Saturday, January 5, 2019

উত্থিত হলো হিংস্র প্রতিক্রিয়ার কণ্ঠ

মক্কার রেওয়াজ ছিল কোন ভয়ংকর বিপদের আশংকা করলে অথবা কোন গুরুতর বিষয়ে বিচারপ্রার্থী হলে কোন পর্বতের উপরে উঠে বিশেষ কতকগুলো শব্দ উচ্চারণ করা। মহানবী (সাঃ) মক্কাবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই পথই অনুসরণ করলেন।

আল্লাহর ঘর কাবার অতি নিকটের সাফা পর্বতে মহানবী উঠলেন একদিন অতি প্রত্যুষে। গম্ভীরে-করুণে সেই বিশেষ আহ্‌বান ধ্বনিত হলো মহানবীর কণ্ঠে। ভোরের নীরবতা ভেঙে সে আহ্‌বান ছড়িয়ে পড়লো মক্কার ঘরে ঘরে। মানুষ এসে সমবেত হলো সাফা পাহাড়ে। মক্কার সব গোত্র, সব মানুষ এসে হাজির হলে মহানবী প্রত্যেক গোত্রের নাম ধরে ধরে বলতে লাগলেনঃ হে কোরায়েশ বংশীয়গণ, আজ আমি যদি তোমাদের বলি, পর্বতের অপর পাশে প্রবল এক শত্রু বাহিনী তোমাদের যথাসর্বস্ব লুণ্ঠন করার জন্য অপেক্ষা করছে, তাহলে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে?”

মক্কার কে না তাদের আল-আমিনকে চিনে? আজন্ম সত্যবাদী তাদের প্রিয় আল আমিন কোন মিথ্যা বলতেই পারেন না। মক্কাবাসীরা সমস্বরে বলে উঠলো, “নিশ্চয়ই বিশ্বাস না করার কোন কারণ নেই।

আল্লাহর নবী তখন গুরুগম্ভীর স্বরে বললেন, “তবে শোন, আমি তোমাদেরকে (পাপ ও খোদাদ্রোহিতার) অবশ্যম্ভাবী কঠোর দণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশধরগণ, হে আব্দ মানাফের বংশধরগণ, হে জোহরার বংশধরগণ……আমার আত্মীয়স্বজনকে উপদেশ দেয়ার জন্য আমার প্রতি আল্লাহর আদেশ এসেছে। তোমাদের ইহকালের মঙ্গল ও পরকালের কল্যাণ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহুনা বল।মহানবী থামলেন।

দ্বীনে হকের বুলন্দ আওয়াজ যুগযুগান্তের নীরবতা ভেঙ্গে ইথারের কণায় কণায় কাঁপন জাগিয়ে ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। কিছু দূরে দাঁড়ানো জাহেলিয়াতের অক্টোপাসে বন্দী আল্লাহর ঘর কাবায় তা প্রতিধ্বনিত হলো। প্রতিধ্বনিত হলো পাহাড়ে পাহাড়ে। বহুশত বর্ষ পরে দ্বীনে হকের দাওয়াত তার নতুন এবং চূড়ান্ত যাত্রা শুরু করলো। পৃথিবীব্যাপী জাহেলিয়াতের জমাট অন্ধকারে এ আলোর বিস্ফোরণ সাফা পর্বতের সানুদেশে দাঁড়িয়ে দুনিয়াবাসীর পক্ষে মক্কাবাসী যারা এ দাওয়াত শুনছিল তারা নীরব নিস্পন্দ।

নীরবতা ভেঙ্গে প্রতিক্রিয়ার কণ্ঠ জাগ্রত হলো। আবু লাহাব বলল, “তোর সর্বনাশ হোক, এ জন্যই কি আমাদের ডেকেছিলি!প্রতিক্রিয়ার এ কণ্ঠে যেন হিংস্রতা ঝরে পড়ল।

লেখকঃ আবুল আসাদ (আমরা সেই সে জাতি-দ্বিতীয় খন্ড)

No comments:

Post a Comment