ বছর ধরে মৃত (ফেলে) রাখলেন, অতপর তাকে পুনরায় জীবিত করলেন; এবার জিজ্ঞেস করলেন, (বলতে পারাে) তুমি কতােকাল (মৃত অবস্থায়) কাটিয়েছো? সে বললাে, আমি একদিন কিংবা একদিনের কিছু অংশ (মৃত অবস্থায়) কাটিয়েছি, আল্লাহ তায়ালা বললেন, বরং এমনি অবস্থায় তুমি একশ বছর কাটিয়ে দিয়েছাে, তাকিয়ে দেখাে তােমার নিজস্ব খাবার ও পানীয়ের দিকে, (দেখবে) তা বিন্দুমাত্র পচেনি, তােমার গাধাটির দিকেও দেখাে, (তাও একই অবস্থায় আছে, আমি এসব এ জন্যেই দেখালাম), যেন আমি তােমাকে মানুষদের জন্যে (পরকালীন জীবনের) একটি (জীবন্ত) প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি, (মৃত জীবের) হাড় পাঁজরগুলাের দিকে তাকিয়ে দেখাে, (তুমি নিজেই দেখতে পাবে) আমি কিভাবে তা একটার সাথে আরেকটার জোড়া লাগিয়ে (নতুন জীবন) দিয়েছি, অতপর কিভাবে তাকে আমি গােশতের পােশাক পরিয়ে দিয়েছি, অতএব (এভাবে আল্লাহর দেখানাে) এ বিষয়টি যখন তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলাে তখন সে বলে উঠলাে, আমি জানি, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

২৬০. (আরাে স্মরণ করাে,) যখন ইবরাহীম বললাে, হে মালিক, মৃতকে তুমি কিভাবে (পুনরায়) জীবন দাও তা আমাকে একটু দেখিয়ে দাও; আল্লাহ তায়ালা বললেন, কেন, তুমি কি (না দেখে) বিশ্বাস করাে না? ইবরাহীম বললাে, হাঁ (প্রভু, আমি বিশ্বাস করি,) কিন্তু (এর দ্বারা) আমার মন একটু সান্ত্বনা পাবে (এই যা); আল্লাহ তায়ালা বললেন (তুমি বরং এক কাজ করাে), চারটি পাখি ধরে আনো, অতপর (আস্তে আস্তে) এই পাখিগুলােকে তােমার কাছে পােষ মানিয়ে নাও (যাতে ওদের নাম তােমার কাছে পরিচিত হয়ে যায়), তারপর (তাদের কেটে কয়েক টুকরায় ভাগ করাে,) তাদের (কাটা) এক একটি টুকরাে এক একটি পাহাড়ের ওপর রেখে এসাে, অতপর ওদের (সবার নাম ধরে) তুমি ডাকো, (দেখবে জীবন্ত পাখিতে পরিণত হয়ে) ওরা তােমার কাছে দৌড়ে আসবে; তুমি জেনে রাখাে, আল্লাহ তায়ালা মহাশক্তিশালী, বিজ্ঞ কুশলী।

২৬১. যারা নিজেদের ধন সম্পদ আল্লাহ তায়ালার পথে, খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে একটি বীজের মতাে, যে বীজটি বপন করার পর তা থেকে (একে একে) সাতটি শীষ বেরুলাে, আবার এর প্রতিটি শীষে রয়েছে, একশ শস্য দানা; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন; আল্লাহ তায়ালা অনেক প্রশস্ত, অনেক বিজ্ঞ।

২৬২. যারা আল্লাহ তায়ালার পথে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে এবং ব্যয় করে তা প্রচার করে বেড়ায় না, প্রতিদান চেয়ে তাকে কষ্ট দেয় না, (এ ধরণের লােকদের জন্যে) তাদের মালিকের কাছে তাদের জন্যে পুরস্কার (সংরক্ষিত) রয়েছে, (শেষ বিচারের দিন) এদের কোনাে ভয় নেই, তারা (সেদিন) দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।

