দীর্ঘ দুই সপ্তাহ ধরে
সীমাহীন ব্যাকুলতা নিয়ে মদীনাবাসি অপেক্ষা করছেন মহানবীর (সাঃ) জন্য। মহানবীর (সাঃ)
মদীনা প্রবেশের খবর মদীনায় ছড়িয়ে পড়ার পর সাজ সাজ রব পড়ে গেল মদিনার ঘরে ঘরে
মহানবীকে (সাঃ) স্বাগত জানানোর জন্য।
সেদিন ছিল শুক্রবার।
মহানবী কুবা পল্লী থেকে মদীনা যাত্রা করলেন। তাঁর সামনে-পিছনে, ডানে-বামে মুসলিম জনতার সারিবদ্ধ মিছিল।
মহানবী বনু সালেম গোত্রের কাছে পৌঁছলেন, তখন জুমআর নামাযের সময় হলো। ইসলামের প্রথম জুমআর নামায
এটাই। মহানবী জুমআর নামাযে যে খুতবা দিলেন, সেটা ইসলামের ইতিহাসে প্রথম
খুতবা। সে ঐতিহাসিক খুতবায় মহানবী বললেনঃ
“সকল মহিমা গরিমা একমাত্র
আল্লাহর। তাঁরই মহিমা কীর্তন করি, তাঁরই
সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁরই
নিকটে ক্ষমা ভিক্ষা করি এবং সৎপথ চিনবার শক্তি তাঁর নিকটই যাচঞা করি। তাঁর
প্রতিই ঈমান আনবো এবং তাঁর আদেশ অমান্য করবোনা। যে তাঁর বিদ্রোহী তাঁকে
আপনার বলে মনে করবো না।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, এক আল্লাহ ছাড়া
অন্য কোন ইলাহ নেই, এবং
এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ
তাঁর দাস ও প্রেরিত
রাসূল। যখন দীর্ঘকাল পর্যন্ত জগত রাসূলের উপদেশ থেকে বঞ্চিত ছিল, যখন জ্ঞান জগত থেকে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল,
যখন মানবজাতি
ভ্রষ্টতা ও অনাচারে জর্জরিত হচ্চিল, তাদের মৃত্যু ও কঠোর কর্মফল ভোগের সময় যখন নিকটবর্তী হয়ে আসছিল
এহেন সময় আল্লাহ সেই রাসূলকে সত্যের আলো ও জ্ঞান দিয়ে বিশ্ববাসীর নিকট
প্রেরণ করেছেন।
আল্লাহর ও তাঁর
রাসূলের অনুগত হয়ে চললেই মানব জীবনের চরম সফলতা লাভ হবে। পক্ষান্তরে
আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হলে ভ্রষ্ট, পতিত ও পথহারা হয়ে পড়তে হবে।
সকলে নিজকে এমনভাবে
গঠিত ও সংশোধিত
করে নাও, যেন
পাপজনিত কাজের প্রবৃত্তিই তোমাদের হৃদয় থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তোমাদের প্রতি এই আমার
চরম উপদেশ। পরকাল চিন্তা ও তাকওয়া অবলম্বন করা অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর উপদেশ এক
মুসলিম অন্য মুসলিমকে দিতে পারে না। যে সব দুষ্কর্ম থেকে আল্লাহ
তোমাদের বিরত থাকতে আদেশ করেছেন, সাবধান,
তাঁর নিকটেও যেও না। এই-ই
হচ্ছে উৎকৃষ্টতম উপদেশ, এই-ই
হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম জ্ঞান।
আল্লাহ সম্পর্কে
তোমার কর্তব্য আছে। তাঁর সাথে তোমার যে সম্বন্ধ আছে, তুমি তা ভুলে যেও না। সে ব্যাপারে
যেখানে ত্রুটি ঘটে যায়, তুমি
প্রকাশ্যে ও গোপনে তার সংশোধন কর, তোমার
সে সম্বন্ধকে তুমি দৃঢ় ও নিখুঁত করে নাও- এই হচ্ছে জ্ঞান এবং
পরজীবনের চরম সম্বল।
স্মরণ রেখো,
এর অন্যথা করলে,
তোমরা কর্মফলের
সম্মুখীন হতে ভীত হলেও তার হাত থেকে ছাড়া পাবার উপায় নেই। আল্লাহ প্রেমময় ও
দয়াময়, তাই
এই কর্মফলের অপরিহার্য পরিণামের কথা পূর্ব থেকেই তোমাদের
জানিয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের কথাকে সত্যে পরিণত করবে,
কার্যত নিজের
প্রতিজ্ঞা পালন করবে, তার
সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, 'আমার
কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই।'
[সূরা ক্বাফঃ ২৯]।
অতএব তোমরা মুখ্য ও গৌণ, প্রকাশ্য
ও গুপ্ত সব বিষয়েই তাকওয়ার সন্ধান কর। তাকওয়াই পরম ধন, তাকওয়াতেই মানবতার চরম সাফল্য।
সঙ্গত ও সংযত ভাবে
পৃথিবীর সকল সুখ উপভোগ কর, তিনি
তোমাদেরকে তাঁর কিতাব দিয়েছেন, তাঁর
পথ দেখিয়েছেন। এখন কে প্রকৃতপক্ষে সত্যের সেবক আর কে কেবল মূর্খের
দাবীসর্বস্ব মিথ্যাবাদী তা জানা যাবে। অতএব আল্লাহ যেমন তোমাদের মঙ্গল করেছেন,
তোমরাও সেরূপ আল্লাহর
মঙ্গল সাধনে প্রবৃত্ত
হও। আল্লাহর শত্রু- পাপাচারীদেরকে শত্রু বলে জ্ঞান কর 'এবং আল্লাহর নামে যথাযথ জিহাদে প্রবৃত্ত হও।
(এই কাজের জন্য) তিনি তোমাদের নির্বাচিত করে নিয়েছেন এবং তিনি তোমাদের
নাম রেখেছেন মুসলিম।' [সূরা আল-হাজ্জঃ
৭৮]। কারণ (নিজের কর্মফলে ও প্রকৃতির অপরিহার্য বিধানে) যার ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী, সে সত্য, ন্যায় ও যুক্তি মতে ধ্বংস প্রাপ্ত হোক।
আর যে জীবন
লাভ করবে, সে
সত্য, ন্যায় ও যুক্তি
সহায়তায় জীবনলাভ করুক। নিশ্চয় জেনো, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন শক্তি নেই।
অতএব, সদা-সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ
করো, আর পরকালের জন্য
সম্পদ সঞ্চয় করে নাও। আল্লাহর সাথে তোমাদের সম্বন্ধ কি, এ যদি তুমি বুঝতে পার, বুঝে নিয়ে তাকে দৃঢ় ও নিখুঁত করে নিতে পার,
তাঁর প্রেম স্বরূপে
সম্পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে আত্মনির্ভর করতে পার, তাহলে তোমার প্রতি মানুষের যে ব্যবহার
তার ভার তিনিই গ্রহণ করবেন। কারণ মানুষের উপর আল্লাহরই আজ্ঞা প্রচলিত হয়,
আল্লাহর উপর মানুষের
হুকুম চলে না, মানব
তার প্রভু নয়, কিন্তু
তিনি তাদের প্রভু। আল্লাহু আকবর, সেই মহিমান্বিত
আল্লাহ ব্যতীত আর কারও হাতে কোন শক্তি নেই।”
No comments:
Post a Comment