মহানবী (সাঃ) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করছেন।
তিনি চলেছেন মদীনার পথে। কুরাইশদের ঘোষিত একশ উট পুরস্কারের খবর মদীনা
পর্যন্ত রাস্তার সবখানেই পৌঁছে গেছে। মদীনার পথে আসলাম গোত্রের গোত্রপতি বুরাইদা
তার ৭০ জন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা নিয়ে প্রস্তুত হয়ে বসে আছে। মহানবীর কাফেলা
যখন সেখানে পৌঁছল, খবর
পেয়ে তারা ছুটল।
চার জনের ছোট কাফেলা
চলছে। পিছনে ছুটে আসছে অস্ত্রসজ্জিত ৭০ জন দুর্ধর্ষ লোকের একটি দল। জাগতিক
বিচারে কাফেলাটি একেবারেই অসহায়। মহানবী (সাঃ)
ও আবু বকর ছাড়া অপর যে দুজন সাথী আছেন তারা অমুসলমান। চার জনের কারো কাছেই কোন অস্ত্র নেই। এমন একটা অবস্থায়
কাফেলাটি এখন শত্রুর হাতের মুঠোর মধ্যে।
কাফেলার অপর সদস্যগণ উদ্বেগ আশংকায় মুহ্যমান। কিন্তু মহানবীর মুখে কোনই ভাবান্তর নেই। তিনি কুরআন শরীফ পাঠ
করছেন। কুরআনের সুমধুর ধ্বনি তাঁর কণ্ঠ
থেকে ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
আসলাম গোত্রপতি
বুরাইদা তার ৭০ জন খুন পিয়াসি সাথী নিয়ে ছুটে আসছেন কাফেলার দিকে। ১শ উট পুরস্কার তাদের
হাতের মুঠোয়। তাদের রক্তে তখন আনন্দ উত্তেজনার তাণ্ডব নৃত্য। তাদের হাতের
উলংগ তরবারি ও বর্শা সূর্যকিরণে ঝলমল করছে।
বুরাইদার দল ক্রমশঃ
মহানবীর ছোট কাফিলার নিকটবর্তী হচ্ছে। যতই তারা নিকটবর্তী হচ্ছে, মহানবীর মুখ নিঃসৃত কুরআনের স্বর্গীয়
সুর লহরী তাদের
কানে কানে ছড়িয়ে পড়ছে। কান থেকে তা প্রবেশ করছে মন ও মগজে। তাদের কাছে
অদ্ভুত মোহনীয় লাগছে অশ্রুতপূর্ব আয়াতসমূহের ভাব, ভাষা ও ছন্দ। মর্মে মর্মে
তা যেন দাগ কেটে বসে যাচ্ছে। বুরাইদা কাফিলার যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, ততই তার পা দুটি ভারী হয়ে উঠছে, বাহু যুগল যেন শিথিল হয়ে পড়ছে। লোভাতুর রক্তের
সেই তাণ্ডব নৃত্য যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। এই অবস্থাতেই বুরাইদা তার দলসহ
মহানবীর কাছাকাছি এসে পড়লো।
কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ
করলেন মহানবী। তারপর বুরাইদার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মধুর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘আগন্তুক, তুমি কে, কি চাও?’
‘আমি বুরাইদা, আসলাম গোত্রপতি’ বুরাইদা জবাব দিল।
‘ভালো কথা।’ বললেন মহানবী।
‘আর আপনি কে?’ জিজ্ঞাসা করল বুরাইদা।
‘আমি মক্কার অধিবাসী
আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ, সত্যের
সেবক, আল্লাহর রাসুল’,
উত্তর দিলেন মহানবী
(সাঃ)।
আসলাম গোত্রপতি
বুরাইদা মহানবীর (সাঃ) সাথে কথা বলে, তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাব বিহবলতায় আত্মহারা হয়ে পড়ল।
মাটিতে বসে পড়লো বুরাইদা। তার শিথিল হাত থেকে বর্শা দণ্ড খসে পড়লো। তার
সঙ্গীদেরও এই অবস্থা। অভিভূত বুরাইদা মহানবীর পায়ে লুটিয়ে পড়লো।
মহানবী (সাঃ) তাকে
সান্ত্বনা দিলেন। সান্ত্বনা দিয়ে আবার যাত্রা শুরু করতে গেলেন কাফিলার। বুরাইদা
সম্বিত ফিরে পেল।
সে মহানবীকে কাতর কণ্ঠে বলল, ‘একবার
যখন ও চরণে আশ্রয় দিয়েছেন, তা থেকে
আর আমাদের বঞ্চিত করবেন না’ বলেই
সে উঠে দাঁড়ালো। গিয়ে দাঁড়ালো কাফিলার অগ্রভাগে। নিজের মাথার পাগড়ি
খুলে বর্শার মাথায় গেঁথে পতাকা উড্ডীন করলো বুরাইদা। এটাই বোধ হয় ইসলামের
প্রথম পতাকা।
মহানবীর পিছনে ৭০ খানা
উলঙ্গ তরবারি, ৭০
খানা বর্শা সূর্যের আলোয় ঝলমল করতে লাগলো। কাফিলা যাত্রা শুরু করলো। পতাকা দুলিয়ে বুরাইদা
আগে আগে চলছিলো।
No comments:
Post a Comment