২৬৩. (একটুখানি) সুন্দর কথা বলা এবং (উদারতা দেখিয়ে) ক্ষমা করে দেয়া সেই দানের চাইতে অনেক ভালাে, যে দানের পরিণামে কষ্টই আসে; আল্লাহ তায়ালা কারােই মুখাপেক্ষী নন, তিনি পরম ধৈর্যশীলও বটে।

২৬৪. হে ঈমানদাররা, তােমরা (উপকারের) খোটা দিয়ে এবং (অনুগৃহীত ব্যক্তিকে) কষ্ট দিয়ে তােমাদের দান সদকা বরবাদ করে দিয়াে না- ঠিক সেই (হতভাগ্য) ব্যক্তির মতাে, যে শুধু লােক দেখানাের উদ্দেশেই দান করে, সে আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর বিশ্বাস করে না; তার (দানের) উদাহরণ হচ্ছে, যেন একটি মসৃণ শিলাখন্ডের ওপর কিছু মাটি (-র আস্তরণ), সেখানে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলাে, অতপর পাথর শক্ত হয়েই পড়ে থাকলাে। (দান খয়রাত করেও) তারা (মূলত) এই অর্জনের ওপর থেকে কিছুই করতে পারলাে না, আর যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তায়ালা তাদের কখনাে সঠিক পথ দেখান না।

২৬৫. (অপরদিকে) যারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যে এবং নিজেদের মানসিক অবস্থা (আল্লাহর পথে) সুদৃঢ় রাখার জন্যে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ হচ্ছে, যেন তা কোনাে উঁচু পাহাড়ের উপত্যকায় একটি (সুসজ্জিত) ফসলের বাগান, যদি সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় তাহলে ফসলের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়, আর প্রবল বৃষ্টিপাত না হলেও শিশির বিন্দুগুলােই (ফসলের জন্য) যথেষ্ট হয়, আল্লাহ তায়ালা ভালাে করেই পর্যবেক্ষণ করেন তােমরা কে কি কাজ করাে।

২৬৬. তােমাদের কেউ কি চাইবে যে, তার কাছে (ফলে ফুলে সুশােভিত ) একটি বাগান থাকুক, যাতে খেজুর ও আংগুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফলমূল থাকবে, তার তলদেশ দিয়ে আবার প্রবাহমান থাকবে কতিপয় ঝর্ণাধারা, আর (এর ফল ভােগ করার আগেই) বাগানের মালিক বয়সের ভারে নুয়ে পড়বে এবং তার কিছু দুর্বল সন্তান থাকবে, (এ অবস্থায় হঠাৎ করে) এক আগুনের ঘূর্ণিবায়ু এসে তার সব (স্বপ্ন) জ্বালিয়ে দিয়ে যাবে; এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তার নিদর্শনগুলাে তােমাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যাতে তােমরা (আল্লাহ তায়ালার এসব কথার ওপর) চিন্তা গবেষণা করতে পারাে।

২৬৭. হে ঈমানদার লোকেরা, তােমরা নিজেরা যা অর্জন করেছে, সে পবিত্র (সম্পদ) এবং যা আমি যমীনের ভেতর থেকে তােমাদের জন্যে বের করে এনেছি, তার থেকে (একটি) উৎকৃষ্ট অংশ (আল্লাহর পথে) ব্যয় করাে, (আল্লাহর জন্যে এমন) নিকৃষ্টতম জিনিসগুলাে বেছে রেখে তার থেকে ব্যয় করাে না, যা অন্যরা তােমাদের দিলে তােমরা তা গ্রহণ করবে না, অবশ্য যা কিছু তােমরা অনিচ্ছাকৃতভাবে গ্রহণ করো তা আলাদা, তােমরা জেনে রেখাে, আল্লাহ তায়ালা (তােমাদের দানের) মুখাপেক্ষী নন, সব প্রশংসার মালিক তাে তিনিই!

