স্পেনের আকাসে-বাতাসে
তখন গথিক শাসনে নিষ্পেষিত মানুষের আর্তনাদ। স্পেনের অত্যাচারিত জনগণ গোপনে মুসলিম
সেনাধ্যক্ষ মূসার নিকট আবেদন পাঠাল, অত্যাচারের হাত থেকে আমাদের ত্রাণ করুন। মূসা ছিলেন উত্তর আফ্রিকায়
খলীফা ওয়ালিদের
প্রতিনিধি। ৭১১ সালে মূসার আহ্বানে তারিক সাগরের তীরে এক পর্বতের বুকে
এসে পৌঁছলেন। তারিকের নাম বহন করে আজ পর্যন্ত এই স্থান জাবালে তারিক (তারিকের পর্বত) বা জিব্রালটার নামে
খ্যাত। সাগর পার হয়ে তারিক স্পেনের ভূমি স্পর্শ করলেন। নবসূর্যের রশ্মিপাত এই প্রথম স্পেনের
ভূমিদেশকে অভিনন্দিত করল।
স্পেনরাজ রডারিক এই
মুষ্টিমেয় মুর সৈন্যের আবির্ভাবে তিলমাত্র বিচলিত হলেন না। তাঁর বিপুল সৈন্যসামন্ত যে অতি
সহজেই এ নবাগত মুরদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে সে বিষয়ে তাঁর সন্দেহ ছিলনা।
তারিক দেখলেন, তাঁর
দুঃসাহসী রোমাঞ্চপ্রিয়
বীর সৈনিকদের মনেও দ্বিধা উপস্থিত হয়েছে। স্পেনের এত সৈন্যবল, তার সম্মুখে কি তাঁরা? তারিক সৈন্যদের এই বিচলিত ভাব দেখে এক
অদ্ভুত কাজ করে
বসলেন। যে সকল তরীতে তিনি জিব্রালটার প্রণালী পার হয়েছিলেন, তা সমস্ত নষ্ট করে ফেললেন।
তিনি পিছনের পথ বন্ধ
করে মুর সৈন্যদের সম্বোধন করে বললেন, ‘বন্ধুগণ, অনন্ত গভীর সমুদ্র আমাদের পিছনে গর্জন
করে চলছে। আজ যদি কাপুরুষের মত ফিরে যাই তবে সাগরের অতলগর্ভে আমাদের ডুবে যেতে
হবে। আর যদি দেশ,
জাতি ও ধর্মের গৌরব
রক্ষা করে সত্যের পতাকা উড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে চলে জয়লাভ করি, তবে জয়মালা আমাদের বরণ করে নেবে। নয়ত
মৃত্যুবরণ করে শহীদের দরজা লাভ করব। এই জীবন-মরণ সংগ্রামে কে আমার
অনুগামী হবে?’
সকলেই সেনাপতির
আহ্বানে এক বাক্যে সম্মতি জানালো। ‘আল্লাহু আকবর’ আল্লাহ
মহান- এই
ধ্বনি করতে করতে মুর সৈন্য বিপুল স্পেনীয় বাহিনীর মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সে
প্রচন্ড আক্রমণের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে স্পেন বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত
হলো।
স্পেন বিজয়ী তারিকের
অপূর্ব শৌর্যবীর্য ও সাহস দেখে স্পেন সেনাপতি থিওডমির বিস্মিত ও
স্তম্ভিত হয়ে রাজা রডারিককে লিখে পাঠালেন, “সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও এই অদ্ভুত
শৌর্যবীর্যের অধিকারী নবাগতদের অগ্রগতি আমি কিছুতেই রোধ করতে পারলাম
না।”
লেখকঃ আবুল আসাদ (আমরা সেই সে জাতি-দ্বিতীয় খন্ড)
No comments:
Post a Comment