Saturday, January 5, 2019

আবু মা’বাদ না দেখেই চিনলেন মহানবীকে

মদীনার পথে দানশীল ও পরহিতৈষী আবু মাবাদের আশ্রম। ছোট তাঁবু আর এক পাল মেষ নিয়ে তার সংসার। শ্রান্ত-ক্লান্ত পথিকদের তাঁরা আশ্রয় দেন। সাধ্যমত খাদ্য ও পানীয় দিয়ে পথিকদের তাঁরা সেবা করেন। মহানবীর (সাঃ) কাফেলাও গিয়ে সেখানে হাজির হলো।

আবু মাবাদ তখন গৃহে ছিলেন না, মেষ চরাতে গেছেন দূর প্রান্তরে।

আবু মাবাদের স্ত্রী উম্মে মাবাদকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কিছু খাদ্য-পানীয় কিনতে পাওয়া যাবে কিনা।

উম্মে মাবাদ খুবই দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, “না, কোন খাবার নেই। থাকলে মূল্য দিতে হতো না। আমি নিজেই ওগুলো হাজির করতাম।

উম্মে মাবাদের তাবুর পাশে শীর্ণকায় একটা ছাগী শুয়ে ছিল। মহানবী (সাঃ) উম্মে মাবাদকে বললেন, “ঐ ছাগী দোহন করে দুধ নেয়া যেতে পারে কি?”

উম্মে মাবাদ আনন্দের সাথেই বললেন, ‘ছাগীটি শীর্ণ দুর্বল বলে পালের সাথে যায়নি। যদি স্তনে তার দুধ থাকে তাহলে নিতে পারেন।

মহানবী (সাঃ) বিসমিল্লাহ বলে দুধ দোহন শুরু করলেন। যে দুধ পাওয়া গেল তা কাফেলার সদস্যদের পরিতৃপ্তির জন্য যথেষ্ট হলো।

মহানবীসহ (সাঃ) কাফেলার সদস্যগণ নিজেরা খেয়ে কিছুটা দুধ গৃহকর্তার জন্য রেখে দিলেন।

প্রয়োজন সেরে উম্মে মাবাদকে ধন্যবাদ দিয়ে মহানবীর (সাঃ) কাফেলা আবার মদিনার পথে যাত্রা করল। মহানবী (সাঃ) চলে যাবার অল্পক্ষণ পরেই আবু মাবাদ মেষ পাল নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তিনি বাটিতে টাটকা দুধ দেখে এ দুধ কোথেকে এল জিজ্ঞাসা করলেন।

উম্মে মাবাদ মহানবীর (সাঃ) কাফেলার আগমন, শীর্ণকায় ছাগী থেকে দুধ দোহনসহ সব ঘটনা খুলে বললেন। কাফেলার লোকদেরও বর্ণনা দিলেন উম্মে মাবাদ। বেদুঈন জীবনের মুক্ত মন নিয়ে সহজ সাবলীল ভঙ্গিতে মহানবীর (সাঃ) যে বর্ণনা উম্মে মাবাদ দিয়েছিলেন তা এখানে তুলে ধরছি।

তাঁর উজ্জ্বল বদনকান্তি, প্রফুল্ল মুখশ্রী, অতি ভদ্র ও নম্র ব্যবহার। তাঁর উদরে স্ফীতি নেই, মস্তকে খালিত্ব নেই। সুন্দর, সুদর্শন। সুবিস্তৃত কৃষ্ণবর্ণ নয়নযুগল, কেশ দীর্ঘ ঘনসন্নিবেশিত। তাঁর স্বর গম্ভীর। গ্রিবা উচ্চ। নয়নযুগলে যেন প্রকৃতি নিজেই কাজল দিয়ে রেখেছে। চোখের পুতুলি দুইটি সদা উজ্জ্বল, ঢল ঢল। ভ্রূযুগল নাতিসূক্ষ্ণ, পরস্পর সংযোজিত। স্বতঃকুঞ্চিত ঘন কেশদাম। মৌনাবলম্বন করলে তাঁর বদন মণ্ডল থেকে গুরুগম্ভীর ভাবের অভিব্যক্তি হতে থাকে। আবার কথা বললে মনপ্রাণ মোহিত হয়ে যায়। দূর থেকে দেখলে কেমন মোহন কেমন মনোমুগ্ধকর সে রূপরাশি, নিকটে এলে কত মধুর কত সুন্দর তাঁর প্রকৃতি। ভাষা অতি মিষ্ট ও প্রাঞ্জল, তাতে ত্রুটি নেই, অতিরিক্ততা নেই, বাক্যগুলো যেন মুক্তার হার। তাঁর দেহ এত খর্ব নহে যা দর্শনে ক্ষুদ্রত্বের ভাব মনে আসে বা এমন দীর্ঘ নহে যা দেখতে বিরক্তি বোধ করে, তিনি নাতিদীর্ঘ নাতিখর্ব। পুষ্টি ও পুলকে সে দেহ যেন কুসুমিত নববিটপীর সদ্য পল্লবিত নবীন প্রশাখা। সে মুখশ্রী বড় সুন্দর, বড় সুদর্শন ও সুমহান। তাঁর সঙ্গীরা সর্বদাই তাঁকে বেষ্টন করে থাকে। তাঁরা তাঁর কথা আগ্রহ সহকারে শ্রবণ করে এবং তাঁর আদেশ উৎফুল্ল চিত্তে পালন করে।

স্ত্রীর মুখে এই বর্ণনা শুনে আবু মাবাদ উত্তেজিত স্বরে বলে উঠলেন, “আল্লাহর শপথ, ইনি নিশ্চয়ই কুরাইশদের সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে আমরা সত্য-মিথ্যা অনেক কিছু শ্রবণ করেছি। হায় আমার অদৃষ্ট, আমি অনুপস্থিত ছিলাম। উপস্থিত থাকলে আমি তাঁর আশ্রয় নিতাম, আমি বলছি, সুযোগ পেলে এখনও তা করব।

লেখকঃ আবুল আসাদ (আমরা সেই সে জাতি-দ্বিতীয় খন্ড)

No comments:

Post a Comment