২৬৮. শয়তান সব সময়ই তােমাদের অভাব অনটনের ভয় দেখাবে এবং সে (নানাবিধ) অশ্লীল কর্মকান্ডের আদেশ দেবে, আর আল্লাহ তায়ালা তােমাদের তার কাছ থেকে অসীম বরকত ও ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন (এবং সে দিকেই তিনি তােমাদের ডাকছেন), আল্লাহ তায়ালা প্রাচুর্যময় ও সম্যক অবগত।

২৬৯. আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে (একান্তভাবে) তার পক্ষ থেকে (বিশেষ) জ্ঞান দান করেন, আর যে ব্যক্তিকে (আল্লাহ তায়ালার সেই) বিশেষ জ্ঞান দেয়া হলাে (সে যেন মনে করে), তাকে (সত্যিকার অর্থেই) প্রচুর কল্যাণ দান করা হয়েছে, আর প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া (আল্লাহর এসব কথা থেকে) অন্য কেউ কোনাে শিক্ষাই গ্রহণ করতে পারে না।

২৭০. তােমরা যা কিছু খরচ করাে আর যা কিছু (খরচ করার জন্যে) মানত করাে, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা জানেন; যালেমদের (আসলেই) কোনাে সাহায্যকারী নেই।

২৭১. (আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যে) তােমরা যা কিছু দান করাে, তা যদি প্রকাশ্যভাবে (মানুষদের সামনে) করাে তা ভালাে কথা (তাতে কোনাে দোষ নেই), তবে যদি তােমরা তা (মানুষদের কাছে) গােপন রাখাে এবং (চুপে চুপে) অসহায়দের দিয়ে দাও, তা হবে তােমাদের জন্যে উত্তম; (এ দানের কারণে) আল্লাহ তায়ালা তােমাদের বহুবিধ গুনাহ খাতা মুছে দেবেন, আর তােমরা যাই করাে না কেন, আল্লাহ তায়ালা সব কিছু সম্পর্কেই ওয়াকেফহাল রয়েছেন।

২৭২. (যারা তােমার কথা শােনে না,) তাদের হেদায়াতের দায়িত্ব তােমার ওপর নয়, তবে আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকেই সঠিক পথ দেখান, তােমরা যা দান সদকা করাে এটা তােমাদের জন্যেই কল্যাণকর, (কারণ) তােমরা তাে এ জন্যেই খরচ কর যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারাে; (তােমরা আজ) যা কিছু দান করবে (আগামীকাল) তার পুরােপুরি পুরস্কার তােমাদের আদায় করে দেয়া হবে, (সেদিন) তােমাদের ওপর কোনাে রকম যুলুম করা হবে না।

২৭৩, দান সদকা তাে (তােমাদের মাঝে এমন) কিছু গরীব মানুষের জন্যে, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত, তারা (নিজেদের জন্যে) যমীনের বুকে চেষ্টা, সাধনা করতে পারে না, আত্মসম্মানবােধের কারণে কিছু চায় না বলে অজ্ঞ (মূর্খ) লােকেরা এদের মনে করে এরা (বুঝি আসলেই) সচ্ছল, কিন্তু তুমি এদের (বাহ্যিক) চেহারা দেখেই এদের (সঠিক অবস্থা) বুঝে নিতে পারাে, এরা মানুষদের কাছ থেকে কাকুতি মিনতি করে ভিক্ষা করতে পারে না; তােমরা যা কিছুই খরচ করবে আল্লাহ তায়ালা তার (যথার্থ) বিনিময় দেবেন, কারণ তিনি সব কিছুই দেখেন।

