হুদাইবিয়ার সন্ধির শর্তগুলো
স্থির হয়েছে, কিন্তু
স্বাক্ষর তখনও হয় নি। এমন সময় মক্কার একজন মুসলমান পালিয়ে হুদাইবিয়ায় মুসলমানদের
কাছে পৌঁছল। নাম আবু জান্দাল। সে ইসলাম গ্রহণ করায় মক্কাবাসীরা তার উপর
অমানুষিক অত্যাচার চালিয়ে আসছে। তার দেহে নির্মম আঘাতের চিহ্নগুলো জ্বলজ্বল
করছে। সে মহানবী (সাঃ) এর কাছে আশ্রয়ের আবেদন করলেন।
মহানবীর দরবারে
উপস্থিত কুরাইশ নেতা সাহল বলল, 'সন্ধির
শর্ত অনুযায়ী এই লোককে অবিলম্বে মক্কায় ফেরত পাঠাতে হবে।' উত্তরে একজন মুসলিম বলল, 'সন্ধি
এখনও স্বাক্ষর হয়নি, সুতরাং এ লোককে ফেরত দিতে এখনই আমরা বাধ্য নই।' সাহল
বলল, 'যদিও সন্ধি এদিক থেকে অসম্পূর্ণ তবু সন্ধির শর্ত সম্পর্কে আমরা একমত হয়ে গেছি।
সুতরাং লোকটিকে অবশ্যই আমাদের হাতে ফেরত দিতে
হবে।'
মহানবী (সাঃ) গম্ভীরভাবে
বসেছিলেন, অবশেষে
তিনি সাহলকে বললেন, 'ঠিক
আছে, তোমার ইচ্ছাই
পূর্ণ হবে।'
তারপর তিনি আবু
জান্দালের দিকে স্নেহদৃষ্টি তুলে বললেন, ‘আবু জান্দাল, ফিরে
যাও, আল্লাহর নামে ধৈর্য
ধারণ কর। আল্লাহই তোমার মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।’
ক্রন্দনরত আবু
জান্দাল মুসলমানদের সামনে দিয়ে মক্কায় চলে গেল। তার কান্না অস্থির করে তুলল
মুসলমানদের। উমার (রাঃ) আর সহ্য করতে পারলেন না। তিনি মহানবীর (সাঃ) সামনে
গিয়ে দাঁড়ালেন। অদম্য আবেগে গোটা দেহ কাঁপছিল তাঁর। বললেন, ‘হে রাসুল, আপনি কি আল্লাহর সত্যিকার রাসুল নন?’
মহানবী (সাঃ) বললেন,
‘নিশ্চয় আমি আল্লাহর
রাসুল।’ উমার
(রাঃ) বললেন, ‘আমরা
হকের উপর আছি, তারা
অসন্তুষ্টির পথে আছে এটা কি সত্য?’
মহানবী (সাঃ) বললেন,
‘অবশ্যই সত্য।’
উমার (রাঃ) বললেন,
‘তাহলে কেন আপনি অপমানকর
সন্ধির অমর্যাদাকে ধরে রাখতে চাইছেন? আমার আবেদন, সন্ধির
শর্ত থেকে আমাদের
মুক্তি দিন। তলোয়ারই ফায়সালা করুক।’
মহানবী (সাঃ) হেসে বললেন,
কিন্তু উমার,
‘আমি যে শান্তির
বার্তাবাহক। ধৈর্য ধর। তুমি যাকে অমর্যাদা বলছ, তার মধ্যেই করুণাময় আল্লাহ এক
মহাপুরস্কার লুক্কায়িত রেখেছেন, যা সামনেই দেখতে পাবে’ এই বলে মহানবী (সাঃ) সন্ধিপত্রে তাঁর সীলমোহর
লাগালেন এবং তা তুলে দিলেন সাহল-এর হাতে।
No comments:
Post a Comment