হজ্জ করবার সময় ভিড়ের
মধ্যে আরবের পার্শ্ববর্তী এক রাজার চাদর এক দাসের পায়ে জড়িয়ে যায়। বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হয়ে
রাজা জাবালা সেই দাসের গালে চড় বসিয়ে দিলেন। লোকটি খলীফা উমর (রাঃ)-এর নিকট
সুবিচার প্রার্থনা করে নালিশ করে। জাবালাকে তৎক্ষনাৎ ডেকে পাঠানো হলো।
অভিযোগ সত্য কিনা
জিজ্ঞাসা করায় জাবালা রূঢ় ভাষায় উত্তর দিলেন, “অভিযোগ সত্য। এই লোকটি আমার চাদর মাড়িয়ে যায়
কাবা ঘরের চত্বরে।” “কিন্তু
কাজটি তার ইচ্ছাকৃত নয়, ঘটনাক্রমে হয়ে গেছে”- রুক্ষ স্বরে বাধা দিয়ে বললেন খলীফা। উদ্ধতভাবে
জাবালা বললেন, “তাতে
কিছু আসে যায় না- এ মাসটা যদি পবিত্র হজ্জের মাস না হতো তবে আমি লোকটিকে মেরেই
ফেলতাম।”
জাবালা ছিলেন ইসলামী সাম্রাজ্যের
একজন শক্তিশালী মিত্র ও খলীফার ব্যক্তিগত বন্ধু। খলীফা কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন, তারপর অতি শান্ত ও দৃঢ় স্বরে বললেন,
“জাবালা, তুমি তোমার দোষ স্বীকার করেছ। ফরিয়াদী যদি
তোমাকে ক্ষমা না করে তবে আইনানুসারে চড়ের পরিবর্তে সে তোমাকে চড় লাগাবে।”
গর্বিত সুরে উত্তর
দিলেন জাবালা, “কিন্তু
আমি যে রাজা আর ও যে একজন দাস।”
উত্তরে উমর (রাঃ)
বললেন, “তোমরা
দু’জনেই মুসলমান এবং
আল্লাহর চোখে দু’জনেই
সমান।”
গর্বিত রাজার অহংকার
চূর্ণ হয়ে গেল। গর্ব, অহংকার,
মদমত্ততা মানুষের
ধর্ম নয়।
সে নির্ভীক, নির্বিকার
ও নির্মম। কিন্তু শান্ত, সংযত
ও সুন্দর সে। সত্যের বাণী যারা অন্তর দিয়ে গ্রহণ করেছেন, মানব গোষ্ঠীর প্রতি তাঁদের দায়িত্ববোধ
অসীম। মানুষের সেবা, সৃষ্ট
জীবের সেবা করেই তাঁরা এই দায়িত্ব থেকে মুক্ত হন। মানব সেবার এই
গুরুদায়িত্ব ভার গ্রহণ করে খলীফা উমারের আর স্বস্তি নেই। কর্তব্যের যদি
ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায়, যদি
তার তিলমাত্র অবহেলায় কেউ কষ্ট পায়, তবে আল্লাহর কাছে যে তার প্রত্যেকটির
জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তাই উমারের (রাঃ) চোখে ঘুম নেই। রাতের অন্ধকারে তিনি
ঘুরে বেড়ান। কে কোথায় কি করছে, কে রোগ যন্ত্রণায় বা ক্ষুধায় কাঁদছে, কে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
অন্ধকারে, কে
শোকে মুহ্যমান হয়ে আর্তনাদ করছে। তা তিনি খুঁটে খুঁটে দেখেন। শাসক হলেন রাষ্ট্রের দারোয়ান,
জনগণের সেবক। অসীম
বেদনাবোধ, বিপুল দায়িত্বভার
তাঁর। এই বেদনা ও দায়িত্বভারেই খলীফা উমর (রাঃ) অস্থির থাকতেন। সবাই
ঘুমিয়ে পড়লেও নিঝুমনিশীতে স্বীয় দায়িত্বের কথা স্মরণ করে উমর (রাঃ) অঝোরে
কাঁদতেন।
লেখকঃ আবুল আসাদ (আমরা সেই সে জাতি-প্রথম খন্ড)
No comments:
Post a Comment