২৭৪. যারা দিন রাত প্রকাশ্যে ও সংগােপনে নিজেদের মাল সম্পদ ব্যয় করে, তাদের মালিকের দরবারে তাদের এ দানের প্রতিফল (সুরক্ষিত) রয়েছে, তাদের ওপর কোনাে রকম ভয় ভীতি থাকবে না, তারা (সেদিন) চিন্তিতও হবে না।

২৭৫. যারা সুদ খায় তারা (মাথা উঁচু করে) দাঁড়াতে পারবে না, (দাঁড়ালেও) তার দাঁড়ানাে হবে সে ব্যক্তির মতাে, যাকে শয়তান নিজস্ব পরশ দিয়ে (দুনিয়ার লোভ লালসায়) মােহাচ্ছন্ন করে রেখেছে; এটা এ কারণে, যেহেতু এরা বলে, ব্যবসা বাণিজ্য তাে সূদের মতােই, (একটা কারবারের নাম), অথচ আল্লাহ তায়ালা ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন, তাই তােমাদের যার (যার) কাছে তার মালিকের পক্ষ থেকে (সুদ সংক্রান্ত) এ উপদেশ পৌঁছেছে, সে অতপর সুদের কারবার থেকে বিরত থাকবে, আগে (এ আদেশ আসা পর্যন্ত) যে সুদ সে খেয়েছে তা তাে তার জন্যে অতিবাহিত হয়েই গেছে, তার ব্যাপার একান্তই আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্তের ওপর; কিন্তু (এরপর) যে ব্যক্তি (আবার সুদী কারবারে) ফিরে আসবে, তারা অবশ্যই জাহান্নামের অধিবাসী হবে, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।

২৭৬. আল্লাহ তায়ালা সুদ নিশ্চিহ্ন করেন, (অপর দিকে) দান সদকা (-র পবিত্র কাজ)-কে তিনি (উত্তরােত্তর) বৃদ্ধি করেন; আল্লাহ তায়ালা (তাঁর নেয়ামতের প্রতি) অকৃতজ্ঞ পাপিষ্ঠ ব্যক্তিদের কখনাে পছন্দ করেন না।

২৭৭. তবে যারা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহ তায়ালার ওপর, ঈমান এনেছে এবং ভালাে কাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠা করেছে, যাকাত আদায় করেছে, তাদের ওপর কোনাে ভয় থাকবে না, তারা সেদিন চিন্তিতও হবে না।

২৭৮. হে ঈমনদার লােকেরা, তােমরা (সুদের ব্যাপারে) আল্লাহকে ভয় করাে, আগের (সুদী কারবারের) যে সব বকেয়া আছে তােমরা তা ছেড়ে দাও, যদি সত্যিই তােমরা আল্লাহর ওপর ঈমান আনাে।

২৭৯. যদি তােমরা এমনটি না করাে, তাহলে অতপর আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে (তােমাদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধের (ঘোষণা থাকবে), আর যদি (এখনাে) তােমরা (আল্লাহর দিকে) ফিরে আসো তাহলে তােমরা তােমাদের মূলধন ফিরে পাবার অধিকারী হবে, (সুদী কারবার দ্বারা) অন্যের ওপর যুলুম করাে না, তােমাদের ওপরও অতপর (সুদের) যুলুম করা হবে না।

২৮০. সে (ঋণ গ্রহীতা) ব্যক্তি কখনাে যদি অভাবগ্রস্ত হয়ে।, পড়ে তাহলে (তার ওপর চাপ দিয়াে না, বরং) তার সচ্ছলতা ফিরে আসা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও; আর যদি তা মাফ করে দাও, তাহলে তা হবে তােমাদের জন্যে অতি উত্তম কাজ, যদি তােমরা (ভালােভাবে) জানাে (তাহলে এটাই তােমাদের করা উচিৎ)!

