নবুওয়াতের গুরু
দায়িত্ব নিয়ে ধীর যাত্রা শুরু হয়েছে মহানবীর (সাঃ)। গোটা ধরণীটাই অন্ধকারে নিমজ্জিত,
তিনিই মাত্র আলোর এক
শিখা। সমূলে জেঁকে বসা ঐ অন্ধকার তার আপ্রাণ হিংস্রতা নিয়ে আলোর অস্তিত্ব বিনাশে
উদ্যত। এরই মধ্যে
শুরু হলো আলোর সন্তর্পণ যাত্রা। তিন বছর ধরে প্রচার চললো সংগোপনে। আলোর
কাফিলায় এসে শামিল হলো খাদিজা, আলী,
জায়েদ, উম্মে আয়মান, আবুবকর সিদ্দিক, উসমান, জোবায়ের, তালহা, আবু উবায়দা, আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ (রাঃ) প্রমুখ।
কিন্তু প্রকাশের জন্যই যে আলোর আগমন তার আত্মগোপন আর কত? প্রতিক্রিয়ার
মুকাবিলা এবং বাঁধার পাহাড় ডিঙ্গানোই যে পথের
স্বভাবধর্ম তা কি আত্মপ্রকাশ না করে পারে? পারে
কি আপোষ করে চলতে? এল অবশেষে
সে প্রকাশের দিন। নাযিল হলো আল্লাহ তাআলার নির্দেশ…… “তোমার
প্রতি যে আদেশ তা তুমি স্পষ্ট করে শুনিয়ে দাও
এবং মুশরিকদের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করো না।”
প্রকাশ্য দাওয়াতের প্রথম
সম্মেলন মহানবী (সাঃ) ডাকলেন তাঁর বাড়ীতেই। মহানবীর দাওয়াতে বনু হাশিম
বংশের প্রায় ৪০ জন প্রধান ব্যক্তি হাজির হলেন তাঁর গৃহে। গোপন প্রচারের
খবর কেউ কেউ জানতেন, জানতো
আবু লাহাবও। সে আঁচ করতে পেরেছিল নবী (সাঃ) কি বলতে চান এ সম্মেলনে। তাই খাওয়া-দাওয়া শেষে যেই বলতে
শুরু করলেন, হট্টগোল
বাঁধালো আবু লাহাব। বললো সে, “দেখ
মুহাম্মাদ, তোমার
চাচা, চাচাত ভাই
সকলেই এখানে উপস্থিত, চপলতা
ত্যাগ কর। তোমার জানা উচিত, তোমার
জন্য সমস্ত
আরব দেশের সাথে শত্রুতা করার শক্তি আমাদের নেই। তোমার আত্মীয়-স্বজনের পক্ষে
তোমাকে ধরে কারারুদ্ধ করে রাখা উচিত। তোমার ন্যায় স্ববংশের এমন সর্বনাশ
কেউ করেনি।”
সেদিনের সম্মেলন ভেঙে
গেল। মহানবী (সাঃ) তাঁর বাড়িতে ইসলামের বাণী প্রচারের জন্য আবার
সম্মেলন ডাকলেন- দাওয়াতের দ্বিতীয় সম্মেলন। বনু হাশিমের প্রধানবর্গ আবার
হাজির হলেন। হাজির হলেন আবু লাহাবও। এবার মহানবী (সাঃ) আবু লাহাবকে কোন
কূটনীতির সুযোগ দিলেন না। খানা পিনার পরই উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর দাওয়াত পেশ করলেন।
তিনি বললেন, “সমবেত
ব্যক্তিগণ, আমি আপনাদের
জন্য ইহকাল-পরকালের এমন কল্যাণ এনেছি যা আরবের কোন ব্যক্তি তাঁর স্বজাতির
জন্য আনেনি। আমি আল্লাহর আদেশে সেই কল্যাণের দিকে আপনাদের আহ্বান করছি।
সত্যের এ মহা সাধনায়, কর্তব্যের
কঠোর পরীক্ষায় আপনাদের মধ্য থেকে কে কে আমার সহায় হবেন, কে আমার সাথী হবেন?”
মজলিশে কারো মুখে কোন
কথা নেই।
একক এক ব্যক্তির কণ্ঠ থেকে আসা সত্যের বজ্র নির্ঘোষ বনু হাশিমের শক্তিমান
প্রবীণদের যেন হতবাক করে দিয়েছে। বাচাল আবু লাহাবও সে মৌনতা ভাঙতে পারলো
না, পারলো না সশব্দে সে
দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করতে। হকের এ কণ্ঠের দাওয়াত যেন শত কণ্ঠের শক্তি নিয়ে ছড়িয়ে
পড়লো।
অবশেষে মৌনতা ভাঙল। ভাঙলেন
আবু তালিব পুত্র মহানবীর চাচাতো ভাই বালক আলী। সবাইকে শুনিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে
তিনি বললেন, “এই
মহাব্রত গ্রহণের জন্য আমি প্রস্তুত আছি।”
বনু হাশিমের কোনও
প্রধানের মুখে কোন কথাই আর জোগাল না। শুধু আবু লাহাবই প্রকাশ্য দাওয়াতের বিরুদ্ধে
প্রতিক্রিয়ার প্রথম প্রকাশ ঘটিয়ে, রাসূলকে
নয়, আবু তালিবকে বললেন,
“দেখছেন আপনার
ভ্রাতুষ্পুত্রের কল্যাণে এখন আপনাকে স্বীয় বালকপুত্রের অনুগত হয়ে চলতে হবে।”
কিন্তু আবু লাহাবের এ
প্রতিক্রিয়া বিজয়ীর
নয়, বিজিতের। দাওয়াতে
হকের প্রথম বিজয় নিশান উড়ল এইভাবেই।
লেখকঃ আবুল আসাদ (আমরা সেই সে জাতি-দ্বিতীয় খন্ড)
No comments:
Post a Comment