রোমানদের অত্যাচারে কাতরাচ্ছে সে দেশের বনি আদম। আর্তনাদ উঠছে আকাশে বাতাশেঃ মুক্তি চাই, এ অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।
কিন্তু বাঁচাবে কে? কে এগিয়ে আসবে বলদর্পি রোমানদের শক্তিশালী হাতুড়ে মুঠো থেকে তাদের বাঁচাতে? উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার মানুষ অবশেষে অসহ্য হয়ে দামেস্কে খলীফার দরবারে পাঠাল আকুল আবেদনঃ অত্যাচার অসত্যের হাত থেকে বাঁচান আমাদের।
খলীফার নির্দেশে সিপাহসালার উকবা ছুটে চললেন ক্রমাগত পশ্চিমে। উকবার গতি রোধ করবে কে? সত্যের সৈনিক উকবা থামতে পারেন না। তিনি খুঁজে ফিরছেন আরও কে কোথায় নিপীড়িত হচ্ছে, অসত্য কোথায় এখনও অন্ধাকারের সৃষ্টি করছে, আরও সামনে কতদেশ আছে- কত প্রান্তর আছে।
উকবার অগ্রগতি সমানে চলছে। ক্লান্তি নেই। বিশ্রাম নেই।
এগিয়ে চলেছেন তিনি তাঁর জানবাজ মুজাহিদদের নিয়ে।
তাঁর প্রার্থনাঃ ‘আল্লাহ আপনি বলুন আর কত দেশ আছে, এখনও কোথায় সত্যের আলো বিচ্ছুরিত হয়নি, বলুন,
এ উন্মুক্ত অসি আর কোষবদ্ধ করবো না।’
কিন্তু উকবার গতি রুদ্ধ হলো।
আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে দাঁড়িয়ে অশ্বের বল্গা টেনে তিনি চেয়ে দেখছেন, অসীম সমুদ্রের বারি রাশি উন্মাদ গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। উকবা বিদ্রোহী,
সিন্ধুও বিদ্রোহী।
দুই দোসর একে অন্যকে দেখে ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়ালো। আশ্রান্ত বিরামহীন গতি সমুদ্রের। উকবার গতিও অপ্রতিহত।
অশ্বের বলগা ছেড়ে দিয়ে তীব্র বেগে ছুটে তিনি সাগরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
তরঙ্গের বাহু মেলে সিন্ধু তার বিদেশী বন্ধুকে আলিঙ্গন করলো।
দু‘হাত তুলে উকবা বললেন, “আল্লাহ আজ যদি এই অনন্ত সমুদ্র পথের অন্তরায় না হতো তবে আরও দেশ, আরও রাজ্য জয় করে আপনার নামের মহিমা প্রচার করতাম, সত্যের বাণী ছড়িয়ে দিতাম, অসত্যকে নিশ্চিহ্ন করে সত্যের আলো জ্বালিয়ে দিতাম।”
লেখকঃ আবুল আসাদ (আমরা সেই সে জাতি-প্রথম খন্ড)
No comments:
Post a Comment