২৮১. সে দিনটিকে ভয় করাে, যেদিন তােমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে, সেদিন প্রত্যেক মানব সন্তানকে (জীবনভর) কামাই করা পাপপুণ্যের পুরােপুরি ফলাফল দিয়ে দেয়া হবে, (কারাে ওপর সেদিন) কোনাে ধরনের যুলুম করা হবে না।

২৮২. হে ঈমানদার বান্দারা, তােমরা যখন পরস্পরের সাথে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্যে ঋণের চুক্তি করাে তখন তা লিখে রাখাে; তােমাদের মধ্যকার যে কোনাে একজন লেখক সুবিচারের ভিত্তিতে (এ চুক্তিনামা) লিখে দেবে, যাকে আল্লাহ তায়ালা লেখা শিখিয়েছেন সে যেন কখনাে লিখতে অস্বীকৃতি না জানায়, (লেখার সময়) ঋণ গ্রহীতা (লেখককে) বলে দেবে কি (কি শর্ত সেখানে) লিখতে হবে, (এ পর্যায়ে) লেখক অবশ্যই তার মালিক আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা উচিত, (চুক্তিনামা লেখার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে) তার কিছুই যেন বাদ না পড়ে; যদি সে ঋণ গ্রহীতা অজ্ঞ মূর্খ এবং (সব দিক থেকে) দুর্বল হয়, অথবা (চুক্তিনামার কথাবার্তা বলে দেয়ার) ক্ষমতাই তার না থাকে, তাহলে তার পক্ষ থেকে তার কোনাে অভিভাবক ন্যায়ানুগ পন্থায় বলে দেবে কি কি কথা লিখতে হবে; (তদুপরি) তােমাদের মধ্য থেকে দুই জন পুরুষকে (এ চুক্তিপত্রে) সাক্ষী বানিয়ে নিয়াে, যদি দুই জন পুরুষ (একত্রে) পাওয়া না যায় তাহলে একজন পুরুষ এবং দুজন মহিলা (সাক্ষী হবে), যাতে করে তাদের একজন ভুলে গেলে দ্বিতীয় জন তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে; এমন সব লােকদের মধ্য থেকে সাক্ষী নিতে হবে যাদেরকে উভয় পক্ষই পছন্দ করবে, (সাক্ষীদের) যখন (সাক্ষ্য প্রদানের জন্যে) ডাকা হবে তখন তারা তা অস্বীকার করবে না; (লেনদেনের সময়) পরিমাণ ছোট হােক কিংবা বড় হােক, তার দিন ক্ষণসহ (লিখেচ রাখতে) অবহেলা করাে না; এটা আল্লাহর কাছে ন্যায্যতর ও সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে অধিক মযবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং (পরবর্তীকালে) যাতে তােমরা সন্দিগ্ধ না হও, তার সমাধানের জন্যেও এটা নিকটতর (পন্থা), যা কিছু তােমরা নগদ (হাতে হাতে) আদান প্রদান করো তা (সব সময়) না লিখলেও তােমাদের কোনাে ক্ষতি নেই, তবে ব্যবসায়িক লেনদেনের সময় অবশ্যই সাক্ষী রাখবে, (দলিলের) লেখক ও (চুক্তিনামার) সাক্ষীদের কখনাে (তাদের মত বদলানাের জন্যে) কষ্ট দেয়া যাবে না; তারপরও তােমরা যদি তাদের এ ধরনের যাতনা প্রদান করাে তাহলে (জেনে রেখাে), তা হবে (তােমাদের জন্যে) একটি মারাত্মক গুনাহ, (এ ব্যাপারে) আল্লাহ তায়ালা তােমাদের সবকিছুই শিখিয়ে দিচ্ছেন, (কেননা) আল্লাহ তায়ালা সবকিছুই জানেন।

