ইউরোপ থেকে তৃতীয়
ক্রুসেডারদের নতুন দল এসে ফিলিস্তিনে ক্রুসেডারদের শক্তি বৃদ্ধি করছে।
ওদিকে সুলতান
সালাহউদ্দীন খন্ড-বিখন্ড মুসলিম শক্তিকে সংঘবদ্ধ করে তুলেছেন।
১১৮২-৮৩ সন। মিসর সহ
সমগ্র এশিয়া-মাইনর ও তুর্কী অঞ্চল প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সুলতান সালাহউদ্দীনের
পতাকাতলে আশ্রয়লাভ করল। অতঃপর এদিক থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে সুলতান এবার মনোযোগ দিলেন
ক্রুসেডারদের দিকে।
সমগ্র ফিলিস্তিন তখনও
তাদের করতলগত।
ফিলিস্তিনের
প্রত্যেকটি শহরে হাজার হাজার মুসলিম বন্দী অকথ্য নির্যাতন ভোগ করছে।
প্রায় ৮৪ বছর ধরে বাইতুল মুকাদ্দাসের মিনার শীর্ষ থেকে মুয়াযযিনের উচ্চকণ্ঠ
শোনা যায়নি।
জেরুসালেমের উমর
মসজিদের অভ্যন্তরে খৃষ্টানরা যে হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছিল, তার রক্তের দাগও হয়তো মুছে ফেলা হয়নি
তখনও। সুলতান
সালাহউদ্দীন অধীর হয়ে উঠেছেন।
একদিকে তাঁর এই অধীর
চিত্ততা, অন্যদিকে
খৃষ্টান ক্রুসেডারদের অত্যাচারও তাঁকে অতিষ্ঠ করে তুলল। শান্তির সময়েও
মুসলিম বণিকদের কাফিলা বার বার লুণ্ঠিত ও মুসলিম বণিকরা নিহত হচ্ছিল তাদের
হাতে।
১১৮৬ সনেও খৃষ্টান
অধিনায়ক রেজিনাল্ড অতীতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করল।
ধৈর্য্যের বাঁধ
ভেঙ্গে গেল সুলতান সালাহউদ্দীনের। ৯০ বছর ধরে চলতে থাকা খৃষ্টান ক্রুসেডের বিরুদ্ধে সুলতান
সালাহউদ্দীন জিহাদ ঘোষণা করলেন।
সময়টা ছিল ১১৮৭ সনের
মার্চ মাস।
জিহাদ ঘোষণার পর
সুলতান সালাহউদ্দীন আশতারায় শিবির সন্নিবেশ করলেন।
সালাহ উদ্দীনের
প্রাথমিক প্রধান লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনের সীমান্ত শহর তাইবেরিয়াস।
তাইবেরিয়াসের রাজা
গেডি লূসিগনানানের নেতৃত্বে জেরার্ড, রেজিনাল্ড, হামফ্রে
রিমন্ড, বিলিয়ান
প্রমুখ বিখ্যাত ক্রুসেড অধিনায়করা সালাহ উদ্দীনের মুকাবিলার জন্য এগিয়ে এল।
তাদের অধীনে ১২০০
নাইট সহ অর্ধলক্ষ সৈন্য সমবেত হলো। সুলতান সালাহউদ্দীন ১২ হাজার
ঘোড় সওয়ার ও অনুরূপ সংখ্যক পদাতিক সৈন্য নিয়ে তাইবেরিয়াস অভিমুখে যাত্র
করলেন।
সিত্তিনের দু‘মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে ফিলিস্তিনের লুবিয়া
গ্রামের সন্নিকটবর্তী প্রান্তরে খৃষ্টান ও মুসলিম সৈন্য মুখোমুখি দাঁড়াল। সুলতান
সালাহ উদ্দীন প্রথম বারের মত খৃষ্টান ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদে
অবতীর্ণ হলেন।
লুবিয়া প্রান্তরে
ঘোরতর যুদ্ধ সংঘটিত হলো।
ক্রুসেডার বাহিনী সেই
যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় বরণ করল।
জেরার্ড, রেজিনাল্ড, হামফ্রে প্রমুখ অধিনায়ক সহ স্বয়ং রাজা ও
তাঁর ভাই বন্দী হলেন।
যুদ্ধে ৩০ হাজার
খৃষ্টান সৈন্য মৃত্যুবরণ করল।
১১৮৭ সনের জুলাই মাসে
সুলতান সালাহউদ্দীন তাইবেরিয়াস পুনরুদ্ধার করলেন। প্রথম জিহাদে জয়ী হয়ে সুলতান সালাহউদ্দীন তাইবেরিয়াস
নগরীতে প্রবেশ করলেন।
কিন্তু তাঁর চোখে আজ
খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে কোন ঘৃণা নেই।
কিংবা নেই কোন
প্রতিহিংসার আগুণ।
ক্রুসেডাররা ১০৯৬ সনে
তাদের প্রথম বড় রকমের সাফল্য অর্থাৎ এন্টিয়ক নগরী দখর করার পর যে মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিল
তা থেকে এ মানসিকতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুদ্ধ নয়, বরং জনৈক মুসলিম নামধারী বিশ্বাসঘাতকের
সহায়তায় এন্টিয়ক নগরী দখল করার পর আত্মসমর্পনকারী দশ হাজার মুসলিম
নর-নারী ও শিশুকে তারা হত্যা করেছিল।
আর সুলতান
সালাহউদ্দীন তাঁর প্রথম জিহাদে সাফল্য লাভ করার পর কোন খৃষ্টানের গায়ে আঁচড়ও লাগল
না।
অগণিত লুণ্ঠন ও
হত্যাকান্ডের নায়ক রেজিনাল্ডকেই শুথু তার দু‘শ সাঙ্গ-পাঙ্গসহ প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা
হলো।
আর এন্টিয়ক নগরীতে
খৃষ্টানরা যেখানে শহীদ আমীরদের লাশ কবর থেকে তুলে মাথা কেটে বর্শায় গেঁথে এন্টিয়কের রাস্তায়
বন্য নৃত্য করে বেড়িয়েছিল, সেখানে সুলতান
সালাহ উদ্দীন তাইবেরিয়াসের খৃষ্টান রাজাকে হাতে ধরে নিজের কাছে বসিয়ে
ঠান্ডা শরবত পান করিয়েছিলেন।
No comments:
Post a Comment