২৮৩. যদি তােমরা কখনাে সফরে থাকো এবং (এ কারণে ঋণের চুক্তি লেখার মতাে) কোনাে লেখক না পাও, তাহলে (চুক্তি লেখার বদলে) কোনাে জিনিস বন্ধক রেখে দাও, যখন তােমাদের কোনাে ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে কোনাে বন্ধকী জিনিসের ব্যাপারে বিশ্বাস করে, এমতাবস্থায় যে ব্যক্তিকে বিশ্বাস করা হয়েছে তার উচিত সেই আমানত যথাযথ ফেরত দেয়া এবং (আমানতের ব্যাপারে) আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা, যিনি তার মালিক; তােমরা কখনাে সাক্ষ্য গােপন করাে না, যে ব্যক্তি তা গােপন করে সে অবশ্যই অন্তরের দিক থেকে পাপিষ্ঠ (সাব্যস্ত হয়); বস্তুত আল্লাহ তায়ালা তােমাদের যাবতীয় কাজকর্মের ব্যাপারেই সম্যক অবগত রয়েছেন।

২৮৪. আসমান যমীনে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহ তায়ালার জন্যে, তােমরা তােমাদের মনের ভেতর যা কিছু আছে তা যদি প্রকাশ করাে কিংবা তা গােপন করাে, আল্লাহ তায়ালা (একদিন) তােমাদের কাছ থেকে এর (পুরােপুরিই) হিসাব গ্রহণ করবেন; (এরপর) তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে মাফ করে দেবেন, (আবার) যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি শাস্তি দেবেন; আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

২৮৫. (আল্লাহর) রসূল সে বিষয়ের ওপর ঈমান এনেছে যা তার ওপর তার মালিকের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে, আর যারা (সে রসূলের ওপর) বিশ্বাস স্থাপন করেছে তারাও (সে একই বিষয়ের ওপর) ঈমান এনেছে; এরা সবাই ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর, তাঁর ফেরেশতাদের ওপর, তাঁর কেতাবসমূহের ওপর, তাঁর রসূলদের ওপর । (তারা বলে,) আমরা তাঁর (পাঠানো) নবী রসূলদের কারাে মাঝে কোনাে রকম পার্থক্য করি না; আর তারা বলে, আমরা তাে (আল্লাহর নির্দেশ) শুনেছি এবং (তা) মেনেও নিয়েছি, হে আমাদের মালিক, (আমরা) তােমার ক্ষমা চাই এবং (আমরা জানি,) আমাদের (একদিন) তােমার কাছেই ফিরে যেতে হবে।

২৮৬. আল্লাহ তায়ালা কখনাে কাউকেই তার শক্তি সামর্থের বাইরে কোনাে কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না; সে ব্যক্তির জন্যে ততােটুকুই বিনিময় রয়েছে যতােটুকু সে (এ দুনিয়ায়) সম্পন্ন করবে, আবার সে যতােটুকু (মন্দ দুনিয়ায়) অর্জন করেছে তার ওপর তার (ততােটুকু শাস্তিই) পতিত হবে; (অতএব, হে মােমেন ব্যক্তিরা, তােমরা এই বলে দোয়া করাে,) হে আমাদের মালিক, যদি আমরা কিছু ভুলে যাই, (কোথাও) যদি আমরা কোনাে ভুল করে বসি, তার জন্যে তুমি আমাদের পাকড়াও করাে না, হে আমাদের মালিক, আমাদের পূর্ববর্তী (জাতিদের) ওপর যে ধরনের বােঝা তুমি চাপিয়েছিলে তা আমাদের ওপর চাপিয়ে না, হে আমাদের মালিক, যে বােঝা বইবার সামর্থ আমাদের নেই তা তুমি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়াে না, তুমি আমাদের ওপর মেহেরবানী করাে। তুমি আমাদের মাফ করে দাও। আমাদের ওপর তুমি দয়া করাে। তুমিই আমাদের (একমাত্র আশ্রয়দাতা) বন্ধু, অতএব কাফেরদের মােকাবেলায় তুমি আমাদের সাহায্য করাে।

অনুবাদকঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ।
প্রকাশনাঃ আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।

No comments:

Post a Comment